somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বসুমতী কটেজ পর্ব ৬

১৩ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বিছানায় গড়িয়ে পরল তোফায়েল। কন্ঠে অভিমান আর রাগ টেনে বলল- "ভালোয় তো গল্প জুড়িয়েছিলে?"
ও কি নালিশ করছে? এত অধিকার জন্মে গেছে? দপ করে জ্বলে উঠলো মেয়েটা।
"আপনি হানিমুনের কথা বললেন কেন?"
লাফ দিয়ে উঠলো তোফায়েল। মেয়েটার দৃষ্টি এত তীক্ষ্ণ হল কখন? বিছানা থেকে নেমে মেয়েটার কাছে আসলো। ওকে বোঝানোর চেষ্টা করল। ধীরো স্বরে বলল- " দেখো, আমরা জানিনা লোকটা কেমন? একা একটা ছেলের সাথে এতক্ষন কাটিয়েছ, শুনলে তোমার সম্পর্কে কী ভাববে? তারপর যদি ও চেয়ে বসে?"
তোফায়েলের কথা ভুল নয়, ভাবলো মেয়েটা। কারো খোলশ দেখে জাত চেনা যায়না। শান্ত হল মেয়েটা। তোফায়েল হেয়ালি করে বলল-
"তাছাড়া, আমি কোন ভাগে নেই। আমার পুরোটা একার চাই।"
মেয়েটা আবার জ্বলে উঠলো, ও এখোনো ওসব ভাবছে? একটা প্যাক ঢালতে ঢালতে বলল- "সুযোগ তো পেয়েছিলেন।"
"সেটাই তো আফসোস হচ্ছে।" মেয়েটার সামনে এসে বসতে বসতে বলল তোফায়েল।
ও এখোনো এসব ভাবছে কী করে? পুরুষ এতটা নির্লজ্জ হতে পারে? প্যাক গিলতে গিলতে মেয়েটা বলল- "আপনার ভাগ্য খারাপ?"
"আমি কিন্তু এখোনো আশা ছাড়িনি" স্মিত হেসে বলল তোফায়েল।
"এখোনো আশা রাখছেন?"
তোফায়েলের নির্লজ্জতা দেখে রাগে পুড়ে যাচ্ছে মেয়েটা। ওর চোখের ভেতর যে আগুন জ্বলছে, তাতে তোফায়েলের সমস্ত রাতের স্বপ্ন ভৎস হয়ে গেছে। তোফায়েল যদি মন খোলা রাখত দেখতে পেত।
তোফায়েল নির্লজ্জতার এককাঠি সরোষ উপরে গিয়ে বলল- রাত এখোনো বাকি। "
ধর্যের বাধ ভাঙছে মেয়েটার। এই সমাজেত সভ্য পুরুষ? একজন লেখক? ছি:।
মেয়েটা বিরক্তিকর স্বরে বলল- " এতটা নির্লজ্জ হচ্ছেন কী করে?"
তোফায়েলের আতে ঘা পড়ল। দম্ভে জ্বলে ওঠে রাগত স্বরে বলল-
"জোর খাটাতে বলছো?"
"জোর তো খাটিয়েছিলেন।"
"প্রয়োজন হলে আবার খাটাবো।"
মেয়েটা দেখল, নাহ..এভাবে রাগারাগি করে লাভ নেই। ওকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। রাতটা কোন রকম কাটিয়ে দিতে হবে। মেয়েটা নরম হল। স্মিত হেসে বলল- আপনি কিন্তু কথা দিয়েছেন।"
"ওখানেই তো বাধা আছি" বলল তোফায়েল।
ঠিক সেই মুহূর্তে সাদিক এলো। দরজায় কড়া নারার শব্দ। তোফায়েল দরজা খুলতেই সাদিক বলল- "আপনাদের খাওয়া কি হয়ে গেছে, টেবিলে খাবার দেখছি? পেটাটা চো চো করছে, রাতে খাওয়া হয়নি।"
তোফায়েল বিরক্তর স্বরে বলল- "আমরা খেয়েছি, আপনি খান" বলে সাদিকের মুখের উপর দরজা বন্ধ করতে যাবে মেয়েটা বলে উঠল- "আমি খাব।"
তোফায়েল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। মেয়েটা তোফায়েলের সামনে দিয়ে সাদিকের সাথে ডাইনিং এ গেলো। তোফায়েল ভেতরে ভেতরে ফুসছে, ধপ করে বিছানায় বসে পরল।

