somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপন্যাস-- আঁধারে শশী (পর্ব-২)

১৪ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এ্যাড ইসাহক আলী প্রামানিক

=== (এই উপন্যাসটি আমার বড় ভাই এ্যাডভোকেট ইসাহক আলী প্রামানিক-এর লেখা) ===


(তিন)
আম্মার উৎপাতে আজ রংপুর এসেছিল। কারণ আম্মার কথা না শুনলে সে ভীষন কষ্ট পাবেন। সেদিন খেতে বসে বিয়ের কথাটা আবার তুলেছিল আম্মা। আম্মা জানে কথাটা বললে আমার দুঃখ হয়। তবু আম্মার কথা বলার সময় হল একমাত্র ভাত খাওয়ার সময়। কারণ সারাদিন তো আর তাকে সময় দিতে পারি না। তাই বলেছিলাম আম্মা আর একটু ভেবে দেখিনা।
না এই কথা আর শুনতে পারিনে আমি। বলতো কার জন্য এমন করে বসে আছিস তুই? যার জন্য তোর এত কষ্ট বাবা, সেতো তোকে কবেই ছেড়ে গেছে। একটু বাচ্চাটার জন্য মায়াও করল না। কি নিষ্ঠুর বাবারে। যেন হায়া শরম কিছুই নেই তার--।
ছি মা অমন করে বলোনা। বড় কষ্ট লাগে। কামালের মুখ থেকে তিক্ত শব্দ ছিটকে এলো। আম্মা তোমেকে না হাজার বার বলেছি এসব পুড়ানো কথা আর আমাকে বলবেনা। খাবার টেবিলে খেতে বসে এসব কথা হচ্ছিল। কামাল তাড়াতাড়ি টেবিল ছেড়ে চলে গেল।
সাড়া বাড়িটা যেন নিরব। ঘড়িটা নানা সুরে বেজে উঠে জানিয়ে দিল এখন রাত এগারোটা। মাহমুদার খেয়াল ছিলনা কতক্ষণ ধরে সে ভেবে চলছেন। দুঃখ এবং লজ্জা দুটোই তাকে ঘিরে ধরেছে। বুকের মধ্যে তার কষ্টের ঝড়। তার মাত্র একটি ছেলে। তাও আবার সে ভাল বেসে বিয়ে করেছিল। বিয়ের পর একটি মেয়ে হয়। কি ফুলের মত তার চেহারা। কিন্তু সেই মেয়েকে রেখেই কিনা মা চলে গেল।
বিয়ের চার বছরেই কি হল বোঝা গেলনা। ওদের ভালবাসার মধ্যে ঘুন ধরল। বৌয়ের সঙ্গে কামালের বনিবনা হলনা। মানুষের জীবনে যে কত রহস্য থাকে অন্তর্যামী আল্লাই তা জানে।
ছেলে ভালবেসে বিয়ে করেছে বলে, মাহমুদা কোনদিনই বৌকে কখনও আনাদর করেনি। নিজের মেয়ের মত আগলে রাখার চেষ্টা করেছেন সে। কারণ তারও তো মেয়ে নেই তাই মেয়ের সাধ মিটানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু কি যে এক ঘুন পোকা ধরল ওদের দুজেনের মাঝে তা মাহমুদা বুঝতে পারল না। বৌয়ের মন মেজাজ ও মাহমুদা অবশ্য কোন দিন বুঝে উঠতে পারেনি। তবুও সংসারটা ভালই চলছিল।
মাহমুদা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। সংসার জীবনে সব হিসেব মিলানো যায় না। নইলে এ কথা আজ কামাল কে আবার নুতন করে বলতে যেন না। মাহমুদা ধীর পায়ে উঠে গেলেন। সুইচ টিপে বাতি নেভালেন। ধীরে ধীরে নিজের কক্ষে ঢুকলেন। নিজেকে ধীক্কার দিলেন, আরও দুঃখ সইতে হবে তোমার, এই তোমার ভাগ্য।
