somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ুন আহমেদ, এবার আপনার থামা উচিৎ

১৭ ই জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্যবসায়িক স্বার্থে নিজের প্রতিভাকে কতটুকু ধ্বংশ করতে পারে একজন মানুষ?
এদেশের জনপ্রিয়তম লেখক হুমায়ুন আহমেদ গত ক'বছর ধরে যেসব উপন্যাস লিখছেন, সেগুলোকে আদৌও কি লেখা বলা চলে?
এই অখাদ্য কুখাদ্যগুলো কোনভাবেই আপনার সাথে যায় না জনাব।

বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেনীকে যে বিপুল ক্ষমতা নিয়ে আপনি গল্প পড়ুয়া জাতি হিসেবে দাড় করিয়ে গেছেন, তার বদলা এদেশের মানুষ দিয়েছে ভালবাসা দিয়ে, মমতা দিয়ে। গাঁটের টাকা খরচ করে মানুষ কিনেছে হুমায়ুনের বই আর বাচ্চারা কিনেছে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে ।

মনে পড়ে, সিক্স সেভেনে থাকার সময় আবু সাঈদ আর আমি মিলে ঝিকরগাছায় নবারুণ লাইব্রেরীর জাকির ভাইয়ের সাথে খাতির করে হুমায়ুন আহমেদের বই ধারে নিয়ে আসতাম পড়ার জন্য। সব বই কেনার সামর্থ ছিলনা। তাই বলে তো আর পড়া বাদ থাকতে পারেনা।
এস এস সির আগে পড়ার জন্য সদ্য একা ঘর পেয়েছি বাসায়। কেউ ডিস্টার্ব করে না। আমিও ধুমসে পড়ি। ক্লাসের বইয়ের সাথে গল্পের বই অথবা গল্পের বইয়ের সাথে সাথে ক্লাসের বই। ঠিক বাংলা পরীক্ষার আগের দিন মায়ের হাতে ধরা খেলাম। সেই হুমায়ুন আহমেদ'র বই। তারপর বই টই চেলে ফেলে কি একখান কান্ড....

কোথাও কেউ নেই- এ বাকের ভাইয়ের ফাঁসি ঠেকাতে এদেশের মানুষ আন্দোলন করেছে, মিছিল মিটিং করেছে। আমি নিজে সেই মিছিল মিটিং
দেখেছি মফস্বলেই। এটা নাটকের প্রয়োজনে আসা একটা চরিত্র মাত্র!!! পৃথিবীর কোথাও কোন লেখক দর্শকের উপর এইরকম ঈর্ষা জাগানিয়া প্রভাবের কথা ভাবতে পেরেছে কখনও? তারপর এইসব দিন রাত্রি'র টুনির জন্য কে কাঁদেনি বলতে পারেন?
হুমায়ুন আহমেদ, আপনার লেখার প্রতি মানুষের এই ভালবাসাই আপনার ট্রেড মার্ক।

আপনার লেখা দিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রকাশনীর সংখ্যা এদেশে নিতান্তই কম না। আপনার কি মনে পড়ে আপনার প্রেমের উপন্যাস তোমাকে আর
চার দিক প্রকাশনীর কথা? এই যে এখন কচু হাতি ঘন্টা যাই লেখেন না কেন, বিক্রির রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়, এটাতো এমনি এমনি হয়নি।
বহুব্রীহি'র মত সেন্স অফ হিউমার আর কেউ কি ব্যবহার করতে পেরেছে বাংলায়??
সব স্তরের মানুষের সঠিক মানস পাঠ বা ছোটদের চোখে ছোটদের জন্য বিশ্ব দেখা খুব কি সম্ভব্ হয়েছে সবার জন্য? একি কান্ড'র সেই ঝেং এর বাচ্চা আমার কৈশোর বেলার কিশোরেরা ভূলতে পারবেনা কোনভাবেই। বা অবিনশ্বর চরিত্র হিমু, মিসির আলি, ফিহা।
আরো আরো আরো।

হুমায়ুন আহমেদ, আপনার সেই ক্লাসিকগুলো কোথায় হারালো?
তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে, বৃহন্নলা, আগুনের পরশমনি, নির্বাসন, সূর্যের দিন, তিথির নীল তোয়ালে, নক্ষত্রের রাত, দিনের শেষে, নন্দিত নরকে, অনিল বাগচীর একদিন, খাদক, মে ফ্লাওয়ার, হোটেল গ্রেভার ইন, ইরিনা, আয়নাঘর, গৌরীপুর জংশন, দারুচিনি দ্বীপ, জোস্না ও জননীর গল্প, আমার আছে জল... তালিকা কি শেষ হবে?
এর বদলে আমরা এখন পাচ্ছি সুমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড, রুপার পালঙ্ক, চলে যায় বসন্তের দিন, হিমু রিমান্ডে, হলুদ হিমু কালো রেব, .... এগুলা কি???
হিমুর প্রথম বই ময়ুরাক্ষীতো আপনিই লিখেছিলেন, নাকি? এর সাথে কোনওভাবে কি তুলনা করা যায় হিমুর একান্ত সাক্ষাৎকার কে??

ভালোবাসা, মমতার পাশাপাশি এদেশ জাগতিক সব পাওয়াইতো আপনাকে দিয়েছে। তার বিনিময় কি এভাবে দিতে হবে?

ক'দিন বাদেই একুশে গ্রন্থমেলা। এবারও নিশ্চয় এক ব্যাগ হুমায়ুন, এক বস্তা হুমায়ুন টাইপ কিছু বের হবে এবং যথারীতি সর্বোচ্চ বিক্রির রেকর্ড করে দাত কেলিয়ে হাসবে প্রকাশকরা।
কিন্তু লক্ষ্য করুন, আমাদের পাশেরই এক দেশের এক মহান ক্রিকেটার ইমরান খান, আপনি নিশ্চয় জানেন তাঁকে। বিরানব্বুইয়ে নিজে যখন আত্মবিশ্বাসের চুঁড়াতে, ইনফর্ম প্লেয়ার, তিনি বিশ্বকাপ জিতলেন। আর তারপরই ঘোষণা দিলেন অবসরের। ব্যক্তি চরিত্র, সফলতা-ব্যর্থতা, পারা-না পারা, সবকিছু ছাঁপিয়ে তিনি পরবর্তী প্রজন্মের হৃদয়ে স্থান করে নিলেন সর্বকালের সেরা অনুপ্রেরণাদায়ী অধিনায়ক, একজন সেরা ক্রিকেটার হিসেবে।

আরো একজনের কথা বলতে পারি, প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক। ভবিষ্যৎ দেখতে পাওয়া এই জ্ঞান তাপস এক ছত্র না লিখেও এদেশের অসংখ্য লেখকের লেখায় আবশ্যাম্ভাবী অনুষঙ্গ হয়ে আছেন এখন পর্যন্ত, এবং থাকবেন আরো অনেক অনেক দিন।

হুমায়ুন আহমেদ, এই লেখা আপনার চোখে না পড়ার সম্ভাবনাই শতভাগ। তবুও আমার মনে হচ্ছে বলে বলছি, এবার অবসর নিন।
ভালবাসা থাকতে থাকতেই কেউ দৃষ্টির আড়ালে গেলেই শুধু সে অবিনশ্বর হতে পারে।
৫২টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×