somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৮

০৭ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আচ্ছা আপনি কি সুন্দরী নারীদের দেখলে কোন কারণে ভয় পান? যদি ভয় পান তাহলে জেনে রাখুন আপনি Caligynephobia নামক অসুখটিতে ভুগছেন । এটি এক ধরণের ফোবিয়া ।



ফোবিয়া
ফোবিয়া (Phobia) একটি ইংরেজী শব্দ, বাংলায় যার মানে দাঁড়ায় “ভীতি”। আমরা যখন কোন কিছুতে অতিরিক্ত বা অযথাই ভয় পাই সেটাই ফোবিয়া । এখন আপনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন আর একদল ছিনতাইকারি নানান অস্ত্র নিয়ে আপনাকে ঘিরে ধরল, তাহলে কি আপনি ভয় পাবেন না? জ্বী, অবশ্যই পাবেন। অথবা, ধরেন আমার এই লেখা আপনি কমোডে বসে পড়ছেন (আমার আগের পোষ্টটা পড়ার পর অনেকেই নাকি এখন কমোডে বসেই পড়ার কাজটা চালিয়ে যাচ্ছেন। হায়রে! এ দুঃখ রাখি কোথায়!) তখন হঠাৎ করেই দেখলেন আপনার কমোডের ভেতর থেকে একটা কালো সাপ বেরিয়ে আসছে, তখনও কি আপনি ভয় পাবেন না? হ্যাঁ, তাও পাবেন । এ ধরণের ঘটনায় ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক ।


যে বিষয় গুলোতে গড়পরতা সবাই ভয় পায়, সেটা কোন ফোবিয়ার মধ্যে পড়ে না। এখন ধরেন, আপনি দাওয়াতে যেতে ভয় পান । আর ভয়টা কেন পান, তার যুক্তিসঙ্গত কোন কারণও দেখাতে পারেন না কাউকে । কিন্তু ভয় পান । এদিকে আপনার এ ভয় পাওয়া নিয়ে আপনাদের স্বামী-স্ত্রীর সংসারে অশান্তি লেগে যাচ্ছে, কিন্তু আপনি ভয় তাড়াতে পারছেন না।

অথবা, ধরেন আপনার সন্তানটি স্কুলে যেতে ভয় পায়, আর সেটা কোন সাধারণ ভয় না। স্কুলেতো আমরাও যেতে চাইতাম না, নানা ধরণের অজুহাত বের করতাম। কিন্তু দেখা গেল আপনার সন্তানটি স্কুলে গেলেই জ্বর এসে যাচ্ছে, তখন কি করবেন?

এ ধরণের ঘটনা গুলো হচ্ছে ফোবিয়ার লক্ষণ । ফোবিয়া শুধু একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবনকেই ধ্বংস করে না, তার আশেপাশের প্রিয়জনদের জীবনটাকেও অতিষ্ট করে তোলে । ক্যান্সারের চেয়ে ভয়াবহ এ অসুখটার সম্পর্কে কতটুকু জানি আমরা ? বরং কারো কোন ফোবিয়া থাকলে তা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে তাকে সহযোগিতা করা দূরে থাক, তাকে আরেকটা ফোবিয়ার দিকে ঠেলে দেই আমরা।

ফোবিয়ার জন্য দরকার বিশেষ চিকিৎসা । দুঃখজনক হলেও আমি এ পর্যন্ত শুনিনি যে, ডাক্তারের কাছে গিয়ে কারও ফোবিয়া ভালো হয়েছে । বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এতে হীতে বিপরীত হবার কথা শুনেছি । তাহলে? কি করবেন আপনার প্রিয়জনটিকে নিয়ে, যদি তার কোন ফোবিয়া থাকে?