সেদিন কামাল ঘুমাতে পারেনি দুশ্চিন্তায়। বার বার তার চোখ দুটো বিছানায় ঘুমন্ত নিষ্পাপ ফুলের মত মেয়েটির দিকে যাচ্ছে। বার বার সিগারেট ধরাচ্ছে আবার নিভাচ্ছে।
নানা মনে করা যায় না পান্নাকে। ভালবাসা শব্দটা মনে হয় মিথ্যা। অথচ পান্নাকে একদিন তার মনে হয়েছিল স্বপ্নের শেষ প্রাপ্তি। কখন তার মনে হয়নি একদিন ঐ সুন্দর ঠোট দিয়ে বেড়িয়ে আসবে একটা নিষ্ঠুর ঘৃণাজনিত শব্দ ‘বিচ্ছেদ’। কি ঘৃণা কি জঘন্য তার মন। মানুষ থাকে এমন অর্থ লোভী। অর্থের জন্য সংসার ছেড়ে যেতে একটু দ্বিধা করেনি।
কামালের কোন দোষ ছিল না, দোষ ছিল একটাই সে মিতব্যায়ী। সে অন্যায় কে প্রশ্রয় দিত না। পর অর্থে লোভী নয়। সে চায়না আন্যের টাকায় পাহাড় গড়ে তুলুক।
কিন্তু পান্নার চাওয়া ও পাওয়ার একটাই কথা, তুমি কোথায় পাবে জানিনা আমি চাই টাকা। আমি বেহিসেবী ঘুরে বেড়াবো, গাড়ি বাড়ি প্রতিপত্তি প্রাচুর্য্যতা সবই থাকতে হবে আমার। আমি যেন অন্যের নিকট খাটো না হই। আমার সব কিছুই থাকবে অন্যদের চেয়ে উপরে।
কিন্তু না কামাল তার আশা পুরনের জন্য ঘুষের টাকায় পাহাড় গড়তে পরেনি। অবৈধ আয়কে সে প্রশ্রয় দিতে পারেনি। পান্নার চাহিদা অনুযায়ী সে কোন অন্যায় পথে হাত রাখেনি। সে ভালবাসাকে মর্যাদা দিতে গিয়ে তার বিবেক কে জলাঞ্জলী দিতে স্বীকার করেনি। এটা তার বড় অপরাধ। পান্না তাকে তাই মেনে নিতে পারেনি।
এমন নিষ্ঠুর প্রান দিয়ে গড়া পান্নার মন, যে তারই সন্তান শিউলী। সে শিউলীকে তার কাছে গ্রহণ যোগ্য মনে হয়নি। যাওয়ার কালে বলে গেছে, “আই ডোন্ট লাইক ডটার”। তুমি মনে করোনা তোমার সন্তানকে নিয়ে গিয়ে আবার খোরপোশের মামলা করবো। “আই হ্যাভ এ বিগ লাইফ এ্যাহেড। সো আই হ্যাটস ইউ”।
পান্না বিদায় কালে শিউলীকেও চায়নি। সে শিউলীর প্রতি একটা নিষ্ঠুর আচারণ করে গেছে। ভুলে ভরা তার দুঃস্বপ্নের মতো জীবনের একটা অংশকে অনায়সে পেছনে ফেলে গেছে পান্না। কিন্তু না তাতে কামালের অন্তরে কোন দুঃখ নেই। তবে যা আছে তা স্মৃতি বিজড়িত যন্ত্রনা। অথচ তার এ যন্ত্রনাকে মুছে ফেলাও যায় না। পান্না আজ দু’বছর গত হল চলে গেছে। তার কোন ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। কারণ কোন দিন সন্তানের কথাটিও বলতে আসেনি।
এখন আম্মা পড়েছেন শিউলীকে নিয়া বিপদে। তাই তিনি বড়ই অস্থির হয়ে উঠেছেন, ছেলেকে নুতন করে সংসারী করে তোলার জন্য। প্রতি দিনই তিনি নুতন নুতন মেয়ের সন্ধান করছেন। আর রাতে ভাত খাওয়ার সময়ই তা বলে মনের বেদনা নিঃশেষ করছেন। এবার সন্ধান করেছেন বড় খালার বাড়ীর এক মেয়ের। খালার কোন সন্তান নেই। তাই কামালকে খুব স্নেহ করেন। কামালের সংসার ভেঙ্গে যাওয়ায় খালাই যেন বেশী অস্থির হয়ে পরেছেন। তার ভাসুরের মেয়েকে সে মেয়র আদর দিয়ে লালন পালন করছেন। মেয়েটি পান্নার মত স্মার্ট নয়। একেবারে সাদামাটা যাকে বলে পরহেজগারী আদর্শবাদী মেয়ে। সেই মেয়ে দেখে আসার জন্য হাজারবার খবরাখবর করছেন খালা। একবার যেন নিজচোখে দেখে আসি।
