somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাপানী বউ (গল্পঃ দ্বিতীয় পর্ব)

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শামচুল হক

আগের পর্ব পড়ার জন্য নিচে ক্লিক করুন --
জাপানী বউ (গল্প)
দিলারার কলেজের বান্ধবী সীমা পাশেই দাঁড়িয়ে তাদের কথাবার্তা শুনছিল। রিপন চলে যাওয়ার পর সীমা এগিয়ে এসে দিলারাকে উদ্দেশ্য করে বলল, কি রে দিলারা, তুই হঠাৎ করে এমন পরিবর্তন হলি কি করে? যে রিপনকে একদিন কলেজে না দেখলে তুই পাগলের মত খুঁজে বেরিয়েছিস। সেই রিপনের মুখের উপর এমন নিষ্ঠুর কথা কি করে বললি?
দিলারা মাথা নিচের দিকে দিয়ে বলল, জীবনের বাস্তবতা নির্ধারন করতে গিয়ে অনেক কথাই ইচ্ছার বিরুদ্ধে বলতে হয়রে। এ ভাবে কথা না বললে ও আমার পিছু ছাড়তো না।
-- তুই কি সত্যিই রিপনের ভালবাসা ত্যাগ করলি?
-- হ্যাঁ, আজ থেকে পুরোপুরিই ত্যাগ করলাম। আর কখনও রিপনের নাম উচ্চারণ করবো না।
-- তুই কি জাপান প্রবাসী ছেলেকে বিয়ে করে সুখী হতে পারবি?
-- আশা তো করছি।
-- কি আশা করছিস?
-- রিপনের কাছে যা পাবো না ওখানে গিয়ে তার চেয়ে অনেক বেশি পাবো।
-- যদি না পাস?
-- না পাওয়ার মত তো কোন কারণ দেখি না! আর্থিক দিক দিয়ে জাপান প্রবাসী বর তো অনেক স্বচ্ছল।

