somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বসুমতী কটেজ পর্ব ৫

১২ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দরজা খুলতেই একটা লোক প্রায় মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়েই ঢুকে পরল, শরীর মাথা থেকে বৃষ্টির পানি ঝাড়তে ঝাড়তে বলল- " সরি, আপনাদের বিরক্ত করলাম। এমন ঝড় শুরু হয়েছে যে আর টিকতে পারলাম না। "
লোকটার পরনে জিন্স আর শার্ট। ভিজে শরীরের সঙ্গে লেপ্টে আছে। ঠান্ডায় মনে হয় কাঁপছে! বেশ লম্বা-চওড়া, 6 ফুটতো হবেই। গায়ের রং কালোর দিকে, মাথায় চুল ঝুটি করা, পায়ে কেডস। দেখে সব সভ্যই মনে হল। তোফায়েল রিভলবার নামিয়ে ফেলল। ছেলেটা ঝুটি খুলে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বলল-
"আপনাদের ব্যক্তিগত সময়ে বিরক্ত করলাম, সরি। অনেকক্ষণ ধরে বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলাম, শেষে টিকতে না পেরে বাধ্য হয়েই…..।"
মেয়েটা সহজ হলো।
" আপনি তো ভিজে গেছেন, দাঁড়ান আপনাকে টাওয়াল দিচ্ছি। " তোফায়েলের রাগ হল, হিংসা? ওর কেন এত দরদ দেখাতে হবে? লাইনে নিয়েই এসেছিল, বাগড়া দিল এই ছয় ফুটের জিরাফটা। জিরাফটা বলল -
"আমি খুব লজ্জিত, আপনারা নিশ্চয় একান্তে সময় কাটাচ্ছিলেন।" তোফাইল বিরক্ত হয়ে বলল-
" পারলাম কই?" ছেলেটা লজ্জিত হয়ে বলল -
"উটকো ঝামেলার জন্য সরি। কাবাবে হাড্ডি হয়ে গেলাম।" বলেই হেসে ফেললো।
মেয়েটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তোফায়েলের দিকে, ও ছেলেটার সাথে এমন ব্যবহার করছে কেন? ওর রাত মাটি হয়ে গেল বলে? একটা রাতের জন্য পুরুষ এতটা মরিয়া? ছেলেটা হাসতে হাসতেই বলল-
"আপনারা যান, নিজেদের মধ্যে সময় কাটান। আমি এখানেই কোথাও রাত কাটিয়ে দেবো। "
তোফাইল গম্ভীর মুখে বলল- "ঠিক আছে, আপনি এখানে থাকুন।" তারপর মেয়েটার দিকে তাকাতেই, মেয়েটা বলল - "নাহ…, আমরা তো গল্পই করছিলাম। "বলে তোফায়েলের দিকে তাকিয়ে হাসলো, ওর হাসিতে কি মিশিয়েছিল? তোফায়েলের বুকটা ব্যাথা করছে কেন? ছেলেটা শীতে কাঁপছে, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। মেয়েটা বলে উঠলো-
" দাঁড়ান, আপনার জন্য টাওয়াল আনি।" বলে ভিতরে যেতে নিলে ছেলেটা বাধা দেয়। বলে-
" আপনাকে ব্যস্ত হতে হবে না, ওসব আমার ব্যাগেই আছে। এমনিতেই আপনাদের একান্ত সময়ে ব্যাঘাত ঘটিয়ে লজ্জায় আছি।" তোফায়েল বিরক্ত হয়ে বলল- " তাহলে তো হলই, আপনি থাকেন। " তারপর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল- "চলো, আমরা ভেতরে যাই। "যেন নতুন বিবাহিতা স্ত্রী। মেয়েটা বিরক্ত হলো তোফায়েলের উপর। ও এমন করছে কেন? একটা রাতই কী সব? কী এমন পেত, ওর সাথে বিছানায় গেলে? ক্ষণিকের কিছু মুহূর্ত, তীব্র জলোচ্ছ্বাস। তারপর সব শেষ। ওই ক্ষণিকের মুহূর্তের জন্য পুরুষের এত আকুলতা? মেয়েটা বলল-
