Mou Modhubontee: Bhimpolashi Shondhya
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ঝংকার মিউজিক একাডেমী আয়োজিত সিতার ও খেয়াল সন্ধ্যা ১৮ অক্টোবর,২০০৯।
রাত সাড়ে নয়টা ।গাড়ী স্টার্ট দিলাম।দেখি একজন কেউ আধো অন্ধকারে দৌড়ে এসে, আমার গাড়ির জানালায় নক করছেন।তাকিয়ে
দেখি স্বামীজি। প্রনাম দিয়ে জানতে চাইলাম, কিছু ফেলে এসেছি কিনা। না, বলেই, বললেন, কতদিন বাদে এলে, সব তৈরি আছে।
একটু খেয়ে যাও।বললাম এত রাতে খাব না ।বলেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। দাদাকে বলি, চলো দাদা একটু নিয়ম ভাংগি আজ
রাতে।কত রকম খাবারে টেবিল সাজানো।দেখালেন স্বামীজি একে একে ।এটা ওড়িষ্যার খাবার, ওটা গুজরাটি, মাদ্রাজী, পাঞ্জাবি,বাংলার
ও স্বামীজির নিজের হাতের রান্না করা খাবার ।ভাত রুটি সব আছে। খেলাম চার জন মিলে।তারপর এলো দই আর মিষ্টি । খেতে
খেতে বললেন, নরেনের সাথে ভজনে আমার মন্দিরা বাজাতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল।অশোক দা বললেন, ভুল হয়ে গেছ। আগে থেকে
সেট করা দরকার ছিল।আহা! আজ নরেন্দ্র দাতার কি গাইলেন তাই না স্বামীজি? আমি বলি, দাদা, এবার ফ’লে রংগের কোন বাহার
নাই গাছে গাছে। কিন্তু ছায়াদি ও নরেনজি কিযে বাজালেন আর গাইলেন ।।ভারত সেবাশ্রম। ঝঙ্কার মিউজিক একাডেমী
আয়োজিত সিতার ও খেয়ালের বিশেষ নিবেদন। সিতারে শ্রীমতি ছায়াগুপ্তা, তবলায় চির তরুণ তালনন্দন শ্রী অশোক দত্ত আর
হারমোনিয়ামে শ্রী রায়া বিড়ে। আলাপ শুরু।তবলা থাকে না আলাপে।নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে শিল্পী রচনা করে আলাপের মৃদুল
মধুর ব্যঞ্জনা।তাও আবার ভীমপলশ্রীতে । 'n - S - g - m - P - n – S ' তে বিলম্বিত আলাপের মাধুর্য্য ছড়িয়ে দিয়ে শ্রীমতি
ছায়াগুপ্তা চলে যান মধ্যমলয়ে জোড় ধরে সোজা দ্রুত তিন তালের ঝালাতে।।সারেগামার বর্ণালী রঙ তুলে আনেন তিনি সিতারের
তারে তারে ।দর্শকের হৃদয়ে ওঠে দোলা ।দুর্বার এই সুরচিত্রে মুগ্ধ হয় দর্শক ও মঞ্ছ ।এখানে বলাই বাহুল্য যে দর্শকেরা ছিলেন সব
প্রবীন,বোদ্ধা ও কানসেন, তালপাকা। লয়জ্ঞানে পটু।স্থির চিত্তে সুরের শেষ টুকুও শুষে নিতে জানেন। মঞ্চে মেহগিনি রঙ্গে সোনালী
পাড়ের শাড়িতে ছায়াগুপ্তা বাজনার রং মিশিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন এক অপরূপ মনোগ্রাহীতা। বিলম্বিতে এবার যোগ হয় তিনতালের
তবলা ।সিতার ও তবলার আন্তসংযোগ যেন আকৃষ্ট করে রেখেছিল পুরো হলকে। অন্তঃপুর সন্নিকট আদান-প্রদানে সুর ও তালের
সখ্যতা না দেখলে শব্দে আর কত বলা যায়? প্রতি ঝঙ্কারে অনুভুতিকে খুলে খুলে ছন্দে ছন্দে জানা গেল নতুন করে ।লয়ে লয়ে
আকুল হল মন,আকুল হলো হাওয়া এ যেন রাত গভীর হওয়া নিকটে আসা, আরো কাছে টানা।ছায়াগুপ্তাজী নিমগ্নতাকে রেখেছেন
বশীকরণে আয়ত্তে রেখেছেন দর্শকের কান কে ।তেহাইয়ে যে তোলপাড় তুললেন তাতে হল কেঁপে কেঁপে উঠেছে হাত তালিতে ।
এবার তিনি ধুন নিয়ে এলেন খামাজ রাগ।“ভেংগে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে।।ও বন্ধু আমার”।ধুনে যোগ করলেন
গুজরাটি ভজন মিশ্র খামজে “বৈষ্ণব জনত তেনে কাহিয়ে যে,পিয়া পরারি আনে রে ...”
