somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাংকখাত ধ্বংসের এক মহান (?) কারিগর

২৮ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



০১
ছবির এই ভদ্রলোকের নাম মোঃ নজরুল ইসলাম মজুমদার। পালিয়ে যাওয়া গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার অন্যতম আর্থিক যোগানদার এই লোক বাংলাদেশের ব্যাংকখাত ধ্বংসের প্রধান কারিগর। ব্যাংক পরিচালকদের প্রতিষ্ঠান বিএবি’র চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি নিরবে নিভৃতে অত্যন্ত মনোযোগের সাথে দেশের ব্যাংকখাতকে ধ্বংস করে গিয়েছেন।

মূলত বিএবি’র চেয়ারম্যান হিসেবে গত ১৫ বছর ধরে তিনি শেখ হাসিনা ও গণভবনের ভয় দেখিয়ে সদস্য ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন এবং সেগুলো শেখ হাসিনা এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যায়গাগুলোতে পৌঁছে দিয়েছেন। বিনিময়ে তিনি এবং তার গ্যাং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে জনগণের আমানত লোপাট করে ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দেয়ার কাজ করেছেন বছরের পর বছর।

শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ব্যাংক ডাকাত এস আলম আট থেকে নয়টি ব্যাংক দখল করে বিদেশে টাকা পাচার করে ব্যাংকগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে; এ কথা সত্যি এবং এটা দেশের সবাই জানে। তবে সেটা ওই আট বা নয়টি ব্যাংকেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু এই নজরুল ইসলাম মজুমদার সম্পূর্ণ নিজের লোভকে পূর্ণ করতে দেশের ব্যাংকিংখাতের ভিত্তিকেই নড়বড়ে করে দিয়েছেন।

প্রথমত ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তন করে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এক পরিবারের দুইজন সদস্যের বদলে চারজন সদস্য অন্তর্ভূক্ত করা এবং চেয়ারম্যান থাকার মেয়াদ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে ব্যাংক-কে পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণত করার ব্যবস্থা করেছেন; মোট সম্পদের সামান্য অংশের মালিক হয়েও নিজেরা পুরো ব্যাংকের মালিক বনে গেছেন। ফলে মানুষ এখন ভুলেই গিয়েছে যে ব্যাংক আসলে জনগণের প্রতিষ্ঠান, পরিচালকদের একক কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। দ্বিতীয়ত, একইভাবে আমানত-বিনিয়োগে ৯%-৬% ইন্টারেস্ট রেট এর আইন পাশ করিয়ে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের ক্ষতি করে একতরফাভাবে বৃহৎ ব্যবসায়ী হিসেবে কম ইন্টারেস্টে বিনিয়োগ নিয়ে ব্যাংক-কে বিপদে ফেলার ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়াও ওভার ইনভয়েস, আন্ডার ইনভয়েস এর মাধ্যমে টাকা পাচার এবং নামে বেনামে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়ার বিষয় তো রয়েছেই!

একজন সাধু-সন্তর বেশ নিয়ে হাসতে হাসতে, হাসি-না হাসি-না বলতে বলতে এই লোক এইভাবে দেশটাকে ধ্বংস করে গেছে, ঠিক তার প্রাণপ্রিয় ‘আপা’ চূড়ান্ত দুর্নীতিপরায়ণ শেখ হাসিনার মতই

নিজে রপ্তানী পোশাকশিল্পের অন্যতম উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী হিসেবে বেশ ভালোই ব্যবসা করছিলেন। নাসা গ্রুপের কর্ণধার হিসেবে সুনাম অর্জনের পাশাপাশি ব্যাপক সম্পত্তির মালিকও হয়েছেন; তো সেটা নিয়েই থাকতেন! সৎভাবে ব্যবসা করে আরও বড় ব্যবসায়ী, শিল্পপতি হতে পারতেন! কিন্তু আপনি সেদিকে গেলেন না, স্বৈরাচারের পদলেহন করে হয়ে গেলেন একজন বড়মাপের ডাকাত! যার ফল আপনি এখন ভোগ করছেন, মান সম্মান হারিয়ে একজন কয়েদি হিসেবে কারারুদ্ধ হয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।

০২
উপরের লেখাগুলো ফ্যাক্ট, এবার মূল লেখায় আসি।

দর্শনার্থী হিসেবে আমার কয়েকবার কারাগারে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। সিনেমায় যেমন দেখা যায় যে কারারুদ্ধ নায়ককে দেখতে গিয়েছে নায়িকা, একটা ঘরে লোহার গ্রিলের ওপাশে একাকী নায়ক, তার মুঠোবদ্ধ হাতের মধ্যে নায়িকার হাত আর এপাশে ক্রন্দনরত নায়িকা ঘন ঘন চোখ মুছছে এবং আবেগী ডায়ালগ দিচ্ছে......। বাস্তবে পরিবেশ একদমই এরকম না। বরং আনুমানিক ৩০ ফিট বাই ১৪ ফিটের একটা স্যাতসেতে রুমের ৩০ ফিটের দিকে মাঝ বরাবর দুটো লোহার গ্রিলের ওয়াল থাকে। এই দুটো ওয়ালের মাঝে আবার প্রায় ৪ ফিট দুরত্ব। গ্রিলগুলো ১ স্কয়ার ইঞ্চির ব্লকের হয়। অর্থ্যাৎ আপনি চাইলেও এপার থেকে ওপারে কোনো কিছু পাঠানো বা ফিজিক্যাল কমিউনিকেশন করতে পারবেন না। সাধারণত প্রতি আধাঘন্টার জন্য একসাথে ১০০ থেকে ১৫০ জন দর্শনার্থীকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়। এবার এই কনজাস্টেড যায়গাতে গ্রিলের একপাশে ১০০ থেকে ১৫০ জন কয়েদি এবং অন্যপাশে সমসংখ্যক বা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক দর্শনার্থী একসাথে কথা বলা শুরু করে......, সে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। সবাই চিৎকার করে কথা বলছে কিন্তু কেউ কারও কথা ঠিকমত শুনতে পারছে বলে মনে হয় না। ঠিকমত দেখতে যে পারছে, তাও না।

