somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Kulada Roy: কবি জুয়েল মোস্তাফিজের কবিতা

১৮ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈশ্বরের ভাটিয়ালী

ভুবনের বাকল পুড়ছে আর আমরা জল হাতে দৌড় দিয়েছি আগুনের দিকে। আগুনের ভেতর এক অন্ধ ঈশ্বর বেলুন মুখে বসে আছে। আমাদের ভুবন পুড়ে যাচ্ছে জেনেও ঈশ্বরের মুখের একী কাণ্ড! আমরা ঈশ্বরের মুখে যতই জল ছুঁড়ে মারি ঈশ্বর ততই ভুবনের দিকে বেলুন ছুঁড়ে মারে। তাই তো উড়ন্ত বেলুন দেখি আর মনে হয় বেলুনের ভেতর হাওয়াটুকুই আমাদের সর্বনাশের কারণ। ধরে নেয়া যাক ভুবনের সকল ভেদ জেনে গেছে এক অন্ধ ঈশ্বরের চোখ। আর আমরা সমস্ত আগুন জলাঞ্জলি দিয়ে বসে আছি একটা বাঁশির কাছে। আমরা বাঁশির আশ্রয় নিয়েছি বলে ঈশ্বর হয়েছে ভাবের মানুষ। কী ভেবে যেন বসে আছে মৃত কচ্ছপের পাশে...
বন্ধু, রাতের কোলে আলো দেখে আর কোনো মরণ নয়, এবার আমরা জোনাকির প্রতারণা বুঝে গেছি। তাই তো দেহ থেকে রাতগুলো ঝরে যাওয়ার আগে আমরা আরো একবার দেহের ভেতর আজান নামাই। কারণ যে রাতে আমরা স্বপ্ন দেখিনি সে রাতের স্বপ্নগুলো আমাদের দেখে ফেলেছে। দেখনি গতরাতে একটা হারানো সংবাদ, তুমুল অন্ধকার হতে এক নবীন স্বপ্ন হারিয়ে গিয়েছে, গায়ের রঙ পৃথিবীর মতো, পরনে ছিলো শাদা শাদা ভ্রমর। সেই স্বপ্নটাকে দেখা গিয়েছিলো কদমের মাথায় বসে বিশ্রাম নিতে। আমাদের হাত নেই, পা নেই, আয়ু নেই, মৃত্যু নেই, এমন এক ভেজা মরা কালে আমাদের জীবনের ওপর তোমরা করেছ ঈশ্বরের আয়োজন?



২.
তুমি বর্ষা থেকে এসেছো বলে কি আমরা দায়ে পড়ে গেছি? আমাদের দায় পড়ে আছে, সময় ঘোড়ার পায়ে পায়ে। আমরা কেউ কখনো নিজেদের ওপর কোনো অধিকার রাখি না। তোমরা সারারাত আলকাপের হাড় বাজাও, আর আমরা থেকে থেকে কেঁপে উঠি। পৃথিবীর অভয় নিয়ে এত দিন গেলো, তবুও পৃথিবীর ভয় গ্যালো না। অনন্তের পথে আর কোনো বটগাছ জন্মালো না, না বাবা এবার ঘরে আর কোনো বর্ষা তুলতে পারবো না। গতকাল কত কাকে কবর দিলাম, তোমরা বুঝতেও পারো না। কী সব তোমার দাবি। কত আর কবর খুঁড়বো আমি। তোমরা সবাই কবর-বন্দি মানুষ। কেউ বাঁচতে চাও না। দাঁড়াও ওখানেই দাঁড়াও। আর গল্পটা শোনো। সেবার বর্ষা আসবে আসবে এরই মধ্যে ধীবর পাড়ায় মরার ধুম। এক হাতে কত আর কবর খোঁড়া যায়? তবুও মাটির আকাক্সক্ষা নিয়ে? কোদাল কুপিয়ে কুপিয়ে কবর খুঁড়ি আমি। যে মরা মাটির ভেতরে যায়, তারাই রাজহাঁস হবার সাধ জাগে। ওই রাজহাঁসের সাথে গোপন আলাপ করে দেখেছি। তাই তো বর্ষা এলেই আমি আর কবর খুঁড়তে কেয়ার করি না। জানি তো, বর্ষায় যারা যারা মরবে তারাই মাটির পূর্ব দিক দিয়ে উড়ে যাবে রাজহাঁসের মতো।