আম্মা আজ শিউলীকে বুকে করে মানুষ করছেন। তার মনে অনেক দুঃখ কারণ শিউলী আর কিছুদিন পর তার মাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন করে বসবে। তখন কি জবাব দিবে কামাল? কি জবাব দেবে তার মা?
কামাল অবশ্য হেয়ালী করে তার মাকে বলত, ও ভেবোনা মা, যখন শিউলী জিজ্ঞেস করবে তখন বলব তোমার মা বিদেশে চাকুরী করে, সেইখানে থাকে। তোমাকেও সে পছন্দ করেনা, তোমার কাউকে না এমনকি তোমার বাবাকেও না।
কিন্তু আম্মা বলতো, আরে পাগল সমাজের আর পাঁচজন আছেনা, তারা আসল কথা বলবে না। তখন কি করে চাপা দিবি? ও ভেবোনা মা তখন দেখা যাবে। তথপিও কামাল জানে বিষয়টি সহজ নয়। তাই সে কঠিন ভাবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করে।
সমাজে কি লজ্জা আর গ্লানি না তাকে চাবুক মেরেছে। আম্মাকে চোখে আঁচল চাপা দিতে দেখে কামালের মন মূষড়ে পড়েছে। তাই কি আর করা যায়? ফুলের বাগানে তো আর বিষ ছড়ানো যায় না, বুদ্ধিহীনের মত? শিউলীকে কেমন করে দুঃখ দেয়া যায়? গোলাপ ফুলের মত ওর চোখ নাক মুখ? যেন সদ্য ফোটা একটা ফুল। সেই ফুলের মুখ হতে কামাল আব্বু ডাক শুনে পৃথিবীর সব দুঃখ ভুলে যায়। কিন্তু সেই সঙ্গে বেড়ে যায় তার বুকের গভীরে লুকানো গভীর যন্ত্রনা। পান্নার নিকট থেকে প্রতারিত হবার যন্ত্রনা। আর নির্লজ্জতা কুড়ে কুড়ে খায় তাকে।
অধীর চিন্তায় জানালার গ্রিলে হাত রেখে মোচড়াচ্ছিল কামাল। এক ঝলক বিদ্যুৎ চমকে উঠাতে তার ঘরে দিবালোকে কোথা থেকে ভেসে এলো হাস্না হেনার সুগন্ধ। ক্লান্ত চোখে জ্বালা করছে। কালকে অনেক কাজ আছে। তাই গ্রিল থেকে হাত নামিয়ে নিল কামাল। ধীর পায়ে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল সে। পাশে ছোট খাট খানিতে নিশব্দে ঘুমোচ্ছে এক ফোটা শিউলী ঝড়া ফুল। বাবার দিকে মুখ করে হাত বাড়িয়ে শুইয়ে আছে। যে আব্বা কাছে এলেই গলা জড়িয়ে ধরতে পারে। কামালের এদৃশ্য দেখে আর ধৈর্য্য রাখতে পারলো না। ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল।

(চার)
ঘুম থেকে জেগেই দেখে বেলা হয়েছে। তাড়াতাড়ি উঠে সকালের কাজ সেরে ফেলল। নাস্তার টেবিলে বসে মনে পড়ল আবার বড় খালার চিঠি। বড় খালার চিঠিগুলো কামালকে বড় পীড়া দেয়। কারণ তার চিঠিতে শুধু অভিযোগ আর অভিমান ভরা। তবু অনিচ্ছা সত্বেও চিঠিটা হাত নিতে হল তাকে। নইলে আম্মা দুঃখ পাবেন, যেহেতু চিঠি পড়ে কি বলি তার জন্য সে অধীর আগ্রহে তার দিকে চেয়ে আছে। বড়খালা লিখেছেন ---
