_______________________________________
হাঁস
নিরাময়ের জন্য হাঁস। নিরাময়ের জন্য শাদা জলদুহিতা।
প্রাণীজগতের এই অজাতশত্রু আলো আমাদের উপলক্ষ্য।
বহুদিন পর জলের ভাঙ্গন শুনে বুঝলাম
এটা আর কিছু নয়, শাদা পালকের ছোট্ট পাখি
ডানা দুলিয়ে দুলিয়ে আসছে।
স্থলবাসী ফুল, অনেকদিন আত্মীয় ছিলো
আজ কোন জঙ্গলের গাছ
তাকে ডেকে নিয়ে যায়।
জানি ডিম্বানুতে পরাশ্রিত শুক্র
জন্ম দেবে শিশু- অপর পক্ষের।
তাই নিরাময় প্রয়োজন। জলে হাত দিয়ে বুঝি
আর একবার উপস্থিতি প্রয়োজন।
ছোট্ট পালকের ভারে আমাদের স্থল-অবস্থান
পুনরায় নির্বাচিত হোক।
একদিন জলভ্রমণে গিয়ে দেখবো
আমরা সবাই অজাতশত্রুর শিষ্য।
মাছ
ভেসে ওঠে আর একবার তুমি বলো
তুমি কোনো মানবী ছিলে না
পথে পথে অনেক বিশ্রাম নিয়ে, জননীর
ভূমি হারিয়ে এখন এতটুকু সম্বল, জলে।
বলো তুমি কেবলই মৎস্য, জলবন্ধু।
আর একবার আমি, মাঠে মাঠে শস্যের
প্রতিভা দেখে- মনে করবো আমাদের ভবিষৎত
ভালো, আর একবার জল দেখে ভাববো
আমাদের বৃষ্টিপথ হবে।
জলে পথ রেখে বলো- তুমি কোনো শব্দ ছিলে না
শব্দে নিঃশেষ তুমি, জলকুলতারাবৎ বোন
ডাকো ভ্রাতা সকল ডাকো আত্মীয় সকল
আর বলো জল থেকে পুনর্বার জন্মজয়।
শ্যাওলা
একদিন বিবরণ দিতে গিয়ে ভাবি- আমি কি
কবি। প্রভাতের আলোয়, পুকুর ঘাটে অপরূপ
শ্যাওলা পথ। জরাসন্ধ, যৌথ পরিবার।
জলের স্পর্শে খিল খিল করে হাসছে
বলছে ছেলে বলছে বালক আর একটু থাকো।
আমার তখন নিরাময় চেষ্টা
ভূলোক ফাঁক করে উঠে গেছি পৃথিবীর পুত্র
সারা গায়ে রক্তের দাগ, বিষ বহনের চিহ্ন।
বলছি ও শ্যাওলা ও সবুজ আলো
আমি পুনর্বার জন্ম চাই
জন্ম শেষে এই পুকুর ঘাটে মাতা চাই
মাতা মাতা জগতমাতা আমাদের কেউ নয়
আমাদের ধ্বংস করে চলে গেছে
কোন পুরুষালয়ে।
পাখি
আর একবার স্মৃতিমুখ, পৃথিবীর কথা মনে পড়ে।
আর একবার প্রার্থনা শেষে- প্রভাত, পুকুর
জলের উন্নয়ন।
না হয় ভুলেই গিয়েছিলাম- জন্মে থাকার কথা
ভুলেই গিয়েছিলাম, আমার একটি অঙ্গের নাম হাত।
লেজ তুলে দাঁড়িয়েছে আর ডানাগুলো ছড়িয়ে
দিয়েছে আকাশে।
তখন গাছে গাছে বৃষ্টি-বালকের আশীর্বাদ
আমাদের লাইনে থাকার কথা ভুলিয়েছে।
আকাশে আকাশে বিহ্বল মেঘ
শোনে ধ্বনি ব্যঞ্জনা, ডানার রঙ্গে লুকানো
মাটির প্রতিভা।
আমাদের স্মৃতি হারানোর দায় সেরেছে
এই মুগ্ধ বিহঙ্গপ্রাণ।
বাড়ি
অবিরাম ঘাসের উপর স্বচ্ছ বোন, বেড়ে উঠেছে।
ততোধিক গাছের গুঞ্জন, উপস্থিতি রৌদ্র ছায়া সারাক্ষণ।
প্রতিভা বিন্যাস এইখানে সম্ভব, আমরা ভাবি।
আমরা মাতৃহীন, সংসারের উপদ্রবে ঘর ছেড়ে এসেছি
শহর বলতে শুধু রাস্তা, মানুষ-ভিক্ষুক
বলে লাইনে এসো, বলে টাকা দাও।
হঠাৎ পুকুর ঘাটের কাছে মানবিক বাড়ি
সন্ধ্যাবাতি জ্বেলে বোনের মতো ডাকছে।
আমার তখন পায়ে ক্ষত, হাতে রক্ত
ভিক্ষা শেষে এই বাংলানারীর কাছে দাঁড়িয়েছি।
'পলাশী ও পানিপথ' কাব্যগ্রন্থ থেকে
প্রকাশকাল: মে ২০০৯
প্রকাশক: নিসর্গ
প্রাপ্তিস্থান:আজিজ মাকের্ট, শাহবাগ,ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




