somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনার ধর্ম-বিশ্বাসকে শুদ্ধ করুন - শেষ পর্ব

০৫ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!

[.....আগের লেখার ধারাবাহিকতায় - কেবল মাত্র বিশ্বাসী মুসলিম ভাইবোনদের জন্য লিখিত।]

পর্যায়ক্রমে, পয়েন্ট আকারে, ইসলামী ধর্ম-বিশ্বাস বা আক্বীদাহ্ লিপিবদ্ধ করার কাজটা এই পর্বে শেষ করবো ইনশা’আল্লাহ্! আমি চাইলে একবারেই সব পয়েন্টগুলো তুলে দিতে পারতাম। কিন্তু তাতে গল্প, উপন্যাস, প্রেমপত্র, প্রেমের কবিতা/গল্প, ভ্রমণকাহিনী ইত্যাদি হরেক রকমের বিনোদন-সামগ্রীর জগতে অভিভূত পাঠক/ব্লগারদের জন্য ব্যাপারটা আরো শুকনো বা নীরস হয়ে যেতো হয়তোবা। তাই বেশ কয়টা পর্বে ভেঙ্গে এবং প্রত্যেক পর্বে আরো কিছু আলোচনা টেনে এনে, কিছুটা আগ্রহ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছি - যদিও আমি বুঝি যে, A-Z পর্যন্ত বিস্তৃত চ্যানেলগুলোর "গল্প বলার রঙ্গিন কল্পলোকে” হারিয়ে যাওয়া আমাদের ”নাগরিক” জনগোষ্ঠীর কাছে এই সকল আলোচনা "ধূসর বর্ণ" মনে হবারই কথা। তবু চেষ্টা করে যাওয়া - কে জানে কখনো কোন দুর্বল মুহূর্তে, [আলহামদুলিল্লাহ্] আমার মতই কারো বোধোদয় হতে পারে যে, জীবনটা যাঁর, একমাত্র তাঁরই রয়েছে এর উপর একচ্ছত্র অধিকার - তাঁর অধিকার ক্ষুন্ন করে বা অস্বীকার করে, আমরা তা যে পাত্রেই দান করি না কেন, তা হবে নিছক বাজে খরচ। তাই স্কলাররা বলেন যে, আমাদের যে ভালোবাসা আল্লাহর কারণে নয়, বা, যে ভালোবাসা শেষ পর্যন্ত আল্লাহয় গিয়ে না মেশে, সেটা থেকে কেবল ক্ষতিই আসবে। ঐ রকম বোধোদয় হলে, হঠাৎই অনেক কিছু জানার ইচ্ছা হয় - অনেক কিছু জানাকে অপরিহার্য মনে হয়। তখন আপনাদের কারো হাতের কাছে, একেবারে মৌলিক জ্ঞাতব্য বিষয় - অর্থাৎ, ইসলামী ধর্ম-বিশ্বাসগুলো কি কি, তার একটা তথ্য-ভান্ডার তৈরী থাকলো। আর আগে যেমন বলেছি, মূলত এই তথ্য-ভান্ডার তৈরী করাই ছিল এই "সিরিজ লেখার” উদ্দেশ্য। এতে আপনাদের কারো কোন উপকার হয়ে থাকলে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার প্রাপ্য। আর কোন অনিষ্ট হয়ে থাকলে সকল ব্যর্থতা আমার।

আসুন তাহলে দেখা যাক আল আক্বীদাহ্ আল তাহাভীয়াহর শেষ ১৫ টি পয়েন্ট কি কি:

