অন্ধ দোকানদার আমাদের বুকপকেটের দামে সবজি ফেরি করে। তার চোখের ভেতর উলটো যাত্রার খসড়া, আর হাতের ভাঁজে দিন-রাত্রি। সে বিক্রি করে টমেটো। লাল লাল। পেয়াজ। কাঁচামরিচ। ধনে পাতা। টমেটো, পেয়াজ, কাঁচামরিচ আর ধনে পাতার সালাদের রেসিপি আমি জানি।
কিন্তু অন্ধ দোকানদার সরিষার তেল বিক্রি করে না।
'এবঙ এখানেই সবকিছু থেমে থাকে চলমান ভঙ্গিমায়!', অন্ধ দোকানদার তার মরচে পড়া ডায়েরিতে লিখে রাখে রোজ সন্ধ্যায়।
সন্ধ্যায় আমাদের কিংকর্তব্যবিমূঢ় দিনের সমাপ্তি হয় বলে আমরা জোড়বেঁধে চলে যাই বাজারে। সংগ্রহ করি চাল ডাল আলু তেল পেয়াজ। মাঝে মাঝে আমরা সংগ্রহ করি খাসির মাথা। অল্প দামে বিত্ত ভোজন। অন্ধ দোকানদার স্পর্শ দিয়ে রোজ আমাদের বুঝতে চেষ্টা করে। আমাদের গুণে গুণে দশ টাকার কাঁচা মরিচ দিয়ে ফিক করে হাসে। সন্ধ্যার স্বল্পালোয় তার হাসি বিভ্রান্ত করে। সেই বিভ্রান্তির পথ ধরে আমরা ঘরে ফিরি। কিংকর্তব্যবিমূঢ় রাতের শুরু হয়।
আমাদের বুয়া চালের ভেতর ডাল তেল পেয়াজ মরিচ আর আলুকুচি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে। সাথে সস্তায় কেনা খাসির মাথা। খিচুড়ি-মাথার শ্রাদ্ধ শেষে আমরা খুলে বসি আলাদিনের ব্যাগ। এই ব্যাগ থেকে সানি লিওনও বের হয়, কেরু কোম্পানীর দারুরসও বের হয়, মাঝে মাঝে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের খালার বুকের ভাঁজ থেকে মাদকপাতাও বের হয়।
আমাদের তখন অন্ধ দোকানদারের কথা মনে পড়ে। তার অন্ধ চোখ কাঁটাচামচে গেঁথে আমরা পরতে পরতে দেখি। তারারন্ধ্র দেখি। রেটিনা দেখি। দেখি একপশলা অন্ধকার। সানি লিওন অন্ধকারের গায়ে তার সমস্ত জামা কাপড় খুলে রাখে, দারুরসে গোসল করে আর মাদকপাতার ধোঁয়ায় চুল শুকিয়ে নেয়।
তারপর আমরা ঘুমোতে যাই। ঘুমের ভেতর দেখি, অন্ধ দোকানদার চেয়ে আছে। তার চোখে ঘুম নেই।