Click This Link
আর আমি যদি ধর্ম মানিই, তাতেই বা অঈশ্বরবাদীদের মাথা ব্যথা কিসের। জীবনতো আর পাটি গণিত নয় যে এখানে সব কিছুতেই এল এইচ এস ইকুয়ালটু আর এইচ এস প্রুভড হতে হবে।
ধর্মে বিশ্বাসী হয়ে কেউ যদি জাগতিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চায়, পাক না। আর ধর্মও সৃষ্টির শুরু থেকে এ পর্যন্ত চলে এসেছে কি কোন যুক্তি ছাড়াই? সঠিক যুক্তি সময়মত সঠিক যায়গায় প্রকাশিত না হওয়া মানেই কি এই বিষয়ে কোন যুক্তি নেই? আমি তা মনে করিনা।
এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। মাস্টার্সে আমার একটা কোর্স ছিল মডার্ন এইথিজম এ্যান্ড দ্যা ক্রিটিক অব রিলিজিয়ন, নীরু কুমার চাকমা স্যার পড়াতেন। অত্যন্ত জ্ঞানী এই স্যারের অতিশয় সাধারণ বেশভূষা এবং চলা ফেরার পাশাপাশি প্রখর ব্যক্তিত্বর জন্য তাঁকে যতটুকু পছন্দ করতাম, ঠিক ততটাই অপছন্দ করতাম তাঁর পড়ানোর পদ্ধতির কারণে। স্যারের সব লেকচারই আমার মত নাদানদের মাথার উপর দিয়ে চলে যেত।
স্যারের ক্লাসে ঘুমটাই মূখ্য ছিল তাই। অতপর পরিক্ষা আসলো এবং আমার চোখে অন্ধকার। এই কোর্সটা নিয়েই ঝামেলায় পড়লাম সবচে বেশী।
বড় বড় আঁতেলদের থিওরী কোনভাবেই মাথায় ঢোকেনা। লাইব্রেরীর তিনতলায় বসি, কিছুক্ষণ নোটস এর দিকে তাকিয়ে মাথা গরম হয়ে যায়।
নিচে আসি, চা খাই, আবার তিনতলা, আবার মাথা গরম, আবার নিচে, চা.... কি এক যন্ত্রণা!
আমার সব সময়ের শুভাকাঙক্ষি মুকুল পরামর্শ দিল, হাবিব ভায়ের সাথে যোগাযোগ কর। যারা লাইব্রেরী এলাকায় ঘোরাঘুরি করে, সবাই হাবিব ভাইকে চেনে। সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকে দেখে আসছি। এখনও দেখি শুক্রুবারে ক্যাম্পাসে গেলে। ধর্ম দর্শনের উপর ভালো দখল হাবিব ভাই এর।
আমি পরিচিত হয়ে আমার সমস্যার কথা বললাম। উনি রাজি হলেন আমাকে এই শর্ট টাইমে সহজভাবে কিছু জ্ঞান দেওয়ার।
হাবিব ভাই দুপুরের নামাজের পর বেলালের দোকানের সামনে চা খেতে খেতে আমাকে বুঝাতে লাগলেন নিটশে, হিউম, ফ্রয়েড, সাঁত্রে...। তিন বা চারদিন উনি দাড়িয়ে দাড়িয়ে চা খেতে খেতে মডার্ন এইথিজমের মেন্টরদের সম্পর্কে আলোচনা করলেন এত সহজভাবে যে, আমার এই কোর্সের জন্য কোন নোটর্স আর পড়তেই হয়নি।
তার বদলে আমি সেকেন্ড হাইয়েস্ট নাম্বার পেয়েছিলাম।
সাঁত্রের ঈশ্বরের অনস্তিত্ব বিষয়ক বিখ্যাত একটা মতবাদ আছে, এক্সিস্টেন্স প্রিসিডস্ এসেন্স[। /sb]
