যমুনা টিভিতে জয়ের পাঠানো ভিডিও দেখলাম এবং এটা স্পষ্ট যে সে দেশে আসবে, রাজনীতি ও করবে৷ কিন্তু কবে? সেটা দূরবর্তী ভবিষ্যৎই জানে।
বর্তমানটা হল, একদল লোক বিচার-বিশ্লেষণ করে বলছে এই বিজয় ছাত্রদের নয়। এটা সম্পূর্ণ আমেরিকার চাল। আমেরিকা সেন্টমার্টিনে তাদের ঘাটি গাড়তে চেয়েছিলো এবং মহান দরদী, রাজপথের নির্ভিক সৈনিক, জননেত্রী, যিনি কিছুদিন আগেও দেশনেত্রী ছিলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা, ময়ানবতার মা, হযরত আম্মা, শেখ হাসিনা সত্য, ন্যায় এবং দৃড়তম দু:সাহসের সাথে আমেরিকার সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। এবং চায়নার সাথে শেখ হাসিনার সম্পর্ক আমেরিকার পছন্দ হচ্ছিলো না বলেই আমেরিকা এই কাজ করেছে। ঘটনা অসম্ভব না, কারণ আমাদের দেশের দল গুলো ইলেকশনে জেতার জন্য আমেরিকার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমেরিকা যাকে ইশারা দিবে সেই গদিতে বসবে। জনগন তো এখানে বাঁদর, জনগন যাকে চাইবে সেই ক্ষমতায় থাকবে বলে জনগণকে বাঁদর নাচ নাচানো হয়। মূলত আমেরিকা যাকে চাইবে সেই ক্ষমতাই থাকবে। যেহেতু আমেরিকার সাথে নোবেলজয়ী, ক্ষুদ্রঋন প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট স্বজন ড.মোহাম্মদ ইউনূসের আতাত আছে, সে কারণে তাকে অন্তবর্তিকালিন সরকারের প্রধান বানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে বলাযায় ইউনুসই যাকে চাইবেন অর্থাৎ আমেরিকা থেকে যে নির্দেশ আসবে ইউনুস সাহেব তাকেই প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে যাবেন। নয়তো একদল উটকো ছেলেমেয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে গেল আর হাসিনা দেশ থেকে পালালো। এত সহজ?
ইন্ডিয়ার সাথে চায়নার জন্ম শত্রুতা। এরপরও হাসিনা ইন্ডিয়া এবং চায়নার সাথে ভালো সম্পর্ক মেইনটেইন করে চলছিলেন। হাটাৎ তার কী মতিভ্রম হল যে সে আমেরিকার বিরুদ্ধে চলে গেল। যদি ক্ষমতাই মূল লক্ষ হয় তবে আমেরিকা কে ঘাটি করতে দিত।
কিন্তু এটা পুরোটাই থিউরি, এর কতটুকু সত্য সেটাও ভবিষ্যতেই জানতে পারবো।
কিন্তু অলরেডি বিএনপি বলতে শুরু করছে, এই আন্দোলনে তারেকের হাত ছিলো। এবং অতি নিকটে আমরা এমন কথাও শুনতে পাব যে, মূলত তারেকই ছিলো এই আন্দোলনের মূল। সে লন্ডনে বসে থেকে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে। এবং তারেক না হলে এই আন্দোলন কখনোই সফল হত না, সুতরাং এই বিজয় বিএনপি'র বিজয়। নয়তো কিছু উটকো ছেলেমেয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে গেল আর হাসিনা দেশ থেকে পালালো! এত্ত সহজ! কিছুদিনের মধ্যেই এমন কথা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। এবং আপনারাও শুনবেন।
আপনি কী মানেন, কী জানেন, কী বিশ্বাস করেন, সেসব কেউ জানতেও চাইবে না। আগে হরতাল হত, হরতালে মারামারা-ধরাধরি হত। তারপর সরকারি দল এসে বলতো জনগণ এই হরতাল মানেনি, প্রত্যাখ্যান করেছে। এবং বিরোধী দল এসে বলতো, জনগণ তাদের পক্ষে ছিলো এভগ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে হরতাল পালন করেছে। কিন্তু জনগণের কাছে কেউ যেত না, তাদের দায় ও ছিলো না। ঐযে বললাম জনগণ বাঁদর, তাদের সবসময় বাঁদর নাচ নাচানো হয়।
