somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় শহর সিলেট এবং ভালোবাসার মুহিত স্যার

১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার প্রথম সিলেট ভ্রমণ ৯৮ সালে, কোনও এক বিশেষ ধর্মীয় ঘটনায় মা নির্দেশ দিলেন সিলেট যাও, আমি বললাম যেতে পারি এক শর্তে আমাকে একা যেতে দিতে হবে। অনেক গাইগুই হলো পরে মা রাজি হলেন। ট্রেন এ করে গেলাম, ইচ্ছা মত সিলেট শহর ঘুরলাম এবং নগরটির প্রেমে পরে গেলাম। এরপর অসংখ্য বার সিলেট গিয়েছি, প্রতিবার মুগ্ধ হয়েছি, সিলেটের বেশ কিছু মানুষের সাথে পরিচয়ও হয়েছে, মুগ্ধতা নগর ছাড়িয়ে মানবে পৌঁছাতেও সময় লাগেনি।

যে মানুষগুলোর কথা বলছি তাদের ভেতর একজনের গল্প বলি আবুল মাল আব্দুল মুহিত আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয়। ওনার সাথে সম্পর্ক কিভাবে তৈরী হলো আমার, তা বলার আগে এই মানুষটা সম্পর্কে কয়েকটা তথ্য দেই- নাইট ফজলে খান আবেদ সাহেবের ব্র্যাক, নো॰পি॰প্রা॰ঔ ড॰ মুহম্মদ ইউনুস সাহেবের এর গ্রামীণ ব্যাঙ্ক, আবদুল্লাহ আবু সাঈদ সাহেবের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সহ আরো অনেক প্রকল্পের সহায়, ব্যবসালগ্নের উদ্যোক্তা আমাদের এই মুহিত সাহেব ।বাংলাদেশ এর পরিবেশ আন্দোলন এর পথিকৃতও তিনি।

পরবর্তী প্রজন্মকে দিক নির্দেশনা দেওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জন প্রশাসন, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ প্রায় ২২ টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। ১৯৭১ এর সময়টায় ওয়াশিংটন পাকিস্তান দূতাবাসের পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করা প্রথম কূটনৈতিক ছিলেন তিনি। কেনেডি সহ বেশ কজন সিনেটর ও আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সহ পুরো বিশ্বে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরী করায় একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি।

