somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিশাপ

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেক দিনের অনেক আগের কথা
এক যে ছিলো রাজার সাধের বন,
সেথায় ছিলো অনেক লতা পাতা
রাজা যেত খারাপ হলে মন।
বনের মাঝে হাটতো একা একা
সঙ্গী বিহীন গাছ গাছালির ছায়
দেখতো ঘুরে সবুজ বনে বনে
ভালো বাসতো মৃদু মন্দ বায়।
এক দিন সে দেখলো গিয়ে বনে
বৃদ্ধ ঋষি বসে গাছে তলে
আসন করে নয়ন দুটি বুজে
আপন মনে ইষ্ট মন্ত্র বলে।
ভাবলো রাজা- তাহার কাছে শুধাই
আমার একটা আছে অভিশাপ
চরণ ধরে তাহা যদি বলি
তিনি যদি করেন আমায় মাফ।
রাজা তখন ঋষির পায়ের কাছে
ভক্তি ভরে বসলো হাটু গেরে
ঋষি তখন নয়ন দুটি মেলে
বিকট জোরে বলল- তুই কে রে?
শব্দ শুনে বলল রাজা ভয়ে
আমি একজন অপরাধী রাজা
তোমার কাছে এলাম বিচার নিয়ে
আমায় তুমি দাও গো কঠিন সাজা।
বলল- ঋষি আমি সর্বহারা
সন্ন্যাসী এক বনের মাঝে থাকি
ধন সম্পত্তি রাজ্য ঘর ছাড়া
আমায় কেন বিচার দিলি ডাকি?
তুমি বিচার করতে পারবে জানি
বলল রাজা অশ্রু সজল চোখে,
সন্তান হীন রাজা একজন আমি
বন্ধা রাজা বলে সর্ব লোকে।

কি আছে তোর মনের মাঝে ব্যথা
কি করেছো এত বড় পাপ?
যার কারনে ঘুরছো বনে বনে
মাথায় নিয়ে মস্ত অভিশাপ?
ঋষির কথা শুনে রাজা বলে-
তখন আমার উঠতি তরুন বয়স
খ্যাতি শক্তি আছে চারিদিকে
প্রতিপত্তি আছে অনেক যশ।
তরুন-কুমার, আমি চারিদিকে
ঘোড়ার রথে ঘুরি পথে পথে
প্রজাগনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাহা
দেখত আমায় পথের দু-পাশ হতে।
জয়ধ্বনী দিতেন সকল প্রজা
শুনে পুলক লাগতো আমার মনে
আমি হলাম ভবিষ্যতের রাজা
দাস হলো সব দেশের প্রজাগনে।
এমনি করে বাড়তো উত্যেজনা
দ্রুত বেগে ছুটিয়ে যেতাম গাড়ি
সারা দিবস ঘুরে পথে পথে
সন্ধ্যাবেলা ফিরে যেতাম বাড়ি।
হঠাৎ একদিন অকসাৎ-ই আমি
পিতৃহারা হলাম অসময়ে
সবাই তখন আমায় বলল- কুমার
রাজ্য ভার লওগো রাজা হয়ে।
আমি তখন হলাম দেশের রাজা
শক্তিশালী আমি, সবাই দীন
আমার উপর নেই তো কোন জন
দেখি আমার চেয়ে সবাই ক্ষীণ।
ঘোড়া ছুটিয়ে যাই সবারই কাছে
শাসন ছেড়ে করি বেশি শোষণ
তাদের আমি বেশি ভালোবাসি
যারা আমায় করে বেশি তোষণ।
হঠাৎ একদিন চালিয়ে ঘোড়ার গাড়ি
যাচ্ছি ছুটে ছিন্ন একটি গাঁয়ে
পথে একটি অন্ধ শিশু ছিলো
লাগলো এসে আমার ঘোড়ার পায়ে।
ছিটকে গিয়ে পরলো পথের পর
গাড়ির চাকায় দিলো তারে পিষে
শিশুর জীবন হইলো অবসান
ধুলার সাথে রক্ত গেলো মিশে।
ছুটে এলো দুঃখিনী এক মা
মৃত শিশু বুকে চেপে ধরে
বলছে কেঁদে - মানিক সোনা আমার
মাকে ছেড়ে কোথায় গেলি, ওরে--
বলি তাকে একটি শিশুর লাগি
কাঁদছো কেন, নেও না এখন মেনে
তুমি যদি বলো এখন আমায়
হাজার শিশু পারি দিতে এনে।
তার পর সে রক্ত চোখে চেয়ে
আমার পানে, রইলো কিছু ক্ষন
বজ্রকন্ঠে বলল আমায় রোষে
পাষন্ড তুই, তোর নাই কি মন?
বিধবার এই বুকের আলো তুই
নিভিয়ে দিলি পাষন্ড তুই রাজা
তোরে আমি দিলাম অভিশাপ
এই পাপেরই পেতে হবে সাজা।
এই জনমে তোর কোলেতে আর
পাবি না তুই একটি ও সন্তান
সারা জীবন সন্তানেরই আশায়
কেঁদে কেঁদে ফিরবে যে তোর প্রাণ।