এক কথায়, যেকোন কিছুই অস্তিত্বশীল হওয়ার আগেই তার স্রস্টার মনে এর গুণ বা মূল সত্ত্বাটি নির্ধারিত হয়ে যায়, যার বাইরে কিছু হওয়ার কোন ক্ষমতা ওই বস্তুর থাকেনা। যেমন একটা টেবিল, চেয়ার বা ঘর বাড়ি, টেলিভিশন এগুলো বাস্তব রুপ লাভ করার আগেই এগুলোর মুল সত্ত্বা নিধর্ারিত হয়ে যায়। যেটির মধ্যে কার্পেন্টার টেবিলের গুণাগুণ দিতে মনস্থ করছে, সেটি টেবিল হতে বাধ্য, কোনভাবেই তা মোটর সাইকেল হতে পারবেন।
মোটামুটি এইরকম ব্যাপারটা।
দেখা যাচ্ছে যে, টেবিলের একজন সৃষ্টিকর্তা আছে যে টেবিলটি তৈরীর আগেই এর আকার আকৃতি গুণাগুন সম্পর্কে চিন্তা করে সেটি আরোপ করেছে।
কিন্তু সাঁত্রে বলতে চান, মানুষের মধ্যে এধরণের পূর্ব নির্ধারিত কোন গুনাবলী থাকেনা। কারণ মানুষের কোন সৃষ্টিকর্তা নেই, যে মানুষ সৃষ্টির পূর্বেই তার মধ্যে গুনাবলী আরোপ করবে।
এজন্য মানুষ প্রথমত মানুষ না, একটা পদার্থ। তারপর সে নিজেই নিজের মধ্যে মানবীয় গুনাবলী আরোপ করে একেকজন একেকভাবে মানুষ হয়ে ওঠে। কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ ভাববাদী, কেউ কবি, কেউ চোর, কেউ সৎ...
সাঁত্রের মতে এই গুণগুলো নিজের মধ্যে আরোপ করেই সে মানুষ হয়ে ওঠে। যেহেতু মানুষ নিজেই নিজের মধ্যে গুনাবলী আরোপ করছে সেহেতু তার কোন স্রষ্টা থাকতে পারেনা।
এই হল মূলকথা। খুবই অলঙ্ঘনীয় যুক্তি।
কিন্তু হাবিব ভাই একদিন আমাকে বললেন, সাঁত্রের এই লজিক এ ফাঁক আছে। ধরা যাক, মানুষের একজন স্রষ্টা আছেন, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করে বলে দিলেন- যা, তোরা কি হতে চাস, তোরাই ঠিক করে নিবি। এই স্বাধীনতা দিলাম।
এখন আমি যদি বলতে চাই মানুষের এই নিজের মধ্যে গুণাবলী আরোপের ক্ষমতাটাই মানুষের এসেন্স, তাহলে সাঁত্রের যুক্তির মধ্যে থেকেই মানুষের একজন স্রষ্টা এসে যাচ্ছে।
আমি জানি, এই যুক্তির বিপরীতে হয়তো আরো শক্তিশালী যুক্তি দাড়া করানো যাবে। কিন্তু কথা হল, যখন চাকমা স্যার সাঁত্র পড়াচ্ছিলেন, এক হল, ঠিকমত বুঝিনি, দুই হলো, যেটুকুওবা বুঝেছি, হাবিব ভায়ের মত চিন্তা করে এই লজিক দাড়া করাতে পারিনি। চাকমা স্যারকেও আর বলা হয়নি, তদ্দিনে আমাদের ক্লাস শেষ।
যেটার জন্য এত লম্বা গল্প, চাকমা স্যার পরবর্তী সময়েও আমার জুনিয়রদের পড়াবেন সাঁত্রের এই অলঙ্ঘনীয় লজিক। যার বিপরীত মতটা রয়েছে কলাভবন থেকে দুই মিনিটের দুরত্বে সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর সামনে। সঠিক সময়ে প্রকাশিত না হওয়ায় যেটা যুগ যুগ ধরে জানবেনা শিক্ষার্থীরা।
কিন্তু তার মানেতো এই দাড়ালোনা যে, সাঁত্রর যুক্তিটা অমোচনীয়।
সুতরাং যার যার বিশ্বাস নিয়ে থাকুক সবাই নিজের মত করে। অসহনীয় ভাষা প্রয়োগ না করে বরং প্লাস মাইনাস বা রিপোর্ট করার মধ্যে এই আলোচনাগুলো থাকলে আমাদের জন্য কিছু জানতে সুবিধা হয়।
ভাল থাকবেন সবাই, শুভ ব্লগিং।