somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভিওআইপি ব্যবসা নয়, রাষ্ট্রের প্রাপ্য ট্যাক্সের টাকা ভাগ বাটোয়ারার কাহিনী

২৯ শে মার্চ, ২০১০ বিকাল ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভিওআইপি নিয়ে আলোচনায় সবসময় দেখা যায়, রাষ্ট্রের ট্যাক্স আরোপ ও আদায় - এদিকটা নিয়ে কথা সেখানে উঠে না; বাইরে বা উহ্য থেকে যায়। রাগইমনের Click This Link
এই পোষ্টও এর বাইরে নয়। ঐ পোষ্ট ও ওতে অংশগ্রহণকারীদের মন্তব্যগুলো পড়ে সবার আলোচনার দৃষ্টিকোণ দেখে আমি বেশ হতাশ হয়েছি। সবার আলোচনার দৃষ্টিকোণ নিজ পেটি স্বার্থের জায়গা থেকে; রাষ্ট্রের স্বার্থ, ওর ট্যাক্স আরোপের প্রয়োজন - এগুলো সেখানে বিষয় হয়ে জায়গা পায়নি। কেউ প্রশ্ন তুলতে চায়নি ভিওআইপি ব্যবসা কেন লোভনীয়, ভিওআইপি নিয়ে এত আলোচনা কেন? বরং এটা SME বা ক্ষুদ্র বা মিডিয়াম উদ্যোক্তা তরুণদের একটা সম্ভাবনাময় ইনিশিয়েটিভ গণ্য করে ভিওআইপিকে এক মাহাত্মদান করা হয়েছে। এই মাহাত্মদান ছলনাময়।
কেন একথা বলছি সেদিকে বিস্তারে যাবার আগে রাষ্ট্রের ট্যাক্স আরোপের পক্ষে আমি দাড়াতে চাই; কেন দাঁড়াতে চাই এবং কেন সকলের দাঁড়ানো দরকার তা নিয়ে দু'দন্ড ওকালতি করব। এরপর সেদিকে যাব।

বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো (প্রশাসন, প্রতিরক্ষাবাহিনী, আইন ও বিচার বিভাগ, বিভিন্ন মন্ত্রনালয়, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি) চালাতে গেলে খরচ আছে। সাধারণভাবে (আদর্শ অর্থে) রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ হলো সমাজে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, আইন শৃঙ্খলার মধ্যে একটা সমাজ গড়ে তোলা - রাষ্ট্র এইটা করতে না পারলে রাষ্ট্রের থাকা / না থাকা সমান। সাধারণ স্বার্থের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার দরকার না থাকলে রাষ্ট্রের প্রয়োজন নাই। নিয়ন্ত্রণ তৎপরতার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র জানান দেয় সে আছে। এখানে রাষ্ট্র বলতে আমাদের আজকের রাষ্ট্র এবং আগামী বিপ্লবীদের স্বপ্নে দেখা ফলে প্রাপ্ত কোন নতুন রাষ্ট্র - সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এমন কথাই বলছি আমি। ফলে সমাজে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, আইন শৃঙ্খলার মধ্যে একটা সমাজ গড়ে তোলার কর্তব্য সব রাষ্ট্রেরই থাকতেই হবে। কিন্তু এই কাজ করতে গেলে এক বিরাট খরচের দিক আছে। সে খরচ যোগাড়ের জন্য ট্যাক্স ধার্য করা হলো - রাষ্ট্রের আয় বা রাজস্ব আয়ের উৎস। তাই আমরা আশা করি, ট্যাক্স আরোপ করে রাজস্ব আয় বাড়ানো জনগণেরই স্বার্থের পক্ষের কাজ। কিন্তু মজার কথা হলো এটা আমাদের সামগ্রিক সাধারণ স্বার্থ; কিন্তু একইসাথে ব্যক্তিবিশেষ স্বার্থ বা পেটি স্বার্থ এর একেবারে বিরোধী। যেমন যে ট্যাক্স দেয় বা ট্যাক্স ধার্য যার উপরে সে নাখোশ থাকে। তার মানে, এই ইস্যুতে ব্যক্তির সাধারণ স্বার্থ আর বিশেষ স্বার্থের মধ্যে একটা পরস্পর বৈপরীত্য, বিরোধীতা আছে। চির-অমীমাসিত এই বৈপরীত্যের মধ্যেও একটা ভারসাম্য রচনা করতে পারলে তবে হয়ত একটা আপাত সমাধান পাওয়া যেতে পারে।

রাষ্ট্র বা সরকারের কোন নীতি বিষয়ক আলোচনায় ( যেমন, ভি ও আই পি অবৈধ কেন?) ট্যাক্স বা রাজস্ব আয় সংগ্রহের স্বার্থের দিকটা বাদ রেখে কথা বলাটা অবাস্তব একপেশে ব্যক্তি স্বার্থের স্বার্থপর আচরণ হতে বাধ্য। রাষ্ট্রের স্বার্থ, রাজস্ব আয় সংগ্রহ সংক্রান্ত দিক, আমাদের সাধারণ স্বার্থের দিক উপেক্ষিত রেখে আমরা কথা বলতে পারি না।