যদি এসবের বাহিরে ধরি, অর্থাৎ তারেকের নেতৃত্ব ও আমেরিকার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে তাহলে দাঁড়ায়। একদল হতাশ বেকার, একটু আশার আলো দেখার জন্য ততকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাড় প্রান্ত হয় এবং শেখ হাসিনা তাদের আশার আলো দেখানোর পরিবর্তে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। সুতরাং তাদের আলো ছোবার প্রচন্ড ইচ্ছা জাগে, এবং ১৭ বছর ধরে দু:শাসনে মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ আগ্নেয়গিরি হয়ে বেড়িয়ে আসে ও হাসিনার পতন হয়।
এতো গেল নিকট অতীতের কথা। বর্তমানটা হল বিভিন্ন জায়গায় হামলা হচ্ছে, লুন্ঠন হচ্ছে, মাইনোরিটি এমন কি মেজোরিটির উপর আক্রমণ হচ্ছে। আইন না থাকায় ডাকাত বেড়েছে। একদল চাচ্ছে দেশ কে ইসলানিক রাষ্টে পরিণত করতে আরেক দল বকছে রাষ্টের সংস্কার প্রয়োজন। এসব হামলা, লুটপাট দেখিয়ে একদল বলছে এই জন্য-ই কি এত লড়াই, এই স্বাধীনতাই আমরা চেয়েছিলাম? আরেকদল তাদের দালাল ট্যাগ দিচ্ছে।
এই ট্যাগাটেগিতে আমরা আর না যাই। একদল রাজাকার ট্যাগ ব্যবহার করে ১৭ বছর ক্ষমতায় টিকে ছিলো এবং এটা কে জুজু বানিয়ে নিজেরা দানব হয়ে উঠেছিলো। এই ট্যাগাট্যাগির সংস্কৃতিতে ফিরে না যাই, দালাল ট্যাগটাকে আর কোন জুজু না বানাই।
কথিত আছে, মুক্তিযুদ্ধের পরে একদল মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্র জমা না দিয়ে সেগুলো নিয়ে ডাকাতি করতো। স্বয়ং শেখ মুজিব বলেছিলেন "আমি পেয়েছি চোরের দেশ।" সেখানে আজ এই লুন্ঠন, হামলা কে করছে সেটা না বোঝার ভান, না করি। ১ টাকাও চুরি, ১০০ কোটি টাকাও চুরি। টাকার পরিমাপ করতে গিয়ে চুরিটাকে বৈধতা না দেই। যে দল পালিয়ে গেল, তাকেও যখন বলা হত তুই চোর, সে বলতো আগের জন আরো বড় চোর ছিলো। আমরা আবার সেখানে না ফিরে যাই। বরং সত্যতা স্বীকার করেই বলি, হ্যা এই লুষ্ঠনের দেশই আমার বাংলাদেশ, এই দেশটাকেই আমাদের পরিবর্তন করতে হবে।
এখানে বিভিন্ন ধর্মের ধার্মিকও থাকবে, অধার্মিক ও থাকবে। মসজিদে নামাজ হবে, মন্দিরে কাসার ঘন্টা বাজবে, গির্জায় মাদার মেরী থাকবে, বুদ্ধও থাকবে। তারা তাদের ধর্মের পক্ষে বলবে, প্রচার করবে। যেকোন ধর্মই মানে না, সে সব ধর্মের বিপক্ষে বলবে। সেখানে কোন ছুরি, চাকু, তলোয়ার কারো গলায় না এসে পরুক। এই বিনা ভয়ে যা ইচ্ছা বলতে পারার স্বাধীনতা থাকুক। যতক্ষণ পর্যন্ত আমার হাত আপনার উপর না উঠছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার হাত ও সংযত থাকুক। বরং হাত না তুলে, ধরাধরি করে একত্রে দেশটাকে আমরা সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাই। এই হোক আমাদের স্বাধীনতার অঙ্গিকার।
স্বাধীনতা কোন গাছের ফল নয় যে টুপ করে পারবেন আর খেয়ে ফেলবেন। একটু সময় দেন। এত গুলা বছর তো অনেক জনকেই বিশ্বাস করলেন। এই কোমলমতিদের উপর একটু বিশ্বাস রাখুন, তারপর তো রইলেনই আপনারা সমালোচানাকারীরা। কিন্তু এই সমালোচনা করার অধিকারটুকুর খুব দরকার ছিলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ২:০০