প্রতিটা ফোবিয়ারই একটা ব্যাকগ্রাউন্ড থাকে আর এই ব্যাকগ্রাউন্ড জানতে পারলেই তার চিকিৎসার অর্ধেক আপনিই করে ফেলতে পারবেন। বাকী টুকু হচ্ছে বিশেষ কিছু নিয়মে আপনার সহযোগিতা । মজার ব্যপার হচ্ছে আপনার প্রিয়জনের ফোবিয়ার চিকিৎসা আপনি নিজেই করতে পারেন (যদি তা কোন চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে না যায়), এর জন্য কোন টাকা খরচ করতে হয় না, ঘন্টার পর ঘন্টা তার পেছনে সময় দিতে হয় না বা তার জন্য কোন কষ্টও করতে হয় না। শুধু দরকার তার প্রতি আপনার সহযোগিতা আর ভালোবাসা।

তাহলে আসুন জেনে নেই কিছু ফোবিয়া সম্পর্কে, জেনে নেই ফোবিয়া কত ধরণের হতে পারে ।

হাঁস কি আপনার পিছু ছাড়ে না ?
এ রোগীরা মনে করে কোন হাঁস তাকে সব জায়গায় ফলো করে ।
চিন্তা করুনতো কি অবস্থা? আপনাকে একটি হাঁস সবসময় ফলো করছে, আপনার বিছানার নীচে, আপনার অফিসে, আপনার টয়লেটে, আপনার ভ্রমণে, সব জায়গায়ই লুকিয়ে লুকিয়ে আপনাকে দেখছে! ভালো লাগবে ব্যপারটা?
এ ফোবিয়ার নাম Anatidaephobia



আপনার মধ্যে কি বিশাল এক ক্ষমতা আছে ?
আপনার মধ্যে আছে বিশাল এক ক্ষমতা। পৃথিবী এখনও তা টের পায়নি। যেদিন টের পাবে সেদিন এক মহা প্রলয় ঘটে যাবে, মানবজাতির আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না সেদিন ।
আপনার যদি এমন মনে হয়, তাহলে আপনার Mephobia হয়েছে । সাধারণত যারা বিভিন্ন সোস্যাল নেটওয়ার্কিং এর সাথে জড়িত থাকে তাদের মধ্যে এ রোগটি বেশী দেখা যায় ।



প্রেম তো করতেই চাই, কিন্তু ভয় লাগে যে?
যদি প্রেম করতে ভয় পান তাহলে আপনার Philophobia হয়েছে ।



বেশী খুশী হইস না, কপালে খারাবী আসতাছে !
মনে পড়ে, ছোট বেলায় যখনই কোন খুশীর খবরে সব সমবয়সীরা মিলে আনন্দে বা হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠতাম ঠিক তখনই নানী-দাদি গোছের কেউ একজন হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠত-“বেশী খুশী হইস না, কপালে খারাবী আসতাছে”। ব্যস্‌ অমনি সব আনন্দ উধাও! কচি মনে বুঝতাম না- কপালে কি খারাবী আসতাছে?
আপনার চেনা জানা মানুষদের মধ্যে কি এমন মানুষ আছে ? যে কিনা, কোন খুশীর খবর শোনা মাত্রই এরকম বিষন্ন হয়ে উঠে? আর সে বিষন্নতা প্রসারিত করার চেষ্ট করে অন্যের মাঝেও? যদি এমন কেউ থাকে তাহলে তাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, তার Cherophobia আছে।



খবরদার ঘরে বিড়াল আনবি না!
তেলাপোকা কিংবা মাকড়সা ভীতি কি আছে কারও? যদি থাকে তাহলে তা খুব কমন ফোবিয়া। কিন্তু যদি বিড়াল ভীতি থাকে ? এ ফোবিয়াটির নাম ailurophobia ।
আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, নেপোলিয়ন, মুসোলিনি আর হিটলারের মত বিখ্যাত মানুষদেরও এই বিড়াল ভীতি ছিল ।