মুল কথা হলো, আমরা একটা রাষ্ট্র চালাতে চাই - এখানে প্রত্যেকে একজন শাসকের জায়গায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে, সাধারণ স্বার্থের এই জায়গায় দাড়িয়ে ভাবতে পারতে হবে।

অনেকেরই হয়ত আমার রাষ্ট্রের ট্যাক্স আরোপের পক্ষে দাঁড়ানো দেখে অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। মনে হতে পারে পি মুন্সীকে ভাল জানতাম তিনি আবার আমাদের রাষ্ট্র বা চোর সরকারগুলোর পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন কেন?
প্রথমত, এটা রাষ্ট্র সংক্রান্ত নীতিগত ভাবনা। শক্তিশালী মর্যাদাসম্পন্ন রাষ্ট্র দেখতে চাইলে আমরা আর ট্যাক্স প্রসঙ্গ উপেক্ষা করতে পারি না। এছাড়া সরকারগুলো চোর দুর্নীতিবাজ হলেও সেই অজুহাতে ট্যাক্সের প্রসঙ্গ উপেক্ষিত রেখে কোন আলোচনা চলতে পারে না। দ্বিতীয়ত, সংক্ষেপে একটা সূত্র দেই। আমরা অনেকেই আইএমএফ ও বিশ্বব্যাঙ্ককে আমাদের দেশের দুর্দশার জন্য দায়ী করি, ভাললাগে, কথা সত্যিই বটে। কিন্তু আমাদের কী এমন হালাত বা বাস্তব শর্তের কারণে আমাদের রাষ্ট্র আইএমএফ ও বিশ্বব্যাঙ্কের দারস্ত হয় অথবা, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাঙ্ক আমাদের রাষ্ট্রকে শর্ত আরোপ করে ঋণে আবদ্ধ করতে পারে? আমাদের অর্থনীতির মৌলিক নীতিমালাগুলো কী হবে, কীভাবে চলবে তা ডিকটেট করার ক্ষমতা সে হাতে নিয়ে নিতে পারে?
কারণ, আমাদের রাষ্ট্রের নিজস্ব আয় বা ট্যাক্স সংগ্রহ মারাত্মকভাবে কম ও অদক্ষ। কম মানে? কার তুলনায় কম? রাষ্ট্রের রাজস্ব আয় থেকে ব্যয়ের মোটাদাগের খাত গুলো হলো, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো চালানোর খরচ ও দেশের অকাঠামোগত উন্নয়নের (ADP) কাজ হাতে নেবার খরচ - এই ব্যয়ের প্রয়োজনের তুলনায় রাজস্ব আয় কম। এপর্যন্ত প্রতিবছর আমাদের মোট রাজস্ব আয়ের ৭০% ই খরচ হয়ে যায় কেবল সরকারী কর্মচারীদের বেতন যোগাড় করতে। এথেকে বুঝা যায়, আমাদের ট্যাক্স ষ্ট্রাকচার কত অগোছাল, অপটু। আবার এমন অনেক খাত আছে যেখাত থেকে প্রত্যক্ষ রাজস্ব আয়ের সংস্হান থাক বা না থাক রাষ্ট্র সেখাতে ব্যয় উপেক্ষা করতে পারে না। এই পরিস্হিতিতে কেবল বেতন দিতেই ৭০% রাজস্ব আয় ব্যু হয়ে যাবার পর বাকী ৩০% দিয়ে অবকাঠামোগুলো রক্ষণাবেক্ষণের খরচের পর নতুন কিছু করার মত তেমন কোন সামর্থ আমাদের থাকে না। ফলে অবধারিতভাবে হাত পাতা। নিজ সংসারের খরচ নিজে না চালাতে পারলে যার কাছে হাত পেতে ধারকর্জ করা হয় সে এরপর তাঁর নিজের স্বার্থ অনুযায়ী পরামর্শ ও অর্থ দিয়ে সংসার পরিচালনায় সংস্কারের নামে নিজ ইচ্ছার প্রতিভু এক সংসার অথবা আমাদের রাষ্ট্রকে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাঙ্কের ইচ্ছার প্রতিভু এক আকার দিয়ে ফেলতে পারে। জনগণের নিজের ইচ্ছা, স্বার্থের প্রতিভু আমাদের রাষ্ট্র বলে কিছু আর অবশিষ্ট থাকে না। গ্লোবাল অর্থনীতির স্বার্থ এভাবেই তার আঁচলে তলে আমাদেরকে বেঁধে ফেলে, আর আমরা সেই ঘানি টানতে থাকি। এটা ওদের জন্য তখন খুবই সহজ কাজ।
কাজেই রাষ্ট্র সংক্রান্ত নীতি পলিসি আলোচনায় রাজস্ব আয় বা ট্যাক্স আরোপ ও আদায়ের প্রসঙ্গ সেখানে উপেক্ষিত রাখা, পেটিস্বার্থে কথা বলা মানে নিজ রাষ্ট্রকে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাঙ্কের মর্জিমাফিক আকার দেবার ক্ষমতা ওর হাতে তুলে দেওয়ার শর্ত তৈরি করা। কাজেই আইএমএফ ও বিশ্বব্যাঙ্ক সব লুটে নিয়ে গেল বলে গগনবিদারী শ্লোগান তুলার বদলে এই বাস্তবতা বুঝতে পারা ও সে অনুযায়ী সক্রিয়তা অনেক বেশি কাজের। নিজ ভাবনায় একে জায়গা করে দিতে পারলে অনেক কিছুই বদলানো, সক্রিয় হওয়া সম্ভব।

