তিন লাখ রিয়েল জরিমানা দিয়ে মাফ
প্রতারণার দায়ে পাঁচ মামলায় সৌদি আরবে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের জেল হয়েছিল। তিন লাখ রিয়েল জরিমানা দিয়ে সাজা খাটা থেকে অব্যাহতি পান এরশাদ। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় পার্টির এমপি এইচএম গোলাম রেজাকে দলের প্রেসিডিয়াম ও সংসদের হুইপের পদ থেকে প্রতারণার দায়ে অব্যাহতি দেয়ার পর তিনি (রেজা) ইত্তেফাকের কাছে এ তথ্য ফাঁস করে দেন।
গোলাম রেজা বলেন, ‘আমি প্রতারক নই, তিনি আমার সঙ্গে এবং বহু মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। যাকে যখন প্রয়োজন ব্যবহার করেছেন, প্রয়োজন শেষে ছুঁড়ে মেরেছেন।’
এর আগে গতকাল দুপুরে এরশাদ এক বিবৃতিতে বলেন, গোলাম রেজা বিভিন্ন স্থানে আমার রাজনৈতিক সচিব এবং একান্ত সচিব (পিএস) পরিচয় দিয়ে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছেন। তিনি এই ভুয়া পরিচয় সম্বলিত ভিজিটিং কার্ড তৈরি করে বিতরণও করছেন যা প্রতারণার শামিল।
এ নিয়ে জাপার নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি নানা কথা শোনা যাচ্ছে। দলের প্রেসিডিয়ামের এক সদস্য ইত্তেফাককে বলেন, এরশাদের অসংখ্য কর্মের সহযোগী ছিলেন রেজা। স্বার্থের দ্বন্দ্বে তাদের মধুচন্দ্রিমা ভেঙ্গে গেছে। এদিকে জানা গেছে, এরশাদ অচিরেই গোলাম রেজাকে দল থেকে বহিষ্কার করছেন। তাহলে গোলাম রেজার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না।
গতকাল দেয়া বিবৃতিতে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ বলেন, গোলাম রেজা কখনোই আমার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন না, এখনো নেই এবং তিনি এখন আমার পিএসও নন। এই পরিচয় দিয়ে যদি তিনি কাউকে বিভ্রান্ত করতে চান তাহলে বিষয়টি আইনের আওতায় চলে আসবে। গোলাম রেজার স্থলে দলের প্রেসিডিয়ামের পদ এবং সংসদীয় দলের হুইপের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মুজিবুল হক চুন্নু এমপিকে।
এরশাদের অভিযোগ সম্পর্কে গোলাম রেজা গত রাতে ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমি কোনো প্রতারণা করিনি। প্রতারণা করেছেন এরশাদ, এমন কোনো লোক নেই যার সঙ্গে তিনি প্রতারণা করেননি। আমাকে দেয়া পদ-পদবির সকল কাগজপত্র আমার কাছে আছে। এই বিবৃতির মাধ্যমে আমার সম্মানহানি করা হয়েছে। এজন্য আমি এরশাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব, মামলা করব। কারণ এরশাদ সাহেব আমাকে দল থেকে বহিষ্কারের ক্ষমতা রাখেন, কিন্তু প্রতারক বলার কোনো অধিকার তার নেই।’
রেজা বলেন, ‘সৌদি আরবে এরশাদের ব্যবসা রয়েছে। এই ব্যবসার নামে তিনি অনেকের সঙ্গেই প্রতারণা করেছেন। প্রতারণার অভিযোগে এরশাদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হয়। এসব মামলায় ২০০৬ সালে তার জেল হয়। পরে তিন লাখ রিয়েল জরিমানা দিয়ে সাজা থেকে অব্যাহতি নেন।’ রেজার দাবি, এরশাদের পক্ষে এসব মামলা তিনিই দেখভাল করেন। এসব কাগজপত্রও তার কাছে রয়েছে।
জাপা দলীয় এই এমপি দাবি করেন, এরশাদ নিজেকে যেসব জায়গা-জমি, বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিক দাবি করেন এর সবগুলোরই দলিলপত্র জাল। এরশাদ কয়েকজন মহিলাকে ফ্ল্যাট দিয়েছেন। সেসব ফ্ল্যাটের দলিলও জাল। আর এসব জাল দলিল তৈরি ও অপকর্ম হয়েছে বারিধারায় এরশাদের বাসভবন ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’-এ।
Details
রেজা জানান, স্ত্রী থাকাকালে বিদিশার একাউন্টে ৪ লাখ ৯৯ হাজার পাউন্ড স্থানান্তর করেন এরশাদ যা মানিলন্ডারিং। এজন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলাও করেছে যা বিচারাধীন।
দলের প্রেসিডিয়ামের ও সংসদের হুইপের পদ হারানো গোলাম রেজা বলেন ‘এখন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হবে। এরশাদের সকল অপকর্মের নথিপত্র রয়েছে। ধীরে-ধীরে সবকিছু ফাঁস করা হবে। তখন দেশবাসীর কাছে তার (এরশাদের) প্রকৃত চেহারা উন্মোচিত হবে। আর তখনই প্রমাণ হবে কে আসল প্রতারক।’