বিশ্বাস করিব কেমনে ?
অতীতের বিভিন্ন তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্য অনেকে আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারেন না। এর জন্য কিন্তু অতীত তিক্ত অভিজ্ঞতা টি দায়ী না । দায়ী Pistanthrophobia নামক রোগটি, যে রোগটিতে সে ভুগছে ।



আমি নাইতে নারি
শুধু বাচ্চা না, অনেক বয়স্কদের মধ্যেও এ রোগটি হতে পারে। রোগটির নাম Ablutophobia । এ রোগীরা গোসল করতে চান না । গোসল করাকে এরা রীতিমত ভয় পায় ।



হায়রে মোবাইল !
Nomophobia তে আক্রান্ত রোগীরা সারাক্ষণ মোবাইল বা মোবাইলের নেটওয়ার্ক হারিয়ে ফেলার আতংকে থাকে ।



দিনের আলোয় দেখব তোমায়
উহু, কোন লাভ নেই। এরা কখনই দিনের আলোয় বের হবে না (আমি কিন্তু ভালো মানুষদের কথা বলছি)। কারণ এদের Heliophobia আছে। এরা সূর্যকে ভয় পায়।



থাকার ভয়, হারাবার ভয়
চিন্তা করুনতো ! এরা চুল হারাবার ভয়ে অস্থির থাকে, আবার চুলের ভয়েও অস্থির থাকে। একেই বলে উভয় সংকট। স্যরি, Chaetophobia ।



বাঘে ছুলে আঠার ঘা, আর এদের ছুলে আঠারশ ঘা
যা কিছুই করেন না কেন ? Haphephobia রোগীদের কিন্তু ছুঁতে যাবেন না, মানে গায়ে হাত দিতে যাবেন না । এরা গায়ে হাতাহাতি অসম্ভব রকমের ভয় পায় ।
আমার কি মনে হয় জানেন ? আমাদের এই আধুনিক যুগের প্রেমিক প্রেমিকাদের মধ্যে কিন্তু এই রোগ একেবারেই নেই ! যেরকম ছুঁয়াছুঁয়ির মধ্যে থাকে !



কি যে করি, ওফ্‌ কি যে করি ?
আপনার জানাশোনার মধ্যে এমন কেউ কি আছেন, যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না ? এমন কেউ থেকে থাকলে তার রোগটির নাম Decidophobia । তার এই রোগটি যদি খুব বেশি সমস্যা করে তবে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান । উনাকে কিন্তু শুধু বললে লাভ হবে না । ডাক্তারের কাছে আদৌ যাবেন কিনা এ সিদ্ধান্তও উনি নিতে পারবেন না !



পাড়ার গুডি গুডি বড় ভাই
আপনার পাড়ায় কি গুডি (ম্যাড়ম্যাড়ে টাইপের ভালো) টাইপের কোন বড় ভাই আছেন? ঐ যে শুধু ক্লাশ আর বাসা, এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা ? নো আড্ডা, নো হাসি ঠাট্টা? তবে জেনে রাখুন উনি খুব গুডি তাই উনি এরকম, তা কিন্তু না ! ঐ ভাইকে গিয়ে বলুন- আপনার Scopophobia আছে।
ইনারা নিজেকে শুধু লুকিয়ে রাখতেই পছন্দ করেন । আর সব কিছুই কিন্তু আপনার মতই !



যে রোগ আমাদের কারও নেই
হ্যাঁ যে রোগটি আমাদের কারও নেই, সেটি হচ্ছে Chrometophobia । ইনারা টাকা পয়সা ভয় পায় । আর যদি কারও থেকেই থাকে, তাহলে আমাকে একটু ঠিকানাটা দেবেন ? মানে উনাকে সাহায্য করতাম আরকি ! উনাকে এত ভয় সহ্য করে টাকা পয়সা রাখার কষ্ট থেকে মুক্ত করে দিয়ে আসতাম !



