somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি কেনো প্রতিবাদে যাই...

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পত্রিকা বা টিভির সংবাদে প্রায়শই বিমান দুর্ঘটনা, সড়ক দুর্ঘটনার খবর থাকে। আমরা নির্বিকার মনে এই খবরগুলো দেখি, পড়ি, আর মনে মনে আশা করি ‘আমার সাথে এ রকম হবে না’। একইভাবে বিভিন্ন সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হওয়া মানুষের সচিত্র সংবাদও দেখি। এই মানুষগুলোর আহাজারি সাময়িকভাবে খারাপলাগা তৈরী করলেও সিগ্রেটের ধোয়ায় সে খারাপ লাগা দ্রুতই হাওয়া হয়ে এবং যথারীতি এগুলো অন্যদের সাথে ঘটবে ধরে নিয়ে নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করতে থাকি। কিন্তু আচানক এ ধরণের দৈব দুর্বিপাকে যখন নিজেরাই পড়ে যাই, তখন খুব সায়ানের 'আমি কেনো প্রতিবাদে যাই' গানটা মনে পড়ে।

সায়ান আমার কাছে খুব পরিচিত শিল্পী, তা নয়। অল্প কিছু গান শুনেছি। সায়ান শিল্পী হিসেবে কেমন, তাঁর গানের গভীরতা কেমন, এ সব বিচার করা আমার কম্ম নয়, ও দিকে আমি যাচ্ছিই না। কিন্তু, সায়ানের গান শুনলে প্রথমেই প্রতিবাদের কথা মনে আসে। আমাদের মত ‘সাধারণ’দের বুকে কিছুটা সাহসের সঞ্চার হয়।

সম্প্রতি আমার এক নিকটাত্মীয়কে বিপক্ষ রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। আমাদের আটপৌরে জীবনে এ ধরণের দুর্বিপাক আর কখনওই আসেনি। আমরা প্রথম পাঁচ ঘন্টা বুঝতেই পারলাম না যে আমাদের এখন কি করা উচিৎ। তারপর আর সবার মত এর ওর কাছে ধর্ণা দিতে দিতে আরো কিছু ঘন্টা পার হয়ে গেলো, ততক্ষণে পুলিশপক্ষ একটা মামলায় জড়িয়ে তাকে কোর্টে চালান করে দিয়েছে।

আপাতদৃষ্টিতে এ পর্যন্ত ভালোই ছিলো। কারণ কোর্টে এখন শুনানীর মাধ্যমে তাকে নির্দোষ প্রমান করে জামিনে ছাড়িয়ে আনা যাবে। কিন্তু আমরা অত্যন্ত আতংকের সাথে জানতে পারলাম, ডিসেম্বর মাসে কোর্টের শীতকালীন ছুটি বা এই জাতীয় কিছু একটা থাকে, ফলে খুব বেশি শুনানী হয় না। বিপরীত দিকে এই মুহুর্তে ব্যাপক ধড়পাকড়ের কারণে জমে যাওয়া মামলাগুলোর শুনানীর তারিখ দেড় দুই মাসের আগে পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রথমেই যেটা বললাম, এই ধরণের খবর পেপার পত্রিকায় অহরহই পড়েছি, কিন্তু কোনো সময়েই এর ভয়াবহতা স্পর্শ করেনি এবং সব সময় ভেবেছি যে এই ধরণের বিপদ আমাদের জন্য না। কিন্তু এখন প্রতিটা মুহুর্তে টের পাচ্ছি যে একটা মানুষ যখন এ ধরণের অন্যায়ের শিকার হয়, তখন সে নিজে, তার পরিবার এবং আপনজনদের উপর কি পরিমাণ ঝড় যেতে থাকে। আমার এই নিকটাত্মীয়ের ছিমছাম, গোছানো, শান্ত একটা সংসার এখন প্রতিনিয়ত থানা-কোর্ট-আইনজীবি আর জেলখানার পাকে চক্কর খেতে খেতে একেবারে তছনছ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অভিযোগটা কি? বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতার সন্দেহ!!!

