somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~~মৃত মেঘের ফোঁপানো কান্না~~

১৯ শে নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






চারপাশে অনেক মানুষ, অনেক। তারপরও আমি বিবশ, বিষন্ন। কী যেন এক ঘোরের মাঝে আমি। বৃষ্টিদগ্ধ গাছের পাতাতে রূঢ় সূর্যটা তার বাতি মেলে দিয়ে চমকাচ্ছে। ব্ল্যাকবোর্ডে খসখস করে চক ঘসবার আওয়াজ কোনভাবেই এই বিবশতাকে স্পর্শ করতে পারছেনা। মুখ তুলে জানালার বাইরে তাকালাম। একটা কদম ফুল লাগবে আমার, মাত্র একটা। কিন্তু সিগন্যাল পড়লেই একমুঠো কদমফুল নিয়ে ছুটে আসা ছিন্ন মলিনবস্ত্র সেই কিশোরীর চোখে যে ঘন, গভীর অশ্রুবর্ষা দেখেছি, তার কাছে অন্য কোন বর্ষা অর্থহীন, শব্দহীন। যে চাতকপাখি ঘোর বর্ষার জন্যে হাহাকার করে মরতো, সে এখন ঠিক এখানে-আমার মনের এই শুন্য শুকনো মরূভূমিতে। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দের সুর তো বিথোফেনের কম্পোজিশন থেকেও অনেক বেশি আপন, বেশি কাছের।

সে রাতে খুব ঝড় হচ্ছিল, শেকড় উপড়ে ফেলা ঝড়। মোমবাতির আলোটাকে দু'হাত দিয়ে বাঁচিয়ে রেখে যাচ্ছিলাম। অদ্ভুত এক আলোয় দেখেছিলাম তার মুখ। সেই মুখেও তখন অঝোর বৃষ্টি।

বের হতে যাবো, ঠিক সে সময়ে ঝুম করে বৃষ্টি নামলো। আকাশের তারাকে বলতেই সে হাসি দিয়ে বললো, " ছাতা নিয়ে বের হয়ো।" আমি বললাম, "হ্যাঁ, বের হবো। একা একা, অলিগলি দিয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরবো।" সে বললো, "হুমম, তোমার একাকীত্বকে উপভোগ করো।" নৈঃশব্দ্যের বন্ধুটি একবার বলেছিল, "ছাতা পৃথিবীর অশ্লীলতম জিনিসের একটি।" আমিও ভাবছি।

ছোট্ট ঘরটাতে একটাই কামরা। বাতি নেভানো। আর আমি হাতজোড়াকে বালিশ বানিয়ে অপলক চেয়ে আছি ঐ সাদা সিলিং এর দিকে। নিজে নিজেই কথোপকথন চালাচ্ছি, কিন্তু দুটো চরিত্রে। একজন আমি, আরেকটা আমার আমি। সিলিংয়ের টিকটিকিটার লেজ খসে পড়তে দেখলাম, ঐ আলো-আঁধারিতেই। একটা জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মঞ্চস্হ হয়ে গেলো আমার আপনা-বলা কথার মাঝেই।

এক তরুণ হেঁটে যাচ্ছে বিবর্ণ সংকীর্ণ ধুলোমাখা রাস্তা দিয়ে, কাঁধে তার ঝুড়ি, বাজারে বেচবার। তার ছায়াটা দীর্ঘান্বিত শীত-শীত লাগা এই দিনের সূর্যের আলোয়। পথ চলতে চলতে ছায়ার দরকার পড়ে। নইলে রোদে পুড়ে তামাটে বর্ণটা কৃষ্ণকালো হয়ে যাবে।তার চাইতে বড় হলো, তেষ্টার কষ্টটা। আচ্ছা, বর্ষার একটা দ্রোহী রূপ আছে না? তপ্ত মরূকে শান্ত, সবুজ করে দেবার সেই বিদ্রোহ!

ভেবেছিলাম আপন মনে রোজনামচা লেখাটাই সার। কিন্তু সময়ে সময়ে উপলব্ধির খাতায় আঁকা হলো অনেকগুলো মুখ, লেখা হলো অনেকগুলো আব্দার, আশা। তাই রোজনামচাটা হয়ে গেল একটা বিশাল স্বাক্ষরবই। আর তাতে অনেক আনন্দ, অশ্রু, আলো, ছায়া--আরো অনেক, অনেক কিছু। কিন্তু কখনো ভাবিনি আমার খেরোখাতার পাতা, যেটা শুধু আমার-ই, সেটা অন্য কেউ ছিঁড়ে ফেলতে পারে, অনাদরে, অবহেলায়, প্রতিহিংসায়। ভাবছি এখন নতুন করে।

----------------------------------------------------------------------------------

পুনশ্চঃ আমার এক বন্ধু আছে, এখানেই, আকাশ নাম। আকাশ অম্বর। আমি তাকে এর আগের পোস্টে বলেছিলাম আমার পরের পোস্টটি সাজাবো কিছু ছবি দিয়ে। খুব দুঃখিত বন্ধু, খুব। আমি এও ভেবেছিলাম প্রতিটি পোস্টের শেষে একটা-দু'টো গান দেবো এখন থেকে। ঐ যে বললাম, সব নতুন করে ভাবতে হচ্ছে!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:৪৬
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×