৯১। সবকিছুর উপর আলাহর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এবং তাঁর উপর কারো কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। চোখের পলক ফেলার সময়টুকু পর্যন্তও কিছুই আল্লাহ্ থেকে স্বাধীন নয়, এবং যে চোখের পলক ফেলার সময়টুকুও নিজেকে আল্লাহর থেকে স্বাধীন মনে করে, সে কুফরীর দোষে দুষ্ট এবং ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হয়ে যায়।
৯২। আল্লাহ ক্রোধান্বিত হন এবং তাঁকে সন্তুষ্ট করা যায় কিন্তু তা অন্য কোন জীবের মত নয়।
৯৩। আমরা আল্লাহর রাসূলের সাহাবীদের ভালবাসি কিন্তু আমরা তাদের মধ্যে কোন একজনের ভালবাসায় বাড়াবাড়ি করি না বা আমরা তাদের কাউকে পরিত্যাগ করে না। আমরা তাকে ঘৃণা করি, যে তাঁদের ঘৃণা করে এবং তাঁদের সম্পর্কে মন্দ কথা বলে এবং আমরা তাঁদের সম্পর্কে শুধু ভাল কথা বলি। তাদেরকে ভালবাসা ইসলামের অঙ্গ, ঈমানের অঙ্গ এবং উত্তম আচরণের অঙ্গ, যেখানে তাঁদেরকে ঘৃণা করা হচ্ছে কুফরী, কপটতা এবং বিদ্রোহ।
৯৪। আমরা স্বীকার করি যে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এঁর মৃত্যুর পর প্রথমে আবু বকর সিদ্দিক (রা.) খিলাফত লাভ করেন, এভাবে অন্য মুসলিমদের উপর তাঁর উৎকর্ষতা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় ; তারপর খিলাফত লাভ করেন উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.), তারপর উসমান (রা.) এবং তারপর আলী ইবনে আবু তালিব (রা.)। এঁরা হচ্ছেন সঠিক পথে পরিচালিত খলিফাগণ এবং ন্যায়পরায়ণ নেতা।
৯৫। আমরা সাক্ষ্য দেই যে, যে দশজন রাসূলুলাহ (সা.) কর্তৃক উলিখিত হয়েছিলেন এবং জান্নাতের প্রতিশ্রুতি প্রাপ্ত হয়েছিলেন, তাঁরা জান্নাতে যাবেন। যেহেতু রাসূলুলাহ (সা.), যাঁর কথা সত্য, সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তাঁরা জান্নাতে যাবেন। তারা দশজন হলেন: আবু বকর, উমর, উসমান, আলী, তালহা, যুবায়ের, সা’দ, সাইদ, আবদুর রহমান ইবনে আউফ এবং আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ যাঁর উপাধি ছিল উম্মতের বিশ্বস্ত ব্যক্তি, আল্লাহ্ তাঁদের সকলের উপর সন্তুষ্ট থাকুন।
৯৬। যে কেউ রাসূল (সা.)-এঁর সাহাবীগণ, তাঁর স্ত্রীগণ ও সন্তান সর্ম্পকে ভাল কথা বলবে—যাঁরা সকলেই ছিলেন পবিত্র ও দোষামুক্ত, সে নিফাক বা কপটতার অভিযোগ থেকে মুক্ত থাকবে।
৯৭। প্রথম সম্প্রদায়ের জ্ঞানী ব্যক্তিগণ, এবং যাঁরা তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন—সৎগুণাবলী সম্পন্ন মানুষ, হাদীস বর্ণনাকারীগণ, ফকীহগণ এবং বিশ্লেষকগণ—তাঁদের সম্পর্কে অবশ্যই ভাল ধারণা পোষণ করতে হবে এবং যে তাঁদের সম্পর্কে কোন মন্দ কথা বলবে সে সঠিক পথের উপরে নেই।
৯৮। আমরা উম্মাহর কোন সাধু ব্যক্তিকে কোন নবীর উপর স্থান দেই না, বরং আমরা বলি যে, যে কোন নবী, সমস্ত আউলিয়াদের চেয়ে উত্তম।
৯৯। আমরা কারামতে বিশ্বাস করি যা আউলিয়াদের প্রদর্শিত চমৎকারিত্ব এবং তাঁদের সম্পর্কে যা বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় তাতে বিশ্বাস করি।
১০০। আমরা কিয়ামতের চিহ্নসমূহ বিশ্বাস করি, যেমন, দাজ্জালের আবির্ভাব এবং ইসা ইবনে মারিয়াম আলাইহিস সালাম-এঁর আকাশ থেকে অবতরণ এবং সূর্যাস্তের দিক থেকে সূর্যোদয় এবং মাটি থেকে জন্তুর উত্থান।
১০১। যা কিছু গণক ও ভবিষ্যদ্বক্তরা বলে থাকে আমরা তা সত্য বলে গ্রহণ করি না, বা আমরা এমন কোন দাবী মানি না যা কিতাব, সুন্নাহ ও মুসলিম উম্মার ঐকমত্যের পরিপন্থী।
১০২। আমরা একমত যে পরস্পর একতাবদ্ধ হওয়া সত্য ও সঠিক পথ এবং বিভক্ত হওয়া বিচ্যুতি ও শাস্তি।
১০৩। আসমানসমূহ ও পৃথিবীতে একটি মাত্রই আল্লাহর দ্বীন রয়েছে, তা হলো ইসলাম। আলাহ বলন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর দৃষ্টিতে দ্বীন হচ্ছে ইসলাম।’ (আল-ইমরান ৩:১৯) এবং তিনি আরো বলেন: ‘আমি তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসাবে মনোনীত করেছি।’ (আল মায়িদা ৫:৩)
১০৪। ইসলামের অবস্থান বাড়াবাড়ি ও কৃচ্ছসাধনের মধ্যবর্তী আল্লাহর গুণাবলীকে অন্য কিছুর সাথে তুলনা করা ও আল্লাহর গুণাবলী অস্বীকার করা - এর মধ্যবর্তী, অদৃষ্টবাদ ও আল্লাহর কাছ থেকে নির্ধারিত নিয়তি প্রত্যাখ্যানের মধ্যবর্তী এবং নিশ্চয়তা (আল্লাহর হিসাব নেওয়ার ব্যাপারে অসেচতন থেকে) ও (আল্লাহর রহমত থেকে) হতাশার মধ্যবর্তী।
১০৫। এটাই আমাদের দ্বীন এবং এতেই আমরা বিশ্বাস করি, অন্তরে ও বাইরে, এবং আমরা আল্লাহর সম্মুখে এমন কারো সাথে সম্পর্কিত হওয়া প্রত্যাখ্যান করি, যে আমরা যা বলেছি ও স্পষ্ট করে দিয়েছি তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।

আল্লাহ্ আমাদেরকে মৃত্যুর পূর্বেই আমাদের বিশ্বাস শুদ্ধ করে, কবরে জিজ্ঞাস্য ৩টি প্রশ্নের উত্তর জেনে নিয়ে, রাসূলে (সা.) সুন্নতের উপর সমাহিত হবার তৌফিক দান করুন। আমীন!!

ফি আমানিল্লাহ্!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ৯:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×