এ রকম পরিস্থিতিতে হয়তো কয়েদির পরিবারের কেউ বা বন্ধু পরের দিনই দেখা করতে যায়, তার পরের দিনও যায়। এরপর সপ্তাহে দুইদিন, তারপর শুধু শুক্রবার, তারপর মাসে দুইদিন এরপর একদিন, এভাবে কমতে কমতে মোটামুটি ছয়মাসের মধ্যেই তা কেবল ঈদ, বিজয়দিবস বা উৎসব-পার্বনে এসে ঠেকে! আর জেলের ভেতরের যে যাপিত জীবন, সেটা তো আছেই।

এভাবে চলতে চলতে দীর্ঘ একটা সময় পর যখন কয়েদি মুক্তি পায়, বের হয়ে সে হঠাৎই নিজেকে বেশ অর্বাচীন হিসেবে আবিষ্কার করে। সে দেখে যে তার অনুপস্থিতিতে পৃথিবীর কোনোই ক্ষতি-বৃদ্ধি হয়নি। সে বের হয়ে দেখে তার বাড়ির পাশের প্লটে যেখানে জংলা ছিল, সেখানে বিশাল বিল্ডিং উঠে পড়েছে, সামনের গলিটা প্রায় হাইওয়ে হয়ে গেছে। মহল্লার মুদি দোকানদার এখন বিশাল ব্যবসায়ী, তার নিজের বৃদ্ধ মা মারা গেছে আর মেজ মেয়েটা একটা লাফাঙ্গা ছেলের সাথে ভেগে গেছে! অথচ সে এসবের কিছুই জানে না। এই নতুন পৃথিবীতে সে সম্পূর্ণ অপ্রাসাঙ্গিক!

যে এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়নি সে জানবে না কিন্ত এই চিত্রটা একদমই বাস্তব।

আমাদের দেশে সাধারণত পটপরিবর্তন হলে রাজনীতিবিদরাই জেলজুলুমের শিকার হন। এটা তারা এক রকম মেনেও নিয়েছেন। কিন্তু রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না থাকা এবং দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে তাদের প্রয়োজন, এই অজুহাত দেখিয়ে দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ব্যাপকহারে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি করেও সবসময় আড়ালেই থেকে যায়। তাদের কোনো ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় না। এই পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি থেকেই আমাদের সমাজে নজরুল ইসলাম মজুমদারদের মত ডাকাত সর্দারদের উদ্ভব হয়।

কিন্তু এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের সাথে সাথে বেশকিছু ধড়িবাজ ব্যবসায়ীকেও কারাগারে নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে হোটেল সোনারগাঁও এর আলো ঝলমলে বলরুমে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সম্মেলনে তারা যদি তাদের এই অভিজ্ঞতা ডাকাত হতে চাওয়া নবীন ব্যবসায়ীদের সাথে শেয়ার করেন, তাহলে ডাকাত তৈরির এই ধারা বদলালেও বদলাতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সমসাময়িক চিন্তা ও পাশের দেশের অবস্থা!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৩৩

পাশের দেশের মি শুভেন্দু বাবু যেভাবে চিন্তা করেন, তাতে তাদের দৈনত্যাই প্রকাশ পায়! অথচ বহু বছর আগেই তাদের জ্ঞানী ব্যক্তিরা আমাদের সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছেন। যাই হোক, এই সবকিছুই থেমে যাবে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনধিকার চর্চা নয়, শান্তিরক্ষি ভারতে প্রয়োজন

লিখেছেন মোহাম্মদ সজল রহমান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৫৫

বাংলাদেশে একজন রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় অভিযুক্ত এবং ইসকন সংগঠন থেকে বহিঃস্কৃত ধর্ম প্রচারক বিতর্কিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, তার মুক্তির জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতের এক শ্রেণীর জনগণ যেভাবে ক্ষেপে উঠেছে, তাতে মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমরা উকিলরা কেউ চিন্ময়ের পক্ষে দাঁড়াবো না , না এবং না

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২




সাবাস বাংলাদেশের উকিল । ...বাকিটুকু পড়ুন

আগরতলায় হাইকমিশনে হামলা কাকতালীয় না কি পরিকল্পিত?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩২

গতকাল (২ ডিসেম্বর) ভোরে আগরতলার হিন্দু সংগ্রাম সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভের পর ন্যাক্কারজনকভাবে আক্রমণ করে। বিভিন্ন তথ্যে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত যে বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের সাথে যুদ্ধ করে ভারত লাভবান হবে বলে মনে করি না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০



আমাদের দেশে অনেক মুসলিম থাকে আর ভারতে থাকে অনেক হিন্দু। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম যুদ্ধে মুসলিমদের সাফল্য হতাশা জনক নয়। সেজন্য মুসলিমরা ভারতীয় উপমহাদেশ সাড়ে সাতশত বছর শাসন করেছে।মুসলিমরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×