somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খেলা, রাজনীতি, দেশপ্রেম এবং একজন মফিজ!!!

২৫ শে মার্চ, ২০১১ রাত ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মফিজের ঘুম ভেঙে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সময় অনেক নস্ট হয়ে গেল, মাঠে যাবার সময় হয়ে এলো অথচ আসল কাজটাই করা হয় নি। হুড়মুড় করে উঠে জামাকাপড় পরতে লাগলো মফিজ। মফিজ পাকিস্তানের চরম ভক্ত, আফ্রিদির ব্যাটিং, শোয়েবের বোলিং কোন সময়েই সে মিস করে না। মিরপুরে কোয়ার্টার ফাইনালে পাকিস্তান খেলবে এটা জানার পর মফিজকে রোখে কার সাধ্য। আজ গ্যালারিতে ঝড় তুলবে মফিজ। "**** পোলা সোহাগ", গাল পাড়ে মফিজ, "গালে পতাকা আঁইকা আর ফালাফালি কইরা পত্রিকায় ছবি উঠাইয়া ভাব লও না, আইজকা আমিও দেখাইয়া দিতাছি খাড়া"। মুখে সাদা সবুজ রংগে আঁকা পাকি পতাকা সহ মফিজ মিয়ার ফটুক সবাই দেখবে এটা চিন্তা করে মফিজের মুখে আনন্দের এক চিলতে হাসির রেখা ফুটে ওঠে।

খেলা শেষে মফিজ বাড়ি ফিরছে, মনে তার ‌ব্যাপক আনন্দ, পাকিস্তান জিতে গেছে সেইসাথে তার পাকি সঙমার্কা ফালাফালিও হিট। টিভি ক্যামেরা, স্টিল পিকচার সব মিডিয়াতেই যে তাকে দেখিয়েছে এ ব্যাপারে সে নিঃসন্দেহ। ফ্ল্যাটের গেট দিয়ে ঢুকছে মফিজ, এমন সময়ে রাশভারী কন্ঠে আওয়াজ আসে, "এই ছেলে দাঁড়াও"। ইদ্রিস সাহেবের কন্ঠ শুনে আক্ষরিক অর্থেই জমে যায় মফিজ। ইদ্রিস সাহেব তাদের দুই ফ্ল্যাট উপরেই থাকেন, মেজাজী লোক, পত্রিকায় কলাম টলামও নাকি লেখেন। মফিজ ওনারে ভালই ভয় খায়। "আজকে কপালে না জানি কি আছে?" বিড়বিড় করে মফিজ। গোমড়া মুখে এগিয়ে আসেন ইদ্রিস সাহেব, তীব্র দৃস্টিতে মফিজের দিকে তাকিয়ে ফেটে পড়েন, "কেমন মানুষ তুমি? একজন বাঙ্গালী হয়ে কিভাবে পাকিস্তান দলটারে সাপোর্ট করতে পারলে? আমাদের উপর হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, লুটপাট কি জুলুম করে নি এরা একাত্তরে। আর তুমি সেই পতাকা মুখে মেখে মাঠে যাও, কতবড় নির্লজ্জ তুমি। তোমার মত মানুষেরা পাকি জারজ সন্তান.......ইত্যাদি ইত্যাদি।" সবশুনে মফিজের কান্না চলে আসার দশা, "তাই তো, কি করে সে পারল এমন কাজ করতে?" এমন বেজন্মা বদমাইশের মত কাজ করেছে ভেবে কান্নাটা আরো দলা পাকিয়ে উঠছিলো।