তোমরা এখন বড় হয়েছো বাবা। সংসারের সব কিছুই বোঝ। তবে কেন তোমার আম্মার কষ্ঠটা বুঝতে পারছ না। শিউলীর বিষয়টিও তোমার ভাবা উচিৎ। সে তো মায়ের আদর যতœ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কাজেই তার অনুভুতি আসার পূর্বেই তার মায়ের অভাব পুরণ করা উচিৎ। তাই তোমাকে বারবার বলতেছি তুমি একটিবার আমার এখানে আস।
পত্রটি পড়ে কামাল মনে মনে হেসে উঠল। অতএব যেতেই হবে মা। মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল কামাল। গেলে তো খুশী মা? মাহমুদা মৃদু হাসলেন।
- সে তুই আর তোর খালাই ভাল বুঝবি।
- যাই বল আম্মা তোমাদের পাল্লায় পড়লে আর রক্ষে নেই।
- কবে যাবি বাবা বলনা?
- এই কাল পরশু দু’দিন অফিস ছুটি। তাই ভাবছি কালই যাব কি না?
- তাই যা বাবা।
- আম্মা তুমিও চলনা আমার সাথে। এক সঙ্গে খালার বাড়ি থেকে ঘুরে আসি।
- না বাবা তুই একাই যা।
এমন সময় শিউলি বুয়ার সাথে ভিতরে ঢুকলো।
- আব্বু তুমি কোতায় দাবে? আমি দাবো আব্বু আমি দাবো।
কোথায় যাবে আম্মুÑÑ কামাল মেযেকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিতে দিতে বলল।
- তোমার সাথে দাবো আব্বু।
- আমি তো অফিসে যাবো আম্মু। তুমি তোমার দাদীর সাথে বেড়াতে যাবেÑÑ হ্যা আম্মু।
- আচ্ছা।
- ওরে সোনামনি তুমি বেড়াতে যাবে, তোমার আব্বু তো কোলে নিবে না। তুমি আমার সাথে যাবে হা। তোমাকে বাজার থেকে কত কি কিনে দেবো।
দাদীর কথা শুনে শিউলী একটু চুপ করে, তার পর দাদীর কোলে যায় এবং বলে চল দীদা চল, বেড়াতে যাই।
- তোমার আব্বা আগে অফিসে যাক তার পর আমরা বেড়াতে যাবো হা।
- আচ্ছা-। শিউলী চুপ করে ফেলল। শিউলীকে আয়া একটা ফুল হাতে দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে গেল বাহিরের দিকে।
অফিসের কাজ সেরে বিকেলে বাসায় ফিরল কামাল। তারপর মায়ের সাথে দেখা করে সন্ধ্যায় বাসে রওনা হল রংপুরের দিকে। বাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি সরে পড়ল যাতে ছোট সোনামনি শিউলীর চোখে সে না পড়ে। বিদায় নিয়ে আম্মাকে বলে গেল, আম্মা সোনামনিকে দেখ।
অনেক দিন পর কামালের আগমন খালার বাড়িতে। তাই দু’দিনের মাথায় ফিরতে পারলোনা কামাল। অপরদিকে আকাশের অবস্থা ভাল না মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে।
