somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কয়লা নীতি, টেকনিক্যাল জ্ঞানের রাজনীতি - আমরা কেমন বুয়েট চাইতে পারি?

০১ লা জুলাই, ২০০৯ রাত ৯:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিক "পড়ুয়া_পড়ুয়া" একটা পোষ্ট দিয়েছেন আজকে যার শিরোনাম হলো, কয়লা নীতি নিয়ে কিছু কথা : প্রফেসর নুরুল ইসলামের একটি বিবৃতি।
Click This Link

পোষ্ট টা গুরুত্ত্বপূর্ণ সন্দেহ নাই। মনযোগ দিয়ে পড়তে পড়তে ভাবছিলাম। কয়লা নীতি, টিপাইমুখ বাঁধ, তেল গ্যাসের প্রোডাকশন শেয়ারিং কনট্রাক্ট (PSC) ইত্যাদি ইস্যুগুলো নিয়ে আমাদের দূর্বল রাজনৈতিক সংহতির ক্ষমতা, সরকারগুলো দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে,জনগণকে প্রতিনিধিত্ত্ব করতে ব্যর্থ হয়। এসব ইস্যুগুলোতে গভীর টেকনলজিক্যাল বিষয়ও জড়িত থাকে। সেখানে বুয়েটের অবদান ও ভুমিকা কী?
এক তরুণ প্রফেসর তামিমই বুয়েটকে কুখ্যাত বানিয়ে ফেলার জন্য যথেষ্ট হলেও কয়লা নীতিতে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, টিপাইমুখ ইস্যুতে প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক আইনুন নিশাত এর অবস্হান আবার আশার আলো জাগায়।
এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে মন্তব্য লিখতে গিয়ে টের পাই লেখার ভারকেন্দ্র বুয়েটের দিকে ভারি হয়ে যায়। আসলে ঠিক বুয়েট না একটা পুরানো তর্ক: টেকনোলজির কী কোন শ্রেণীস্বার্থ, রাজনীতি, দেশের স্বার্থজ্ঞান আছে? নাকি টেকনোলজির জ্ঞান রাজনীতি নিরপেক্ষ? কার রাজনীতি, কার স্বার্থ, দেশ বা জাতীয় স্বার্থ - টেকনোলজি কী এসব কিছুর নিরপেক্ষ?

তর্কটা নিয়ে সরাসরি বিস্তারে যাই নাই। বুয়েটের প্রেক্ষিতে তর্কটা নিয়ে কিছু কথা বলরছি মাত্র।
এপর্যন্ত পোষ্ট টা খুব বেশি নজর কেড়েছে মনে হয়নি, কেবল দুইটা মন্তব্য দেখলাম। এসবকিছু বিবেচনায় আমার মন্তব্য এই আলাদা পোষ্টে দিলাম। প্রসঙ্গের খেই ধরতে পাঠক কষ্ট করে উপরে দেওয়া লিঙ্ক, নিক "পড়ুয়া_পড়ুয়া"র পোষ্টটা পড়ে নিবেন। আশা করি, নিক "পড়ুয়া_পড়ুয়া"ও আমার উপর নাখোশ হবেন না।

Click This Link পড়ার পর, এবার আমার মন্তব্য নিচে পড়ুন।
_____________
লেখাটার শেষে লেখক পরিচিতি কী এরকম হবে:

"অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, সদস্য, আব্দুল মতিন পাটোয়ারী খসড়া কয়লা নীতি প্রণয়ন কমিটি, অধ্যাপক বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়"।

হলে এরকম স্পষ্ট ভাবে, কোন দ্ব্যার্থক অর্থ বের করার সুযোগ না রেখে বললে ভালো হতো। এখনও একটা মন্তব্য আকারে সংযোজন করতে পারেন।
আমি পড়তে গিয়ে বারবার নিক "পড়ুয়া_পড়ুয়া" ও অধ্যাপক নুরুল ইসলাম - এই দুইয়ের মধ্যে গোলমাল লেগে যাচ্ছিল।