" আপনি তো পুরোটা ভিজে গেছেন, শীতে কাঁপছেন। "
"কাপড় আমার ব্যাগেই আছে, শুধু এক কাপ চা হলে জমতো।"
মেয়েটা হেসে বলল- "দাঁড়ান দেখছি।" তারপর মুখ ঘুরিয়ে তোফায়েলের দিকে একবার তাকিয়ে কিচেনের দিকে গেল। ছেলেটা মুচকি হেসে তোফাইলকে উদ্দেশ্য করে বলল-
" আমি কিন্তু চাইনি, উনি নিজে থেকেই করছেন।"
মেয়েটা কিচেন থেকেই জবাব দিল- " সমস্যা নেই, আমারও খেতে ইচ্ছে করছিল। "তারপর তোফায়েলের দিকে তাকিয়ে বললো- "তুমি খাবে?" তোফায়েল মাথা নাড়িয়ে না করল।
"তো আপনি এখানে? একা এই জঙ্গলে?" সরাসরি জিজ্ঞেস করল তোফায়েল। ছেলেটা জবাব দিল-" নেশা।" তোফায়েল ব্যাঙ্গ করে বলল-
" জঙ্গলে থাকার? "
ছেলেটা স্মিত হেসে বলল- "ফটোগ্রাফির, কত রাত জঙ্গলে থেকেছি। "
তোফায়েল বিদ্রুপ করে বলল- "আজকেও থাকলে পারতেন!"
ছেলেটা তোফায়েলের বিদ্রুপ বুঝতে পারল ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে বলল- " বুঝতে পারছি, আপনাদের ব্যক্তিগত সময় এসে পড়ায় বিরক্ত হচ্ছেন। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। ঝড়ের কবলে পড়ে না মরলেও, নিউমোনিয়া হয়ে মরা লাগতো। "
মেয়েটা কিচেন থেকে বলল- " একরাতে দুজন বিখ্যাত ব্যক্তির সাথে থাকার সৌভাগ্য হলো। "
ছেলেটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। মেয়েটা চুলায় চা ফুটতে দিয়ে বলল-
"উনি লেখক।"
ছেলেটা তোফায়েলের দিকে তাকিয়ে বলল- "আপনি লেখেন বুঝি?"
মেয়েটা ব্যঙ্গ করে হেসে বললো- " সামান্য লেখক।"
মেয়েরা আসলেই কি ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়? কিছুক্ষণ আগেও ওর হাসিটা মধুর লাগছিল, এখন বিষাক্ত লাগছে কেন?
ছেলেটা তোফায়েলের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে- "আমি সাদিক, আপনার সাথে পরিচয় হয়ে ভালো লাগলো।"
তোফায়েল গম্ভীর মুখে হ্যান্ডশেক করল।
" তো এখানে কি লেখার জন্য? না একান্ত সময় কাটানোর জন্য?" জিজ্ঞেস করল সাদিক।
" হানিমুন " জবাব দিলো তোফায়েল। মেয়েটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তোফায়েলের দিকে। সাদিক লজ্জিত হয়ে বলল-
" আইএম এক্সট্রিমলি সরি। আপনাদের একান্ত সময়ে ব্যাঘাত ঘটালাম। কোন উপায় ছিল না, থাকলে আপনাদের দুজনের মাঝে তৃতীয় জন হতাম না।"
তোফায়েল বিরক্ত কন্ঠে বলল- " হয়ে যখন গেছেন, কি আর করা।"
মেয়েটা কাপে চা ঢালতে ঢালতে বলল- " ওর সাথে তো রোজ গল্প করি, আজ না হয় আপনিও থাকলেন। "
"সেটা ঠিক হবে না, উনি এমনিতেই বিরক্ত হচ্ছেন।" তারপর তোফায়েলের দিকে তাকিয়ে বলল- " কি নামে লেখেন আপনি?"
