মৌচাক রেলওয়ে স্টেশন।
খুবই ছোট্ট একটা স্টেশন।
সারাদিনে দুই মিনিটের জন্য একটা মাত্র ট্রেন থামে এখানে।
এই ট্রেন এখানে থামার কথা না। কেন যেন থেমেছে।
ক্রসিং বোধহয়।
আগে বাসা এটার কাছে ছিল। তখন মাঝে মাঝেই আসা হত। জানালা দিয়ে মাথা বের করে দ্যাখার চেষ্টা করলাম সব কেমন আছে।
প্লাটফর্মে চোখ পড়তেই একটা ঘটনা মনে পড়ল।
তখন সবে ক্লাস এইট শেষ হয়েছে। বৃত্তি পরীক্ষা দিয়ে খুলনা গেলাম বড় মামার বাসায়। সুন্দরবন এক্সপ্রেসে। প্রথম বারের মত কোনো গাজির্য়ান ছাড়াই।
ছোট ভাই পরশ আগেই চলে গিয়েছিল।
ফেরার সময়ও মামা দুই ভাইকে একটা কেবিনে তুলে দিলেন। সারা রাত এবং ভোর আমরা দুইজন যা করসিলাম তা চিন্তা করলে এখনও মনের অজান্তেই ঠোটে হাসি ফোটে। যাই হোক, এই সুন্দরবন এক্সপ্রেস-ই এক মাত্র ট্রেন যা এখানে থামে। প্রথমে অবশ্য ট্রেন স্টেশন ক্রস করে জয়দেবপুর যায়। সেখান থেকে ফেরার সময় থামে।
আম্মুর আসার কথা আমাদেরকে নিতে। সম্ভবত সেবার-ই প্রথম আম্মুকে ছেড়ে থাকা। তাই গাড়ি মির্জাপুর ছাড়ার পর থেকে দুই ভাই-ই উৎসুক হয়ে জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি, কখন মৌচাক পৌছাব, আম্মুকে দেখে হাত নাড়াব।
গাড়ি স্টেশন ক্রস করল কিন্তু আম্মুকে দ্যাখা গেল না। দুজনের-ই মন খুব খারাপ হল। ভাবলাম আম্মু বোধহয় আসেনি।
গাড়ি জয়দেবপুর ঘুরে আবার মৌচাক ফিরল। আমাদের বগি প্লাটফর্মের বাইরে পড়েছে, ব্যাগ ট্যাগ সামলে লাফ দিয়ে নামতে যথেষ্ট কষ্ট হল। পরশকে নামিয়ে দিয়ে আমি ব্যাগ হাতে নামলাম।
নেমেই হঠাৎ পরশ ‘আম্মু’ বলে চিৎকার দিয়ে দৌড় শুরু করল।
আমি তখন ব্যাগ সামলাতে ব্যাস্ত, খেয়াল করিনি। ওর চিৎকার শুনে ভালো করে তাকিয়ে দেখি দুরেই প্লাটফর্মের উপর আম্মু দাঁড়ানো।
পরশের ডাক শুনে আর দৌড় দেখে আম্মুও দুই হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। পরশ দৌড়ে গিয়ে এক লাফে আম্মুর কোলের ভিতর! একদম সিনেম্যাটিক স্টাইল।
আমি ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে আম্মুর কাছে পৌছাতেই দেখি ট্রেন আর স্টেশনের সব লোক আমাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
ব্যাগগুলোর প্রতি আমার তখন খুব রাগ লাগতে লাগল। এগুলো না থাকলে আমিও দৌড়ে আসতে পারতাম।
তখন আবার সব কাজেই আমার পরশের সাথে প্রতিযোগিতা চলত। সেই আঃ তে ঘা দিয়ে আম্মু বলল, ‘দেখছ, পরশ আমাকে বেশি ভালোবাসে। আমাকে দেখেই দৌড়ে চলে আসল। আর পিয়াসেরতো খবর-ই নাই।’
আমি রেগে ব্যাগ ফেলেই স্টেশন থেকে চলে গেলাম।
পিছন থেকে আম্মু আর পরশের অট্টহাস্য বুকে শেল নিক্ষেপ করল।
আলোচিত ব্লগ
মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়
১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷
চলুন গল্পটা শুনে আসি৷
বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই
রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।
ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!
~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো
রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন