আমি শুরুতেই শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি বাঙ্গালী জাতির সেই সব স্বপ্নদ্রষ্টা মানুষ গুলো কে , যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে রচনা করেছেন বাঙ্গালী জাতির জন্য নিত্য দিনের সুন্দর রুপ-রেখা তথা সংবিধান। এই সংবিধানের দ্বিতীয় বিভাগে তথা রাষ্ট পরিচালনার মুলনীতি অংশের ১৫ নং অনুচ্ছেদে আছে- মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা। অর্থাৎ রাষ্টের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশক্তির ক্রমবৃদ্ধিসাধন এবং জনগনের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ উন্নতিসাধন, যাহাতে নাগরিকের জন্য নিম্নলিখিত বিষয় সমূহ অর্জন নির্শ্চিত হয়। অনুচ্ছেদ ১৫ (ক)- অন্ন, বস্ত, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা সহ জীবন ধারনের মৌলিক উপকরনের ব্যবস্থা।
পাঠক, এখানে আপনাদের নিয়ে যাব একটা ভিন্ন প্রসঙ্গে ! আমরা অনেকেই " ধ্বজ ভঙ্গ " না্মে একটা শব্দের সাথে কম-বেশি পরিচিত। এটা একটা রোগের নাম। নারী পুরুষ উভয়ের এই রোগ হয়ে থাকে। ডাক্তারী ভাষায় পুরুষের এই রোগের নাম - ইরেক্টাইল ডিসফাংশান ( Erectile Dysfunction ) এবং নারীদের এই রোগের নাম- লিউকোরহইয়া ( Leucorrhoea) । এই রোগের অনেক গুলো লক্ষণের মধ্যে একটা হল; সময় - অসময়ে যৌনাঙ্গ দিয়ে বীর্যপাত ঘটা।
তো- এবার মুল বিষয়ে আসা যাক! আমাদের দেশের বর্তমান শিক্ষা বব্যস্থা ঠিক এই ধ্বজ ভঙ্গ রোগের মত। যেখানে একজন ধ্বজ ভঙ্গ রোগীর সম্মুখে যেমন কামুক বা কাম ভাবের কোন কথা বলার আগেই বীর্য বের হয়ে পড়ে তদ্রুপ আমাদের শিক্ষার ক্ষেত্রেও পরীক্ষা মানেই প্রশ্ন ফাস! সেটা যতই ছোট বা বড় হোক , কিংবা কতৃপক্ষ যতই সতর্ক- অসতর্ক হোক না কেন , প্রশ্ন ফাস হচ্ছেই।
একটা বিষয় আমাদের সকলরই জানা; আর তা হল- বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে নকল প্রথার বিলুপ্তি শুরু হয়েছিল বিগত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী আ খ ম এহসানুল হকের হাত ধরে। তারই ধারাবাহিকতায় এই শুভ কাজের পূর্ণতা পায় বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের হাতে। কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় , নকল প্রথার বিলুপ্তির সাথে সাথে আমাদের অজান্তে খুলে গেছে প্রশ্ন ফাসের দরজা।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে এমন কোন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় নি যার প্রশ্ন পত্র ফাস হয়নি! সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা থেকে শুরু করে পাবলিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা , পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাসহ সমমানের যেকোন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাস এখন নিত্য দিনের ঘটনা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ই সেপ্টেম্বর ১৫ ইং থেকে এমবিবিএস ও বিডিএস মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাসের কথা ওঠেছে! বিষয়ের পক্ষে যথেষ্ট দলিল প্রমানও আছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হাতে। পরীক্ষার আগের দিন রাতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের মধ্যদিয়ে এই প্রশ্ন ফাসের অসংখ্য নজির রয়েছে। এই পরীক্ষায় মোট ৮২ হাজার ৯৬৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি মোট ১১ হাজার ৩৪৯ আসনের পরিবর্তে পাশ করেন ৪৮ হাজার ৪৪৮ জন।
আন্দোলন কারীদের আন্দোলনের যুক্তিকতা আছে যাদি প্রশ্ন ফাস হয়ে থাকে। তবে এই নিয়ে সরকার থেকে বার বার প্রশ্ন ফাসের বিষয়টা অস্বীকার করা হচ্ছে। অন্যদিকে প্রশ্ন পত্র ফাসের অভিযোগে র্যব এর হাতে গ্রেফতারকৃতদের কাছে নগদ টাকা পয়সা, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ও পরীক্ষার প্রশ্নপত্র-উত্তরপত্র পাওয়ার খবর গন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনার এই পর্যায়ে আমাদের ভাবতে হবে, যদি প্রশ্ন ফাস হয়, তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আগের রাতে কেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রন কক্ষে অভিযোগ করেন নি? আবার যদি প্রশ্ন ফাসের কারনে ভর্তি বাতিল হয় সেক্ষেত্রে যে শিক্ষার্থী তার মেধা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়েছে সে কি দ্বিতীয় বার চান্স পাবে তার নিশ্চয়তা কি? কিংবা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যে সবাই চান্স পাবে তারই নিশ্চয়তা কে দিবে? এমতবস্থায় যেকোন সিদ্বান্তই আমাদের কাছে গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ।
রোগী এখন আমাদের হাতে! আর রোগ ও সবার জানা। সুতারাং আমদের শিক্ষা ব্যব্যস্থা কে পূর্ণরুদ্ধর করতে এখনই নিতে হবে যথার্থ কার্যকরী পদক্ষেপ। যদি গ্রেফতারকৃতরা সত্যিই অপরাধী হয় তাদের এমন শাস্তি দেওয়া হোক যেন সামনের পরীক্ষাগুলোতে কেউ প্রস্ন ফাসের মত এমন দুঃসাহস দেখাতে না পারে। আমাদের সরকারের আন্তরিকতাই যথেষ্ট শিক্ষার এই দুরবস্থা দুরীকরনের জন্য। হয় পরীক্ষার আগের রাতে অন্তত সকল প্রকার যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হোক না হয় বিকল্প উপায় খুজে বের করেন। কারন শিক্ষা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কেন বার বার আমাদের ছাত্র সমাজকে শিক্ষার মত একটি গুরুত্বপুর্ণ মৌলিক অধিকারের জন্য আন্দোলনকারী হিসেবে রাস্তায় নামতে হবে? তাহলে কোথায় আমাদের সংবিধানের ১৫ নং অনুচ্ছেদের মৌলিক অধিকার? আশা করি আগামী ৯ ই অক্টোবর এর আসন্ন ভর্তি পরীক্ষার পুর্বেই সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ নিবে।
লেখক। শিক্ষার্থী , এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।