দিলারার কথা শুনে সীমা ওর মুখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল। মনে মনে ভাবল ওকি তাহলে ভালোবাসার চেয়ে আর্থিক দিকটাই বেশি গুরুত্ব দিল। অর্থ থাকলেই যে সুখি হওয়া যায় তার তো কোন নিশ্চয়তা নেই। অনেক ধনী ঘরের বউরাও তো স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের স্বীকার হয়। সীমা যখন দিলারার মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে এসব ভাবছে তখন দিলারা তার তাকিয়ে থাকা দখে বলল, এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস?
-- তোকে।
-- আমাকে দেখার কি হলো?
-- তোকে দেখার অনেক কিছু আছে। এতদিন শুধু তোর চেহারা দেখেছি কিন্তু আজ তোর ভিতর অন্য কিছু দেখছি।
-- তার মানে?
-- তার মানে-- তোর বিয়ে হবে, তুই সুখি হবি, অনেক বড়লোক হবি, বান্ধবী হিসাবে আমরা তোর সেই সুখের জীবন দেখবো, সেই সব কল্পনা করছি। তবে সুখী হয়ে আমাদের ভুলে যাসনে যেন? আমাদেরকে একটু মনেটনে রাখিস?
দিলারা হাসতে হাসতে সীমার থুতনী ধরে দুটো নাড়া দিয়ে বলল, হারামজাদী আমার সাথে ইয়ার্কী শুরু করিছিস! তোদের আমি ভুলবো এটা তুই কি করে ভাবলি?
-- তিন বছরের প্রেম যখন তুই তিন মিনিটেই ভুলে যেতে পারলি, তখন আমরা তো তোর প্রেমিকও নই ভালবাসার পাত্রও নই, আমাদের ভুলে যেতে তোর কতক্ষণ।
-- প্রেমিক আর বান্ধবী কি এক জিনিস হলো রে?
-- প্রেমিক আর বান্ধবী যে এক জিনিস নয় এটা আমিও স্বীকার করি, সবার জীবনেই একাধিক বান্ধবী থাকে কিন্তু প্রেমিক থাকে একজন। বান্ধবীর জন্য কেউ প্রাণ বিসর্জন না দিলেও প্রেমিকের জন্য দেয়, কিন্তু তুই তো সেই প্রেমিককেই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে চিরদিনের জন্য বিদেয় করে দিলি, এখানেই তো আমি বান্ধবী আর প্রেমিকের অঙ্ক মিলাতে পারছি না।
-- তুই তো দেখি দার্শনিকের মত কথা বলছিস?
-- যা সত্য তাই বললাম, এখানে দার্শনিক হওয়ার মত তো কিছু বলি নাই।
-- কথা ঠিকই বলেছিস, সবাই বন্ধু হতে পারে সবাই প্রেমিক হতে পারে না।
-- তাহলে রিপন কি তোর প্রেমিক হতে পারে নাই?
সীমার কথায় দিলারা কিছুটা গম্ভীর হয়েই বলল, তোকে যে কি করে বুঝাই বুঝতে পারছি না, আবেগে প্রেম করলেও সব প্রেমিককে জীবন সাথী হিসাবে গ্রহণ করা যায় না রে। যার সাথে সারা জীবন কাটাতে হবে তার আর্থিক, মানসিক সব দিক বিবেচনা করেই তাকে গ্রহণ করা উচিৎ। বর সিলেকশনে একবার ভুল হলে সারা জীবন কষ্টের শেষ থাকবে না। রিপনের প্রেমকে প্রত্যাখান করায় তোরা হয়তো আমাকে ভুল বুঝতে পারিস কিন্তু আবেগের মাধ্যমে জীবনের সব সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক নয়রে। আমি অনেক চিন্তাভাবনা করেই এমন ডিসিশন নিয়েছি।
-- ডিসিশন কি সঠিক বলে মনে করিস?
-- বর্তমান প্রেক্ষাপটে সঠিক বলেই মনে করছি।
দিলারার কথা শুনে সীমা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আফসোসের সুরে বলল, তুই তো প্রেম করে বর নির্বাচনে যাচাই বাছাই করার সুযোগ পেলি, আমাদের ভাগ্যে তো এসব কিছুই জুটল না।
দিলারা সীমার আফসোস দেখে হাসি দিয়ে বলল, চেষ্টা করলেই তো প্রেমিক জোটাতে পারিস। চেষ্টা না করে ঘরের কোনায় বসে থাকলে কি প্রেমিক জুটবে রে?
-- এই কালো-কুলো চেহারায় চাইলেও প্রেমিক জুটবে না রে, তার চেয়ে যেমন আছি তেমনই থাকি।
-- প্রেম করতে সুন্দরী হওয়া লাগে না রে, ভালোবাসার মন নিয়ে চেষ্টা করলেই হয়।
-- থাক ভাই, আমার আর চেষ্টা করা লাগবে না, এতদিন যখন প্রেম করি নাই তখন আর এই বয়সে প্রেম করে কলঙ্কিত হতে চাই না। বাবা মায়ের উপর নির্ভর করে আছি তাই থাকি, বাবা মা যেমন তেমন একটা বর জুটিয়ে দিলে তাকেই সাত রাজার ধন মনে করে বুকে জড়িয়ে নিব।
-- যেমন তেমন বলিস কেন রে-- রাজপুত্রও তো জুটতে পারে?
-- আরে ভাই রাজপুত্র! রাজপুত্রের “রা” জুটলেও নিজেকে ধন্য মনে করবো।
-- আরে আল্লাহ আল্লাহ কর, ঠিকই ভালো কিছু জু্টে যাবে। জাপান প্রবাসী ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হবে এটা তো আমিও কল্পনা করি নাই। কিন্তু বিধাতা কোথা থেকে কিভাবে জুটিয়ে দিল।
-- সবই ভাগ্য রে, তোর মত ভাগ্য কি আমার হবে?
-- তোর ভাগ্য আমার চেয়েও তো ভালো হতে পারে?
-- আমার ভাগ্য তোর চেয়েও ভালো হবে কি করে বুঝবো? ভাগ্য তো আর দেখা যায় না?
দিলারা সীমার ঘাড়ে ডান হাতটি রেখে মৃদু ঝাকি দিয়ে হেসে হেসে বলল, চিন্তা করিস কেন, দেখবি ভাগ্য তোর ভালোই হবে।
-- দোয়া করিস, খুব ভালোর দরকার নেই, তবে ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকা যায় এরকম একটা বর কপালে জুটলেই হবে।
তাদের মধ্যে এমনি আরো অনেক বন্ধুসুলভ রসের কথা হলো। এক পর্যায়ে সীমা দিলারাকে বলল, তুই এখন বাড়ি চলে যা দিলারা, দেরি করলে তোর মা আবার তোর জন্যে চিন্তা করবে।
দিলারা চলে যাওয়ার পূর্ব মুহুর্তে সীমার হাত টেনে ধরে বলল, তুইও আমার সাথে আয় না?
-- আমি এখন আর যাব না রে, অনেকক্ষণ হয়ে গেল, মা আবার বকবে।
সীমার কথায় দিলারা আর দেরি করল না, তবে যাওয়ার সময় সীমাকে অনুরোধ করে বলল, তোকে একটা কথা বলবো-- তুই রাখবি তো?
-- কি কথা?
-- আমি তোকে আলাদা দাওয়াত দিয়ে গেলাম। তুই আজকে বিকালেই আমাদের বাড়ি চলে আসবি। বিয়ে শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমার সাথেই থাকবি।
সীমা চলে যেতে যেতে দিলারার কথার জবাবে বলল, ঠিক আছে, তবে মাকে না জানিয়ে পুরো কথা দিতে পারছি না, মা যদি রাজী হয় তাহলে আসার চেষ্টা করবো।
-- আসার চেষ্টা নয়, অবশ্যই আসবি, এটা আমার দাবি। বলেই উভয়েই যার যার বাড়ি চলে গেল।