৩.
তুমি বাঁকা বলে আমার আঁকা সহজ হবে কেন? তাই তো আমি এই ছুরিটা নিয়ে দৌড় দিয়েছি মরাউড়ার বাঁকে... এখানে কত কার রক্ত কত রকমের ছুরি দিনরাত খেলা করে। আর খেলার ভেতর কারা যেন খালি পায়ে হেঁটে যায়। আচ্ছা তুমিই বলো, পথগুলো কি অতখানি বাঁকা ছিলো যতখানি বেঁকে ছিলো আমাদের পা? তাই তো বাঁকা পায়ের আঁকা পথে হরেক রকম ছুরি পড়ে আছে। এই ধরো এই পৃথিবীতে প্রথম গলা কাটা ছুরিটির কথা। ওই ছুরিটির হাসি শুনতে পাচ্ছো? কী দারুণ হাসি তাই না? কিংবা কবে বলে তো? মনে পড়েছে, পাড়ার কদম যেদিন প্রথম আদমের গল্প ধরলো। কী সব গল্প, ওই গল্পে কি আর মন মজে, তাই তো সোজা চলে গিয়েছিলাম জাদুঘরে, জাদুঘরের ছুরিগুলো কী অসহায়, সব যাদু ভুলে গিয়ে পড়ে আছে আমাদের হত্যা আকাঙ্ক্ষার ভেতর। এই তো কী বেফাঁস রকমের বেলা করে ওঠো তুমি, অথচ ভোরের তলপেটে শাদা শাদা ছুরিগুলো খেমটা তুলে নাচে, আর আমি ঠিকই বুক পেতে দিই ছুরির মুখে, ছুরিগুলো তোমার মতো রক্তের ভেতর এঁকেবেঁকে যায়। কিন্তু কখনো রক্তের চিহ্ন রাখে না তার গায়। তুমি বাঁকা বলে আমার আঁকা সহজ হবে, এমন দাবি কবে ভুলে যাবে তুমি?



৪.
তোমার মৃত্যুর প্রতি তোমাকেই সমবেদনা জানাতে হবে বন্ধু, নইলে পৃথিবীর সব পাখি মরে যাবে। এইজন্য বেছে নাও এমন এক মুহূর্ত যখন বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে কুলীন পাখি।
ওই পাখিকে পরাণপাখি মনে করে আর ভুল নয়, বরং বৃষ্টির কাছে জেনে নাও কীভাবে নিজের মৃত্যুতে নিজে সমব্যথিত হবে। এই যে ধরো কেউ মরলে শাদা কাপড় কিনে আনো তোমরা, মাটিকে এত মুর্খ ভাবলে? সেই অবধি কত মানুষ মারা গ্যালো, কত পাখি ভিজে গ্যালো আর তোমরা মৃত্যুর শাদা কাপড়ে মৃত্যুর শিরোনাম লিখতে ভুলে গেলে। তোমরা তো কেউ জানলে না মাটিগুলো কীভাবে শীতে কাতরায় আর মাটির শীত তৈরি করে শিরোনামহীন মৃত ব্যক্তিরা। শীতের উত্তর দক্ষিণ নেই বলেই কি তোমরা মরার জন্য শাদা কাপড়ের সাহস পাও, কিন্তু তুমুল বৃষ্টিতে যখন পাখি ভিজে যায়, তখন সে বৃষ্টির ভেতর মরাগুলোকে দেখি নিজের মৃত্যুর জন্য নিজেরায় সমবেদনার কোরাস তুলে। তাই তো নিজের মৃত্যুর জন্য নিজের সমবেদনার ভাষা শিখে নিতে হবে বন্ধু। বেছে নিতে হবে সেই মুহূর্ত, যখন পাখিরা ভিজে যাবে আর সেই ভিজে যাওয়া বৃষ্টির শব্দগুলোই নিজের মৃত্যুর প্রতি নিজের সমবেদনার ভাষা।



৫.
না খেয়ে আছো বলে পৃথিবীর দিকে অমন করে তাকাচ্ছো কেন? পৃথিবীও না খেয়ে আছে। বাহ্! সংবাদটা শুনে কী দারুণ খুশি হয়ে গেলে। পৃথিবীও খুশি হয়েছে। ভেবো না বন্ধু, তুমি না খেয়ে মরে গেলে পৃথিবীও না খেয়ে মরে যাবে। আর ক্ষুধার কথা বলবে তো? আরে ওটা তো একটা প্ররোচনা। জীবন জীবন করে দিনরাত যে আয়ুবাদী চিৎকার শুনা যায় সেই চিৎকারকে বাঁচানোর জন্যই তো পৃথিবীতে ক্ষুধার জন্ম। এই যে এতদিন আয়ুর সংজ্ঞা জানলে তাতে কি ক্ষুধার কোনো কদর দেখতে পাও? একবার কী ভেবে দেখেছ, আয়ু কী প্রতারক। বাতাসের মতো আচরণ যার থান বেঁধেছো দেহে? বাদ দাও বন্ধু ওটা কিছু নয়, ওটা প্ররোচনা, দ্যাখো না পৃথিবীকে কতকাল না খেয়ে আছে। কতকাল আয়ুর বিরুদ্ধে হেলান দিয়ে আছে জীবনের পাহাড়ে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×