somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাদল দিনে

৩১ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আকাশে অনেক মেঘ জমেছে সঙ্গে প্রবল বাতাসও বইছে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। রাস্তার লোকজন দৌড়ে পথ পাড়ি দিচ্ছে। বাতাসে পলিথিনের টুকরোগুলো ঘুড়ির মতো আকাশে উড়ছে। এরপর তীব্র শব্দে আশপাশে কোথাও বজ্রপাত হলো বোধহয়। সঙ্গে সঙ্গে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়তে লাগল। ব্যস্ত রাস্তা মুহূর্তেই ফাঁকা হয়ে গেল। কয়েকটা পথশিশু বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করছে। কাচের জানালা ভেদ করে তাকিয়ে এসব দেখতে ছিলাম। মনে পড়ল গ্রামে এমন বাদল দিনে আমরা দল বেঁধে আম কুড়াতে যেতাম। বৃষ্টিতে ভিজে ধান খেতের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালে মাছ ধরতাম। কখনও বা কিষানির রোদে শুকাতে দেয়া ধান ঘরে তুলতে সাহায্য করতাম। আবার কখনও বা বৃষ্টি উপেক্ষা করে দলবেঁধে ফুটবল খেলতে নেমে পড়তাম। স্মৃতির ভেতর কতক্ষণ ছিলাম জানি না, সম্বিত্ ফিরে পেলাম কলিং বেলের কৃত্রিম পাখির ডাকে। দরজা খুলতেই অবাক হলাম। চমকে গিয়ে বললাম কে আপনি? তিনি বললেন, আপনি কী অমি ভাই? হ্যাঁ, বলতেই তিনি রুমে ঢুকে পড়লেন।
বোরখার মুখের পার্ট খুলে বললেন, হটাত্ বৃষ্টি এসে আমাকে ভিজিয়ে দিল। ঘরে তোয়ালে আছে? আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম ফর্সা সুন্দর মায়াবী চেহারা দেখে। তিনি আমার মুখের দিক তাকিয়ে বললেন, ‘কী হলো তোয়ালে ...’ আমি ভেতরের রুম থেকে তোয়ালে এনে তার হাতে দিলাম।
পূর্ব পরিচিত দূরে থাক আমার জীবনে এ তরুণীকে কোথাও দেখেছি বলেও মনে পড়ল না। তিনি সোফায় বসে নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন চা খেতে ইচ্ছে করছে। আমি লজ্জিত স্বরে বললাম, ঘরে চায়ের দুধ শেষ হয়ে গেছে। তিনি স্বাভাবিক গলায় বললেন সমস্যা নেই আমি রং চা খাব। না হলে ঠাণ্ডায় আমার গলা বসে যাবে। ধূমকেতুর মতো ছুটে আসা তরুণী হেসে আমাকে ধন্যবাদ দিলেন। হঠাৎ করেই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি দুঃখিত আমি তো আমার পরিচয় দিতে ভুলে গেছি। আমার নাম রিনি। আমার বাসা মিরপুরে। আপনার বাবা সেদিন আমাদের বাসায় গিয়েছিলেন, আপনার সঙ্গে আমার বিয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা ঠিক করে এসেছেন। কিন্তু দেখুন, আমার এখন বিয়ের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ নেই। রিনির কথা শুনে মুখটা সাদা হয়ে গেল। বোকার মতো ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। বলে কী মেয়েটা?
রিনি আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আবার বলে ওঠেন—দেখুন আমি একটু স্বাধীনচেতা মেয়ে। আমার এক কথা আগে নিজের পায়ে দাঁড়াব তারপর বিয়ে। বোকার মতো সেই কথা শুনছি আর ভাবছি মেয়েটার মাথা ঠিক আছে তো? তিনি হঠাৎ থামলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কী ব্যাপার, আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? ঢোক গিলে আমতা আমতা স্বরে বললাম : না মানে দেখুন আমি কিন্তু ...
রিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার আগের ধারণার সঙ্গে আপনার কোনো মিল নেই। আপনার বাবার বিশাল ভুঁড়ি আর জাঁদরেল গোফ দেখে আমি তো ভেবেছিলাম ... সে যাই হোক আপনি কিন্তু দেখতে অনেক সুন্দর! রিনি মুচকি হাসলেন।
আমি এবার হেসে বললাম, ম্যাডাম আমার বাবা ছয় বছর আগে মারা গেছেন। তাছাড়া আমার এমন কোনো অভিভাবক নেই যে আপনাদের বাসায় আমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবেন।
—কী বলছেন! রিনি আঁতকে উঠলেন।
তার হাত কাঁপছে। তিনি বিস্ময় ভরা গলায় প্রশ্ন করেন : আপনি তো বললেন আপনার নাম অমি? এবার আমি হেসে বললাম, দেখুন এ ভবনের পাঁচ তলায় আরও একজন অমি সাহেব থাকেন। উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে যাওয়া রিনি এবার ধপ করে সোফায় বসে পড়লেন। রিনি লজ্জিত কণ্ঠে বললেন, সরি ভাইয়া, আমার মাথা ঠিক ছিল না। আপনি কিছু মনে করেননি তো?
আমি মৃদ্য হেসে বললাম, না কিছু মনে করিনি, আমার বাসা দ্বিতীয় তলায় হওয়ায় প্রায় ওনার বাসার গেস্ট ভুল করে আমার বাসায় চলে আসে। তবে এই প্রথম ও বাসার হবুবধূ আমার বাসায় চলে এসেছেন। রিনি লজ্জা পেয়ে জানালার দিকে তাকালেন। বাইরে এখনও প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে।
আমি বললাম, আপনি কী এখন অমি সাহেবের বাসায় যাবেন? তাহলে আপনাকে পৌঁছে দিতে পারি। রিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি এখনও বিয়ে করেননি কেন? হেসে বললাম, আমার এমন কোনো অভিভাবক নেই, তাছাড়া সময়ও হয়নি। রিনি এবার গম্ভীর স্বরে বলেন, আমার আপনাকে ভালো লেগেছে। আমার কোনো উত্তর না শুনেই রিনি বাইরে বেরিয়ে যায়। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে রইলাম...
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×