দুপুর বেলা আসেপাশের বাড়ি থেকে ভাবী, চাচী, নানী, দাদী সম্পর্কের সব আত্মীয় স্বজন এসে হাজির হলো। দূরের আত্মীয় স্বজনও কিছু কিছু এসেছে। তারা সবাই মিলে দিলারাকে উঠানে পিঁড়ির উপর বসিয়ে গায়ে হলুদ দিলো। গায়ে হলূদ দেয়ার পর জোয়ান জোয়ান দুইজন ভাবী মিলে দিলারাকে পাঁজাকোলা করে শুণ্যে তুলে নিয়ে দখিন দুয়ারী ঘরের মেঝেতে ফুল দিয়ে সাজানো নতুন পাটির উপর বসিয়ে দিল। গ্রামে আর কিছু না হোক এখনও এই নিয়মটি চালু আছে। বিয়ের সময় বর কনেকে আড়াই দিনের জন্য রাজা রানীর আসনে বসানো হয়। তাদেরকে মাটিতে পা রাখতে দেয়া হয় না। প্রয়োজনে ভাবী বা দুলাভাইয়েরা বর কনেকে পাঁজাকোলা করে এঘরে ওঘরে আনা নেয়া করে। এখানে দিলারাকেও এর ব্যতিক্রম করা হলো না। তাকে গায়ে হলুদ মাখানো অবস্থায় লাল পেরে হলদে রঙের শাড়ী পরিয়ে কয়েকজন ভাবী বান্ধবীর বেষ্টনে রাজ রানীর মত করে বসিয়ে রাখা হলো।

