somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি চাই বিজেপি নেতার সালমা খাতুন পুত্রবধু

০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ রাত ৮:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এই ব্লগে দেওয়া একটা লেখার জন্য একবার অফিস থেকে মৃদু ‘ঝাড়ি’ খেয়েছিলাম। পুলিশের মৃদু লাঠিচার্জের মতো আর কি। কোনো এক ‘হনু’ লেখাটা কর্তৃপক্ষের নজরে এনে কৃতার্থ হতে চেয়েছিলো; যদিও সেখানে স্ট্যাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে কিছুই ছিলো না বলেই আমার মনে হয়েছে এবং এজন্য আমি এখনও ওই লেখাটা সরাইনি।

যাই হোক, ঝাড়ির সাথে সাথে ‘লিখতে পারি’ তকমাও স্থায়ীভাবে কপালে লটকে গেলো। তার বদৌলতেই অফিসের প্রয়োজনীয় লিটারেচার, ফিচার বা স্ক্রিপ্টগুলো লিখে আসছি সেই থেকে। এ বছর আমাদের ক্যালেন্ডারের প্রথম পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে যে ফিচারটা রয়েছে, সেটাও আমার লেখা। সে হিসেবে এই মুহূর্তে মোটামুটি আড়াই থেকে তিন লক্ষ দেয়ালে আমার লেখা ঝুলছে। সামহোয়্যারইন ব্লগ এটা নিয়ে চাইলে গর্ববোধ করতেও পারে। আমিতো এই ব্লগেরই প্রোডাক্ট!

সরকার যেহেতু এ বছরকে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করেছে, সেহেতু এ বছর বিভিন্ন লেখায় মুজিববর্ষ বা বঙ্গবন্ধু ঘুরে ঘুরে খুব স্বাভাবিকভাবেই আসছেন। এরকম একটা এভি’র স্ক্রিপ্টে আমি লিখেছি “মুজিববর্ষ শুধু সময়ের একটি হিসাবমাত্র নয়, বরং বঙ্গবন্ধুর দেখানো উন্নয়নের মহাসড়কে মহাযাত্রার স্বাড়ম্বর আয়োজন। আমাদের আগামীর গন্তব্য নির্ধারণের বছর। বিগত ৪৯ বছরে আমাদের জমানো অহংকার বিশ্বকে দেখানোর বছর। আমাদের নতুন যাত্রা শুরুর বছর।”

লেখার ধারা ঠিক রাখতে এ রকম অনেক কিছুই লিখতে হয়। কিন্তু এই লাইনগুলো লেখার পর থেকে একটা কথাই বারবার মনে আসছে- আওয়ামীলীগ কি এ জাতির নতুন যাত্রা শুরু করানোর একটা সুযোগ মিস করলো?

সাধারণত আমাদের দেশে, দেশীয় রাজনীতিতে ঘৃণার চর্চাটা অতি বেশি। আমাদের রাজপথের শ্লোগানগুলোও ওইরকমই মারমুখী- ‘অমুকের চামড়া-তুলে নেবো আমরা’, দিয়েছিতো রক্ত-আরো দেবো রক্ত’, ‘আর নয় প্রতিরোধ-এবার হবে প্রতিশোধ’ অথবা ‘একটা একটা শিবির ধর-সকাল বিকেল জবাই কর’ ইত্যাদি ইত্যাদি। এখানে তবলার বদলে তর্ক হয়, যুক্তির বদলে যুদ্ধ। রাজনীতিতে দ্বিমত-প্রতিবাদ মানেই যে প্রতিশোধ নয় বা ঘৃণার বদলে ভালোবাসা দিয়েও যে রাজনীতি হয়, সে বোধই এখন বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশে।

শুধু রাজনীতি কেনো, একই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এ দেশের সমাজনির্মাতারাও ঘৃণার চাঁষে অতি উৎসাহি ভূমিকা রাখছেন। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর আয়োজিত শিশু সমাবেশে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটা প্রশ্নের উত্তরে বাচ্চারা ‘পাকিস্তান’ বললে তিনি খুবই অর্বাচীনের মত বলেন, ‘আমি এই দেশটার নামও মুখে নিতে চাই না। তোমরা সবাই বাসায় গিয়ে টুথপেস্ট দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে নেবে, যেহেতু এই দেশের নামটা মুখে নিয়েছ। ঠিক আছে?’