মেয়েটা খাবারের ঢাকনা সরিয়ে বলল- " ঠান্ডা হয়ে গেছে, আমি গরম করে আনছি।"
সাদিক বসে পড়ল চেয়ারে।
"আপনাকে ব্যস্ত হতে হবে না। যা আছে ঐ খেয়ে নেব। অবশ্য ঠান্ডা খাবার খেতে আপনার যদি আপত্তি না থাকে?"
মেয়েটা স্মিত হেসে একটা প্লেট নিজে নিলো আর একটা সাদিককে দিলো। এই এক সমস্যা। ভেতরে যা কিছু হয়ে যাক না কেন, সবসময় অন্যের সামনে হাসি মুখে থাকতে হবে। সে হাসি আসার কোন কারণ না থাকলেও। মানুষ অকারণে হাসে, অকারণে কি কাদে? কেউ কি কাদতে কাদতে বলে- হাই আমি সাদিক, আপনার সাথে পরিচিত হতে পেরে ভালো লাগল। ওরা কি জানে- মানুষ এক জীবনে সবচেয়ে বেশী তার নিজের উপরি হাসে।
সাদিক খেতে খেতে বলল- "আপনারও এখোনো খাওয়া হয়নি।"
অকারণেই ওর ঠোটে হাসি লেগে আছে। মেয়েটা ঠোটের হাসি মেলে ধরে বলল- " না….খেয়েছি। এখন আবার ক্ষধা লাগল।"
"আপনার কি প্রায় মাঝ রাতে ক্ষুধা পায়?"
"হ্যা, প্রয়ই।" অকারণেই হাসছে মেয়েটা। হাসতে হাসতেই বলল-
"আপনি বিয়ে করেছেন?"
হচকচিয়ে গেল সাদিক। আচমকা এই ধরনের প্রশ্ন আশাকরেনি সে।
"না" বলল সাদিক।
"কেন?" জানতে চাইল মেয়েটা।
"ফটোগ্রাফির নেশা। আজ এখানে থাকি তো কাল কোনোখানে। এসবের মাঝে জড়াতে চাইনি।"
"করলেই পারতেন। ক্যমেরার জায়গায় বউকে কাধে নিয়ে ঘুরতেন।"
বলেই হেসে ফেলল মেয়েটা, যেন মজার কিছু বলেছে। সাদিক বুঝতে পেলনা মেয়েটা অকারণেই এত কেন হাসছে?

বুঝতে কি মেয়েটাও পেরেছে? ওর ভেতরে এত কীসের দন্দ চলছে? কেন মন ঘরের দিকে ছুটছে? তোফায়েলের জন্য খারাপ কেন লাগছে?

তোফায়েল ভেতরে ভেতরে ফুসছে। রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। গায়ে কাপর রাখাই দায়, কখন যে পুড়ে যায়। তোফায়েল বেরিয়ে এলো, অকারণেই কিচেনে হাতাহাতি করতে লাগল।
সাদিক হেসে বলল- " এতটা ভার বইতে পারব কি? সেটা ভেবে আর করা হয়নি।"
"মেয়েদের শরীর মন দুটোই নরম, আপনার ক্যমেরার মত শক্ত না" তারপর তোয়াফেল কে উদ্দেশ্য করে গলা উচু করে বলল- "কী তাই না?"

রাগে তোফায়েলের চোখ জ্বলছে। তোফায়েল কোন উত্তর না দিয়ে চলে গেল। সাদিক বলল- "আপনাদের খুব অসুবিধায় ফেললাম? আপনাদের একান্ত মুহূর্ত গুলোকে খুন করছি। উনি বোধয় খুব বিরক্ত?"
"ও একটু এমনি, ওহ কিছুনা।"
"আপনাদের বিয়ের কতদিন হল?"
"৪ দিন। তার আগে অবশ্য দু'বছর ধরে চিনতাম।"
"শুধু চিনতেন? না, রিলেশন ছিল?" চোখের ভুরু উচিয়ে বলল সাদিক।
"রিলেশন ছিলো।" হাসির মাত্রা বজায় রাখল মেয়েটা।
"আপনাদের পরিচয় কীভাবে? প্রথম দেখ?" জানতে চাইল সাদিক।
মেয়েটা আজকের রাতের ঘটনাকেই দুবছর পিছিয়ে বলতে লাগল। মাঝে মাঝে ওর হাসি দূকুল ছাপিয়ে যাচ্ছে। আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে তোফায়েলের বুকে। কেমন করে তোফায়েল দরজা খোলা রেখে লিখছিলো। কেমন করে ঝড়ের রাতে ও এসে আশ্রয় নিয়েছে। ঠিক কখন তোফায়েল ওর হাত ধরেছে। কীভাবে আকুতি-মিনতি করছিলো। সব বলতে লাগল।

