বাড়িতে অতিথি আসার আগে বাড়িঘর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে যতোটা সম্ভব ঝকঝকে তকতকে করে রাখা আমাদের বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতিরই অঙ্গ। এটাতে দোষের কিছু নেই বরং মেহমানের প্রতি এটা এক ধরনের সৌজন্য প্রকাশেরই পরিচায়ক। সে অর্থে, আন্তর্জাতিক অতিথিদের আগমন উপলক্ষে শহরটাকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করার সরকারি উদ্যোগে আমাদের সবারই খুশি হওয়ার কথা।
কিন্তু গোল বেঁধেছে অন্যত্র। অতিথির সামনে নিজের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার প্রয়োজনে নিজেরই গরিব সন্তানকে বাড়ির আঙিনা থেকে জোর করে উচ্ছেদ করার ভেতর কোনো গৌরব থাকতে পারে না। অথচ বাংলাদেশ সরকার তা-ই করে চলেছে। বেশ কিছুদিন ধরে শহরের গরিব ফেরিওয়ালা ও নিঃস্ব ভিখিরিদের জোর করে শহরের নানান স্থান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। এদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা চলার সময়কাল এইসব গরিব ফেরিওয়ালা ও অসহায় ভিক্ষুকদের আহার ও বাসস্থানের কোনো সুস্থ ইতিবাচক বিকল্পের ব্যবস্থা না করেই। আমরা এই সরকারি আচরণকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অগণতান্ত্রিক কাজ মনে করি এবং এই অগণতান্ত্রিকতা ও দায়িত্বহীনতার নিন্দা জানাই।
এই নির্মানবিক উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার আগে সরকারের ভাবা উচিত ছিল, বাংলাদেশের সব নাগরিকেরই বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আনন্দ সমানভাবে উপভোগ করার অধিকার আছে। সবচেয়ে বড় কথা, এই হাজার হাজার গরিব ফেরিওয়ালা ও অসহায় ভিক্ষুকের চরম দারিদ্র্য দশার জন্য যতটা না এই গরিব মানুষ দায়ী, তারচেয়ে অনেক বেশি দায়ী এই দেশের শাসকশ্রেণীর নানান সরকার প্রণীত ও বাস্তবায়িত শোষণ-নিপীড়নমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিত্তবানকে আরো বিত্ত যোগায়, আর দরিদ্রকে ঠেলে দেয় অপরিসীম দারিদ্র্যের অন্ধকার গহ্বরে। শাসকশ্রেণীর জন্যই এটা লজ্জাজনক। আর সেই লজ্জাকে বিদেশী অতিথিদের সামনে থেকে লুকিয়ে রাখার জন্য দরিদ্র মানুষকে শহর থেকে জোর করে তাড়িয়ে দেওয়াটা এক জঘন্য অপরাধ ছাড়া কিছু নয়। কেননা, এদেশের সম্পন্ন মানুষ যখন ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপভোগে ব্যস্ত থাকবে, তখন জীবিকা থেকে উচ্ছেদকৃত এই দরিদ্র জনগোষ্ঠী উপোষ করবে। এটা খেলাধুলার অন্তর্গত সার্বজনীন আনন্দ বিতরণের চেতনারও পরিপন্থী। আমরা এ সরকারি তৎপরতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন করছি।
লেখক: নূরুল কবীর
সূত্র/সংগ্রহ: সাপ্তাহিক বুধবার
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১:৩৫