মুজিববর্ষকে ভিত্তি করে অন্তঃদেশীয় এই ঘৃণার ধারা বদলাবার একটা সুযোগ ছিলো বলে আমি মনে করি। বঙ্গবন্ধুর বিশাল ভাবমুর্তিকে ধারণ করে এটা এমন একটা ইভেন্ট, যেখানে এ দেশের কারও আপত্তি করার কিছু ছিলো না। বরং বর্তমান সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অ্যাপ্রোচটা যদি সামগ্রিক হতো, তবে এই ইভেন্ট দিয়েই নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করা যেতো। বিগত ৪৯ বছরে আমাদের জমানো অহংকার আমরা বিশ্বকে দেখাতে পারতাম। দুঃখজনকভাবে সেটা হচ্ছে না।

মুজিববর্ষকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগ চাইলে ভালোবেসে সবাইকে কাছে টানতে পারতো, সবাইকে সাথে নিয়েই এই অসাধারণ ইভেন্টটা পালন করতে পারতো। কিন্তু মনে হচ্ছে, কাছে টানার বদলে সেই চিরাচরিত ‘চাপিয়ে দেওয়া’ এবং সেই আড়াইশ বছরের পুরোনো ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি চর্চার মধ্য দিয়ে সমাজকে পুরোনো গণ্ডীতেই আটকে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার কথা বলেছেন, কিন্তু আমাদের অতি উৎসাহী রাজনীতিবিদ এবং তেলমর্দনে ঋদ্ধ সামাজিক-অর্থনৈতিক-ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো একতরফা বিভিন্ন ফর্মায়েস দিয়ে মানুষের মনে বিরক্তিই বাড়াচ্ছে শুধু। আজকেই প্রথম আলোতে দেখলাম, ডিএসসিসি মুজিববর্ষ উপলক্ষে সড়কসংলগ্ন ব্যক্তিগত বাড়িঘরের সংস্কার ও রং করা প্রয়োজন বলে মনে করে এবং তারা এটাও মনে করে যে এই সংস্কার করা নাগরিকদের একটা দায়িত্ব। এ পর্যন্ত ঠিক ছিলো। কিন্তু এরপর ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. ইমদাদুল হক বলেন ‘যাঁরা বাড়িঘর রং করাবেন না, তাঁরা জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে চান না বলে মনে করব।’ যার কোনো প্রয়োজন ছিলো না।

পুরোনো একটা কৌতুক আছে- এক ঘটক ছেলের গুণগান করতে গেছে মেয়ের বাড়িতে। মেয়ের বাবা জানতে চাইলেন, ছেলের বাড়ি-গাড়ি কিছু আছে? ঘটক স্বভাবসিদ্ধভাবে বাড়িয়ে বললো, অবশ্যই আছে, বনানীতে একটা ফ্ল্যাট, ধানমণ্ডির পেছন দিকে তিনকাঠা জমি, আবার পূর্বাচলেও যায়গা বরাদ্দ পেয়েছে, আর গাড়ি! ওর তো লেটেস্ট মডেলের বিএমডব্লিউ, একটা মার্জারাত্তিও আছে। সন্তষ্ট বাবা এবার জিজ্ঞাসা করলেন- তা ছেলের বড় কোনো অসুখবিসুখ নেই তো? যথারীতি ঘটক বাড়িয়ে বললো- আছে মানে! অবশ্যই আছে, সারাক্ষণ খুক খুক করে কাশে, আগে থেকে যক্ষাতো আছেই, উপরন্তু ক’দিন আগে চীন থেকে ফেরার পর করোনা ভাইরাসও পাওয়া গেছে....

মুজিববর্ষ নিয়েও এ রকম একটা বাড়াবাড়ির প্রবণতা তৈরী হয়েছে। প্রত্যেকে নিজ নিজ যায়গা থেকে এই বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। একবারও ভেবে দেখছে না যে জোর করে ভালোবাসা হয় না। এই অনুষ্ঠান ঘরোয়াভাবে পালন করা উচিৎ ছিলো বলে মত প্রকাশ করেছেন এই ব্লগের প্রবীণ ও বিজ্ঞ সদস্য চাঁদগাজী। আমি তাঁর সাথে একমত নই, এই প্রোগ্রামটা আড়ম্বড়পূর্ণভাবেই হওয়া উচিৎ; কিন্তু জোর জবরদস্তির মাধ্যমে কিছুই অর্জিত হয় না বলেই আমি মনে করি।

আমার প্রিয় একজন শিল্পী কবীর সুমন মিলনের গান গেয়েছেন, বলেছেন- ‘আমি চাই বিজেপি নেতার সালমা খাতুন পুত্রবধু।’ প্রাকটিসিং মুসলিম হিসেবে আমি সেটা চাইতে পারি না, তবে তিনি এই গানে যে বার্তা দিতে চেয়েছেন, তার সাথে আমি পুরোপুরি একমত। ঠিক এ কারণেই যদি এ দেশের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে উপলক্ষ করে ভালোবেসে, সবাইকে সাথে নিয়ে দেশটাকে এগিয়ে নেওয়ার সত্যিকার উদ্যোগ নেওয়া হতো, ভালো লাগতো এবং সেটাই সঠিক হতো। দিনশেষে এই দেশটাতো আমার-আপনারই।

তাছাড়া ঘৃণা ছড়িয়ে, বিভক্তি বাড়িয়ে কোনো জাতি কি পেরেছে এগিয়ে যেতে?
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ রাত ৮:২৮
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×