" আমার নামে, তোফায়েল চৌধুরী। "
দৃঢ় স্বরে বলল তোফায়েল।
" আপনার একটা থ্রিলার গল্প আছে? সর্ব কাঠের কাঁঠালি কলা?" জানতে চাইল সাদিক।
তোফায়েল বিমোহিত হল, ওর থ্রিলার পড়েছে। কিন্তু মুখে গাম্ভীর্য টেনে বলল-
" হ্যাঁ"
" গল্প ভালো, তবে- উল্টো করে লিখলে ভালো হত। "
"মানে?" জানতে চাইল তোফায়েল।
" বাবাকে হত্যা করার জন্য মায়ের উপর প্রতিশোধ নেয়, এটা না দেখিয়ে- মাকে হত্যা করার জন্য বাবার উপর প্রতিশোধ নেয় এটা দেখালে ভালো করতেন। নারীবাদীদের সাপোর্ট পেতেন।"
তোফায়েল মেয়েটার দিকে তাকায়। মেয়েটা ডাইনিং টেবিলের ওপর কাপ রেখে বলে- "আপনিও কি নারীবিদ্বেষী?"
ছেলেটা কাপ হাতে নিয়ে এক ঢোক খায়। দু'হাতের মাঝে চায়ের কাপ রেখে ঘষতে লাগল, হাতটা যেন গরম হয়।
"না তা নই। আমি বলছিনা যে মেয়েরা ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করুক। আমি বলছি ছেলেদেরও ঘরে বাধতে শিখুক।"
তোফায়েল সাদিকের কথা শুনে বিমোহিত হল। এতো ওরই কথা, ছেলেটা জানলো কীভাবে? কিন্তু তোফায়েল চোখে মুখে গাম্ভীর্য ধরে রাখল।
মেয়েটা স্মিত হেসে বলল- " আপনিও কি বলবেন যে বাসে, আফিসে নারীরা লাঞ্ছিত হচ্ছে এটা শুধু ক্রাইম, নারীবাদীতা নয়।"
" অবশ্যই নারীবাদীতা। দুর্বল জনগোষ্ঠীর উপর যখন অন্যায় করা হয় তখন তারা প্রতিবাদ করে উঠবেই। অত্যাচারের বিষয় গুলো নিয়েই তো প্রতিবাদ করবে।"
তোফায়েল বিরক্ত হল, আর যেন সাদিকের কথা ভালো লাগছে না ওর। ও রুমে যাওয়ার জন্য উসখুস করছে কিন্তু মেয়েটা উঠার নামই নিচ্ছে না। তোফায়েল বিরক্ত হয়েই বলল-
"আপনি কিন্তু বলছেন দূর্বল, যদি দূর্বলই হয় তাহলে সমধিকারে আসে কীভাবে?"
"দূর্বল, কারণ আমরা সবল হতে দেইনি।"
মেয়েটা বলল- " যাক, এখানে আপনাদের মিল নেই।"
তোফায়েল চাইলে আরো অনেক যুক্তি দেখাতে পারত কিন্তু সে আর কথা বাড়াতে চায়ছিলো না। মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলল-
"চলো, আমরা ভেতরে যাই। উনাকে একা থাকতে দাও। ভেজা জামায় অনেক্ষন বসে আছে।"
মেয়েটা বিরক্ত হল, ও কেন এমন করছে!
ছেলেটা বলল- " হ্যা, আপনারা যান। আপনাদের মধুর রাত, একান্তে সময় কাটান।"
তোফায়েল চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। যদিও মেয়েটার ইচ্ছে করছিলো না তবুও সে উঠল। চা অনেক আগেই শেষ।

ছেলেটা ব্যাগ থেকে একটা টাউজার আর টি-শার্ট বের করল। তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মাথা, শরীর, চুল মুছল। ভেজা কাপর ছরিয়ে দিলো চেয়ার গুলোর উপর।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১০:৫৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×