বিরতি। চা নাস্তা পর্ব । সকলে সকলে ভাব ও কথা বিনিময়ের পর্ব। অনেক দিন পর দেখা হলো বন্ধু নীনার সাথে ।ওদিকে নীরা
এনে দিল মিষ্টি হাতে। একজন দিদি বলে, তুমি কি নাচ করবে নাকি গো।
সমস্ত অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনার যাদু দিয়ে হলাবদ্ধ করে রেখেছে মৌ মধুবন্তী।
বিরতি দিয়ে শুরু হলো দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান ।।রে নু না রে দিয়ে শুরু করে কৌশিক ধ্বনি রাগ ।শিল্পী বললেন, লেটনাইট রাগ
হলেও ওই সেবাশ্রমে গভীর রাতেরই আঁধার নেমে মাঝ রাতের অনুভুতি এনে দিয়েছ।।যে বন্দিশ তিনি গেয়েছেন তা তাঁর গুরুর
কম্পোজিশান ।গুনিয়া ছিল তাঁর নিক নেম যা বলে দেয় কম্পোজার কে হতে পারেন। কন্ঠ দোলায় সুরের ভেলাকে ঠেলে ঠেলে নিয়ে
যান তিনি মন্দ্র থেকে মদ্যম ছুঁয়ে রে নু মা কে তার সপ্তকে । কম্পনে কম্পনে গভীর খাদ থেকে তুলে আনেন সুরমুক্তাকে –সেই
সুরমুক্তার রুপে ও মুর্ছনায় আবেশ-আকুল হয়ে পড়ে সারা হলের দর্শক শ্রোতা ।বিলম্বিত এ গাইলেন “পিয়া জিয়া কো –তুমা
বিনা” —এই বিনার, বি থেকে না তে যেতে যে সুরপথ তিনি পাড়ি দিলেন, তা মাভৈঃ মাভৈঃ মাতন কর ।দক্ষ হাতের সঞ্চালনে
মনে হচ্ছিল সুর কুড়িয়ে সাজি সাজাচ্ছেন তিনি পরম যত্নে ও আবেগে । সে দৃশ্য দর্শক হৃদয়ে গেঁথে থাকবে দীর্ঘকাল।কেবল সাধারণ
ঠেকায় শ্রী আশোক দত্তের চঞ্ছল হাত কি গম্ভীরা ভাব নিয়ে অস্ফুট ঠুকে দেন তবলার ছাউনি - আহা আমার কলম কাঁদে শব্দের
অপ্রাচুর্য্যতায়।।মাদানি, মাদা, মাসানিসা, নিদামাদাসা,সা’নিদামা, মাদাসা, সা’দানি, দানিসা’দা, গামারে সা দিয়ে শিল্পী নরেন্দ্র দাতার বলেন,
দেখে রেখো আমার পিয়াকে –পিয়াকে খোঁজে সুর হৃদয়ে, হৃদয়ের বাহিরে, ঘরে বনে নিকুঞ্জধামে –আহা! কি প্রেম কি প্রেমে সুর মাখা।
এর মাঝে এক চিলতে হয়ে গেল তবলা ও হারমোনিয়ামে গুঞ্জরণ। যেন সপাং সপাং চাবুকানন্দে পিটিয়ে দিলেন জোয়ালা চিত্ত। এবার
দাতার জী তুলে নিলেন তার ভোকাল কডে নুড়ির নাচন ,নাচিয়ে নাচিয়ে গাইলেন চিনুক সোহান—আর মনে পড়ে গেল সালামত
আলী ও নেজাকত আলীর তান দেমাগের কথা। তানে ও দুরতানে কন্ঠ ছিল আকাশ মাটি মন্দ্র থেকে সপ্তক ছোঁয়া । মাদানিসা’ দিয়ে
যে ঘুর্ণি তুললেন তিনি তা মৌতাতে মনে করিয়ে দিল বাণী বসুর গান্ধর্বীর সে আকুলতা ।সে বর্ননা।তীব্র গা তে গিয়ে যে ব্যাকুল
