somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ মারা যাবার পর

২৮ শে আগস্ট, ২০০৮ ভোর ৫:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন একজন মানুষ মারা গিয়েছে। লোকজন তার লাশ খাটিয়ায় বেঁধে কাঁধে নিয়ে সদলবলে অনুগামী, রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। আমি পিছনে। গাড়ী চালিয়ে অফিস থেকে ফিরছি, আমার পাশে আমার এক কলিগ বসা।
মানুষের মনে কখন কী ভাবনা জাগবে তা হলফ করে বলা সত্যিই মুসকিল। শব ও অনুগামীদের চলমান জমায়েত দেখে গাড়ির গতি কমিয়ে পিছু নিলাম। হঠাৎ অনুভব করলাম যেন আমিও শবযাত্রী। আমার ভাবনাও চলতে শুরু করলো গভীরে। যা চোখের সামনে দেখছি তাই, তবে সুদূরে; কেউই যা তখন সম্ভবত দেখছে না।
মনে প্রশ্ন এলো, মানুষ মারা গেলে পরিজন, পড়শি, নিকট দূর আত্মীয় এমনকি যে মৃত মানুষটাকে চিনে না পরিচয় নাই হয়তো সেও কেন অনুগামী হয়? কেন অনুগামী হতে টান অনুভব করে? টানটা কীসের? পাশে বসা কলিগকে এটা জিজ্ঞাসা করাতে সে তার ধর্মমত, বিশ্বাস মোতাবেক নানানভাবে আমাকে ব্যাখ্যা দিয়ে সন্তুষ্ট করার প্রয়াস নিল। মনপুত হলো না, যথেষ্ট মনে হলো না। ভাবতে লাগলাম; সেই ভাবনা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো এখন।

মানুষ মারা যাবার পর জীবিত বাকি সামাজিক মানুষের কর্তব্য-কর্ম কী - এনিয়ে সব ধর্মের মাঝে রীতিনীতি আছে। ঐ রীতিনীতিতে ভিন্নতা থাকলেও ওর মাঝে সাধারণ বৈশিষ্টও আছে। এই বৈশিষ্টগুলো কতটা সামাজিক-সাংস্কৃতিক আর কতটা ধর্মীয় ভাবধারার সেই উৎস তালাশ করতে যাওয়ার বোকামির মানে হয় না। সংস্কৃতি বা কালচারের অন্যতম উপাদান হয়ে দাড়িয়ে আছে ধর্ম - এভাবে বুঝলে আর বির্তক করার কিছু থাকে না। ফলে দাফন বা সৎকার (সৎকার্য অর্থাৎ ন্যায় বা আদর্শ কাজ) আমাদের কর্তব্য হয়ে উঠে। আবার দাফন বা সৎকার - এই সাধারণ বৈশিষ্টের একটা ব্যবহারিক দিক আছে।
আমাদের সবচেয়ে প্রিয়জন মারা গেলেও আমরা তাঁর লাশ ঘরের মধ্য আগলে নিয়ে বসে থাকি না। ধর্মীয় আচার বিচার নাই এমন কোন এক কল্পিত সমাজেও এঘটনা দেখতে পাবার কোন কারণ নাই। কারণ ব্যবহারিক দিকটা হলো, মৃতের বেহস্ত নসিবের দিকের চেয়েও ব্যবহারিক প্রশ্ন হলো লাশ নিয়ে ঘর-সংসার করা যায় না। যে গেছে সে তো গেছে, ঘরের মধ্যে ওটা সংসারের জীবিত মানুষের জীবন বসবাসের অযোগ্য করে তুলবে। অতএব দাফন বা সৎকার আমাদের সবার জন্য অবশ্য কর্তব্য। তবে তা গোছল কাফন পড়িয়ে হবে না অন্য কোন ধর্মীয় আচার (রিচুয়্যাল বা শরিয়ত) মতে হবে এই ভিন্নতা করার সুযোগ আছে।

কোন মানুষই ভাবতে পারেনা যে তাঁর মৃত্যুর পর সে পরিবার সমাজের জন্য একটা দায় হয়ে উঠুক। আবার এমন এক সময় যখন নিজের জন্য নিজেও কিছু করার নাই, কারণ নিজে বলতে তখন কিছু নাই। তাহলে ভরসা কী?
সমাজ। মানুষ সামাজিক। মানুষ মানেও সামাজিক মানুষ। সমাজ ছাড়া মানুষ নাই। পরস্পরের উপর নির্ভরশীল হয়ে জীবন ও তা যাপনই এককথায় সমাজ। অতএব ঐ সমাজের নিয়মরীতি চালু রাখা ও কর্তব্যকর্ম করাই তাঁর একমাত্র ভরসা। অতএব দাফন সৎকারের ব্যবস্হা। আবার দাফন সৎকার মানে সমাজ আছে, বা ওটা সমাজ হয়েছে উঠেছে তার প্রমাণ ও প্রকাশও বটে।
তাই চিনিনা জানিনা হলেও এমন কারো লাশের অনুগমণ, অবলীলায় এটাই তো স্বাভাবিক ঘটনা। টান অনুভব। টানটা কোথায় লাগে? কেন লাগে? ও তো অপর! কে হয় তাঁর? কেউ না! কিন্তু আসলেই কী কেউ না? তাহলে টান কেন? কারণ, মৃত একটা অজানা লাশের ভিতর মানুষ নিজেকেই এক ঝলক দেখে ফেলে। ক্ষণিকের জন্য মানুষ টের পায় কোথায় যেন তাঁর ভিতর একটা কমিউনিটিও বাস করে; কমিউনিটি, মানুষের উম্মা, যেটা তাঁর ধর্ম।
তাহলে, 'অগ্রসর' সমাজে, পশ্চিমে সন্তান আর এক শহরে থেকে বাবার সৎকারের ব্যবস্হা নিতে সৎকার সার্ভিস কোম্পানীকে ওখানে বসেই ক্রেডিট কার্ডে পেমেন্ট করছে -একোন সমাজের ইঙ্গিত। আমরা কী "অগ্রসর" হচ্ছি?
এসব ভাবতে ভাবতে গাড়ী চালিয়ে অফিস ফেরত আমি হঠাৎ আবিষ্কার করি, আমি লাশের অনুগামী হয়ে পথ চলছি।
১৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×