বর্তমান যুগের ঘন সামাজিক জীবনে এমন সুযোগ কমই দেখা যায়। রাগ করে যে দিকে দু'চোখ যায় সেদিকে চলে যাওয়ার অদম্য উদ্দেশ্য থাকলেও দৃষ্টি কিন্তু মোড়ের উচু বিলডিংটাতেই বাঁধা পায়। পালানোর উপায় নেই! এই সমাজে আমরা একে অপরের সাথে সম্পর্ককেই সর্বোচ্চ মর্যাদা দেই। কিন্তু আমরা কিন্তু একটি সম্পর্ককে সব সময়ই এড়িয়ে চলি, নিজের সাথে নিজের সম্পর্ক। এই সম্পর্ককে খুজে পেতেই দরকার ক্ষনিকের ধ্যান বা একাকিত্ব ।
কিন্তু এটি কেন দরকার? জীবনানন্দ বলেছেন:
"অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিষ্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে, ক্লান্ত - ক্লান্ত করে । "
একাকিত্ব অনেক ক্ষেত্রেই জীবনের সেই বিপন্নতাকে খুজে পেতে সাহায্য করে। সামাজিক রীতিনীতি, কর্তব্যবোধ, ভাল সাজার ভন্ডামি ইত্যাদি থেকে নিজেকে কিছু সময় আড়ালে রাখে। জীবনের কিছু গোপনীয় বিষয় আমরা আমাদের অতি নিকটজনকেও জানাতে পারিনা। এমনকি সেটা নিয়ে চিন্তা করতেও ভয় লাগে। মনে হয় এই গুপ্তকথার অস্তিত্ব না থাকলেই ভাল হত। এগুলো আমাদের মনকে কুড়ে কুড়ে খায়। একাকিত্ব ছাড়া এগুলোর মুখোমুখি হবার সুযোগ কোথায়?
এই একাকিত্ব শুধু একা থাকা নয়। একা থাকা হচ্ছে ঋণাত্বক অবস্থা, অপরের সানি্নধ্যের আশায় বিপন্ন থাকা। কিন্তু আমি যেই একাকিত্বের (solitude) কথা বলছি সেটি হচ্ছে ধনাত্বক উদ্দেশ্যে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া বিশেষ করে অপছন্দের কোন পরিবেশ থেকে। এটি মনের একটি অবস্থা এবং এই স্বল্প সময়ের ধ্যানে চিত্ত বিক্ষিপ্ত হয়না। নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া করা যায়। এর সুবিধা হচ্ছে লোকজন থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে নয়, লোকজনের মাঝে থেকেও একাকিত্বের স্বাদ আস্বাদন করা যায়।
একাকিত্বের শক্তি অনেক। এই সময়টুকুতে গভীরভাবে চিন্তা করুন, নতুন কোন আইডিয়া পেয়ে যাবেন সহজেই। অথবা নিজের সমালোচনা করুন এবং সীমাবদ্ধতাগুলোকে দুর করার চেষ্টা করুন।
একাকিত্বকে লালন করা সহজ। একটু একটু করে এর চর্চা করুন দেখবেন এটি আস্তে আস্তে আপনার চিন্তশক্তিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। হয়ত কবির ভাবালুতার বদনাম জুটবে আপনার কপালে। কিন্তু আপনিতো পাচ্ছেন সামজিক সম্পর্কের থেকেও বড় - আপনার নিজের সানি্নধ্য। জীবনের সবচেয়ে ভাল সময়টুকু পাবেন একাকিত্বে ভাল একটি স্বপ্নের ভেলা চড়িয়ে। এই প্রাগৈতিহাসিক শিল্প থেকে জীবনকে বনচিত করবেন না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


