somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাকাত ধরার গল্প

২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জেলা শহর থেকে সাত কিলোমিটার দুরে একটি বেলী ব্রীজ। ব্রীজটি রাস্তা থেকে অনেক উঁচু। স্বাভাবিক কারণেই সব গাড়ি এখানে এসে ধীরগতি হয়। আর এই ধীরগতির কারণেই মাঝে মাঝে একদল ডাকাত এখানে ডাকাতি করে থাকে।

ব্রীজের আশেপাশে কোনো বাড়িঘর নেই। পাকা রাস্তাটি জেলা শহর থেকে এসে দক্ষিণে দু’টি থানায় চলে গেছে। রাতে দূর দূরান্ত থেকে বাস, ট্রেনের যাত্রীরা জেলা শহরে নেমে বিভিন্ন যানবাহনে করে এ রাস্তায় বাড়ি চলে যায়। জেলা শহর থেকে দক্ষিণের থানার দুরুত্ব প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার। সারা রাতেই কিছু কিছু সাইকেল, রিক্সা, টেম্পু, মটর সাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন যাতায়াত করে। ডাকাতরা রাতের অন্ধকারে ব্রীজের উত্তর পার্শ্বে কলাগাছ ফেলে এইসব যানবাহনের গতি রোধ করে ছিনতাই করে থাকে।

বেলী ব্রীজের আধ কিলোমিটার দূরেই হাট। হাট ভেঙে গেলে রাত সাড়ে বারোটার দিকে একদল ডাকাত বেলী ব্রীজের নিচে অবস্থান নেয়। ডাকাতদের ব্রীজের নিচে অবস্থান করা অবস্থায় রাত পৌনে একটার দিকে একটি হেড লাইট জ্বালিয়ে সম্ভাবত মটর সাইকেল চলে আসে। কিন্তু ব্রীজের একশ’ গজ দুরে থাকতেই হেডলাইটটি দাঁড়িয়ে যায়। দু’এক সেকেন্ড অপেক্ষা করেই আবার পিছনের দিকে চলে যায়।

মটর সাইকেল চলে যাওয়ায় ডাকাত নেতা খুব আফসোস করে। অনুচ্চ স্বরে বলে, শালার প্রথম শিকার হাত ছাড়া হয়ে গেল। অন্য ডাকাতরাও আফসোস করে বলে, আহ! এই কাজটা করতে পারলেই মনে হয় মোটা অঙ্ক পাওয়া যেত।