ন্যাড়াতংক
ইনারা আবার ন্যাড়া মাথার মানুষদের ভয় পায়।
মনে পড়ে, ফ্যাশন এর চালে পড়ে আমি একবার কিছু দিন ন্যাড়া হয়ে ছিলাম, তখন এদের আতংকটা ভালোভাবেই টের পেয়েছি । তবে আমার মনে হয় কি জানেন ? বেশিরভাগ স্ত্রীদের এবং প্রেমিকাদের মধ্যেই বোধহয় এই রোগটি থাকে । বিশ্বাস হয় না? ঠিক আছে, তাহলে একবার ন্যাড়া হয়ে দেখুন কেমন সাহসী তারা ?
রোগটির নাম কিন্তু Peladophobia।



এখন টয়লেট করি কিভাবে?
Cathisophobia য় আক্রান্তরা নাকি বসতে ভয় পায় । আর শুধু ভয় না ! বসলে এদের নিঃশ্বাসও নাকি রীতিমত বন্ধ হয়ে আসতে থাকে । চিন্তা করুনতো এরা তাহলে টয়লেট করবে কিভাবে ? দাঁড়িয়ে?
হাসি আসছে তাই না। হাসার কিছুই নেই। সাধারণতঃ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কাউকে বন্দুকের নলের সামনে জিম্মি করে এভাবে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখার দরুন কারও কারও মধ্যে এ রোগটির আবির্ভাব হয় । বিষয়টি কিন্তু দুঃখজনক ।



হায়রে আমার সোনাচাদ বাবুরে ! তোর এ কি অবস্থা রে ?
আমার মনে হয়, মায়েদের মধ্যে এ রোগটি বেশী দেখা যায় । তাদের ছেলে সন্তানেরা যদি অল্প বয়সেই মুখে উদ্ভট মত দাড়ি রাখে তখন তাদের মায়েদের চোখে যে কষ্ট ফুটে উঠে তা আসলে ভোলার মত না ।
মায়েদের কথা বললাম তো এমনি এমনি, আসল কথা হচ্ছে Pogonophobia য় আক্রান্তরা মানুষের দাঁড়ি ভয় পায়।



তোমরা যে বল, আনলাকি থারটিন !
হ্যাঁ, অনেকেই বলে ১৩ সংখ্যাটি নাকি অশুভ। কিন্তু এটা যখন মাত্রাতিরিক্ত ভীতির পর্যায়ে চলে যায় তখন সে রোগটিকে Triskaidekaphobia বলে ।



সদা ভয় কাজ করে, দাওয়াতে না জানি কি করে ?
ইনারা দাওয়াতে যেতে ভয় পায়। কেন ভয় পায়, জানেন? Triskaidekaphobia রোগে আক্রান্ত কোন রোগীকে পেলে জিজ্ঞেস করে দেখবেন ? ইনি দাওয়াতে যান না কেন ? দেখবেন কত আজব আজব গল্প বের হতে থাকবে তার মুখ থেকে !



হাঁটুর বাটিতে স্যুপ !
Genuphobia রোগীরা নাকি হাঁটু দেখাতে ভয় পায় ! কেন বাপু ? তোমার হাটুর বাটি খুলে নিয়ে তাতে স্যুপ ঢেলে খাব, তাই?



যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে
একটু বেশি বয়স হবার পরও যদি কারও বিয়ে না হয় তবে বিয়ে আর হবে না এরকম একটা ভীতি তার মধ্যে কাজ করতে থাকে । কিন্তু ভীতি টা একটু বেশি মাত্রায় হয়ে গেলে সেটাকে Anuptaphobia বলে ।
আরও জঘন্য ব্যপার হচ্ছে এই অসুখটা হওয়াতেই কিন্তু তার বিয়ে হবার সম্ভাবনাটা আরও কমতে থাকে ।



ড্রাকুলা'র উত্তর পুরুষ
এদেরকে আমার মাঝে মাঝে ড্রাকুলা এর উত্তর পুরুষ মনে হয়। ড্রাকুলা চেনেন তো? যদি না চিনেন তাহলে চিনে নেন । সব কিছু কি আমিই চেনাব নাকি ? যাই হোক, যা বলছিলাম- এরা নাকি রসূন ভয় পায়।
বলি ড্রাকুলারও কি Alliumphobia নামক রোগটি ছিল নাকি? তা না হলে সে রসূন ভয় পেত কেন?



যাহ্‌ এটা আবার কোন অসুখ নাকি ? আমরা তো সবাই এরকম !
আমার কি মনে হয় জানেন? আমাদের দেশের বর্তমান ইয়ং সম্প্রদায়ের সবারই এ রোগটি আছে। পুরো জেনারেশনটারই এর চিকিৎসা করানো দরকার। মহামারী আকারে বিস্তারিত এ রোগটির নাম Bibliophobia ।
ও হ্যাঁ, এ রোগীরা কি ভয় পায় জানেন? – বই !!



আমি তো মামলাবাজ !
মামলা বাজ মানুষদের এ রোগটি হয় না । হলে তারা আর মামলা করতে পারত না । কারণ এ রোগীরা উকিলের চেম্বারে যেতে ভয় পায় । রোগটির নাম Liticaphobia।
আচ্ছা, উকিলদের যদি এ রোগ হয়? তখন কি হবে ?



কাব্যভীতি
জ্বী, কাব্য খুব ভয় পায় এরা । রোগটির নাম Metrophobia ।
ছোট বেলায় বোধ হয় “রাম গরুরের ছানা” ছড়াটি পড়েছিল! এখনও রাম গরুরের ছানা তো ছানাই আছে ! কিন্তু এদের ভয়ের ছানা আর ছানা নেই, রীতিমত পূর্ণ বয়স্ক গরুর সমান হয়ে গেছে ।



ছায়াভীতি
এক প্রেমিক তার প্রেমিকাকে কাব্য ঝেড়েছিল -“আমি সারাজীবন ছায়া হইয়া থাকিব তোমার সনে”। প্রেমিকা ছিল আবার Sciaphobia রোগে আক্রান্ত। ব্যস্‌ সম্পর্ক শেষ !
এ রোগে আক্রান্ত রোগীরা ছায়া ভয় পায় । এখন চিন্তা করুনতো প্রেমিকার অবস্থা ? যে জিনিসটাকে সে এত ভয় পায় তার প্রেমিক সে জিনিসটাই হয়ে যাবে ! তাও সারাজীবনের জন্যে ? বলি, তার প্রেমিকের কি অভাব আছে নাকি ? এখনও ফেইসবুক খুললে হালি তিনেক অফার দেখতে পাবা !
এ তো গেল প্রেমিকার অবস্থা । আর প্রেমিকের অবস্থা? সে তো এর আগেই বললাম ! “রাম গরুরের ছানা” ছড়াটি পড়া ছাড়াই বড় গরুর সমান কাব্যভীতি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ! বলি, আমার লেখাগুলি না পড়ে প্রেম করতে গেলেতো এমনই হবে, তাই না ?



আজি জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে
জ্বী, এরকম যদি জোছনা রাতে সঙ্গীকে নিয়ে বনে যাবার ইচ্ছা থাকে তাহলে বিয়ের আগেই চেক করে নেবেন আপনার সঙ্গীর Nyctohylophobia নামক রোগটি আছে কিনা । কারণ এরা রাতে গাছ পালা দেখলেই ভয় পায়, আর বন? তা আর নাই বললাম । আপনার জীবন থেকেই ঐ জোছনা টোছনা একদম উধাও করে দিবে ।
পরে সারা জীবন ইট পাথরের দেয়াল ধরে গান গাইবেন – বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে, আসি আসি বলে জোছনা ফাঁকি দিয়েছে। গেছে মাথায় ব্যপারটা ?



বলেন কি ভাইজান? আমি তো সবকিছুই ভয় পাই !
এ আবার কি বলে ? ইনি নাকি সব কিছুতেই ভয় পায় ! তাহলে আপনার তো Panophobia নামক ফোবিয়া আছে ! এতে আপনি সবকিছুই ভয় পাবেন, সবকিছুই ।
- আচ্ছ ভাই বলেন তো আপনি কেন সবকিছুই ভয় পান ?
- "এমনি এমনিই ভয় পাই ভাই । কেন পাই, আমি জানি না ।
- ঠিক আছে, আর বলতে হবে না । এ পর্যন্ত সেন্সলেস হয়েছেন ক’বার ?



নাহ্‌ ভাই, আমার কোন ফোবিয়া নাই, কিন্তু পরে যদি হয়?
এ যে আরেক ঝামেলা ! মানুষ খাল কেটে কুমির আনে, আর এ আনতে চায় হাঙ্গর মাছ ? বলি, সারাক্ষণ যদি এ আতঙ্কে থাকেন যে আপনার কোন ফোবিয়া হয়েছে কিনা, তাহলে নিশ্চিত হয়ে যান আপনার ফোবিয়া হয়ে গেছে । এ ফোবিয়ার নাম Phobophobia ।



এবার ফোবিয়ার ছোট্ট কিন্তু ভয়ঙ্কর ঘটনা দিয়ে শেষ করছি-

-আপা ? আপনার সোণামনি নাকি স্কুলে যেতে চায় না ?
-“না ভাই, একদম স্কুলে যেতে চায় না”।

-কেন যেতে চায় না ?
-“আরে ভাই, কি যে বলেন না! ও স্কুলে গেলে সারাদিন বাসায় বাঁদরামি করবে কে শুনি”?

-কিছু বলেন না ?
-“বলি মানে? কত করে বুঝাই! কিন্তু কিসে কি? স্কুলে যাবার কথা বললেই যদি ওর চেহারাটা একবার দেখতেন ? একেবার বাবার মত হয়েছে জানেন ? অভিনয়ের বাদশাহ্‌”!

-কিন্তু এভাবে চললে ওর পড়াশুনা ?
-“ভাই, আর বোলেন না ! মাঝে মাঝে তো মনে হয় এক্কেবারে মেরে ফেলি ! এত টাকা স্কুলের ফিস, তার ওপর প্রতিমাসে এত্তগুলো জরিমানার টাকা ! কি পাপে যে এই ছেলে জন্ম দিয়েছিলাম ? আমি আর পারি না ভাই, ওকে দূরে কোথাও রেখে আসতে পারবেন ভাই ? খুব উপকার হোত”।

-ওর বাবা সব জানে?
-“ভাই, সে কথা আর বলবেন না। সে জন্যেই তো বাচ্চাটাকে দূরে রেখে আসতে বলছি । আচ্ছা, বলেনতো ? ও তো বাবা ! ছেলেকে একটু বুঝাবে না ? তা না, এমন করে ছেলেটাকে মারে ! আমি মা, কিভাবে সহ্য করি বলেন”?

-কিন্তু এভাবে মারলেই ছেলে স্কুলে যায়?
-“যায় না মানে? এমন বাঁদরের বাঁদর ! মার ছাড়া এই বাঁদর স্কুলে যায় ভেবেছেন ? ভাই, একটা কথা বলি ? আপনার তো সন্তান নেই, তাই সন্তানের জ্বালাও বোঝেন না । এর জন্মই হয়েছে আমাকে জ্বালানোর জন্য । আবার জানেন ? এর বাবা কি বলে ? বলে, আমি নাকি কম লেখাপড়া করেছি তাই এমন সন্তান পেটে ধরেছি । তখন কি যে কষ্ট হয় ভাই, মনে হয় সব কিছু ছেঁড়ে ছুঁড়ে চলে যাই কোথাও । আর ভাল্লাগে না এ যন্ত্রণা”!