*** অন্যদিকে বড় খালাম্মাা তার ভাসুরের মেয়েকে দিয়ে আমার খেদমত করতে ব্যস্ত। খাওয়া দাওয়া বিছানাপত্র গোছানো। সুন্দর সুন্দর নানা জাতিয় পিঠা খাওয়ানো থেকে সে বঞ্চিত হচ্ছে না। মনে হচ্ছে তারই ভাল কাটছে। কিন্তু ওদিকে চাকুরী অপরদিকে শিউলীর কথা মনে পড়ায় তার মনটা আবার ছটফট করে উঠে।
খালার বাড়িটা গ্রামে হলেও গ্রাম বলা যায় না। কারণ শহর থেকে পাকা রাস্তা এসে দুভাগ হয়ে একটা গেছে সোজা থানার দিকে অপরটি গেছে পূর্ব উত্তর দিকে এক ফার্মের দিকে। আর এই দুই রাস্তার মাঝে রয়েছে রংপুরের সবচেয়ে বড় তামাক গবেষনা খামার ও হর্টিকালচার খামার। দুই খামারের অফিস বাসাবাড়ি পাশেই বিশাল হাট স্কুল কলেজ তার উপর রয়েছে শহরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গড়ে উঠেছে করাত কল, চালের কল, বিভিন্ন ধরনের আসবাব পত্রের দোকান, গ্রীলের দোকান ও আধুনিক স্টাইলে দোকান পাট। দেখতে মন্দ লাগেনা, যেন ছোট আধুনিক উপশহর। শুধু একটা সিনেমা হল বাকী। আর কোন কিছুরই অভাব নেই। খালাদের সেকেলে বাড়ির জমি অনেকছিল, কিন্তু খামারে দখল হয়েছে অনেকটা। শহরের ঘিনজিমারা পরিবেশ থেকে এটার পরিবেশ উন্মুক্ত। তাই এটাকে মডেল শহর বলা চলে। এখানকার শান্ত পরিবেশ খুব ভাল লাগছে। নানী যখন ছিল তখন কামাল আসলেও এতটা ভাল লাগেনি।
মা খালাদের বাল্যকালের সাথীরা খবর পেয়ে কেউ আসছে দেখতে আবার কেউ বাড়িতে যাওয়ার জন্য লোক পাঠিয়ে দিচ্ছে। এমনি করে সময় কেটে যাচ্ছে সে বুঝতেই পারছে না। নান নানীর আদরের নাতি আমি। তারা আমাকে কতই না আদর করত। নানার খাটেই সে শুয়ে ঘুমোচ্ছে। নানীর নকশী কথা গুলো গায়ে দিচ্ছে। নানার পুরনো টেবিল ও টেবিল ল্যাম্প এখনও কাজ করছে। প্রাচীন কালের সুখ দুঃখ মিশ্রিত স্মৃতিগুলো যেন এক ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করছে তাকে। তার স্মৃতিগুলো চোখে ভেসে উঠছে এবং তাকে যেন অবশ্য বিহ্বল করে দিয়েছে। নানা নানীর বাড়ি হলেও খালাম্মাাই পুরোনো স্মৃতিগুলো নিয়ে আগলিয়ে ধরে আছেন গোড়াথেকেই। একসময় সে নিজের মনটাকে স্মৃতির পাতা থেকে ফিরে নেয় এবং ভাবতে থাকে ঢাকা ফিরতে হবে। কারণ অফিসের কাজ পড়ে আছে, অপর দিকে তার ছোট্ট মামনি শিউলী না জানি কেমন করছে। তাই যাত্রার জন্য প্রস্তুত হতে থাকল।
এদিকে বড় খালার প্রস্তুতি দেখে মাথা গরম হয়ে গেল। কারণ তার বড় বোন অর্থাৎ আম্মার জন্য রাজ্যের জিনিষ দিয়ে একটা বিরাট লাগেজ তৈরী করেছে। পাটালী গুড়, কুমড়ো, কালাইয়ের বড়া, আমসত্ত্ব, চিড়া, মুড়ি, নানা জাতীয় ফলের আচার। শত অনুরোধে করেও খালাকে বোঝাতে পারলেম না। খালা মুখটা একটু বিষন্ন করে জবাব দিল, আরে বাবা, বছরে তো একবারো আসতে চাস না, তার মাধ্যে আবার এত আপত্তি কিসের। রমজান গিয়ে বাসে তুলে দিয়ে আসবে। তোর কোন ঝামেলা নেই । তুই শুধু ঢাকায় গিয়ে বাস থেকে একটু দয়া করে নামিয়ে নিবি বাবা।
বিদায় পথে বড় খালা জানতে চাইলেন।
- হ্যারে বাবা, ফারজানাকে কেমন দেখলি?
- দেখলাম ভালই খালা। তা ইয়ে খালা বাসায় গিয়ে আম্মার সাথে আলাপ করি তারপর আপনাকে জানাবো কেমন।
- কথা শুনে খালার মুখখানা ভারী হয়ে গেল। মনে হল সে একটু চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত আশা করেছিল। তাই বলে ফেলল।
- তুই বিয়ে না করলে আমি আর তোদের ওখানে যাচ্ছি না। ফারজানার মতো মেয়ে হয়না। তোর মেয়েকে বুকে করে মানুষ করবে দেখিস। এ ধৈর্য সবার নেই।
- জী আচ্ছা খালা আম্মা এবার তাহলে আসি। পড়ে আম্মা তোমাকে সব জানাবে কেমনÑ।
এক গাদা মাল নিয়ে রমজান তাকে বাসে উঠিয়ে দিল। বাসের সামনে এক মহিলার বাম পাশের সিটটাতেই সে বসল এবং রামজানকে একটু দরদী কথা বলে বিদায় দিল।
রমজান তাকে ভাল সিটে বসিয়ে দিতে পেরে নিজেকে খুব ধন্য মনে করল। বলল ভাইজান আপানার কোন অসুবিধা হবে না। তবে ঢাকায় একটু স্মরণ করে মালামালগুলো বুঝে নিবেন। তা আমি আসি ভাইজান, আল্লাহ হাফেজ। আল্লাহ আপনাকে ছহীছালামতে পৌছেদিক।
বাস চলতে শুরু করল। বৃষ্টির দিন তাই অন্যান্য দিনের মত বাসস্ট্যান্ডে তেমন ভিড় নেই। তেমনি বাসটিতে সিট বিহীন লোকেরও চাপ নেই। নইলে অন্যান্য দিন বাস কন্ট্রাক্টর পাড়লে দু’জন তার মাথার উপর বসাতেও ভুল করেনা। সে হাফ ভাড়ায় হলেও ঢাকার যাত্রী ছাড়তে রাজী নয়। কারণ বাস মালিক তো শুধু সি হিসেবের দাবীদার বাড়তি যাত্রীতো তাদের নিজস্ব রোজগারের পথ মাত্র। তাই এ সুযোগ ছাড়তে রাজী নয় তারা। তবে ব্যাটারা আজ সে সুযোগটি আর পাচ্ছেনা। অতএব যাত্রাপথে আর তেমন গ্যানজাম হবেনা । তাই আরামেই যাওয়া যাবে।

(চলবে)

( আগের পর্ব দেখার জন্য নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন )
উপন্যাস-- আঁধারে শশী (পর্ব-১)
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

NVR (No Visa Required) এর জন্য জেনে রাখা দরকার

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৯
×