প্রথম পর্ব
আমার বন্ধুদের গ্র“পটা তেমন বড় ছিলোনা। ছড়ানো ছিটানো। যেমন বাড়ীর বন্ধুরা একরকম, স্কুলের বন্ধুরা এক রকম আবার আমার কিছু বন্ধু ছিলো নানা বাড়ীর। নানার বাড়ী বেশি যেতাম বলেই সেখানেও একটা বন্ধু গ্রুপ তৈরী হয়। নানার বাড়ী দুইটা বন্ধু ছিলো জমজ। দেখতে একিই রকম। সাইজ লম্বায় সব দিক দিয়েই একিই রকম। তাদের নিয়ে অনেক মজা হতো। বিশেষ করে খেলার সময়। যদিও ক্রিকেট খেলায় তেমন সমস্যা হতোনা। কিন্তু সমস্যা হতো ফুটবল খেলায়। দুজনই দারুন খেলতো। দুইজন দুই দলে খেল্লেও যেদিকেই সুযোগ পায় সেদিকেই গোল করে বসে। যেমন নিজ দলের গোলকিপারের কাছাকাছি বল পেলেই নিজেদের গোল পোষ্টেই গোল করেই লাফাতে থাকে। কেউ ধরতে পারেনা যে কোন জন কাদের দলে। খেলা শেষে যখন বলে তখনতো হাসতে হাসতে শেষ সবাই। একবার হয়েছে কি, আমরা সবাই পুকুরে সাতাঁর কাটছিলাম। ইচ্ছামতো পুকুরে ধপড়াচ্ছি। ওই দুই ভাইয়ের একজন তখনো নামেনি পুকুরে। তাদের বাবা একবার ডাক দিয়ে গেল। ডাক দেয়ার সাথে ঘরে চলে যায়। পরে অপর জন এসে আমাদের সাথে গোসল করতে লাগলো। এদিকে তার বাবা এসে দেখে সে এখনো পুকুরে। দেখেই আর কিছু পরখ না করেই লাঠি দিয়ে দিলো এক মাইর। বেচারা বুঝতেও পারলোনা কেন তাকে মারছে। কান্নাতো দুরের কথা, হা করে সে তার বাবার দিকে থাকিয়ে আছে। ছেলেকে মাইর দিয়ে ঘরে দিয়ে দেখে আসলটা বসে বসে মায়ের সাথে ভাত খাচ্ছে। বাবাও চিনতে পারেনা ঠিক মতো। কিন্তু মা ঠিকিই চিনে যায় তাদের। আজপর্যন্ত নাকি একবারও ভুল হয়নি মায়ের। মা বলে কথা।
ডাব চুরি
আমার আরেক বন্ধু জামাল নাম। তখন আকবর দ্যা গ্রেট দিত বিটিভিতে। আকবর দ্যা গ্রেট শুরু হবার আগে গেল কারেন্ট চলে। মেজাজ পুরাই বিলা। মামাতো ভাইকে নিয়ে হাটতে বের হলাম। কুছক্ষন পর দেখি কারেন্ট চলে আসলো। বল্লাম চল যাই আকবর দেখবো। সে বলে কিনা না, চল এক কাজ করি। জামালদের নারিকেল গাছে দেখ কতোগুলা ডাব। তাদের বাড়ীর বাউন্ডারী দেয়ালে দাড়িয়ে অনায়েসে ডাব পারা যাবে। যেই কথা সেই কাজ। ৭ টা পারলাম। আমরা আরাম করে ডাবের পানি খেলাম। পরদিন সকাল বেলা জামালকে ডাকলাম। কিরে কাল রাতে তুই ছিলি কই?? তোকে এত ডাকলাম । জামাল বলে কেন কি জন্য ডাকছিলে। আমি বল্লাম ওইযে.. ঠিক সাথে সাথেই মামাতো ভাই বলে উঠলো না পাগলা বাদ দেয় (সব আগের প্লান করা)। জামাইল্লার কোন বিশ্বাস নাই। তাকে বলিসনা। জামালতো গেল চেতে। বলে ওই কি হয়েছে বল। আমি যেইনা বলতে চাই মামাতো ভাই বলে ভাইরে আমি জানিনা। জামইল্লার কোন বিশ্বাস নাই। তার পেটে কোন কথা থাকেনা। তার আতুরী বাইট্টা। তুই বলতে চাইলে বল। সে যদি কাউকে বলে দেয় তখন আমাকে বলতে পারবিনা। জামালতো রেগেমেগে আগুন। বলে, ওই তোরা আমাকে বিশ্বাস করিসনা?? বিশ্বাস কর আমি কাউকে বলবোনা। কি হয়েছে বল। খোদার কসম কাউকে বরবোনা। আমি বল্লাম না ভাই তুই রেগে যাস কথায় কথায়। আর গালাগালিও করিস । তোকে কোন বিশ্বাস নাই। সবাইকে বলে দিবি তুই। জামাল তো রেগেই যাচ্ছে বলে খোদার কসম গালাগালিও করবোনা রাগারাগিও করবোনা কাউকে বলবোওনা। এবার আমি বল্লাম ভাই কাল তোদের নারিকেল গাছ থেকেনা আমরা ৭টা ডাব খাইছি। তোকে এত ডাকলাম তোর কোন সাড়াশদ্বও নাই। কি আর করা একলা একলাই খাইতে হলো। বলেই আমি চুপ, মামাতো ভাইও চুপ। জামাল দেখি ফুঁস ফুঁস করতেছে। রাগে ফুলতেছে। একবার গাছের দিকে থাকায় আরেকবার আমাদের দিকে। আর রাগে ফুঁস ফুঁস করতেই আছে। বেচারা কসম খেয়ে গালিও দিতে পারছেনা আমাদের মারতেও পারছেনা। আর কিছু না পেরে করলো কি হঠাৎ মামতো ভাইকে বলে উঠলো ওই তুই ওইদিন আমার বীজগনিতের খাতা নিছিলি ওইটা কই? দিসনাই কেন ..দানীর পোয়া বলে মামাতো ভাইকে দৌড়াতে লাগলো মারতে।
এরপর অনেকদিন কেটে গেল। তাদের সাথে তেমন আর দেখা হয়না। একদিন শুনি জমজ ভাই দুটি চলে যায় ডুবাইতে। সেই জামাল হঠাৎ একদিন শুনি আমেরিকা চলে গেল ডিবি পেয়ে। তার পরের বছর মামাতো ভাইটাও ডিবি পেয়ে আমিরিকা চলে গেল। শ্লার আমি এত ডিবি দিই আমি পাইনা। যাবোইনা ওই পচা দেশটাতে । সেই বন্ধুগুলোকে এখন খুব মিস করি। ভাল থেকো তোমরা যে যেখানেই থাকো।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১২:০৫