বাংলাদেশে তেলের দাম কমানো নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। সরকার তিন ধাপে তেলের দাম কমানোর ঘোষণাও দিয়েছে। আমাদের দেশে সবকিছুর দাম বাড়ার নজীর থাকে, কিন্তু কখনো কমার নজীর নাই।
তেলের দাম কমানোতে আপাত দৃষ্টিতে প্রাইভেট গাড়ির মালিক এবং মটর সাইকেল চালক ছাড়া রুট লেভেলের কারো কোন উপকার হবে না।
সাধারণ মানুষ কেউ সরাসরি তেল কিনে না। তারা কিনে তেল দ্বারা উৎপাদিত সেবা। ডিজেল,পেট্রোল, ফার্নেস অয়েল ইত্যাদি ব্যবহার হয় বাসে, ট্রেনে, বিদ্যুত উৎপাদনে, আর কৃষিকাজে। এই গুলো থেকে সার্ভিস পায় সাধারণ জনগণ। সরকার তেলের দাম কমানোতে এই সেবা গুলোর দাম কিন্তু কখনো কমবে না।
সরকার পারবে না বাস ভাড়া কমাতে, সরকার কমাবে না বিদ্যুতের উৎপাদন মূল্য। সরকারী পরিবহন রেলওয়ে, এটার ভাড়া প্রায় ৭-৮ % বাড়ালো মাত্র মাস খানেক আগে। এখন তেলের দাম কমিয়ে কি সরকার রেলের ভাড়া কমাবো? এটা কখনো হবে না।
রেলের ভাড়া কমিয়ে সরকারকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, এবং এতে বাস মালিকেরা পরোক্ষভাবে প্রতিযোগীতামূলক বাজারের চাপে থাকবে, এবং কোন এক সময় হয়ত ভাড়া কমাতে চাইবে রেলের সাথে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে চাইলে। কিন্তু সরকার রেলের ভাড়া কমাবে, এটা মনে হয় না, বাসের ভাড়া কমাতেও পারবে না।
এক ঢাকা শহরে ৩-৪ হাজার সিএনজি ড্রাইভারের কাছে সরকার অসহায়, তাদেরকে কখনো মিটারে চালাতে পারে না। সারা দেশের বাস ভাড়া কমানোর কথা নাই বললাম। এর আগে যতবার তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার, ততবার বাস ভাড়াও বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু এবার দেখার পালা, বাস ভাড়া কমাতে পারে কিনা?
তেলের দাম কমালে খুব ট্রাকে করে পণ্য পরিবহণ খরচ অনেক কমে আসবে, কিন্তু এর জন্য কোন পণ্যের দাম কিন্তু কমবে না।
কৃষিকাজে সেচের জন্য ডিজেল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ৯৫% কৃষকের কেউই সরাসরি ডিজেল কিনে না। কেউ একজন সেচের পাম্প সার্ভিস দেয়, তার থেকে কৃষকেরা পানি কিনে। তেলের দাম যদি ১০ টাকা লিটারে কমেও, কৃষকের সেচের পানির মূল্য কিন্তু কমবে না। তাই তেলের দাম কমালেও এর সুফল কৃষকের কাছে যাবে না।
তেলের দাম কমানোর সুফল আমজনতা কিভাবে পেতে পারে, এটা নিয়ে একটা আলোচনা হতে পারে।
সরকারের নীতি ঠিক না থাকলে তেলের দামের সুফল কেউ পাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৪