somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের গ্রামের বাড়ী

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রামে আমাদের যৌথ পরিবার ছিল। আব্বারা তিন ভাই, আর আমরা চাচাতো ভাইরা সবাই মিলে ১২ জন, বিশাল পরিবার। আশির দশকের শুরুতে আব্বা গ্রামে পাকা দালান বানিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা আস্তে আস্তে শহরবাসী হওয়া শুরু করলাম। আশির দশকের শেষভাগে আমরা শহরে আসলাম, উদ্দেশ্য আমাদের পড়ালেখা, শহরের স্কুলে ভর্তি হওয়া। মা-বাবা সহ আমাদের যৌথ পরিবারের একাংশ শহরবাসী হলাম। এর কয়েকবছর পর চাচা শহরে আসলো। আরেক চাচার ছেলেরাও বিয়েশাদী করার পর শহরে চলে আসলো ২০০০ সালের দিকে।


অথচ গ্রামের বাড়ীতে সব ফ্যাসেলিটি আছে, ফ্রীজ, গ্যাসের সিলিন্ডার, পানির পাম্প, হাই কমোড, ডিশ কানেকশন। তারপরও কেউ গ্রামে থাকলো না। আব্বার খুব ইচ্ছে ছিল, সবাই গিয়ে গ্রামে কয়েকদিন থাকবো, বেড়াবো। কিন্তু কারো কোন সময় হয়ে উঠছিলো না। ছেলে মেয়ে, নাতি নাতনীদের কারো পরীক্ষা, কারোও চাকুরীর ছুটি নাই, কেউ অন্য জেলায় থাকে, কেউ বা দেশের বাইরে, তাই কখনো কারো সময় হয়ে উঠে না। ৩-৪ বছর পর হঠাৎ কোন ঈদে সবার একসাথে হওয়া হয়। তারপরও কেউ না কেউ বাদ পড়ে যায়।

কিন্তু আমরা একবার সবাই একসাথে হয়েছিলাম, সেটা প্রায় ১০ বছর আগে, সবাই যার যত কাজ ছিলো, সব বাদ দিয়ে তুমুল বর্ষায় কাদামাখা হয়ে গ্রামে গিয়েছিলাম।কেউ ৫-৬ মাসের প্রেগনেন্ট অবস্থায়, কেউ অফিসের দরকারী মিটিং বাদ দিয়ে, কেউ পরীক্ষা বাদ দিয়ে হাজির হয়েছিলাম গ্রামে, কেউ ২ মাসের ছোট বাচ্চা নিয়ে। যে রাতে আব্বা মারা গিয়েছিল, তারপর দিন সকালে সবাই হাজির গ্রামের বাড়িতে। পুরো এক সপ্তাহ ছিলাম গ্রামে। ছোট ছোট ভাতিজা-ভাতিজী, ভাগ্নে-ভাগ্নী সবাই সারাবাড়ী ছুটে বেড়াচ্ছে, বৃষ্টিতে কাদা মাখামাখি হচ্ছে, একটা শোকাহত বাড়ীর পরিবেশটা তার ভুলিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এই পরিবেশটা আব্বা দেখে যেতে পারলেন না।

এখনো আমরা গ্রামের বাড়ী যাওয়া হয় শুধু ঈদের দিন। সব কাজিন, চাচা চাচী, সবাই যাই। বছরে শুধু ঐ একদিন সবাই একসাথে হওয়ার চেষ্টা করি।

শেষবার গত ডিসেম্বরে গ্রামের বাড়ীতে গিয়েছিলাম ছেলেকে আব্বার কবর দেখানোর জন্য, কিন্তু আমাদের ঘরে যাওয়া হয় নাই, ঘরে তালা লাগানো ছিল, বিশাল বড়বাড়ী যেন মৃত্যুপুরী। আব্বার কবর থেকেই শহরে ফেরত আসলাম ভারাক্রান্ত মন নিয়ে।।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩৯
২০টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রম্য: টিপ

লিখেছেন গিয়াস উদ্দিন লিটন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৫




ক্লাস থ্রীয়ে পড়ার সময় জীবনের প্রথম ক্লাস টু'এর এক রমনিকে টিপ দিয়েছিলাম। সলজ্জ হেসে সেই রমনি আমার টিপ গ্রহণ করলেও পরে তার সখীগণের প্ররোচনায় টিপ দেওয়ার কথা হেড স্যারকে জানিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বৈশাখে ইলিশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৪০



এবার বেশ আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে । বৈশাখ কে সামনে রেখে ইলিশের কথা মনে রাখিনি । একদিক দিয়ে ভাল হয়েছে যে ইলিশকে কিঞ্চিত হলেও ভুলতে পেরেছি । ইলিশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×