তবে, সবকিছুতে সরাসরি ট্যাক্স আরোপ করতে হবে, এমন করা ঠিক নাও হতে পারে। অনেক সময় একধরণের ট্যাক্স (আমদানী শুল্ক) তুলে নিলে অন্য ধরণের আয় (ইনকাম ট্যাক্স) বেশি আসার সম্ভাবনা থাকে; তখন মোটের উপর রাজস্ব আয় বাড়তে পারে। যেমন, কমপিউটারের উপর ১৯৯৭ সাল থেকে সরকারের ট্যাক্স তুলে নেওয়া। আমলাতান্ত্রিক বাধা, কনজারভেটিভ চিন্তার উর্দ্ধে উঠে যে কোন কারণেই হোক হাসিনার সরকার সে সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিল। এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। কমপিউটারের উপর আগের ৩০% আমদানী ট্যাক্স আরোপ করে সরকারের যে রাজস্ব আয় হত এর তুলনায়, আমদানি ট্যাক্স তুলে নেওয়ার ফলে কম্পিউটারকে কাজে লাগিয়ে মানুষের কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে অন্য কোন ট্যাক্স থেকে আগের চেয়ে বেশি লাভ হতে পারে। সেদিকটাই সেখানে বিবেচনা করা হয়েছিল। অবশ্য এই খাতে এর মোট আদায়কৃত ট্যাক্সের পরিমাণটা খুবই কম, ফলে এটাও বিবেচনার এক গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয় হতে পেরেছিল।
এছাড়া অন্য যে লাভালাভ - সরাসরি অর্থনৈতিক, পরোক্ষ অর্থনৈতিক এবং না-অর্থনৈতিক - ট্যাক্স তুলে নেয়াতে সব মিলিয়ে সে আয় অনেক বেশি। যে পরিবার একটা টিভি কেনার সামর্থ রাখে, ট্যাক্স না থাকলে সে বাসার পড়ুয়া ছাত্রকে নিজেই কমপিউটার কিনে দিতে সক্ষম হতে পারে। পড়ুয়া ছাত্রের নাগালে কমপিউটার মানে দেশের মানব সম্পদ উন্নয়নের (হি্উম্যান রিসোর্স) পক্ষে একধাপ আগানো। এটা হাওয়াই কথা নয়। বর্তমান গ্লোবাল অর্থনৈতিক ট্রেন্ডে কমপিউটার টেকনোলজিতে যে পরিমাণ বিনিয়োগের পাহাড় জমেছে এর থেকে সুবিধা নিতে গেলে এটা তার একটা পথ। গরীব ভারতের দক্ষিণে অর্থনীতিতে কাজে লাগে নাই হিসাবে মিলে না এমন এক বিরাট সংখ্যক কমপিউটার গ্রাজুয়েট তৈরি করে ফেলেছিল। ওদিকে প্রবাসী ভারতীয়রা যখন নিজেই কাজ ধরার মত দক্ষতা, পরিচিতি দাঁড় করাতে পেরেছিল তখন সহজেই নিজ দেশের বেকার গ্রাজুয়েটদেরকে পশ্চিমের প্রতিদ্বন্দ্বী হিউম্যান রিসোর্স হিসাবে দাঁড় করাতে পেরেছিল কারণ এই হিউম্যান রিসোর্স ভারতে তৈরি হয়ে পড়েছিল অকল্পনীয় সস্তায়। এরপর নতুন নতুন প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে চাকরীর নতুন সম্ভাবনা থাকায় তরুণদের তাতে আকর্ষণ করা, ছাত্রত্ত্বে গার্ডিয়ানদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা কোন সমস্যাই হয়নি। ফলে সামগ্রিকভাবে এই দক্ষ মানব সম্পদই হয়ে উঠেছিল ভারতের অর্থনীতিতে নিজেই নতুন খাত। আমাদের বেলায় এসব বিচারে আবেগ ছিল যদিও কিন্তু অনুকুল বাস্তবতাও কিছু ছিল। পড়ালেখা শেষে কাজ পাওয়া, নিজে দেশের অর্থনীতিকে এই টেকনোলজির সাথে পরিচিত রাখা, নিজের অর্থনীতিতে এই টেকনোলজি নিজেই এক গ্লোবাল হিউম্যান রিসোর্স হিসাবে হাজির তথা অর্থনীতির খাত হয়ে দাঁড়ানো - ইত্যাদি সব মিলিয়ে এরা সবাই রাষ্ট্রের রাজস্ব আয় বাড়াতে যে ভুমিকা রাখবে এটা আমদানীতে ট্যাক্স আরোপ করে রাজস্ব আয়ের চেয়ে অনেক বেশি, এর প্রভাবও সমাজে, অর্থনীতিতে, পরোক্ষভাবে অনেক বেশি। সব মিলিয়ে কমপিউটারে ট্যাক্স তুলে নেবার ফলাফল সাংঘাতিক ইতিবাচক সন্দেহ নাই।