তাহার পরে অনেক বছর গেলো
নব বধু নিয়ে এলাম ঘরে
সমস্ত সুখ আছে আমার মনে
একটি সুখই নাই যে আমার ঘরে।
দিনে দিনে দিন যে চলে যায়
দেখতে পাই না সন্তানেরই মুখ
সকল সুখই তলিয়ে কোথা যায়
না থাকলে যে একটি মধুর সুখ।
আমার মনে প্রতিদিনই জাগে
বিধবার সেই করুন অভিশাপ
সত্যি হলো তাহার মনের কথা
মাথায় আমার কৃতকর্মের পাপ।
আমি তোমার চরণ ধরে বলি
তুমি আমায় দাও গো উপদেশ
আমার বুকের পাষাণ সম পাপের
হবে কি আর কোন দিনও শেষ?
ঋষি তখন বলল ধীরে ধীরে
যাহার কাছে করছো তুমি পাপ
তাহার পায়ে চাওগো তুমি ক্ষমা
তিনি যদি করেন তোমায় মাফ।
সেই জননী নেইতো পৃথিবীতে
পুত্র শোকে করেন দেহ ত্যাগ
রাজা বলেন জলছে বুকে আগুন
মনের মাঝে শুধুই অনুরাগ।
ঋষি তখন বলল তাকে শোনো
যে পাপ তোমার হয়ে গেছে, রাজা
এ পাপ থেকে মুক্তি নাই আর কোনো
তোমার তাতে পেতেই হবে সাজা।
রাজা তখন রাজ্য সবই ছেড়ে
সাধুর সাথে গেলেন বনবাস
রাজা তখন নেইকো রাজা আর
রাজা তখন হলেন চরণ দাস ।।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভোটের পর, আমরা পাকীদের বুটের নীচে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩২



পাকীরা অমানুষ, অপসংস্কৃতির ধারক ও বাহক; ওরা ২টি জাতিকে ঘৃণা করে, ভারতীয় ও বাংগালীদের; ওরা মনে করে যে, বাংগালীদের কারণেই পাকিরা হিন্দুদের কাছে পরাজিত হয়েছে ১৯৭১... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফুড ফর থট!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫



একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমান আসবে, বাংলাদেশ হাসবে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৮


আমি যখন স্কুলে পড়তাম, দুপুরের শিফটে ক্লাস ছিল। একদিন স্কুলে যাওয়ার আগে দেখি ছোটো মামা সংসদ টিভিতে অধিবেশন দেখছেন। কৌতূহল হলো, মামা এত মনোযোগ দিয়ে কী দেখছেন। আমিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামে কোনটি মত এবং কোনটি মতভেদ?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:৫৪




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একটি ডায়াটের গল্প, যেভাবে ওজন কমিয়েছিলাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮


১৬ ডিসেম্বরের খাবার ছিল। উপরের চায়ের ছবিতে ফেসবুকের দুই গ্রুপে দুটো পুরস্কার পেয়েছি প্রতিযোগিতায় আলহামদুলিল্লাহ।

মোবাইলে পোস্ট, ভুল ত্রুটি থাকিতে পারে, মার্জনীয় দৃষ্টিতে রাখবেন।

জব করি বাংলাদেশ ব্যাংকে। সারাদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×