এবার আসি আমার সাথে পরিচয় এর সূত্রপাত, আমি আর আমার সহধর্মীনী ওনার কাছে যাই ন্যাশন্যাল এণ্ট্রেপ্রেনর সামিট করবো বলে (কোনও পূর্ব পরিচয় ছাড়া)। ইচ্ছা ছিলো শুধু একটা বাণী নেবো, এরপর উনি যা করলেন তা ছিলো আমাদের কল্পনার বাইরে। উনি পুরো প্রজেক্ট বুঝলেন খুটিয়ে খুটিয়ে। তারপর পুরা প্রোগ্রামটা নেতৃত্য দিলেন। বাংলাদেশ ইতিহাসে এণ্ট্রেপ্রেনরদের নিয়ে প্রথম সফল প্রোগ্রাম হলো ওনার নেতৃত্যে। আমি হতভম্ব, স্তম্ভিত যে এত ব্যস্ত একজন মানুষ আমাদের মত ক্ষুদ্র একটা গ্রুপকে এভাবে সময় দিলেন, এত ঝামেলার মাঝে দিকনির্দেশনা দিলেন। সমস্ত বিপদে বুকে আগলে রাখলেন নিজের সন্তানের মত করে। যেই ৪২,০০০+ এণ্ট্রেপ্রেনর ওই অনুষ্ঠানের সাথে ছিলেন তাদের সবার তরফ থেকে কৃতজ্ঞতা আপনাকে পৌছে দিচ্ছি।
ও ওনার শিক্ষাগত এবং কর্মজীবন সম্পর্কে আলোকপাত করিনি, উনি ১৯৫১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে তত্কালীন সারা প্রদেশ থেকে আইএ পরীক্ষায় প্রথম হন, ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন, পরবর্তীতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রী লাভ করেন।
১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস এ যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্যে ছিলেন, এখানে উলেক্ষ্য যে পশ্চিম পাকিস্তানীরা আমাদের উপর যে অর্থনৈতিক শোষণ চালায় তা ১৯৬৬ সালে জনসমক্ষে চলে আসে ওনার তৈরি করা সরকারি একটি প্রতিবেদন যা জাতীয় সংসদে পেশ হয়। তিনি আমাদের দেশের প্রথম প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্ব ব্যাংক এ একাত্তরে নির্বাহী পরিচালক এবং এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক এ একমাত্র নির্বাহী পরিচালক ছিলেন।
এছাড়াও তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের পরিকল্পনা সচিব এবং ইআরডি এর সচিব ছিলেন। তিনি অর্থমন্ত্রী হিসাবে দুবার দ্বায়িত্ব পালন করেছেন (এর মাঝে একবার অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ছিলেন)। এরই মাঝে (১৯৫৬ থেকে ২০১১ এর বিভিন্ন সময়) ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ও সমীক্ষায় পরামর্শক ছিলেন।
আমার এই বিশদ রচনার উদ্দেশ্য আমি আর অল্প কিছু কথায় শেষ করছি, এই মানুষটি জন প্রশাসন এবং জন প্রতিনিধি হিসাবে জীবনের প্রায় ৫৭ বছর দিয়েছেন আমাদের এই প্রিয় দেশটিকে, এখনো দিয়েই চলেছেন। রেখে যাচ্ছেন আমাদের মত কিছু তরুণ তরুণীকে, যারা দেশের উপর, রাজনীতির উপর ভরসা হারিয়ে ফেলেছিলাম। এখন নতুন উদ্দ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েছি এই দেশ নিয়ে। যখন আমরা ধরেই নিয়েছিলাম পরশক্তির দেশগুলো থেকে যে কেউ এসে আমাদের দেশ নিয়ে যা খুশি তাই বলতে পারে, এই মানুষটি তার মুখের উপর রাবিশ বলে জানিয়েছেন না এখন সময় এসেছে মাথা উচু করে দাঁড়াবার । যখন কানাডার কোম্পানীর দোষে, প্রমাণ ছাড়া আমাদের দুর্নীতিগ্রস্থ বললে তার জবাব দেবার মত নেতা আমাদের আছে, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টররা ৩৫% সুদে ৪ কোটি মানুষকে ঋণের ফাঁদে ফেলার ফন্দি আটে নোবেল বিজয়ীকে সাথে নিয়ে, তখন রুখে দাঁড়াবার শক্তি আমাদের আছে। এই যুদ্ধ ক্লান্ত বৃদ্ধ প্রস্তুতি নিচ্ছেন জীবনের শেষ যুদ্ধের-“নির্বাচনের”। মহাভারতের সেই বৃদ্ধ বীর ভীষ্মের কথা কেন জানি মনে পড়ছে আজ বার বার, পেছন হতে যাকে সহস্র তীর বিদ্ধ করেছিল, শত্রুরা হতবাক হয়ে দেখেছিলো সেই তীরগুলো তার পবিত্র শরীর মাটি স্পর্শ করতে দেই নি, ইতিহাসের এক মহান যোদ্ধার জন্য প্রথমবারের তৈরি হয়েছিল তীরের বিছানা। শত্রুরা নত মস্তকে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলো যুদ্ধ শেষে।
আজ তার সম্পর্কে জড়িয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক মিথ্যা সংবাদ দেখতে পাই, সামনের নির্বাচনে ফলাফল কী হবে আমি জানি না। শুধু এটুকু জানি স্যার আপনার শরীর ভেদ করে যে তীর বিদ্ধ হচ্ছে, যারা করছে তারাই একদিন নতমস্তকে আপনাকে শ্রদ্ধা জানাবে। আমি আজকে আর আওয়ামিলীগ বা বিএনপি বুঝি না, আমি শুধু আমার প্রিয় নগরীর প্রিয় মানুষগুলোকে বলছি আমার স্যার যেনো শেষ যুদ্ধে পরাজিত না হন। যদি উনি শেষ যুদ্ধে পরাজিত হন, আমি আমার প্রিয় নগরীতে আর কোনও দিন যাব না (এই অভাজনের যাওয়া আসায় আপনাদের কিছু যাবে আসবে না জানি)। দূর থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলবো এই নগরী ৫৭ বছরের সেবার মূল্য দিতে পারে না।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×