কিন্তু যে কোন ট্যাক্স আরোপ ও আদায়ের ক্ষেত্রে একটা সাধারণ সমস্যা হলো, এর মাধ্যমে যে ট্যাক্স দিচ্ছে তার কি লাভ হচ্ছে সেইটা সরাসরি বোঝা যায় না। এইটা মাছ মাংস কেনা নয় কিংবা হাসপাতালের চিকিৎসা নেওয়া নয়। ফলে ট্যাক্স দেয়ার মাধ্যমে পণ্যের সাথে কোন সরাসরি ভ্যালু বা সার্ভিস যোগ হয় না বা বিনিময় হয় না। তবে পরোক্ষে রাষ্ট্র যেসব সার্ভিস ব্যবসায়ী বা জনগণকে দেয় তার সার্ভিস চার্জ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে এটা এতই পরোক্ষে যে টের পাওয়া সহজ নয়।

এছাড়া ওদিকে আর এক ধরণের ট্যাক্স আছে যা পরোক্ষভাবেও ট্যাক্সদাতাকে কোন সার্ভিস দেয় না। কিন্তু আরোপ করলে নিরুৎসাহিত না হয়েও আদায় হয় সেই সুবিধাটা এখানে কাজে লাগানি হয়। যেমন এক্সসাইজ ট্যাক্স বা আবগারী শুল্ক; এটা ইনকাম ট্যাক্স নয়। জনগণকে সিনেমা দেখানোর জন্য সিনেমা হলের উপর ইনকাম ট্যাক্স বাদে অন্য যে ট্যাক্স আরোপ করা হয় অথবা সিগারেট বাজারজাত করার উপর যে ট্যাক্স, ইত্যাদি। সিগারেট থেকে উদাহরণ দেই। এক প্যাকেট সিগারেটের বাজারের খুচরা মুল্য যদি ছয় টাকা হয় তবে আর পাঁচটা পণ্যের মত ওর বাজারের খুচরা মুল্য হলো মূলত এক টাকা আর বাকি পাঁচ টাকা হলো আবগারী শুল্ক। অর্থাৎ, আর পাঁচটা পণ্যের মত ঐ এক টাকা হলো বাজারের খুচরা মুল্য যার ০.৭৫ টাকা হলো পণ্যের উৎপাদন খরচ বাকি ০.২৫ টাকার মধ্যে কোম্পানীর মুনাফা, মুনাফার উপর সরকারী ট্যাক্স, বিক্রয়কর, বাজারজাতকরণ খরচ, উৎপাদনের পর খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সবার হিস্যা ইত্যাদি সব এর অন্তর্গত।
ওদিকে ধার্য আবগারী শুল্ক ৫ টাকা ওটা সিগারেট কারখানা থেকে সিগারেট বের করার সময় গেটে নিয়োজিত সরকারী আবগারী অফিসার কত প্যাকেট সিগারেট বের হয়েছে তা গুণে নিয়ে ওর উপর পাঁচ টাকা হারে আবগারী শুল্ক দাবী করে সিগারেট কোম্পানীর হাতে ডিমান্ড নোট ধরিয়ে দিয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর কোম্পানীকে তা পরিশোধ করতে হবে। এই আবগারী শুল্কের বিনিময়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে কোন সার্ভিস সিগারেট কোম্পানী পাবে না। সিগারেট ভোক্তাও পাবে না। সিগারেট পণ্যের উপর এই শুল্ক পণ্যের সাথে কোন ভ্যালু যোগ করাও নয়। সিগারেট কোম্পানী এখানে সরকারের হয়ে পরোক্ষে আবগারী শুল্ক কালেকটর মাত্র যা সে ক্রেতার কাছ থেকে আদায় করে বিক্রয় মূল্যের রূপে আর সরকারী কোষাগারে জমা দেয়।

সুনির্দিষ্টভাবে ভিওআইপির ক্ষেত্রে: ভিওআইপির উপর সরকারী শুল্ক, আবগারী শুল্ক ধরণের; অর্থাৎ সরকার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে কোন সার্ভিস ছাড়াই সরকারকে এই শুল্ক দিতে হয়। বিদেশ থেকে কল নিয়ে এসে দেশের গন্তব্যে সেটা পৌছে দেবার পথে সেটা ধার্য হয়, ফলে পরিশোধ করতে হয়। পৃথিবীর সবদেশেই এই ট্রেন্ড ধরে শুল্ক আদায় হয়ে থাকে, যদিও এর রেট কী হবে তাতে কম বেশি আছে। আগে টিএনটি একাই একাজ করত, ওর রেকর্ডপত্রেরও সুবিধা ছিল, পিএসটিএন টেকনোলজিতে দাঁড়ানো টিএনটি পরোক্ষে সরকারী শুল্ক কালেকটরের ভুমিকা পালন করতে পারত।
সবদেশেরই ফোনের একটা কান্ট্রি কোড আছে। জাতিসংঘের পরিচালনায় ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (ITU) এটা সমন্বয় করে। ফলে বাংলাদেশ অভিমুখি কল সরকারের রেজিষ্ট্রিকৃত ৮৮০ কান্ট্রি কোড নাম্বারের কারণে টিএন্ডটিয়ের মাধ্যমে এগুলো আসতে হত, ফলে নিয়ন্ত্রণও করা যেত।
কিন্তু,
১. পিএসটিএন টেকনোলজির বদলে ভিওআইপি টেকনোলজির কারণে পুরানো এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্হা কোন কাজের থাকল না। কারণ বিদেশ থেকে কল আসা আর বিদেশী ITU এর সদস্য দেশের টিএন্ডটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই আসতে হবে এমন টেকনোলজিক্যাল বাধ্যবাধকতা আর থাকলো নাই।
২. আগে সরকারই একমাত্র টেলিফোন ব্যবসা করত ফলে সরকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টিএন্ডটি একই সাথে টেলিফোন ব্যবসার নিয়ন্ত্রক (সরকারের কন্ট্রোলিং অথরিটি) প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করতে পারত। এখন সেটা অসম্ভব কারণ, গ্রামীণের মত নানান কোম্পানীগুলো তা পিএসটিএন বা মোবাইল টেকনোলজির যাই হোক - প্রাইভেট ফোন ব্যবসায় টিএন্ডটির মতই একএকটা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান; এবং এরা পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে টিএন্ডটি গ্রামীণের মত প্রাইভেট ফোন কোম্পানীগুলোর জন্য সরকারের হয়ে কন্ট্রোলিং অথরিটি হতে পারে না।

এসব সমস্যা মিটাতে, টেলিফোন বা কমুনিকেশন সংক্রান্ত ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আলাদা করে সরকারের কন্ট্রোলিং অথরিটি অফিস খোলা হয় - বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিফোন রেগুলেটরী কমিশন)। জাতীয় সংসদের আইনে ২০০১ সালে এটা গঠিত হলেও কার্যকর কন্ট্রোলিং অথরিটি হিসাবে কাজ শুরু করা নির্বাচিত কোন দলীয় সরকারের আমলে শুরু করা যায়নি। ১/১১ এর মঈন-ফকরুদ্দিন সরকারের ক্ষমতাদখল বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশী প্রত্যক্ষ স্বার্থে সেনাবাহিনীর ক্ষমতাদখল ও গর্হিত ঘটনা বলে মনে করে আমি। কিন্তু ঐ আমলেই সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল মন্জুরের হাতে বিটিআরসির দায়িত্ত্ব দিয়ে একে কার্যকর কন্ট্রোলিং অথরিটি হিসাবে দাঁড় করানোর কাজ শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্বার্থের দিক থেকে এ'এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। মেজর জেনারেল মন্জুরের সাহসী পদক্ষেপ প্রশংসাযোগ্য। সারকথায় তিনি যা করেছিলেন তাহলো,
১। একটা প্রবেশদ্বার বা গেটওয়ে বানানো যার মাধ্যমে ছাড়া বাংলাদেশে বিদেশী কোন কল টার্মিনেশন বা নামানো ও গ্রাহকের কাছে পৌছানো যাবে না।
২। বাংলাদেশের সরকারী বা বেসরকারী যে কোন (এবং পিএসটিএন বা ভিওআইপি যে টেকনোলজিই হোক না কেন) টেলিফোন কোম্পানীকে এই গেটওয়ের মাধ্যমেই বিদেশী কল আনা নেওয়া পাঠানো করতে হবে; এজন্য সবাইকে এই গেটওয়ের সাথে নিজ নিজ এক্সচেঞ্জ সংযুক্ত করে নিতে হবে।

ওখানে মুল কথা হলো পিএসটিএন বা ভিওআইপি যে টেকনোলজিই হোক না কেন, দেশ থেকে কল বের হওয়া বা প্রবেশ এর নিয়ন্ত্রণের অথরিটি হিসাবে ঐ অথরিটির পক্ষে হয়ে একটা বাস্তব টেকনিক্যাল কাঠামো বা ইনফ্রাষ্টাকচার দাঁড় করানো। এই কাঠামো তৈরির কোন খরচ এবং পরিচালনার দায়িত্ত্ব যেন সরকারকে বইতে না হয় সেজন্য এক খোলাখুলি টেন্ডার দেওয়া হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই খোলাখুলি টেন্ডার একটা মাইলষ্টোন। কোন গোপন ব্যবস্হার টেন্ডার নয়, একেবারে খোলাখুলি এক নাগাড়ে ৩৩ ঘন্টার নিলাম ডেকে সর্বোচ্চ দরদাতাকে নিলাম বিজয়ী করা হয়। নিলাম
বিজয়ীকে নিজ বিনিয়োগে এই কাঠামো দাঁড় করাতে হবে ও পরিচালনার ভার নিতে হবে, আদায়কৃত অর্থের নিলামে নির্ধারিত সরকারী অংশ কোষাগারে জমা দিতে হবে। কোন বিদেশী কোম্পানীকে এককভাবে নিলামে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়নি। ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে বিজয়ী কোম্পানীকে কাঠামো চালু করার শর্ত ছিল। কিন্তু এর আগেই নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা নেবার পর ঐ কোম্পানীর তৎপরতার খবর আমরা জানি না, মেজর জেনারেল মন্জুরকেও ঐ দায়িত্ত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়, ভিওআইপি ব্যবসা আগের মতই তার রমরমা যুগে ফিরে আসে।

ভিওআইপি ব্যবসার একটা বড় টেকনিক্যাল ও ব্যবহারিক সীমাবদ্ধতা হলো, বিদেশের কল পাঠানো কোম্পানীর সাথে সে আঁতাত করে কল নামাতে বা টার্মিনেশনে সে সক্ষম; এতে স্হানীয় রাজনীতিক নেতা বা মন্ত্রীর সাথে ভাগবাটোয়ারার রফা করে হলেও নামানো বা টার্মিনেটেড সেই কল উদ্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে পৌছাতে হলে তাকে স্হানীয় মোবাইল কোম্পানী বা টিএন্ডটির টেলিফোন ব্যবহার করেই - লোকাল কল হিসাবে - তা উদ্দিষ্ট কল রিসিভারের কাছে পৌছানোর ব্যবস্হা করতে হয়। অর্থাৎ লোকাল মোবাইল বা ল্যান্ড টেলিফোন অবকাঠামোর সেসব ফোন কোম্পানীর আছে এদের সাথে আঁতাত ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া ভিওআইপি ব্যবসা করা অসম্ভব। ফলে লোকাল মোবাইল বা ল্যান্ড টেলিফোন অবকাঠামোর সেসব ফোন কোম্পানীর আছে এমন সব টেলিফোন কোম্পানীর উপর "গেটওয়ের" নিয়ন্ত্রণ বসিয়ে ভিওআইপি ব্যবসা থেকে রাজস্ব আয় সংগ্রহের মধ্যে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।
কারও সাথে টাকার ভাগ বাটোয়ারা যাই থাকুক ভিওআইপি ব্যবসার যেটা সীমাবদ্ধতা - স্হানীয়ভাবে মোবাইল কোম্পানী বা টিএন্ডটির টেলিফোন ব্যবহার করা ছাড়া অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করা অসম্ভব - এটাকেই কাজে লাগিয়ে সরকারী রাজস্ব আয় সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল । কারণ ভিওআইপি ব্যবসা কোম্পানীর এটা একদুইটা সিম কেনার ব্যাপার না। কয়েক'শ সিম বা টেলিফোন লাইন দরকার হয় এই অবৈধ ব্যবসা চালাতে। ফলে ডাক ও তার মন্ত্রী নাসিম বা আমিনুল হক বা টিএন্ডটির কোন পরিচালক অথবা গ্রামীণ, একটেল বা বাংলালিঙ্কের এমডি পর্যায়ের লোকজনের সাথে কথা বলে ভাগবাটোয়ারার হিসাব ঠিক করেই আমরা অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করতে দেখেছি। এর নিচের লেভেলে কোন রফা করা অসম্ভব। মেজর জেলারেল মন্জুর আমলে গ্রামীণ, একটেল বা বাংলালিঙ্কের এমডি রা এই কারণেই বিটিআরসি থেকে কারণ দর্শাও নোটিশ পাওয়া, ব্যবসার লাইসেন্স বাতিলের হুমকির মুখে বিনা আপত্তিতে ১২৫-৮০০ কোটি টাকা পর্যন্ত সরকারী কোষাগারে দ্রুত ক্ষতিপূরণ জমা দিয়েছিল। গ্রামীণের আগের এমডি তো সমন জারির খবরের আগেই দেশ ছেড়েই পালিয়েছিল। ঐ চিঠিতে সুনির্দিষ্ট করে কয়েকশ নাম্বারের কথা উল্লেখ করে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কেন এগুলো অবৈধ ব্যবসায়ীদেরকে দেয়া হয়েছে। পরের এমডি স্বভাবতই কোন সদুত্তর দেন নাই বরং আগেই পেনাল্টির টাকা জমা দিয়ে কেলেঙ্কারী ধামা চাপা দিয়েছিল।

স্হানীয় মোবাইল কোম্পানী বা টিএন্ডটির টেলিফোন ব্যবহার করা ছাড়া অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করা অসম্ভব - এই কথা মনে রেখে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ মেজর জেনারেল মন্জুরের নেতৃত্ত্বাধীন বিটিআরসি মুল গেটওয়ে সাথে সংযুক্ত হওয়া মোবাইল কোম্পানী বা টিএন্ডটি জাতীয় পিএসটিএন টেলিফোন কোম্পানী সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। যাতে গেটওয়েই সরকারের রাজস্বপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার, নিয়ন্ত্রণের ব্যবহারিক হাতিয়ার হতে পারে। আর ঠিক একারণেই এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্হা অকেজো করে রাখা আছে।

তাহলে দাড়ালো, ভিওআইপি ব্যবসা বৈধ করে দেবার দাবীর কেবল একটাই ইতিবাচক অর্থ হতে পারে - সকলকে গেটওয়ের মাধ্যমে কল আনা-নেওয়া করতে হবে, সরকারকে জানিয়ে ওর নির্ধারিত ট্যাক্স দিতে হবে।

কিন্তু উপরের এই শর্তে কী যারা আজকে ভিওআইপি ব্যবসায় অতি আগ্রহী, তরুণ উদ্যোক্তাদের স্বউদ্যোগী কারবার বলে যাদেরকে মনে হচ্ছে আমরা অনেকেই এই দিকটা শুনে ওকালতি করছি - ভিওআইপি ব্যবসার তরুণদের এই আগ্রহ কী থাকবে?

নিশ্চিতভাবেই বলা যায় না থাকবে না

কেন?
কারণ, সরকারী শুল্ক মেরে দেওয়া যায়, সুযোগ আজ আছে বলেই এটাকে চরম লাভজনক আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে। উপরের সিগারেট কোম্পানীর উদাহরণের প্যাকেট প্রতি পাঁচ টাকা আবগারী শুল্ক সরকারকে না দিতে হলে যা হত এখানে তাই হয়েছে। বাজারে সবাই জানে সিগারেটের প্যাকেট প্রতি দাম ছয় টাকা ফলে ছয় টাকায় সিগারেট বিক্রি করা যাচ্ছে কিন্তু সরকারকে ওর মধ্যের পাঁচ টাকা না দিতে হলে সিগারেট ব্যবসায়ীরা সবাই ভাবতে পারে ০.৭৫ টাকার সিগারেট প্যাকেট বেচে লাভ হচ্ছে ৫.২৫ টাকা। যদিও কথা সত্যি না, কারণ লাভ সেই ০.২৫ টাকাই বাকি পাঁচ টাকা হলো মেরে দেওয়া সরকারের শুল্কের টাকা। এই কল্পিত পরিস্হিতিতে আমরা হয়ত দলে দলে তরুণকেও দেখতাম সবাই সিগারেট উৎপাদক কোম্পানী খুলে বসার চেষ্টা করছে।

সোজা কথায় ভিওআইপি ব্যবসায় সরকারের আবগারী জাতীয় ট্যাক্স ফাঁকি দেবার সুযোগ থাকার কারণে এই ব্যবসা সীমাহীন লাভের হিসাব দেখছে সবাই। এই ব্লগেই একজন হিসাব দিয়ে বলছে ছয় মাসেই সমস্ত বিনিয়োগ লাভসহ উঠে আসে। বিনিয়োগ সবচেয়ে কম সময়ে উঠিয়ে আনার ক্ষেত্রে দুনিয়ায় সবচেয়ে আগিয়ে আছে বিদেশী বিনিয়োগ। জামাই আদরে আমাদের মত দেশগুলো তাদের ডেকে আনার জন্য পাগল। বিনিয়োগের এই বাজারে তবুও সবচেয়ে কম সময়ে বলতে বুঝা হয় তিন বছর। তাহলে ভিওআইপি ব্যবসায় ছয় মাসে বিনিয়োগ তুলে আনার গল্প কী জিনিষ একটু চিন্তা করে দেখেন; এটা ব্যবসা নয়, লুটপাট। সরকারের প্রাপ্য আবগারী ট্যাক্স সরকারের কোষাগারে জমা না দেবার কারণে ওটাকে লাভ হিসাবে দেখা হচ্ছে। কারণ ভোক্তার কাছ থেকে ঐ ট্যাক্স ঠিকই আদায় করা নেয়া হচ্ছে। এমনকি এর দশ-বিশ পার্সেন্ট যদি মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা বা মোবাইল কোম্পানীকে বখরা হিসাবে দিয়েও দিতে হয় তবে চোখে পড়ার মত ঘটনা নয়, লাভে(?) টান পড়ার কথা নয়।

তাহলে কথা দাড়ালো, ভিওআইপির জন্য গেটওয়ের মধ্যে দিয়ে কল আনা নেওয়া করতে হলে অর্থাৎ সরকারের প্রাপ্য ট্যাক্স দিতে হলে অতি উৎসাহী নতুন "টেকনোলজির" কারিসমা বুঝতে পারা তরুণরা ভিওআইপি ব্যবসাকে আর সস্তায় বাজিমাত করার লোভনীয় ব্যবসা মনে করে ছুটে আসবে না। এটা বুঝা যায়।

তাহলে এখন কী চলছে। গেটওয়ের কাঠামো স্হাপন করার পরও থোক লুটের টাকা পাওয়ার লোভে রাজনীতিকরা রাষ্ট্রের প্রাপ্য আবগারী শুল্ক (সাধারণত যা সাধারণ ব্যবসার ১:৬ অনুপাত হয়, সিগারেটের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি) এই পুরা টাকাটারই মচ্ছব বানিয়ে লুটপাটে খাওয়া হচ্ছে, নিয়ম-নীতি কিছুই চালু হতে দিচ্ছে না। তরুণেরা এই লুটের টাকার ভাগ ধরার জন্য "টেকনোলজি জানা বেকার তরুণদের কিছু করতে দেয়া হচ্ছে না" বলে আমাদের সহানুভুতি যোগাড়ের চেষ্টা করছে।

রাষ্ট্রের এই চরম অব্যবস্হাপনা লুটপাটের ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ভিওআইপি ব্যবসায় এই তথাকথিত লাভ(?)কে লক্ষ্য করুন। কেন র‌্যাবের শত হামলার পরেই এই ব্যবসা করার জন্য মানুষ মরিয়া? গ্রামীণের মত কোম্পানী ব্যবসার মূল লাইসেন্স বাতিলের চিঠি পাবার পরেও কেন মরিয়া? গ্রামীণের বিদেশী এমডির জ্ঞাতসারেই নিজ উদ্যোগে এই ব্যবসা চলেছে। এর মানে গ্রামীণের নরওয়ের কর্পোরেট বোর্ড সদস্যরা বাংলাদেশে এই অবৈধ কাজের খবর জানে। নরওয়ে সহ পৃথিবীর বিভিন্ন শেয়ার বাজার থেকে গ্রামীণের মুল কোম্পানী Telenor শেয়ার বেঁচে তহবিল যোগাড় করেছে। গ্রামীণের লাইসেন্স বাতিল হয়ে গেলে কিংবা এই অবৈধ কাজের খবর রাষ্ট হয়ে গেলে ঐসব শেয়ার বাজারে কেমন ধস নামবে তা নিশ্চয় আন্দাজ করতে পারে। এত খবর জানা সত্ত্বেও অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার জন্য গ্রামীণের মরিয়া হবার কারণ কী?

সারা বছর নিজের মুল ফোন ব্যবসা থেকে গ্রামীণ যা মুনাফা কামায় এর ছয়গুণ বেশী মুলাফা সম্ভব কেবল ভিওআইপি ব্যবসায় সহযোগিতার একটা উইং খোলা রাখলে। মানে গ্রামীণ মুল ব্যবসার ভোক্তাকে যদি বিনা পয়সায় মোবাইল সার্ভিস দেয় তবু কিছু তার যাবে আসবে না; তবে এতে প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলালিঙ্ক বা একটেলের উপর সুবিধা লুটে নেয়া যাবে। তাহলে ওদিকে স্বভাবতই বাংলালিঙ্ক বা একটেলকে যদি এই অসম প্রতিদ্বন্দ্বীতায় না হারতে চায় তবে করতে না চাইলেও তাদেরকে একইভাবে কারও ভিওআইপি ব্যবসায় সাথে সহযোগিতার পথ ধরতে হবে। শেষ বিচারে তাহলে বাংলাদেশে ফোন ব্যবসায় একটা সাংঘাতিক ওলটপালট বিশৃঙ্খল অবস্হায় আমরা দেখব, তাই হয়ে আছে।

লেখা যথেষ্ট বড় হয়ে গেছে। তাই আপাতত, এখানেই থামতে হচ্ছে। আরও কিছু যেসব প্রসঙ্গে যাবার দরকার ছিল মন্তব্যের জবাব দেবার সময় প্রয়োজনে তা আনা যেতে পারে।

মুল কথা হলো, ভিওআইপি ব্যবসা নয়, সরকারের প্রাপ্য ট্যাক্সের টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে লুটপাটের কাহিনী।

বড় লেখা কষ্ট করে পড়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।


২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×