নিক "পড়ুয়া_পড়ুয়া" একটা পোষ্ট দিয়েছেন আজকে যার শিরোনাম হলো, কয়লা নীতি নিয়ে কিছু কথা : প্রফেসর নুরুল ইসলামের একটি বিবৃতি।
Click This Link
পোষ্ট টা গুরুত্ত্বপূর্ণ সন্দেহ নাই। মনযোগ দিয়ে পড়তে পড়তে ভাবছিলাম। কয়লা নীতি, টিপাইমুখ বাঁধ, তেল গ্যাসের প্রোডাকশন শেয়ারিং কনট্রাক্ট (PSC) ইত্যাদি ইস্যুগুলো নিয়ে আমাদের দূর্বল রাজনৈতিক সংহতির ক্ষমতা, সরকারগুলো দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে,জনগণকে প্রতিনিধিত্ত্ব করতে ব্যর্থ হয়। এসব ইস্যুগুলোতে গভীর টেকনলজিক্যাল বিষয়ও জড়িত থাকে। সেখানে বুয়েটের অবদান ও ভুমিকা কী?
এক তরুণ প্রফেসর তামিমই বুয়েটকে কুখ্যাত বানিয়ে ফেলার জন্য যথেষ্ট হলেও কয়লা নীতিতে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, টিপাইমুখ ইস্যুতে প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক আইনুন নিশাত এর অবস্হান আবার আশার আলো জাগায়।
এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে মন্তব্য লিখতে গিয়ে টের পাই লেখার ভারকেন্দ্র বুয়েটের দিকে ভারি হয়ে যায়। আসলে ঠিক বুয়েট না একটা পুরানো তর্ক: টেকনোলজির কী কোন শ্রেণীস্বার্থ, রাজনীতি, দেশের স্বার্থজ্ঞান আছে? নাকি টেকনোলজির জ্ঞান রাজনীতি নিরপেক্ষ? কার রাজনীতি, কার স্বার্থ, দেশ বা জাতীয় স্বার্থ - টেকনোলজি কী এসব কিছুর নিরপেক্ষ?
তর্কটা নিয়ে সরাসরি বিস্তারে যাই নাই। বুয়েটের প্রেক্ষিতে তর্কটা নিয়ে কিছু কথা বলরছি মাত্র।
এপর্যন্ত পোষ্ট টা খুব বেশি নজর কেড়েছে মনে হয়নি, কেবল দুইটা মন্তব্য দেখলাম। এসবকিছু বিবেচনায় আমার মন্তব্য এই আলাদা পোষ্টে দিলাম। প্রসঙ্গের খেই ধরতে পাঠক কষ্ট করে উপরে দেওয়া লিঙ্ক, নিক "পড়ুয়া_পড়ুয়া"র পোষ্টটা পড়ে নিবেন। আশা করি, নিক "পড়ুয়া_পড়ুয়া"ও আমার উপর নাখোশ হবেন না।
Click This Link পড়ার পর, এবার আমার মন্তব্য নিচে পড়ুন।
_____________
লেখাটার শেষে লেখক পরিচিতি কী এরকম হবে:
"অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, সদস্য, আব্দুল মতিন পাটোয়ারী খসড়া কয়লা নীতি প্রণয়ন কমিটি, অধ্যাপক বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়"।
হলে এরকম স্পষ্ট ভাবে, কোন দ্ব্যার্থক অর্থ বের করার সুযোগ না রেখে বললে ভালো হতো। এখনও একটা মন্তব্য আকারে সংযোজন করতে পারেন।
আমি পড়তে গিয়ে বারবার নিক "পড়ুয়া_পড়ুয়া" ও অধ্যাপক নুরুল ইসলাম - এই দুইয়ের মধ্যে গোলমাল লেগে যাচ্ছিল।
আমি অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি আশির দশকের শুরু থেকে। আমার চোখে, সততা, সাধারণ জীবনযাপন, ডায়নামিক, ব্যবস্হাপনা বিষয়ে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা - সব মিলিয়ে দুর্লভ কিছু গুনের মানুষ তিনি। আমার জানা মতে, তিনি বুয়েটের একমাত্র শিক্ষক যার সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ আছে, খোঁজখবর রাখেন। সামাজিক চোখ নিয়ে টেকনিক্যাল পেশাদার। অনেকেই হয়ত জানেন, "টেকনিক্যাল জ্ঞানের বা ট্রেডের কোন ক্লাস পজিশন নাই, রাজনীতিকরা (অর্থাৎ শাসক শ্রেণী রাজনীতি) যা সিদ্ধান্ত নিবেন তা চোখ বুজে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করাই বুয়েটের শিক্ষককুল ও ইন্জিনিয়ারদের কাজ" - এই নীতি দীর্ঘদিন ধরে বুয়েট প্রশাসন ও শিক্ষকদের ফেরি করতে দেখেছেন। এভাবে ছাত্রদের রাজনৈতিক সচেতনাকে সবসময় নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