-কিন্তু আপনার বাচ্চা তো প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকে শুনেছি, এটা কি মারের জন্য?
-“ভাই বলবেন না । আমি কি জন্য বললাম একে দূরে কোথাও রেখে আসতে ? এই বয়সে এত্ত মার খেয়েছে ! আপনার কি মনে হয় ওর আর মার খেলে সমস্যা হয় ? বাঁদরটা যেদিন স্কুলে যায় সেদিনই জ্বর নিয়ে আসে বাসায়”।

-ডাক্তার দেখিয়েছেন ?
-হ্যাঁ ভাই, নিয়মিতই দেখাই । ওষুধ দেয়, জ্বর চলে যায় । তারপর আবার যেই কার সেই ! বাঁদরামি শুরু !

-না না, আমি জ্বরের ডাক্তারের কথা বলছি না, সাইকিয়াট্রিষ্ট এর কথা বলছি । মানে ও যে স্কুলে যেতে চায়না এজন্যে কোন সাইকিয়াট্রিষ্ট দেখিয়েছেন?
-“ভাই, একটা কথা বলি ? কিছু মনে কোরেন না । আমার মনে হয়, আপনারই একজন সাইকিয়াট্রিষ্ট দেখানো দরকার । বাচ্চা স্কুলে যায়না এ জন্য আবার সাইকিয়াট্রিষ্ট ? ভালোই বলেছেন । মারের ওপর কোন ওষুধ আছে ? বলেন ? ওর বাঁদরামির অসুখ হয়েছে । ভালোভাবে একদিন মার পড়লে দেখবেন ঠিক হয়ে যাবে ।

ছল ছল চোখে এতক্ষণ বসে দাঁড়িয়ে মায়ের কথা শুনছিল বাচ্চাটি, আর হয়ত বুঝার চেষ্টা করছিল নেক্সট মারটা ওর ওপর কখন পড়তে যাচ্ছে । ওর চোখের দিকে ভালো করে লক্ষ করলাম, আরে ! এ তো কোন সাধারণ বাচ্চা না !!!

এ বাচ্চা কষ্ট পেয়ে মরে যাবে তবুও কাউকে কষ্টের কথাটা শেয়ার করবেনা ! বাচ্চাটার না বলা ব্যথাগুলো খুব কষ্ট দিচ্ছিল আমাকে । তবুও ওকে স্বাভাবিক করার জন্য বললাম- “বাবু আসতো তোমার একটা ছবি তুলি”? সাথে সাথেই কোনমতে চোখের পানি মুছে পোজ দিল ছবি তোলার জন্যে।



বের হবার আগে ওর মাকে বললাম আপনার বাচ্চার Didaskaleinophobia নামক রোগটি হয়েছে। আপনারা বাবা-মা মিলে ওর যা অবস্থা করছেন ! তাতে ও খুব তাড়াতাড়িই চিকিৎসার বাইরে চলে যাবে। এক্ষুনি ওর চিকিৎসা শুরু করান ।

আর যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয়, তাহলে দয়া করে মেরে ফেলুন ওকে । এটা ওর জন্যে বরং ভালোই হবে, অন্ততঃ প্রতিদিন মরার চাইতে।

পুনশ্চঃ এটা তিন বছর আগের ঘটনা। বাচ্চাটির এখন আট বছর বয়স। ওর চিকিৎসা করানো হয়েছিল। এর পর আর কোন সমস্যা হয়নি । ও এখন নিয়মিত স্কুলে যায়, খেলাধূলা করে । আর বাচ্চার বাবার অনুরোধে ও আমাকে পাপা বলে ডাকে । আমি নাকি উনার বাচ্চাকে দ্বিতীয়বার জন্ম দিয়েছি । এ আনন্দ রাখি কোথায় ........... !

চলবে .....

এই সিরিজের অন্যান্য পোষ্টগুলিঃ

১। কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-১
২।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-২
৩।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৩
৪।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৪
৫।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৫
৬।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৬
৭।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৭
৯।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৯
১০।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-১০
১১।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-১১
১২।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-১২


সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৪
২৩টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×