সায়ানের গান অনুযায়ী আমরা যারা মধ্যপন্থী বা মাঝামাঝি মানুষ-কোনো সক্রিয় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই, তারা কোনো রাজনীতির সুবিধাভোগী না হয়েও পচা রাজনীতিকে সমর্থন দিয়ে যাই, সমর্থন করি এবং সমর্থনের বিপক্ষ দলের প্রতি যেকোনো অন্যায়কে অন্যায় হিসেবে গণ্য করি না; বরং কিছুটা শান্তি বোধ করি। জাতি হিসেবে এই প্রবণতাটা আমাদের অন্যতম ব্যর্থতা। আমরা এটা করি, কারণ আমাদের সায়ানের মত সাহস নেই, আমরা প্রতিবাদ করতে পারি না। কিন্তু কেউ বুঝতে চায় না যে এই প্রতিবাদহীনতার একটা অনিবার্য ফল হলো একদিন এই অন্যায় তাকেও এসে জাপটে ধরবে, এবং সেদিন এর প্রতিবাদ করার জন্য কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।

আমরা না পারলেও মাঝামাঝির এই যায়গা থেকে সায়ান বের হয়ে আসতে পেরেছেন। স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে কেনো তিনি প্রতিবাদে যান। একটা ওয়েল স্ট্যাবলিশড পরিবারের উচ্চ শিক্ষিত সদস্য হিসেবে নিশ্চিন্তে নির্ভাবনায় গতানুগতিক জীবন তিনি কাটিয়ে দিতে পারতেন। সেসব না করে তিনি গানে এলেন। সে জগতেও চাইলে পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা নিয়ে স্বাভাবিক গান গেয়ে বিখ্যাত হতে পারতেন। কিন্তু ওই যে, তিনি মাঝামাঝি মানুষ তো নন, গানকে প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করলেন এবং আমাদের থেকে আলাদা হয়ে গেলেন।

ইউটিউবের কল্যাণে ক’দিন ধরে সায়ানের গান শুনছি। এবং মুগ্ধ হচ্ছি। একটা মানুষ অবলীলায় সব ভয়, সব মোহকে উপেক্ষা করে সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যাচ্ছে নিজের মত করে! কি বিপুল সাহস আর এক অদ্ভুত স্বচ্ছতা তাঁর মধ্যে। এই চল্লিশে এসেও চালশে হয়ে যাননি একটুও। আমি জানতাম না যে সায়ানের লেখার হাতও খুব ভালো। ইন্টারনেট ঘেটে তাঁর নিজের একটা ব্লগও পেলাম। দিনে দিনে সায়ানের ফ্যান হয়ে যাচ্ছি। নিজে যেহেতু প্রতিবাদে যেতে পারি না, তাই সায়ানের গান শুনেই প্রতিবাদি হওয়ার স্বপ্ন দেখি, কিছুটা সাহস পাই।



‘আমি কেনো প্রতিবাদে যাই’ গানের কথা

আমি কেনো প্রতিবাদে যাই
আমার একটা পক্ষ আছে তাই
আমি তো নিরব কেউ নই
সেই কথাটাই চিৎকার করে কই
মাঝামাঝি, মাঝামাঝি মানুষ তো নই
দুই নৌকায় রাখবোনা রাখবোনা পা
কার সাথে আছে কার নেই, স্পষ্ট করে
শুরুতেই বলে দেই, আমি কেনো প্রতিবাদে যাই

মন্দ জানি শক্তিশালী, কিন্তু ভালো তো নয় মৃত
ভালোর সাথে আমরা আছি, আমি সেখানেই হবো পরিচিত

হাসছেনা তো, ভাসছে মানুষ, হাজার সর্বনাশে
এই জগতে সব ক্ষতিতেই আমার যে যায় আসে
এই জগতে সব ক্ষতিতেই যে যায় আসে

মন্দরা যাবে না, যাবে না প্রতিবাদে
আর যাবে না মধ্যপন্থী যারা, লড়বে না, আগুন যদি না লাগে গায়ে
জানবে তাদের, কিছুতেই নেই তাড়া

এ শরীরে, একটা হৃদয় যদি থাকে
আস্ত খাঁটি মানুষ যারা আছো
গাঁ বাঁচিয়ে, পাশ কাটিয়ে নয়,
প্রতিবাদে শব্দ করে বাঁচো
প্রতিবাদের আওয়াজ তুলে বাঁচো




ছবিসূত্র: ইন্টারনেট

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:১৫
১৮টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×