এই পদ্মা এই মেঘনা, এই যমুনা সুরমা নদীর তটে/ আমার রাখাল মন গান গেয়ে যায়/ এই আমার দেশ, এই আমার প্রেম, শত আনন্দ বেদনা মিলনও বিরহ সংকটে,,,,,, গান মানুষের কথা বলে শিল্পীর নয়, আবার শিল্পী ও মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রানী নয়। দেশের মাটি, মানুষ যে কি আপন তা বিদেশ না গেলে বুঝা মুশকিল! আমাদের দেশ থেকে যারা জীবন জীবিকার তাগিদে অন্যদেশে গমন করে তাদের আমরা প্রবাসী বলি। গ্রামে গঞ্জে এই বিদেশীদের কদর বেশি, হাজার হোক দুবাইওয়ালা। মেয়ের বিয়ে দিবে এতেও তাদের প্রাধান্য সবার আগে! যাইহোক, আমি লিখতে বসেছি বিদেশীদের মনের আকুতি, সামাজিক মর্যাদা বা অবস্থা নয়।
।
।
বিমান বন্দরে সেদিন কাজের ফাকে এক বাংলাদেশি বিদেশগামী যাত্রী কে প্রশ্ন করলাম, ভাই কোন দেশে যাবেন? তিনি উত্তর দিল " সাউথ কোরিয়া "। বেশ, শুনা মাত্রই আমার লোকটার সাথে কথা বলার আগ্রহ বেড়ে গেল। বেড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। সাউথ কোরিয় বলে কথা, নিশ্চয় অনেক ধনী রাষ্ট্র। গল্পের শুরতেই প্রশ্ন করলাম,,, ভাইজান কত দিন ধরে আছেন? ভদ্রলোক উত্তর করল,-
> এই তো প্রায় ১০ বছর।
> ভাই কি ওখানে সেটেল্ড?
> না,
> কি করেন আপনি?
> মোটরযানের মেক্যানিক!
>তাহলে ওখানে স্থায়ী হচ্ছেন না কেন?
আমার প্রশ্ন এইখানেই শেষ,, এর পর ভদ্রলোক আমাকে আর কোন প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে বলা শুরু করল,' ভাই ২০০৬ সালে অনার্স শেষ করে মাস্ট্রাস এ ভর্তি হলাম, কতটা অফিস, কতটা জায়গায় গিয়েছি তার কোন ইয়াত্তা নেই। তাই বাধ্যহয়ে বিদেশ গেলাম। কি করব? আমাদের দেশে চাকুরীর কোন ক্ষেত্র নাই,,,, আমাদের দেশ যে কতটা পিছিয়ে তা আপনি আমার এই কথা থেকে বুঝতে পারবেন।"
।
।
১৯৭৪ সালে বাংঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সাহায্য পাঠিয়েছিল সাউথ কোরিয়ান দের জন্য, আর ঠিক তার একবছর পরে ১৯৭৫ সালে এই সাউথ কোরিয়া থেকে ৪০ হাজার কর্মী বাংলাদেশে এসে যুদ্ধ পরবর্তী রাস্তাঘাট মেরামত করে। তাহলে এখন বলেন, যেখানে তারা আমাদের উপর নির্ভর ছিল সেখানে আজ, আমরা সেই দেশে যায় কর্মী হিসেবে। অথচ আমাদের জন্য দুখের বিষয় সেই সাউথ কোরিয়ান বর্তমান বিশ্বের অষ্টম ধনী রাষ্ট্র।" তার এই সব কথার মর্মবাণী খুবই স্পষ্ট যে, এই দেশের মানুষ কর্মসংস্থান তৈরি করতে ব্যর্থ বা আগ্রহী নয়। যারা সামর্থ্যবান তারাও আমাদের দেশে না করে পাড়ি জমায় বহির্বিশ্বে। এর জন্য আমারা জাতিগত ভাবে দায়ী এবং আমাদের রাজনীতিও অন্যএকটি উল্লেখ যোগ্য কারন।
।
।
তিনি আবারও বলা শুরু করলেন, " আপনি তো বললেন,,, আমি কেন সেখানে স্থায়ীভাবে সেটেল্ড হচ্ছি না? আসলে একটা বিষয় মনে রাখবেন,,, আপনি যা আপনার এলাকায় করতে পারবেন তা এই ঢাকা করতে পারবেন না, অর্থাৎ আমি যা আমার রংপুরে করতে পারব তা বিদেশে করতে পারব না। কারন, একটা মানুষ কখনওই একাকী কিছু করতে পারে না। কোন কিছু করতে হলে অবশ্যই তার চার পাশের মানুষ গুলোর সাহায্য দরকার। এখন বলেন,,, আমরা যায়া জীবিকার তাগিদে বিদেশগমন করি তারা কিভাবে সেটেল্ড হতে পারি? সেখানে কি কেউ আমাদের সাহায্য করে?"
।
।
হ্যা,,এই প্রবাসী ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুবই কষ্ট সাধ্য, তবে একটা কথা বলতে পারি, তা হল - " ওরা সুখে নেই "। আমরা বাংলাদেশে যেকোন বিদেশি নাগরিক দেখলে খুবই সম্মান করি হোক সে সাদা চামড়ার কিংবা কালো চামড়ার অধিকারী। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বাইরের যেকোন রাষ্টে আমার প্রবাসী ভাইরা নির্যাতিত ও ঘৃন্য বস্তু হিসেবে পরিগণিত! এমন ও কিছু দেশ আছে যেখানে আমার প্রবাসী বাংলাদেশি ভাইদের রাস্তা দিয়ে যেতে দেখলে ঐ দেশের ছেলে-মেয়েরা ঢিল ছুটে। কিন্তু শত কষ্ট হলেও প্রবাসীরা তা মুখ বুঝে সহ্য করে শুধুমাত্র দেশে রেখে যাওয়া পরিবার পরিজনের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য।আসুন, আমরা যারা বিত্তশালী ও সামর্থ্যবান তারা দেশের গরিব ও মেধাবী শিক্ষিত লোকজনের জন্য বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র তৈরি করি। যেন আমার কোন ভাইকে প্রবাসে জীবন অতিবাহিত করতে না হয়।