চোর। মানবেতিহাসের অন্যতম প্রাচীন পেশাজীবি। চলুন তাদেরকে জানি- সিঁদেল চোর। কালের বিবর্তনে বিভিন্ন প্রজাতির চোরদের অভ্যুদয় হলেও এরাই ক্লাসিক্যাল মর্যাদা পেয়েছে। আন্ধার রাইতে গৃহস্তের মাটির ঘরের দেয়াল বা ফ্লোর শাবল দিয়ে ফুটো করে চিকনা শরীরের কেউ একজন ঘরে ঢুকে। তারপর দরজা খুলে সঙ্গীদের ভেতরে ঢুকায়। চলতে থাকে অভিযান। গায়ে তেল মেখে পিছলা হওয়ার কথা, নতুন লাশের শরীর থেকে কাফন চুরি করে ঘরের দেয়ালে রাখলে গৃহস্ত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয় জাতীয় নানান উপকথা প্রচলিত আছে সিঁদেল চোর নিয়ে। মূলত গ্রাম কেন্দ্রিক হলেও শহরেও সিঁদেল চুরি এন্তার। ব্র্যাক ব্যাংক শুক্রাবাদ শাখার লকার চুরি অন্যতম উদাহরন।
গরু চোর। খুব সিম্পল চুরি। রাতের বেলায় গোয়াল থেকে গরু নিয়ে যায় এ চোররা। কিছু 'বজ্জাত' গরু আওয়াজ দিলেই কেবল ধরা খাওয়ার চান্স। প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে নানার বাড়ীর গোয়ালে বিরাট তালা দেখেছি। কথিত আছে, বদ কসাই/ব্যাপারীদের সাথে এদের যোগসাজস আছে। তবে গরু চুরি করে রাতের মধ্যে অনেক দুরে চলে যেতে হয় নাহলে খবর আছে।
গম চোর। ক্ষেতের গম চোর নয়। দুস্ট মেম্বার, চেয়ারম্যানদের কম্ম এটি। সরকারী কাবিখা কর্মসূচীর গম বা ভিজিএফের গম নয় ছয় করে মেরা দেয়া বঙ্গদেশের জনপ্রতিনিধিদের পুরোনো অভ্যাস। তাই আড়ালে আবডালে এদেরকে মানুষ গমচোর বলে।
ম্যানহোলের ঢাকনা চোর। শহুরে চোর এরা। লোহার সের কমপক্ষে ১০ টাকা (বেশীও হতে পারে)। বেশ কটি ঢাকনা চুরি করতে পারলেই ভাল অংক হয়ে যায়। সম্ভবত: ওয়াসার সাথে এদের যোগসাজস আছে। নইলে এত চুরির পরও ওয়াসা লোহার ঢাকনা বসায় কেন? অন্যান্য চুরির চেয়ে এটার একটা মারাত্মক কুফল হল- খোলা ম্যানহোলে মানুষের ঠ্যাং, গাড়ীর চাকা পতিত হওয়া।
লুঙ্গি চোর। সাধারনত হোস্টেল, ম্যাসে এ চুরির প্রাদুর্ভাব বেশী। ধারনা করা হয় হিরিন্চিরা (বা ডাইল পার্টি) এ কর্মটা করে। তবে পুরান লুঙ্গি কোথায় কিভাবে বেচা হয় তা এ লেখকের অজানা! ধৃত কোন এধরনের চোরকে বেশী মারা রিস্ক। সাবধান!
জুতা চোর। একটাই আদর্শ স্থান। মসজিদ। জুতা হারানোর ভয়ে নামাজে মনোযোগটাই নস্ঠ করে দেয় এ কুলাংগাররা। তবে মাইর
ও খায় হরহামেশা। শুধু বাক্সের মধ্যই নয়, বরং, দুই বাক্সে দুটি জুতা রাখার মাধ্যমে এ ধরনের চোরকে চ্যালেন্জ ছুড়ে দেয়া যায়। রাস্তাঘাটের পুরান জুতার মূল উৎস মসজিদ- এটা অনেকেই বলেন।
লিখাচোর। আরেকজনের লিখাকে অবিকল বা টুকটাক ঘষেমেজে চালান করে নিজেই লিখক বনে যাওয়াটা এ ধরনের চুরির বৈশিস্ঠ। শ্রেনীকক্ষের এসাইনমেন্ট, লিটল ম্যাগাজিন, পত্রিকার পাতায় অপকর্মটা দেখা যায়, ধরাও খায়। তবে ন্যাক্কারজনক হল- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক ও তদুর্ধ হওয়ার জন্য কর্মটা করেন। ছাত্রদের টার্মপেপারকে ঘষেমেজে নিজের নামে কোন জার্নালে চালান করে পয়েন্ট অর্জন কইরা প্রমোশন, বৃত্তি বাগিয়ে নেন। ডাটা চুরিও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। যৎসামান্য সার্ভে করে আন্দাজে ২০০/৩০০ সেম্পলের কোয়েশ্চানেয়ার ফিলাপ করে ঘরে বসেই নানাবিধ % দিয়ে রেজাল্ট ও ডিশকাসন কইরা ফালান। সবাই এক গোয়ালের গরু বিধায় অপকর্মটা সমাজে কম চাউর হয়েছে। আরো বড় ছোট চোরদের নিয়ে লিখব। আজ এখানেই।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০০৯ সকাল ১১:৫৮