রাজধানীর যানজট নিরসনের কথা বলে ফুটপাথ থেকে উচ্ছেদের ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হকাররা। তাদের দাবি ফুটপাথে ব্যবসার কারণে কোন যানজট হয়না। সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির পার্কিং, রিকশা, অবৈধ বাস কাউন্টারসহ নানা কারণে হয় যানজট। সে সব কিছুর সমাধান না করে একতরফা হকার উচ্ছেদ করে যানজট নিরসন হবে না।
লাখ লাখ হকার উচ্ছেদ করার আগে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করার আহ্বান জানান হকার নেতারা। উল্লেখ্য, আগামী ১লা নভেম্বর থেকে রাজধানীর ফুটপাত হকার মুক্ত করার জন্য সমপ্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। এতে ফুটপাথের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হকারদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মহাজোট সরকারের শরিক দল জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু এমপি এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঘোষণা দেন। এ অবস্থায় রোববার সচিবালয়ে এক বৈঠকের পর যোগাযোগমন্ত্রী ঈদকে সামনে রেখে হকার উচ্ছেদ অভিযান আপাতত স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন। কিন্তু খুশি নন হকাররা। তাদের দাবি উচ্ছেদের ঘোষণা স্থগিত নয় প্রত্যাহার করতে হবে। নগরীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তানে প্রায় ১৫ বছর কাপড়ের ব্যবসা করছেন ফরিদপুরের মিজান। তিনি বলেন, বঙ্গবাজার হকার মার্কেট, টিকাটুলী রাজধানী মার্কেট, গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের মতো বহু আধুনিক মার্কেট হকারদের নামে গড়ে উঠেছে। কিন্তু একটি মার্কেটেও প্রকৃত হকাররা জায়গা পায়নি। তাদের কোন কর্মসংস্থান হয়নি। মিজান বলেন, নেতারা ক্ষমতায় যাওয়ার আগে দরদি সাজেন। ক্ষমতায় গেলে বদলে যান। টাকার অভাবে লেখাপড়া করতে পারিনি। রাস্তায়, ফুটপাথে হকারি করে কোন রকমে জীবন বাঁচাচ্ছি। সেটাও বন্ধ করে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এতে আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম করা ছাড়া উপায় নেই। কথা হয় কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা আবদুল গফুরের সঙ্গে। প্রায় ২৫ বছর গুলিস্তানের ফুটপাথে ব্যবসা করছেন তিনি। বলেন- গুলিস্তান, ফুলবাড়ীয়া, বায়তুল মোকাররম, স্টেডিয়াম এলাকায় প্রায় একলাখ ২০ হাজার হকার আছে। এভাবে রাজধানী জুড়ে কয়েক লাখ হকার ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে লড়াই করে যাচ্ছে। আমার বিশ্বাস, একজন মন্ত্রীর প্রস্তাবে সরকারের নীতি-নির্ধারক মহল এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেবে না। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের অধিবাসী নুরুল আমিন স্বাধীনতার পর থেকে গুলিস্তানে ব্যবসা করছেন। রাস্তাজুড়ে যানজটের দৃশ্য দেখিয়ে তিনি বলেন, হকারের কারণে কয়টা গাড়ি আটকে আছে? এই মুহূর্তে আমরা ফুটপাথ ছেড়ে চলে গেলে এই রাস্তা যানজট মুক্ত হবে? নিশ্চই না। বাস্তবতার দৃষ্টিতে কর্তা ব্যক্তিদের বিষয়টি দেখতে হবে। তিনি বলেন, বহুবার হকার উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু সফল হয়নি কেউ। লাখ লাখ লোকের জীবন-জীবিকার বিষয়টি কেবল একটি ঘোষণায় সমাধান করা সম্ভব নয়। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের বাসিন্দা নূর নবী ১০ বছর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন, এমনিতে দেশে কোটি লোক বেকার। এর সঙ্গে হকার শ্রেণী যোগ হলে ভয়াবহ হবে পরিস্থিতি। বাংলাদেশ ছিন্নমূল হকার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল সিদ্দিকী বলেন, রাস্তায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, যাত্রীবাহী বাসের টিকিট কাউন্টার, যেখানে-সেখানে যাত্রী উঠা-নামা করা, গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রাস্তার অংশবিশেষ ইজারা দেয়ার কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। অথচ এসব কিছুকে বিদ্যমান রেখে যোগাযোগমন্ত্রী হকার উচ্ছেদের ঘোষণা দেন। আমরা ইতিমধ্যে এই ঘোষণা প্রত্যাহার করার জন্য যোগাযোগমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন দিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত আশানুরূপ সাড়া পাইনি। এ অবস্থায় জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই এবং আন্দোলনে তার সঙ্গে শরিক হওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করছি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