সন্ধ্যার দিকে সীমাসহ আরো কিছু বান্ধবী এসে হাজির হলো। দিলারা গায়ে হলুদ দেয়া অবস্থায় ঘরের মেঝের পাটিতে বসে আছে। মাকছুদা বান্ধবীদের মধ্যে সব চেয়ে চঞ্চল প্রকৃতির। সে দিলারার কানের কাছে মুখ লাগিয়ে জিজ্ঞেস করল, তুই রিপনকে পুরোপুরি ভুলে গেছিস নাকি রে?
দিলারা মাথা তুলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মুখটা উপর নিচে দু’তিনবার আস্তে আস্তে ঝাকি দিয়ে হ্যাঁ সুচক জানিয়ে দিল।
মাকছুদা ওর মুখের দিকে একপলক তাকিয়ে থেকে আবার বলল, জাপানী ছেলেকে তুই সচক্ষে দেখেছিস?
দিলারা আবার মাথা নাড়লো ‘হ্যাঁ’।
-- দেখতে কি খুব সুন্দর?
আবার মাথা নাড়ালো ‘হ্যাঁ’
-- তোর ভাল লেগেছে?
আবার মাথা নাড়ালো ‘হ্যাঁ’
-- ছেলেটার সাথে তোর কথা হয়েছে?
এবার মুখটা ডাইনে বামে নাড়া দিয়ে জানালো ‘না’।
-- কথা হয় নাই শুধু চেহারা দেখেই তোর ভাল লাগল! ভালো লাগার কারণ কিরে?
দিলারা এ কথাটির কোন জবাব দিতে পারছিল না। কিছুক্ষণ মাকছুদার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, বলতে গেলে অনেক কথা রে, আমি তোকে বিয়ের পরে সব বলব।
মাকছুদা দিলারার নিচের ঠোট ধরে ডাইনে বামে দুটো নাড়া দিয়ে বলল, বিয়ের পিঁড়িতে বসে বলতে বুঝি লজ্জা করছে?
ওদের চুপি চুপি কথা বলতে দেখে অন্য বান্ধবীরা পাশেই খাটের উপর বসা ছিল, তাদের একজন বলে উঠল, কিরে --তোরা চুপি চুপি কি বলছিস হা--? আমাদের বাদ দিয়ে তোরা গোপন কথা বলছিস, দাঁড়া-- আমরাও তোদের কাছে আসছি।
মাকছুদা হাসতে হাসতে বলল, না রে-- তেমন কিছু নয়। তোদের কোন কথা থাকলে ওর কাছে এসে বস, দূূরে থাকিস কেন?
-- আমরা তোর মত তো ধুরন্ধর নই, এই জন্যে দূরে সরে আছি।
মাকছুদা কিছুটা কপট রাগ দেখিয়েই বলল, এই হারামজাদী, আমি ওর সাথে এমনি কথা বলছি, তুই আবার আমার মধ্যে কি ধুরন্ধর দেখলি রে?
-- দেখতে পেলাম না দেখেই তো কিছু বলতে পারছি না।
-- তোর সামনেই তো কথা বলছি, আড়ালে তো কিছু বলিনি। তুই আবার দেখতে পেলি না কেন?
-- তোর সাথে পাব কি করে রে, তুই তো খাড়ার উপরে সবার চোখে ধুলা দিস।
-- এই হারামজাদী, তোকে আবার কবে চোখে ধুলা দিলাম রে?
-- চলেঞ্জ করলে কিন্তু তোর প্রেম কাহিনীর হাঁড়ি ভেঙ্গে দেব রে?
মাকছুদা হাসতে হাসতে বলল, আমিও কিন্তু তোর হাঁড়ি ভেঙ্গে দেব রে?
খাটের উপর বসে থাকা সীমা তখন আগ বাড়িয়ে বলে উঠল, এই তোরা থামবি, আসছিস বিয়ে খেতে, সেখানে নিজেদের হাঁড়ি ভাঙাভাঙি শুরু করে দিয়েছিস।
তাদের কথোপোকথনের সময় দিলারার মা ঘরে ঢুকলে সবার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। দিলারার মা দিলারার বান্ধবীদের বলল, তোমরা কিন্তু সবাই আমার এখানে থাকবে, আগামী কাল ওর বিয়ে শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ বাড়ি যাবে না। এখন আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি, তোমরা সবাই মিলে দিলারাকে সাথে নিয়ে খাও।

পরদিন জাঁকজমকের সাথে বিয়ের আয়োজন চলতে লাগল। আরো আত্মীয় স্বজন এসে বাড়ি ভরে গেল। বিকালের দিকে বরযাত্রী এলে বান্ধবী এবং ভাবীরা মিলে গেট ধরে বরের কাছে গেটের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবী করল। সাথে সাথে বরের দুলাভাই পঞ্চাশ হাজার টাকার একটি বান্ডিল দিয়ে দিলো। পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবী করলেও দশ হাজার টাকার বেশি কেউ আশা করে নাই, অথচ চাওয়া মাত্রই কোন কথা কাটাকাটি না করে এভাবে দশ হাজার টাকা দেওয়ায় অনেকেই আশ্চর্য হয়ে গেল।

বিয়ে পড়ানোর আগে বরের বাড়ি থেকে পাঠানো দামি দামি কসমেটিকসের সাথে প্রায় বিশ ভরির মত স্বর্ণের গহনা দেখে অনেক বান্ধবীর চোখ কপালে উঠে গেল। তারা তখন বুঝতে পারল দিলারার হঠাৎ করে প্রেম প্রত্যাখান করার কারণ কি? বাঙালি মহিলারা যে কসমেটিকস এবং গহনার পাগোল এখানেই তা বোঝা গেল। একটু আগেই যে বান্ধবীরা রিপনের সাথে দিলারার প্রেম প্রত্যাখান করায় এই বিয়েতে বিমুখ ছিল তারাই এখন কসমেটিকস গহনার পরিমাণ দেখে দিলারার কানে কানে উৎসাহ দিতে লাগল, তুই রিপনকে বাদ দিয়ে ভালই করেছিস। বিয়ের রাতে যা পেয়েছিস রিপন সারাজীবনেও তা দিতে পারতো না।
দিলারা ওদের কথায় মনে মনে খুব গর্ববোধ করতে লাগল। খুশি খুশি ভাবটা মুখ ফুটে প্রকাশ করতে না পারলেও তার উজ্জল মুখে সে ভাবটা ফুটে উঠল।