সবাই আবার পরবর্তী শিকারের অপেক্ষায় বসে থাকে। প্রায় এক ঘন্টা পরে শহরের দিক থেকে একটা রিক্সা চলে আসে। রিক্সা আসতে দেখে সবাই রিক্সা ধরার জন্য তৈরী হয়ে যায়। যাত্রী সম্ভাবত দুইজন। মাঝে মাঝে বিড়ির আগুন দেখা যায়। মনে হচ্ছে যাত্রীরা বিড়ি খেতে খেতে আসছে। রিক্সাটি খুব জোরে নয় আস্তে আস্তে আসছে। রিক্সা যাত্রীরা পরস্পর কথা বলছে। নিশুতি রাত। যাত্রীরা আস্তে আস্তে কথা বললেও স্পষ্ট না হলেও অস্পষ্ট শোনা যায়। এক পর্যায়ে রিক্সা ব্রীজের উত্তর পার্শ্বে কলাগাছের কাছে এসে থেমে যায়। থেমে যাওয়ার সাথে সাথে ডাকাত নেতা “হল্ট” বলে চিৎকার দিয়ে দলবল নিয়ে ঘিরে ধরে। প্রথমেই রিক্সওয়ালাকে লাঠি দিয়ে মাথায় একটা আঘাত করে। লাঠির আঘাত খেয়েই রিক্সাওয়ালা “ওরে বাবারে - - ওরে বাবারে - - ” বলে রিক্সা ছেড়ে সামনের দিকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। রিক্সাওয়ালা পালালেও রিক্সা যাত্রী দুইজনের একজনও পালানোর সুযোগ পায় না। দু’পাশ থেকে দুইজন সার্টের কলার ধরে ফেলে। যাত্রী দুইজন হাত জোর করে অনুরোধ করতে থাকে, ভাই সব নিয়ে যান, আমাদের মারবেন না। তাদের পকেট হাতিয়ে টাকা পয়সা যা ছিল সব বের করে নেয়। পায়ের কাছে রাখা দু’টা ব্যাগ ছিল সেটাও দু’জনে নিয়ে নিয়েছে। একজনের প্যান্টের পিছনের পকেটে হাত দেয়ার চেষ্টা করলে যাত্রী খুব কাকুতি মিনতি শুরু করে দেয়, ভাই, আমার টাকাগুলা নিবেন না ভাই, তাহলে আমার বাচ্চা কাচ্চা না খেয়ে থাকবে ভাই, আপনাদের দু’টা পায় ধরি ভাই, আমার টাকা কয়টা নিবেন না ভাই। যাত্রীর এহেন কাকুতি মিনতিতেও ডাকাতদের হৃদয়ে কোনো প্রকার দয়ার উদ্রেক হয় না। ডাকাত তো ডাকাত! তাদের হৃদয়ে আবার দয়ার ভাব থাকে নাকি? ডাকাত নেতা জোর করেই তার পকেটে হাত দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু যাত্রী হাত দিয়ে পকেট চেপে ধরে থাকায় ব্যর্থ হয়। যাত্রীর কাকুতি মিনতি এবং পকেটে হাত দিতে না দেয়ায় ডাকাত নেতা ক্ষেপে গিয়ে ঠাস করে গালে চর মেরে বসে। ডাকাতের চর খেয়ে যাত্রীটি ওরে বাবারে ওরে বাবারে বলে জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে। চিৎকার দেয়ার সাথে সাথে রাস্তার পূর্ব এবং পশ্চিম পাশ থেকে একাধিক কন্ঠে কারা যেন “হ্যান্ডসআপ” বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে। হ্যান্ডসআপ বলে চিৎকার দেয়ার পর পরই তাদের মাত্র একশ গজ দুরে গাড়ীর দু’টি হেড লাইট জ্বলে উঠে। একই সাথে পূর্ব পশ্চিম ও উত্তর দক্ষিণ দিক থেকেও টর্চ লাইট জ্বলে উঠে। রিক্সার কাছে দাঁড়ানো ডাকতটি কিছু বুঝে উঠার আগেই চর খাওয়া যাত্রী ধ্র“ম করে তার নাক বরাবর প্রচন্ড ঘুষি মেরে দেয়। ঘুষি খেয়ে ডাকাত রাস্তায় চিৎ হয়ে পরে যায়। তাল সামলিয়ে উঠে দৌড় দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু দৌড়ানোর আগেই যাত্রীটি রিক্সা থেকে লাফ দিয়ে নেমে দু’হাত দিয়ে জাপটে ধরে।

পাশের যাত্রীটিও একজনকে লাত্থি মেরে ফেলে দিয়ে বুট জুতা দিয়ে ঘাড় চেপে ধরে। অবস্থা বেগতিক দেখে বাকী পাঁচজন ছুরি চাকু ফেলে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। তাদের পিছনে পিছনে কয়েকজন ধর ধর বলে সম্মিলিতভাবে চিৎকার করতে করতে ধরার জন্য দৌড়াতে থাকে। অনেকগুলো লোকের ধর ধর চিৎকারে আশেপাশের গ্রাম জেগে উঠে। তারাও লাঠিসোটা আলো নিয়ে ধর ধর বলে এগিয়ে আসে। তাদের হাত থেকে দুইজন পালানোর সুযোগ পেলেও গ্রামের লোকজনের হাতে ধরা পরে। গ্রামের অনেক লোকই এই ব্রীজের উপর ডাকাতের কবলে পরে সর্বস্ব খুইয়েছে। তাদের দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ ডাকাতদের উপর। ডাকাত ধরতে পেরে লাঠি পেটা করে ক্ষোভ মিটাতে থাকে। ডাকাতদের পিটাতে পিটাতে গাড়ির কাছে নিয়ে এসে দেখে এটা কোনো পাবলিক গাড়ি নয়, এটা পুলিশের গাড়ি। গ্রামবাসিদের হাতে ধরা পড়া ডাকাতদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করলে পুলিশ তাদের পিট মোড়া করে বেঁধে ইচ্ছামতো পিটাতে থাকে। অবেশেষে ব্রীজের আধ মাইল উত্তরে পাকা রাস্তা সংলগ্ন স্কুলের মাঠে নিয়ে আধামরা অবস্থায় আমগাছের সাথে বেঁধে রাখে। সাতজনের মধ্যে দুইজনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। গ্রামবাসি ধরে তাদেরকে এমন মার দিয়েছে, হাত পায়ের হাড্ডি ভেঙে গুড়ো গুড়ো করেছে। ঘুষি খেয়ে দলনেতার সামনের দুটি দাঁত ভেঙ্গে গেছে। লাথি খেয়ে পাকা রাস্তায় পরে আরেক ডাকাতের নাক থেতলে গেছে। সবাই ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। তাদের মরানাপন্ন কাতরানো দেখেও উপস্থিত লোকজন কেউ তাদের জন্য কোন প্রকার সহানুভুতি দেখাচ্ছে না।