চেঁচামেচি শুনে এগিয়ে আসেন সোহরাব সাহেব। ইনি একাধারে ফ্ল্যাট সমিতির সভাপতি, বড় কর্পোরেট হাউজের বড় কর্মকর্তা এবং বলা বাহুল্য বেশ প্রভাবশালী। ইদ্রিস সাহেবের সংগে তাঁর খিটিমিটিও বহুল চর্চিত। তো সোহরাব সাহেব কাছে এসে সব শুনে বিজ্ঞের মত মাথা নেড়ে বল্লেন, "আসলে আমরা সবকিছুতেই রাজনীতি টেনে আনি এটা আমাদের একটা সমস্যা। খেলা কে খেলা হিসেবেই দেখা উচিত। স্পোর্টিং স্পিরিট থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ। মার্চ মাসে পতাকা না আঁকলেই ভাল হতো; তবে কিছু মানুষ সব কিছুতেই উগ্র বিদ্বেষ ছড়ায়, পুরনো অভ্যাস তো আর ছাড়তে পারে না।" মফিজ একটু আশ্বস্ত হয়, "আরে তাইতো এটাইত আসল ব্যাপার, 'স্পোর্টিং স্পিরিট' না থাকলে হয় নাকি। তাহলে মনে হয় কাজটা খারাপ করি নি।" কিন্তু এদিকে খোঁচাটা খেয়ে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন ইদ্রিস সাহেব, "পুরনো অভ্যাস কার কি, সেটা ভালই জানি বুঝলেন। পাকিস্তানের প্রতি এতো টান কোত্থেকে আসে আপনার, দেশপ্রেম বলে কি কিছু আছে আপনার মধ্যে। নাকি পাকিস্তানি বাহিনীর চামচামি করার বাপদাদার অভ্যাস এখনো যায়নি।" মফিজের মাথা আবারো ঘুলিয়ে যায়, "হায় হায়, দেশপ্রেম কি তবে আমার মধ্যে নাই। আমার বাপদাদারাও কি তবে সব দালাল ছিলো?"। এদিকে এবার ক্ষেপার পালা সোহরাব সাহেবের। "আমার দেশপ্রেম নিয়ে কথা তোলার আপনি কে? বাংলাদেশকে নিজের মায়ের মতই মনে করি বুঝলেন সে জন্যই পয়লা সাপোর্ট দেশকেই দিই। এরপরে পাকিস্তানরে সেকেন্ড সাপোর্ট করলে আপনাদের মত আম্বাগো গা জ্বলে কেন? আর আপনার এত বড় সাহস আমার বাপদাদা নিয়ে কথা বলেন। আপনেরা তো আবার মানুষের জন্মপরিচয় ঠিক করার ঠিকা নিছেন। যত্তসব আবাল কোনহানকার।" মফিজ ভাবে, " আরে আমিও তো বাংলাদেশরে পয়লা সাপোর্ট করি, তাইলে তো আমার দেশপ্রেম ঠিকই আছে। শুধু শুধু মানুষরে এমন হেনস্থা করার মানে হয়?" কিন্তু মফিজের ভাবনায় ছেদ পড়ে ইদ্রিস সাহেবের হুংকারে, বিপুল বিক্রমে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সোহরাব সাহেবের উপর। মুহূর্তেই হুলুস্থুল পড়ে গেল। দুই সন্মানিত মানুষের লড়াই দেখতে অগণিত মানুষ জড়ো হয়। কিন্তু সবাইকে নিরাশ করে তাঁদের আলাদা করা হলো। যদিও ব্যাপারটা ওনারা সেখানেই শেষ করবেন বলে মনে হচ্ছিল না। তাঁদের একে অপরকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় আদর আপ্যায়ন করার এবং একে অপরের মায়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্হাপন বিষয়ক প্রতিজ্ঞা পুনর্ব্যক্ত করাটা এমন ঈঙ্গিতই দিচ্ছিলো । এই হুল্লোড়ের মধ্যে মফিজ যে কখন কেটে পড়েছে সেটা কেউ খেয়াল করেনি। এ ঘটনায় মফিজের ভূমিকা কি সেটাও অবশ্য কেউ জানতে পারে নি।

বেশ কিছুক্ষণ পরে মফিজ আস্তে আস্তে নিজের ঘরে ঢোকে। ঘটনা এখন যেদিকে গড়িয়েছে তাতে এ কয়দিন সবাই সে আলাপেই ব্যস্ত থাকবে মনে হচ্ছে। "পাগল-ছাগল", নিজ মনেই গাল পাড়ে মফিজ। কি গ্যান্জামেই না ফেলেছিলো তাকে। যাক বাবা ফাঁড়া কেটে গেছে আর অনেক ঘুমেও ধরেছে তাকে। মফিজ আবারো সব কিছু ভুলে নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর জন্য রেডি হয়।
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×