বউ সাজানোর জন্য বিয়ের আসরে দিলারাকে দামি দামি কসমেটিকস আর স্বর্ণের গহনা দিলে ওসব পরানোর সময় ভাবী এবং বান্ধবীরা বিয়ের আয়োদের জন্য কিছু দাবী করে বসল। দাবী করা মাত্রই বরের দুলাভাই আয়োদের প্রত্যেকের হাতে একটি করে প্যাকেট তুলে দিল। প্রত্যেক প্যাকেটে শাড়ীসহ কয়েক প্রকারের বিদেশী কসমেটিকস পেয়ে দিলারার ভাবী, বান্ধবীরা খুব খুশি হলো। সবাই দিলারার সিদ্ধান্তের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তারা একে অপরের সাথে বলাবলি করতে লাগল, দিলারা এ বিয়েতে রাজী হয়ে খুব ভালই করেছে, ওর জীবনে আর কোন দিন টাকা-পয়সা, গহনা-গাটি, কসমেটিকসের অভাব হবে না, রাজরানীর মতই জীবন কাটাতে পারবে।

সন্ধার পরপরেই পঞ্চাশ লক্ষ এক টাকা মহরানায় বিয়ে সমাপ্ত হলো। বিয়ের পড়ে খাওয়া দাওয়া করে বরযাত্রী রাতেই নববধু নিয়ে চলে গেল। যাওয়ার সময় দিলারা সব বান্ধবীদের বরের বাড়ির বউভাতে যেতে বলল। দিলারার সাথে বরও তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে যেতে অনুরোধ করল। মহাধুমধামেই বিয়ে পার হয়ে গেল।

দামি কসমেটিকস, বিশ ভরি স্বর্ণের গহনা, পঞ্চাশ লক্ষ এক টাকার মহরানা ইত্যাদি দেখে গ্রামের মানুষ দিলারার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সবাই বলল, দিলারার ভাগ্যের তারিফ করতে হয়, এ এলাকায় এত ধুমধাম এবং এতো মহরানায় আর কারো বিয়ে হয় নাই। এমন রাজকপালী মেয়ে সাত গ্রামের মধ্যে আর একটিও নাই।

বিয়ের পরে দিলারার স্বামী প্রায় দু’মাস দেশে থাকল। এই দু’মাস দিলারাকে নিয়ে ঢাকা শহরের অনেক আত্মীয় স্বজনের বাড়ি ঘুরে বেরিয়েছে। মাঝে মাঝে দামী দামী হোটেলেও খাবার খেয়েছে। এমন কি পাঁচ তারা হোটেলেও দু’দিন ছিল। এসব দেখে দিলারা নিজেকে ধন্য মনে করতে লাগল। সারা জীবন স্বপ্নে যা কল্পনা করতো, স্বামীর কারণে বাস্তবে তা অনেক কিছুই পূরণ হচ্ছে। তার স্বামীর কাছে যখনই যা দাবী করছে তখনই সে দাবী পূরণ করছে। কল্পনার চেয়েও যেন ভালো স্বামী তার কপালে জুটেছে।

বিয়ের পরে আনন্দ ফুর্তি আর আমোদ প্রমোদেই তাদের সময় কেটে গেল। জাপান থেকে দু’মাস সময় নিয়ে এসেছিল। দু’মাস পার হওয়ায় দিলারার স্বামীর পক্ষে আর একদিনও থাকা সম্ভব হলো না। এয়ারপোর্টের বারান্দায় দুইজনে অনেকক্ষণ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকল। অনেক কথা হলো কিন্তু কথা শেষ হতে চায় না। দিলারা তার স্বামিকে যেতে দিতে চায় না কিন্তু তার স্বামী থাকতে নারাজ। স্বামীর দিকে তাকিয়ে চোখের পানি নাকের পানি এক করে কাঁদতে লাগল। সময় ঘনিয়ে এলে দিলারার কান্নারত অবস্থায় রেখে তার স্বামী এয়ারপোর্টের ভিতরে ঢুকে গেল। অল্পকিছুক্ষণ পরেই সে চোখের আড়ালে চলে গেল। নির্দিষ্ট সময়ে এয়ারপোর্ট থেকে প্লেন আকাশে উড়লে অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত দিলারা আকাশের প্লেনের দিকে তাকিয়েই রইল।

চলবে--
ছবি ঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৬
২০টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×