একটি হেড লাইট জ্বালিয়ে প্রথমে যে মটরসাইকেল এসেছিল সেটি মটরসাইকেল নয় এটি পুলিশের এসপি সাহেবের গাড়ি। চলতি অবস্থায় একটি হেডলাইট নষ্ট হয়ে যায়। জরুরী প্রয়োজনে একটি হেড লাইট জ্বালিয়েই দক্ষিণের থানায় যাচ্ছিল। ব্রীজের একশ’ গজ দূরে থাকতেই রাস্তার উপরে কলাগাছ পড়ে থাকতে দেখে ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দেয়। ভাল রাস্তার মাঝখানে আড়াআড়ি ভাবে কলাগাছ থাকায় ডাকাত সন্দেহ করে গাড়ি পিছন দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। প্রায় আধা মাইল পিছনে স্কুলের কাছে গিয়ে থানায় ওয়ারলেস করে অতিরিক্ত আরেক গাড়ি পুলিশ নিয়ে আসে। তাদের দু’জন পুলিশকে যাত্রী বানিয়ে রিক্সা দিয়ে আগে আগে পাঠিয়ে দেয়। অস্ত্রসহ কিছু পুলিশ রিক্সা অনুসরণ করে পিছনে পিছনে চলে আসে। গাড়ির হেড লাইট বন্ধ করে এসপি সাহেব নিজেও গাড়ি নিয়ে আস্তে আস্তে অন্ধকারে চলে আসে। রিক্সার যাত্রীধারী ঐ পুলিশদের কাছে তেমন কোনো টাকা পয়সা ছিল না। টাকা পয়সার নামে ডাকাতদের সাথে অভিনয় করে কালক্ষেপণ করতে ছিল, যাতে পুলিশের দল পায়ে হেঁটে গোপনে গোপনে তাদের কাছে চলে আসতে পারে। পুলিশ অনুমান কাছাকাছি আসতেই রফিকের চর খেয়ে এসপি সাহেবের শিখানো সংকেত অনুযায়ী ‘ওরে বাবারে, ওরে বাবারে’ বলে চিৎকার দিয়ে উঠে। পুলিশের সাঙ্কেতিক চিৎকারের সাথে সাথেই পুলিশ এ্যাকশনে যায়। এতেই ডাকাত দল ধরা পরে।

সাতজন ডাকাতকে হাত কড়া লাগিয়ে পিছ মোড়া করে গাছের সাথে বেঁধে গ্রামের চৌকিদার দফাদারসহ কয়েকজন পুলিশকে পাহারায় রেখে এসপি সাহেব বাকি পুলিশদের নিয়ে দক্ষিণের থানায় চলে যায়।

সকাল বেলা পুরো এলাকা ডাকাত ধরার খবর ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার লোক ডাকাত দেখার জন্য ছুটে আসে। ডাকাত দলের চেহারা দেখে অনেকেই তাড়াতাড়ি সটকে পরে। কারণ এই ডাকাতরা অনেকেরই পরিচিত। খুব দুরের নয়, পাশের গ্রামেই বসবাস করে।
০০০ সমাপ্ত ০০০
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:১৮
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×