জুঁই ফুল -
তার বুকের মাঝে সৌরভ নিয়ে পথ চেয়ে আছে। কত পাখি এসে গান শোনাতে চায়, কত ভ্রমর এসে গুনগুন করে যায়...... না, আজ ও আর কাউকেই তো সুরভির ভাগ দেবে না। আজকের এই প্রতীক্ষা, এই সুরভি -সবটুকুই শুধু মুনিয়া পাখিটার জন্য।
ফুলটার আরো কিছু বন্ধু আছে, কিন্তু লাল টুকটুকে মুনিয়াটাকে কেন যেন সব থেকে বেশি ভালবাসে। কি সুন্দর দেখতে পাখিটা! আর কি সুন্দর গান করে! জুঁই তো কোথাও বেড়াতে যেতে পারে না। মুনিয়াই ওকে রাজ্যের গল্প শোনায়। ওর পাখায় ভর করেই যেন জুঁই আকাশে উড়ে বেড়ায়।
জুঁই ফুলটা তো গানও গাইতে পারে না, গল্পও শোনাতে পারে না। কি করে পারবে? ও যে কথাই বলতে পারে না। ও শুধু হাসতে জানে প্রাণ খুলে, আর ভালবাসতে জানে হৃদয় উজাড় করে। ওর ভালবাসাগুলো তাই কথা আর সুর হতে না পেরে সৌরভ হয়ে যায়।
আজ লাল টুকটুকে মুনিয়া-সোনাটার জন্মদিন। তাই সবটুকু ভালবাসা তার জন্য নিয়ে বসে আছে জুঁই। কখন আসে কখন আসে......
রোজ ভোরবেলা মুনিয়া গান শুনিয়ে জুঁইয়ের ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিয়ে তারপর বেড়াতে যায়। বারবার ফিরে ফিরে এসে গল্প শুনিয়ে যায়। যে বাগানে জুঁই ফুলটার জন্ম তার কাছেরই একটা গাছে নাকি মুনিয়ার বাসা। ছোট্ট সুন্দর একটা বাসা বানাচ্ছে মুনিয়া আর তার সঙ্গী পাখিটা মিলে। রোজ একটু একটু করে। জুঁই তো রোজ সে বাসার গল্প শোনে। কিভাবে বাসা বুনতে হয়, আজ কতটুকু হল, কবে শেষ হবে.... কিন্তু আজ এতো দেরী করছে কেন? নাকি প্রতীক্ষার প্রহর দীর্ঘ হয়?
ওই তো, অবশেষে এল যে! ওর সে সুন্দর ডানায় ভর করে। কিন্তু একি! মন খারাপ কেন মুনিয়া সোনার? মুনিয়ার সাথীকে নাকি খুঁজে পাচ্ছে না। ওরা বাসা বেঁধেছে এই তো মাত্র কদিন আগেই। আর আজ এমন দিনেই ঘুম ভেঙ্গে মুনিয়া দেখে কোথাও সে নেই! খুঁজে খুঁজে সারা। গলায় কোন সুর নেই আজ। মনের দুঃখে উড়তেও যেন পারছে না। তাই শুনে জুঁই ফুলটাও কষ্ট পেল। পাখিটার করুণ চোখের চাহনি দেখে জুঁইয়ের হাসিটাও মলিন হয়ে গেল। কিন্তু কিই বা করতে পারে ও? কোথা থেকে খুঁজে এনে দেয়? নিজের অপারগতায় যেন আরো বেশি কষ্ট পেল ও। লুকিয়ে রাখা ভালবাসার সুরভিটুকু মুনিয়াকে দিল ঠিকই। কিন্তু কোথায় সেই আনন্দ? আজ যে মুনিয়ার জন্মদিন। এমন দিনে কিকরে মুনিয়ার চোখের জল দেখবে জুঁই?
হঠাৎ ওদেরকে চমকে দিয়ে জুঁই ফুলের গাছটারই পাতার আড়াল থেকে মুনিয়ার নাম ধরে ডেকে উঠল হারিয়ে যাওয়া সেই পাখিটা। সে তো জানতই মুনিয়া মনের কথা বলতে এখানেই আসবে। তাই লুকিয়ে ছিল এখানেই। ওরে দুষ্টু পাখি! আর জুঁই নিজেই দেখল না এতক্ষণ! পাতার আড়ালে কেমন করে লুকিয়ে ছিল? কেমন মজা হল!
মুনিয়া তো খুশিতে টগমগ! এ ডালে ও ডালে ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ উড়ে বেড়াল কিছুক্ষণ। আর গান? জুঁই তো রোজ মুনিয়ার গান শোনে। ওর মনে হল আজকের মত এত মিষ্টি সুরে মুনিয়া আর কোনদিন গাইতেই পারেনি। ওরা দুটি পাখি জুঁই গাছটার এক ডালে পাশাপাশি বসে গলা ছেড়ে গান গাইতে শুরু করল। আনন্দ আর ধরে না! দেখে দেখে জুঁই ফুলটারও গাইতে ইচ্ছে হল। কিন্তু পারে না যে। থাক, গাইতে না পারুক ওর শুভ্র পবিত্র হাসি আর তো সৌরভ উপহার দিল।
সবাই হাসি খুশিতে মেতে উঠল। মুনিয়াদের গান, আর জুঁই ফুলের সুবাসে ভরে উঠল বাগানটা।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৩:৫৮