somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই জীবনটাকে উপভোগ করতে পেরেছেন হূমায়ন আহমদ... তার ধর্মচিন্তা নিয়ে টানাটানি কি এই মুহূর্তে জরুরী...

২৬ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সবাই এই বিষয়ে একমত হবেন কিনা জানি না। তবে হুমায়ূন আহমদ জীবনটাকে পুরোপুরি উপভোগ করে গেছেন বলেই মনে হয়। তার বইয়ের কাটতি, তার খ্যাতি, জনপ্রিয়তা, অর্থ-সম্পদ, জীবনকে দেখা, উপভোগ করা, মানুষকে তার লেখনির মাধ্যমে যাদুকরে রাখা এসবই তার জীবনদ্দশায় তিনি নিজের চোখে দেখে যেতে পেরেছেন। এই সব কিছুর মিশেলে জীবন সবার ভাগ্যে হয় না। অনেকের খ্যাতি হলে অর্থ হয় না। শক্তিশালী লেখক হলেও জনপ্রিয়তা পান না ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে একজন হুমায়ূন আহমদ বলা যায় এর সবই পেয়েছেন। মনে হয় তিনি যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই জীবনটাকে উপভোগ করতে পেরেছেন।

হুমায়ূন আহমদ একজন জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক। নন্দিত কথাসাহিত্যিক। বহুল পঠিত উপন্যাসিক। খ্যাতিমান ব্যক্তি। জীবিত অবস্থাতেই তিনি নিজের জনপ্রিয়তা দেখে গেছেন। লেখালেখি করে আর্থিকভাবেও লাভবান হয়েছেন। জীবনটাকে উপভোগ করে গেছেন পুরোপুরি। লেখালেখি, নাটক, সিনেমাতেও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন সমান ভাবে। এটা তার সৌভাগ্যও বলতে হবে।

তার এখন দুনিয়া যদি আমরা তুলনা করি তাহলে তার লেখালেখি দিয়েই তাকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে। কিন্তু তাকে পাক্কা ঈমানদার বা আস্তিক না নাস্তিক তা নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছে কেউ কেউ। হুজুরের ভাবধারীরা তাকে মুসলমান বানাতে হুমায়ূন আহমদের দাদা নানা কিংবা অন্য কার কি সম্পর্কে তার কি মতামত ইসলাম সম্পর্কে তাকেই রেফারেন্স হিসেবে নিয়ে জোর দাবি জানাচ্ছেন যে তিনি খাঁটি মুসলমান ছিলেন। ইসলামী চেতনা কোনো অংশ বিশেষে হয় না। ধর্মচিন্তা থাকলেই যে তিনি ইসলামী চেতনায় উজ্জীবিত তা তো আমরা কি জোর দিয়ে বলতে পারব? কাজেই এই বিষয়টি নিয়ে যারা ইসলামী প্রিয় তাদের এই মুহূর্তে টানাটানি করা কি খুব জরুরী ছিল? সারা জীবনে তো তাকে জোরালোভাবে ইসলামের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিতে কোনো একটি বিষয়ে দেখেছি বলে মনে হয় না।

আবার তার মৃত্যুর পর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যানার টানিয়ে তাকে পক্ষাবলম্বী করানোর চেষ্টা চলেছে। অথচ জোর করে কাউকে মুসলমান বানানো যায় না। মুসলমান হতে হতে হলে বিশ্বাসী হতে হবে। ঈমান আমলে একনিষ্ঠ হতে হবে। আল্লাহ অন্তুরযামী। তিনি কাকে মাফ করবেন আর না করবেন তিনিই ভালো জানেন। কিন্তু তিনি বারবার কথা ও কাজে মিলের ঈমানী দিকটির প্রতি বিভিন্নভাবে জোর দিয়েছেন। এই বিষয়টির উপর, তাওহীদের বিষটির, বিশ্বাসের বিষয়টির উপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।

তার মৃত্যুর পর প্রচার প্রপাগান্ডার ডামাঢোলে কখনো কখনো মনে হয়েছে তাকে অতিমানব হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টা ছিল কারো কারো ভিতর। আসলে তিনি মানুষই ছিলেন। সাদাসিদে মানুষ কিন্তু প্রতিভাধর মানুষ ছিলেন। তার কলমে যাদু ছিল। ব্যক্তি মানুষের ভিতর আকর্ষণ ক্ষমতা ছিল। যার ফলে অগণিত ভক্ত পাঠক তিনি তৈরি করতে পেরেছিলেন।

তার সামগ্রিক জীবনাচার দেখলে বলা যায়, তিনি ভালো মন্দ মিলিয়েই মানুষ ছিলেন। ভুল ত্রুটির উর্ধে ছিলেন না। কোনো অতিমানব ছিলেন না। তার লেখনি, নাটক চলচ্চিত্রকে নির্ভেজাল, কালিমা মুক্ত, নিষ্পাপ একথা বলতে পারি না। এসব কিছু নিয়েই একজন হুমায়ূন আহমদ। কাজেই তাকে আমরা যদি এখন মূল্যায়ন করি তাহলে তার সাহিত্য কর্ম দিয়েই মূল্যায়ন করা ঠিক। ব্যক্তিমূল্যায়ন ও সাহিত্য মূল্যায়নে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে তার সামগ্রিক কর্মকাণ্ডও আসবে। তার বিশ্বাস কথাবার্তা চালচলেনর প্রতিফলনও তার লেখালখিতে পাওয়া যেতে পারে সেগুলোর মূল্যায়ন আসতে পারে। অতীতের ধ্যানধারণা বিশ্বাসের উপর পরবর্তী কর্মকাণ্ডে বিশ্বাসে কোনো পরিবর্তন আছে কিনা সে সব দেখা যেতে পারে। এতে গোপন করার কি আছে।

হুমায়ূন আহমদকে এই মুহূর্তে আমার মনে হয় সবাই আবেগ ভালোবাসা দিয়েই দেখছে। তাই আবেগ ভালোবাসা একটু তিথিয়ে আসলে মূল্যায়ন সুবিধা আরো ভালো হবে। এখন যে যাই বলছে তার আবেগের প্রতিফলন মনের অজান্তেই প্রকাশিত হচ্ছে। তাই এরকম একজন জনপ্রিয়, নন্দিত, পাঠকপ্রিয় কথাসাহিত্যককে অতিমানবের পর্যায়ে কিংবা আস্তিক নাস্তিকের মিশেলে আপাতত নাগুলিয়ে রাখি।


পুনশ্চ: হুমায়ূন আহমদের ঘেটুপুত্র কমলা যদি সমকামিতা ও বিকৃত রুচির হয়ে থাকে তাহলে তা প্রচার যেন না করা হয়। তার আত্মার শান্তির জন্যও এটা বন্ধ রাখা উচিত। আশা করি এ ব্যাপারে যারা হুমায়ূন আহমদকে খাঁটি আস্তিক হিসেবে দাবি করেন তারাও জোর দাবি জানাবেন। এটা তাদের এখন দায়িত্ব। যাদের এসব নিয়ে চিন্তা নেই তাদের কাছে তো এব্যাপারে আশা করা যায় না। ইসলাম বলে মানুষ তার আমলনামাই নিয়ে যায় মৃত্যুর পরে অন্য কিছু নয়। আর দুনিয়ায় যা রেখে যাবে তা সওয়াব বা বদ নেকি সবই তার হিসেবের খাতায় যোগ হবে। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড : হূমায়ূন আহমদ
বিষয়শ্রেণী: বিবিধ
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১২ সকাল ১০:১৬
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×