আর্তনাদে তিনি পিয়াকে ডাকলেন তাতে মনে হল দৌড়ে গিয়ে সুরের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ি।কিন্তু ঐ যে বলে না, ওগো বাঁশিওয়ালা
তুমি থাক তোমার বাঁশীর সুরের দুরত্বে। আমি সেই দুরত্বে বসে শুনি “পিয়া নাহি আয়ে ডর লাগে,- ক্যাছে, ক্যাছে, ক্যাছে যাউঁ”...
এই ক্যাছে ক্যাছের ছন্দে চলে তবলার সাথে প্রশ্ন উত্তরের দারুন পরিবেশনা।কোন সারগাম তান না করেই শিল্পী বুক থেকে বের
করেন আকার তানের খেলা, দেখালেন যাদু মন্ত্র –এখানে নোটের যে ইন্টারপ্রিটেশান তা মিস করলাম বড় বেশী।
এর মাঝে একজন প্রশ্ন করলেন, এই যে আপনি কি বাঙ্গালি? আমিও খুব হেসে হেসে বলি হ্যাঁ, বাংলাদেশের বাংগালী- অনেক
অবাঙ্গালীদের মাঝে নিজেকে মধ্যমনি মনে হছিল।
মিশ্র পিলুতে গেয়ে উঠেন ঠুমরী। বোম্বের ডঃ প্রভা আর্ত্রের কম্পোজিশান- “জিয়া মোরা না লাগে ব্যারী বালমা-গিনে গিনে তার
ন্যায়নে গিনে –জাগি সারি রাঁতিয়া-সাবারিয়া” ।দাদরা তালে ঝঁকে ঝুঁকে এগিয়ে যান শ্রী নরেন্দ্র দাতার।কেমন দর্শক দেখুন, এতেও
মন ভরেনি আবার অনুরোধ নিয়ে এলেন আরও কিছু চাই।চাই ভজন , চাই আরো ঠুমরী।রাগ ভুপালীতে গাইলেন “তের সুখা দুঃখা
মে আয়ো কাম-মন তুমরি সুন্দর নাম-হরি ভজন জ্ঞান লাগাদে” ।
হলে কি হবে শ্রোতারা বলে, না যেতে পারো না আরেকটু গাও । তারপর পুরাতনী কমপোজিশান তুলে আনেন ভান্ডার থেকে বাবার
(নানার দাতার) গুরু মাষ্টার কৃষ্ণরাম এর উপহার । “দ্যাখো মরি চুরিয়া কারক গ্যাইয়া—ছাঁইয়া ছোড়ত পাইয়া করত
পাইয়া “।এমনি করে অনেক কিছু পেয়ে আবিষ্ট মনে ফিরে যায় সবাই রবিবারের রাতেই নিজ ঘর, নিজ আলয়ে। স্বামীজি নিজ
হাতে তুলে দিলেন এক প্যাকেট মিষ্টি আমার মেয়ের জন্য ।মেয়ে যায়নি অনুষ্ঠানে ।তাই ।এত ভালোবাসা ।।হে সঙ্গীত তুমি আমারই
থেকো বাকী জনমে ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল
হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'
নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ
আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা
গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন
মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.
গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন