somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে :: বোরহান বীজান্ত ::

২১ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে
:: বোরহান বীজান্ত ::


ভোরের কাগজ : বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০১৩


মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের বিপক্ষে যারা দাঁড়িয়ে আছেন, তারা আমাদের অপরিচিত নয়। ব্যক্তিস্বার্থ, দলীয় স্বার্থ তাদের কাছে বড় তো বটেই। এমন কি গোটা জাতিকে অসম্মানিত করতেও তাদের কোনো চক্ষুলজ্জা নেই। ভাবতে অবাক লাগে এ দেশে একাত্তরের প্রধান আল-বদর গো. আযমও জেল থেকে বিবৃতি দেয়। নেতানেত্রীদের উপদেশ দেয়, দেশ ‘শান্তিতে’ চলবার জন্য। সকল নেতানেত্রী এবং সুশীল সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানায় একাত্তরে টিক্কা খানের সঙ্গে বারবার বৈঠককারী এই খুনিদের হোতা। তার কথায়- এটা নাকি ‘দল ও মতের ঊর্ধ্বে উঠে, প্রতিহিংসা, হানাহানি ও সংঘাতের রাজনীতি পরিহার করে, দেশের কল্যাণে একতাবদ্ধ হওয়ারও আবেদন।’ আরো অবাক চোখে দেখতে হয়, আমাদের সম্পাদকরা তা ফলাও করে প্রচারও করেন। কেন এই স্খলন? রাজাকারের গাড়িতে পতাকা উড়াবার পর আপনাদের কেউ কেউ তো ‘গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার’ কথা বলে অনেক কিছুই হালাল করতে চেয়েছিলেন। আপনারা, রাজনীতিকরা যা পারেননি, শাহবাগ প্রজন্ম তা পেরেছে। এই প্রজন্ম আঁতাত করেনি। আপনারা, বড় দলের নেতারা করেছিলেন। সেই চুনকালি অনেকের মুখ থেকেই মুছে যায়নি।

আজ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট খুবই পরিষ্কার। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেই দিয়েছেন, ‘খুনি ও রক্তপিপাসু সরকারের সঙ্গে কথা বলে কোনো লাভ নেই। তাদের পতনই সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায়। আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, হয়তো কিছু প্রাণ যাবে। তারপরও দেশ রক্ষায় এ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সবাইকে রাস্তায় নেমে আসতে হবে। এই স্বাধীনতার মাসে আর গোলামি নয়, এখন কেবল স্বাধীনতা, স্বাধীনতা আর স্বাধীনতা।’ পদ্মা সেতুতে মালয়েশিয়ার অর্থায়নের প্রস্তাবকে ভাঁওতাবাজি আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘মিথ্যাবাদী ও দুর্নীতিবাজ সরকারকে কেউ বিশ্বাস করে না। এদের আমলে পদ্মা সেতু হবে না। ক্ষমতায় গেলে আমরা পদ্মা সেতু করবো। তখন পদ্মা সেতু একটি নয়, দুটি হবে।’

আরো রক্তের বিনিময়ে, খালেদা জিয়ার স্বপ্ন এখন রাষ্ট্র ক্ষমতা। তার ক্ষমতা চাই। তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে চরম দুর্নীতিবাজ তারেক-কোকোকে। তাকে মুক্ত করতে হবে গো. আযম, নিজামী, সাঈদীসহ সকল রাজাকার শিরোমণিকে। তাই বিকল্প কিছু নেই, ক্ষমতায় যাওয়া ছাড়া। এর আগে খালেদা জিয়া, শাহবাগ প্রজন্মকে ‘নষ্ট’, ‘নাস্তিক’ আখ্যায়িত করেছেন। হ্যাঁ, একইভাবে একাত্তরে আল-বদর-জামাতিরাও মুক্তিযোদ্ধাদের ‘নষ্ট’, ‘দেশদ্রোহী’, ‘মালাউন’, ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়েছিল। ওরা মুক্তিসংগ্রাম ঠেকাতে পারেনি। খালেদা যে প্রজন্মকে ‘নষ্ট’ বলেছেন তা বলার আগে কি নিজের দুটো ছেলের চেহারা দেখেছেন? তিনি কি পেরেছিলেন প্রয়াত জিয়াউর রহমানের ছেলেদের মানুষ করতে? না পারেননি। তা এ দেশের সর্বশ্রেণীর মানুষ ভালোই জানেন। এ দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসের চর্চাকারী প্রজন্ম ঐ ‘দুই রতনের’ ২০০১-২০০৫ সালের কর্মকা- ভুলে যায়নি।

বেগম জিয়া বলেছেন, ‘বিশেষ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার করা হবে’। হ্যাঁ, এরকম বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে তার স্বামী জিয়াও অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছিলেন। হত্যা করেছিলেন বীর সৈনিক কর্নেল আবু তাহেরকে। তাই বিএনপি কোনো প্রকারের ট্রাইব্যুন্যাল করে, তা এ দেশের মানুষ জানে।

আমার কেন জানি মনে হয়, সেরকম ট্রাইব্যুনাল করে বর্তমান মহাজোট সরকার পূর্ণিমা রানীর ধর্ষণকারীদের, দেশজুড়ে বোমা হামলাকারীদের প্রধান হুকুমদাতাকে, শাহ কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টারের খুনিদের, ২১ আগস্টের বোমা হামলার প্রধান চক্রান্তকারীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারতো। কেন করেনি? কেন করছে না? সাপের লেজে চুম্বন করে তো দেশ, পতাকা, মানচিত্রের সম্মান রক্ষা করা যায় না। যাবেও না।

দেশে আজ নানা খোলসে একাত্তরের পরাজিত শক্তি মরণকামড় দিতে চাইছে। ওরা নাম পাল্টাচ্ছে। ধর্মকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। আর এদেরকে ম“ দিচ্ছে সেই ডানপন্থী রাজনৈতিক দলটি। যাদের জানা দরকার এ দেশে জামাত-শিবির যদি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে তাহলে কাউকেই ছেড়ে দেবে না। সংলাপের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সংলাপ কার সঙ্গে? রাজাকারদের ‘গডগাদার’, ‘গডমাদার’দের সঙ্গে? বিএনপি জামাতের সঙ্গ ছাড়বে না। এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। তাহলে কি আওয়ামী লীগ বারবার আহ্বান জানিয়েই আগামী সাত মাস পার করে দেবে? আর মার খাবে দেশের পুলিশ, জনতা?

গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বক্তব্য জনগণের প্রত্যাশার বিপরীত বলে মন্তব্য করেছেন সমন্বয়ক ইমরান এইচ সরকার। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশে বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা জনগণের প্রত্যাশা রক্ষা করেননি। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং জামাত নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনরত গণজাগরণ মঞ্চের সমালোচনা করে একদিন আগেই বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসন। শাহবাগ চত্বরকে ‘নাস্তিক চত্বর’ আখ্যায়িত মুন্সীগঞ্জের এক জনসভায় তিনি বলেন, ‘শাহবাগের তরুণরা আইন-আদালত-বিচার মানে না। এই নষ্ট ও নাস্তিক তরুণদের নিয়ে সরকার নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে নানা অপকর্ম করছে।’ এর প্রতিক্রিয়ায় ইমরান বলেছেন, ‘আপনার ভাষায় এই নাস্তিক আর নষ্ট ছেলেরাই দেশকে স্বাধীন করার জন্য অস্ত্র ধরেছিল, এখন তারা মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত অর্জন পুনরুদ্ধারের জন্য মাঠে নেমেছে। সিদ্ধান্ত আপনার আপনি আমাদের পাশে, না খুনি-ধর্ষক জামাত-শিবিরের পাশে দাঁড়াবেন’।

আমরা দেখেছি, আশুলিয়ায় জনগণ গণজাগরণের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। এভাবে দেশজুড়েই মানুষ এই স্বাধীনতার মাসে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। যারা বিপক্ষে দাঁড়াচ্ছে, এদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। নাগরিক সমাজের মহাসম্মেলনে মেজর জেনারেল (অব.) আমিন আহম্মেদ চৌধুরী বীরবিক্রম বলেছেন, একাত্তরের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছেন বেগম জিয়া।

তিনি বলেছেন, একাত্তরে জেনারেল ওসমানী মেজর জিয়াকে কমান্ড থেকে রিমুভ করতে চেয়েছিলেন। তিনি আরো বলেন, একাত্তরের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছেন বেগম জিয়া। খালেদা জিয়াকে তার নিজের এলাকার ৯ জন মানুষের হত্যাকারী বললেন তিনি। এছাড়া জামাতের সঙ্গ ত্যাগ না করলে সকল নাগরিক ও সামাজিক সংগঠন থেকে বিএনপিকে খারিজ করার ঘোষণা দেন তিনি।

নাগরিক সমাজ ১০০১ জনের কমিটি করছে দেশব্যাপী। বুদ্ধিজীবীরা একাত্তরে সাহস নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এখনো দাঁড়াচ্ছেন। এটা আশার কথা। মার্চ বাঙালির স্বাধীনতার মাস। এই মাসে যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে, শহীদদের চেতনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কথা বলছে, ওদের চিহ্নিত করে রাখা দরকার। বিএনপি যতোদিন ক্ষমতায় যেতে না পারে, ততোদিন এভাবে আন্দোলন, হরতাল, নাশকতার হুমকি-ধমকি দিয়েই যাবে। যদি নির্বাচন হয়, সে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি হেরে যায়, তাহলে এর এক মাসের মাঝেই তারা আন্দোলনমুখী হবে। যতোদিন তারেক-কোকোর পুনর্বাসন না করা যায়, ততোদিন খালেদা জিয়া নাশকতার রাজনীতির ‘গডমাদার’-এর দায়িত্ব পালন করে যাবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এখন যারা মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে শ্রদ্ধা করেন, এর সম্মান সমুন্নত রাখতে চান- সিদ্ধান্ত তাদেরকেই নিতে হবে কিভাবে এই জঙ্গিবাদী চরম অপশক্তিকে মোকাবেলা করবেন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×