আমি অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি আশির দশকের শুরু থেকে। আমার চোখে, সততা, সাধারণ জীবনযাপন, ডায়নামিক, ব্যবস্হাপনা বিষয়ে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা - সব মিলিয়ে দুর্লভ কিছু গুনের মানুষ তিনি। আমার জানা মতে, তিনি বুয়েটের একমাত্র শিক্ষক যার সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ আছে, খোঁজখবর রাখেন। সামাজিক চোখ নিয়ে টেকনিক্যাল পেশাদার। অনেকেই হয়ত জানেন, "টেকনিক্যাল জ্ঞানের বা ট্রেডের কোন ক্লাস পজিশন নাই, রাজনীতিকরা (অর্থাৎ শাসক শ্রেণী রাজনীতি) যা সিদ্ধান্ত নিবেন তা চোখ বুজে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করাই বুয়েটের শিক্ষককুল ও ইন্জিনিয়ারদের কাজ" - এই নীতি দীর্ঘদিন ধরে বুয়েট প্রশাসন ও শিক্ষকদের ফেরি করতে দেখেছেন। এভাবে ছাত্রদের রাজনৈতিক সচেতনাকে সবসময় নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
এই নীতির ফলে বুয়েট ও তার প্রডাক্ট দেশের বিরুদ্ধে তাঁর জ্ঞান বিদেশীদের ভাড়া খেটে জীবন কাবার করতে ব্যয় করে দিল কী না তা কখনই তলিয়ে দেখা হয় নাই। অন্ধ করে রাখা হয়েছে। এভাবেই চলছিল। এই পরিস্হিতি জিইয়ে রাখার কারণে, আজকে প্রফেসর তামিমের মত লোকজনের সংখ্যা বুয়েটে ক্রমশ বাড়ছে। খোলাখুলি স্পষ্ট হচ্ছে, লুকিয়ে থাকা বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানীর দালালরা প্রকাশ্যেই অবস্হান নিচ্ছে।
প্রফেসর তামিম প্রফেসর নুরুল ইসলামের তুলনায় অন্তত ১৫ বছরের জুনিয়র। একই কেমিক্যাল ডিপার্টমেন্টে তামিম প্রফেসর নুরুল ইসলামের ছাত্র ছিল।
তামিমের আজকের পজিশন নেবার পিছনে বুয়েটের নিরুৎসাহিত এ্যন্টি-রাজনীতি সচেতন পরিবেশ বজায় রাখার কী কোন ভুমিকা নাই? এটা বুয়েট, বুয়েটের বাইরে সকল টেকনোলজি পেশার সবাইকে ভেবে দেখতে বলব।
আসুন কল্পনা করি, কয়লা নীতি ইস্যুতে বুয়েট জুড়ে ছাত্র-শিক্ষকরা টেকনিক্যাল, সোসিও-ইকোনমিক বিভিন্ন সভা, সেমিনার, জর্নাল আলোচনা তর্ক-বিতর্কে মেতে উঠেছে। সেখান থেকে গণস্বার্থে, দেশের স্বার্থে অনুকুলে সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ ও বাধ্য হচ্ছে। কারণ কোন নীতি তখন আর গোপনে গুটিকতক স্বার্থবাজের বিষয় নয়। সামাজিক তর্ক-বিতর্কের অংশ বলে, আবার টেকনিক্যাল ও সিরিয়াস আলোচনা বলে এর নিজস্ব একটা ওজন আছে, যে ওজনে যে কোন জাতীয় নীতিতে সে প্রভাব রাখে, সিদ্ধান্তে একটা বড় স্টেকহোল্ডার। ছাত্র-শিক্ষকদের এই ধরণের চর্চা একই সঙ্গে জীবন্ত-একাডেমিক, পেশায় কাজে লাগে এমন সোসাল পার্সপেক্টিভে টেকনোলজিকে শিখা। একই সঙ্গে তা আর কোন গণবিচ্ছিন্ন শিক্ষা নয়, পেশায় প্রবেশের আগেই টেকনোলজির প্রাকটিক্যাল প্রয়োগ সম্পর্কে জেনে যাওয়া।

গোপনে কাজ সমাধা করতে পারা তামিমদের শক্তির একটা বড় উৎস। এটাকে যতই জনগণের সামনে উন্মোচন করে দেয়া যাবে ততই পাল্টা মোকাবিলার শক্তি সংগঠিত হয়ে উঠবে। তামিমদের একমাত্র এভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব। দেশের স্বার্থ নিয়ে এককাট্টা খাড়া হতে, এভাবে এশিয়া এনার্জিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে গড়া সম্ভব।

আমার এই স্বপ্ন কল্পনাকে কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দলবাজির লাল নীল দল বা দলবাজি বুঝবেন না আশা করি। ইদানিং বুয়েটেও ভাইস চ্যান্সেলর হবার দৌড় শুরু হয়েছে, দলবাজি ওখানে আস্তে আস্তে আসন গাড়ছে। ছাত্রদের রাজনীতি সচেতনতা নিয়ে নাক শিটকানো শিক্ষকেরা নিজেই বুড়া বয়সে কাচা খুলে দলবাজির দৌড়ে অংশ নিচ্ছে, আর ভাব করছে তারা রাজনীতি করছে। রগড় হিসাবে এটা খুবই ভাল সন্দেহ নাই। তবে, আমরা নিশ্চয় যে কোন দলবাজিকে ধিক্কার জানাই।

আমার কল্পনার বুয়েট নিয়ে কী আমরা এভাবে ভাবতে পারি? না কী এ আমার শুধু কল্পনা?

"পড়ুয়া_পড়ুয়া" - আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
২৫টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×