বাহিরে বোধয় ঝড় আর নেই। শো শো শব্দ শোনা যাচ্ছে না। টিপ টিপ বৃষ্টি অবশ্য এখোনো পরছে। কিন্তু ঝড় শুরু হয়ে গেছে তোফায়েলের ভেতরে। সেই ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে তোফায়েল। মাথা থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত জ্বলে যাচ্ছে। একটা ছ'ফুট জিরাফের কাছে হার সে মানবে না। তোফায়েল আবার বেরিয়ে এলো।
তোফায়েলকে দেখেই মেয়েটা বলল- " এসো, আমাদের প্রথম দেখার গল্প বলছিলাম উনাকে।"
তোফায়েল একটা চেয়ার টেনে বসল।
সাদিক বলক- "আপনাদের গল্প তো খুব ইন্টারেস্টিং। এটা নিয়ে একটা গল্প লিখেন না কেন?"
তোফায়েল অভিমানী গলায় বলল-"ঘরের গল্প পর কে জানাতে চাই না বলে। ভালোবাসা ভেতরেই থাক, দেখানোর চেয়ে বড় যন্ত্রণা আর কিছুতেই নেই।"
সাদিক হেসে বলল- " আমার খাওয়া কিন্তু শেষ। আমি উঠলাম।"
তোফায়েল ব্যঙ্গ করে বলল- "আর একটু বসুন। গল্প করতে ভালোই লাগছিলো।" তারপর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল- " আমরা তো গল্পই করছিলাম।"
মেয়েটার চোখের অশ্রু ভাসছিলো কি? নারীর মন, বোঝা বড় দায়।

সাদিক বলল- "আপনারা গল্প করেন, আপনাদের মধুর রাত। আমি আর আপনাদের মাঝে তৃতীয়জন না হতে চাই না।"
তোফায়েল বিদ্রুপ করে বলল- " তৃতীয়জন হয়েই আছেন, আর না হবার কারণ দেখছি না। ও যথেষ্ট সুন্দরী।"
মেয়েটা অবাক হয়ে তোফায়েলের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে অশ্রু ভাসছে। তোফায়েল ওকে এমন করে অপমান করছে কেন?
তোফায়েলের বিদ্রুপটা সাদিকের কোথায় যেন লাগল। ও তীক্ষ্ণ করে বলল- "ভয় নেই তোফায়েল সাহেব, আপনার কাছ থেকে উনাকে কেড়ে নেব না।"
মেয়েটা চেয়ার চেড়ে উঠে দাড়াল। কঠিন স্বরে বলল- "আপনি ডাকলেই বুঝি যাব?"
সাদিক দৃঢ় স্বরে বলল- "আসবেন না?"
মেয়েটা ভেবেপেল না, পুরুষেরা এত আত্তবিস্বাশ পায় কোথা থেকে। মেয়েরা কি খেলনা? যে কেউ ডাকলেই চলে যাবে?
মেয়েটা তোফায়েলের দিকে তাকিয়ে বলল- "কেউ হাত পেতে আকুতি-মিনতি করে পায় না।" তারপর সাদিকের দিকে তাকিয়ে ব্যঙ্গ স্বরে বলল" আর আপনি ডাকলেই চলে যাব। আপানারা পুরুষেরা এত আত্তবিস্বাসী হন কী করে?"
মেয়েটা ভেবে পেল না, সে কেন তোফায়েলের হয়ে কথা বলছে।তোফায়েল চুপচাপ বসে আছে, ওর ভালো লাগছে। তবে কি অবশিষ্ট অংশ টুকু ও পেল?
সাদিক ধীরো স্বরে বলল- "দেখলেন তো, আপনি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছেন? আপনার জিনিস আপনারি আছে।" তারপর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল- "ও অন্য কারো হবে না।" ছোট একটা অনাহুত দীর্ঘশ্বাস পড়ল কি? বুঝতে পারল না সাদিক। সে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।
মেয়েটা খাবারের প্লেট গুলো বেসিনে রেখে রুমে গেল, পেছেন পেছন তোফায়েল।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:১১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×