somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বসুমতি কটেজ পর্ব ৭

১৮ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৫:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঝড় আর নেই, না ভেতরে না বাহিরে। পরিবেশটা যদিও থমথমে হয়ে আছে। থমথমে ভাবটা কাটানো দরকার। তোফায়েল টিভি ছেড়ে দেয়। স্মার্ট টিভি, নেট কানেকশন আছে। তোফায়েল ইউটিউব এনে ডিস্কভারি চ্যানেল এ এসে, একটা ভিডিও ছেড়ে দেয়।

একটা জঙ্গল। জঙ্গলে ঘাপটি মেরে আছে একটা বাঘ। নজর রাখছে একদল হরিনের উপর। একটি হরিন সাবক দলচুত হয়ে পরল কী, গুটি গুটি পায়ে এগোয় বাঘ। একটি বাঘ নাকি, কেবল ত্রিশ পারসেন্ট শিকারে সফলতা পায়।

তোফায়েল জিঙ্গেস করল-
"খাওয়া হল?"
মেয়েটা বসেছে তোফায়েলের লেখার টেবিলে। সেখান থেকেই উত্তর দিলো- "আপনি খেতে দিলেন কই?"
"আমি গিয়ে খাওয়া নষ্ট করে দিলাম?"
"ওরকম বারবার গিয়ে হোম্বার মত তাকিয়ে থাকলে খাওয়া যায়?"
"এখোনো চাইলে যেতে পারো, কথা দিচ্ছি আর যাব না।" তোফায়েলের কন্ঠে অভিমান ঝড়ছে।
মেয়েটা তোফায়েলের দিকে তাকায়। চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে সোফায় বসে। বলে- নাহ, একবার যখন এসেছি আর যাব না।"
তোফায়েল টিভির দিকে তাকিয়ে অভিমানী কন্ঠে বলে- " আমি নিস্বসের কাছে এসেছিলাম, তুমি আসনি।"
মেয়েটা স্মিত হেসে বলে- " কথা ছিল শুধু গল্প করবেন।"
তোফায়েল অভিমান ধারণ রেখেই বলল- " গল্পে আপনার মন বসছে কই? মন তো পড়ে আছে বাহিরে।"
মেয়েটা অবাক হয়, ভাবে- ওর প্রতি এত কীসের অধিকার তোফায়েলের? তখন ওর হয়ে সাদিকের বিরুদ্ধে কথা বলেছে বলে কি, ও ধরে নিয়েছে অধিকার জন্মে গেছে? নাহ, ও তো কাউকে সে অধিকার দেয়নি। মেয়েটা তীক্ষ্ণ স্বরে বলে- "কী?"
তোফায়েল ভাবে- নাহ, মেয়েটাকে রাগানো যাবে না। এ রাত কিছুতেই নিষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। রাত এখোনো বাকি।

ঠিক এই মুহুর্তে কারেন্ট আবার যায়। তোফায়েল নিজের ভুল বুঝতে পারল। মেয়েটা লাইটার দিয়ে মোম ধরিয়ে দেয়। সেই মোমের ক্ষীন আলোয় অন্ধকার যদিও কাটলো, দুটি মন সন্ধান খুজে পেল না। তোফায়েল কি দূর্বল হয়ে পরেছে? নয়তো এত লাগছে কেন? মেয়েটাও কি দূর্বল হয়ে পরেছে? নয়তো তোফায়েল্র বিদ্রুপ গুলো গায়ে ফুটছে কেন? দুজনের কেউ কারণ খুজে পেল না। মোমের নরন আলোয় অন্ধকার যদিও বা কাটলো, ঐ নিরবতা কাটলো না।