এই নীতির ফলে বুয়েট ও তার প্রডাক্ট দেশের বিরুদ্ধে তাঁর জ্ঞান বিদেশীদের ভাড়া খেটে জীবন কাবার করতে ব্যয় করে দিল কী না তা কখনই তলিয়ে দেখা হয় নাই। অন্ধ করে রাখা হয়েছে। এভাবেই চলছিল। এই পরিস্হিতি জিইয়ে রাখার কারণে, আজকে প্রফেসর তামিমের মত লোকজনের সংখ্যা বুয়েটে ক্রমশ বাড়ছে। খোলাখুলি স্পষ্ট হচ্ছে, লুকিয়ে থাকা বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানীর দালালরা প্রকাশ্যেই অবস্হান নিচ্ছে।
প্রফেসর তামিম প্রফেসর নুরুল ইসলামের তুলনায় অন্তত ১৫ বছরের জুনিয়র। একই কেমিক্যাল ডিপার্টমেন্টে তামিম প্রফেসর নুরুল ইসলামের ছাত্র ছিল।
তামিমের আজকের পজিশন নেবার পিছনে বুয়েটের নিরুৎসাহিত এ্যন্টি-রাজনীতি সচেতন পরিবেশ বজায় রাখার কী কোন ভুমিকা নাই? এটা বুয়েট, বুয়েটের বাইরে সকল টেকনোলজি পেশার সবাইকে ভেবে দেখতে বলব।
আসুন কল্পনা করি, কয়লা নীতি ইস্যুতে বুয়েট জুড়ে ছাত্র-শিক্ষকরা টেকনিক্যাল, সোসিও-ইকোনমিক বিভিন্ন সভা, সেমিনার, জর্নাল আলোচনা তর্ক-বিতর্কে মেতে উঠেছে। সেখান থেকে গণস্বার্থে, দেশের স্বার্থে অনুকুলে সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ ও বাধ্য হচ্ছে। কারণ কোন নীতি তখন আর গোপনে গুটিকতক স্বার্থবাজের বিষয় নয়। সামাজিক তর্ক-বিতর্কের অংশ বলে, আবার টেকনিক্যাল ও সিরিয়াস আলোচনা বলে এর নিজস্ব একটা ওজন আছে, যে ওজনে যে কোন জাতীয় নীতিতে সে প্রভাব রাখে, সিদ্ধান্তে একটা বড় স্টেকহোল্ডার। ছাত্র-শিক্ষকদের এই ধরণের চর্চা একই সঙ্গে জীবন্ত-একাডেমিক, পেশায় কাজে লাগে এমন সোসাল পার্সপেক্টিভে টেকনোলজিকে শিখা। একই সঙ্গে তা আর কোন গণবিচ্ছিন্ন শিক্ষা নয়, পেশায় প্রবেশের আগেই টেকনোলজির প্রাকটিক্যাল প্রয়োগ সম্পর্কে জেনে যাওয়া।
গোপনে কাজ সমাধা করতে পারা তামিমদের শক্তির একটা বড় উৎস। এটাকে যতই জনগণের সামনে উন্মোচন করে দেয়া যাবে ততই পাল্টা মোকাবিলার শক্তি সংগঠিত হয়ে উঠবে। তামিমদের একমাত্র এভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব। দেশের স্বার্থ নিয়ে এককাট্টা খাড়া হতে, এভাবে এশিয়া এনার্জিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে গড়া সম্ভব।
আমার এই স্বপ্ন কল্পনাকে কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দলবাজির লাল নীল দল বা দলবাজি বুঝবেন না আশা করি। ইদানিং বুয়েটেও ভাইস চ্যান্সেলর হবার দৌড় শুরু হয়েছে, দলবাজি ওখানে আস্তে আস্তে আসন গাড়ছে। ছাত্রদের রাজনীতি সচেতনতা নিয়ে নাক শিটকানো শিক্ষকেরা নিজেই বুড়া বয়সে কাচা খুলে দলবাজির দৌড়ে অংশ নিচ্ছে, আর ভাব করছে তারা রাজনীতি করছে। রগড় হিসাবে এটা খুবই ভাল সন্দেহ নাই। তবে, আমরা নিশ্চয় যে কোন দলবাজিকে ধিক্কার জানাই।
আমার কল্পনার বুয়েট নিয়ে কী আমরা এভাবে ভাবতে পারি? না কী এ আমার শুধু কল্পনা?
"পড়ুয়া_পড়ুয়া" - আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।