বাহিরে ঝুম বৃষ্টি। ভেতরে নিস্তব্দতা। শীত শীত করছে। তোফায়েল আর একটা প্যাক নিয়ে নরম গলায় বলল- "ও চোখে অন্য চোখ পড়লে আমার সহে না যে।"
মেয়েটা ভাবল, একটা রাতের জন্য পুরুষ এতটা মরিয়া? এটাতা কাতরতা? কী হবে? ঐতো জলোচ্ছ্বাস, তারপর পড়ে থাকা, একা। কেউ কোথাও নেই যেন, ধূ ধূ প্রান্তর। তীর বয়ে যাওয়া নদী। কেউ তো পাশে থাকে না। তুমুল উম্নাদনার শেষে জড়িয়ে রাখে না। যেন সব শেষ। সমস্ত প্রেম, ভালোবাসা ভেসে গেছে ঐ জলোচ্ছ্বাসে। ক্ষান্ত হলেই মুখ ফিরিয়ে রাখে। তবুও এর জন্যই পুরুষের এত আকুলতা? মেয়েটার মায়া হয় তোফায়েলের জন্য। ভুল করার সিদ্ধান্ত তো সে আগেই নিয়েছিলো। তোফায়েল যদি তখন আচমকা হাতটা না ধরে বসত, তাহলে হয়তো এতক্ষণে সব খেলা শেষ হয়ে যেত। তারপর চিরো নিস্তব্ধতা। ধূ ধূ প্রান্তর, তীর বয়ে যাওয়া নদী। কাছাকাছি তবুও দ্বিমুখী। সেই তো ভালো ছিল। এতটা টানা-পোড়নে পরতে হত না তাহলে।

মেয়েটা ভাবে- ওর ভেতরে এত কীসের দন্দ চলছে? তোফায়েলকে তো ওর ভালোয় লেগেছিলো। তবে কি তৃতীয়জন? নাহ…. তাহলে তো তখন তোফায়েলের জন্য মন কেমন করত না। তবে? এত দ্বীধা এলো কোথ থেকে?
মেয়েটা সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল-
"ভাষা যদি পড়তে পারতেন, তাহলে বুঝতেন।"
তোফায়েল গলার স্বরে আবেদন এনে বলল- " তুমি শিখিয়ে দাও।"
মেয়েটা একটু তীক্ষ্ণ করেই যেন বলল- "এই আপনি লেখক? মন বুঝতে পারেন না, কী নিয়ে লেখেন।"
তোফায়েলের মনেহল মেয়েটা বুঝি নরম হল। রাত এখোনো ব্যার্থ হয়নি। আশার শিখা এখোনো জ্বলছে। তোফায়েল বলল- " মনের মালিক কি মনের কথা শুনছে?"
তোফায়েলের আত্তবিস্বাশ দেখে মেয়েটা একটা দীর্ঘ নিস্বাশ ছাড়ল। ওর আত্তবিস্বাশ বেড়েয় চলেছে।

মেয়েটার মনে কী চলছে সেটা কি মেয়েটা নিজে বুঝতে পারছে? কেন ওর মনে এত দন্দ। মেয়েটা নিজের জন্য এক প্যাক বানিয়ে, একটা সিগারেট জ্বালিয়ে সোফায় হেলেন দিয়ে বলল-
"কথাছিল কৃপা হলে পাবেন, এখন তো জেদ করছেন। ধর্য ধরুণ। রাত তো এখোনো বাকি।"
তোফায়েল বলল- "ধর্য ধরেই তো আছি, কিন্তুর ছায়ার সংখ্যা যে বেড়েছে।"
মেয়েটা ফিক করে হেসে বলল- "ভয় হচ্ছে?"
"সেটাই কি স্বাভাবিক না? তুমি যথেষ্ট সুন্দরী, যে কেউ চাইবে।"
"প্রয়জোন হলে লড়াই করবেন। হেলেনের জন্য পুরো ট্রয় যুদ্ধ করেছিলো, আমার জন্য আপনি করতে পারবেন না? নাকি, লড়তে ভয় লাগে?"
মেয়েটার কথায় কোথাও তীক্ষ্ণতা ছিলো, নয়তো খচ করে এসে তোফায়েলের বুকে লাগতো না, নাকি ইগোতে? যেখানেই লাগুক, তোফায়েল ঘায়েল হয়েছে। একজন পুরুষকে লড়তে ভয় পায় বলা মানে, পুরুষত্বে আঘাত করা। এটা আমাদের আদিম সমাজ থেকেই বয়ে এসেছে। লড়াইয়ের প্রান্তর কেবলি পুরুষের জন্য। জ্বীন গত ভাবে রয়েই গেছে সভ্যতার খোলশের অভ্যান্তরে। যদিও বলছি নারীরা অধিকারের নামে অগ্রাধিকার নিচ্ছে, যা কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিচ্ছেও। যদি মেরিটের ভিত্তিতেই সকল নির্বাচন হয় তবে, কোঠা কেন থাকবে? কোঠাতো পিছিয়ে পরাদের জন্য। যদি পিছিয়েই থাকে তাহলে সমান সমান আসে কীভাবে? আপনারা মানতে না চাইলেও যে সমাজে ধর্ষণের জন্য মেয়েদের পোষাক দায়ী হয় সেখানে নারীরা পিছিয়েই আছে। পিছিয়ে পরাদের এগিয়ে যেতে পথ ছেড়ে দেব কেন? নিজের পথ নিজেরা তৈরি করে নিক। জ্বীনগত ভাবে সেই আদিমতার পুরুষ নামক একটি ইগো রয়েই গেছে আমাদের ভেতরে। যা প্রায়ই জেগে ওঠে। তোফায়েলেরও কী জাগলো?

তোফায়েল পৌরুষালি কন্ঠে বলল- "লড়াইয়ে ভয় পাই না। ভয় পাই যদি ঠকে যাই।"
"বিশ্বাসের অভাব বোধ করছেন?" স্মিত হেসে মেয়েটা বলল।
তোফায়েল বলল- "বিশ্বাস রাখি কী করে? প্রকৃতি ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাচ্ছে। এই ঝড় এই বৃষ্টি, আবার নিস্তব্দতা।
তোফায়েল খেলতে পারছে না। পিচটা অপরিচিত। এই মনে হচ্ছে হাতের মুঠোয়, আঙ্গুল গুলো বন্ধ করে ফেললেই আটকে যাবে। আবার মনে হচ্ছ, না….ওতো নাগালেরও বাহিরে। তবে কি অরাধ্য ছোবে না সে? হাতের মুঠোয় পেয়েও স্পর্শ পাবে না?
মেয়েটা বলল- "প্রকৃতি যতই বদলে যাক। এ রাত একটি দুর্যোগ পূর্ন রাত, এর নড়চড় হবে না। ঝড় থেমে গিয়েও সূর্য উঠবে না। ভোর হতে এখোনো অনেক দেরী।"

মেয়েটা ভোর হতে দেরী বলল কেন? মেয়েটা কি বোঝাচ্ছে, রাত এখোনো বাকি। এখোনো আশা আছে। নিরাশ হয়োনা। তোফায়েল কি আশা ধরে রাখবে? নাকি মেয়েটা ভোরের অপেক্ষায় আছে? মনে হতেই তোফায়েলের শরীর নাড়া দিয়ে উঠল, শীর দ্বারা দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। মেয়েটা খেলাচ্ছে। ভোরের অপেক্ষায় আছে। ভোর হলেই সব খেলা শেষ। কিন্তু তোফায়েল এখন কী করবে? এ মাঠ তো ওর কাছে অপরিচিত। এখানে সে দূর্বল। জোর সে করতে পারবে না, চেয়ে চেয়ে আকুল হলেও পাবে না। তবে কি রাতটা রঙ্গীন হবে না? সমস্ত রাতের সাজানো গল্প পূর্ণ হবে না?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ৮:৩৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×