বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ছাত্র সংগঠন অন্যান্য দলের ছাত্রদের পেটাবে, দমন-নিপীড়ণ চালাবে এই ধারণা মনে হয় পুরনো হয়ে গেছে। এখন যা দেখা যাচ্ছে, দল ক্ষমতায় আসা মাত্র ময়দান ফাঁকা করে বিরোধী সংগঠনগুলো ভেগে যায়, আর বিনা বাধায় দোর্দন্ড প্রতাপে রাজত্ব চালানোর ছাড়পত্র পেয়ে যায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্ররা। যেমনটা এখন করছে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের প্রশ্নহীন আধিপত্যের সুশীতল ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠবে নতুন নেতৃত্ব, জাতির ভবিষ্যত কান্ডারিরা। শিক্ষাঙ্গনগুলো জুড়ে বইবে শান্তির সুনিবিড় বাতাবরন; আহা, কি আনন্দ আজ আকাশে বাতাসে। কিন্তু একি? এই সুখের রাজত্বে কেন ভূতের দল হানা দিচ্ছে বারবার? কোন মামদো ভূতের আছরে ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের 'গঠনমূলক' কাজের ঠেলায় পড়ে নিজেদেরই হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। একি কোন কালা জাদু, নয়া কিসিমের ষড়যন্ত্র, নাকি জলাতংক আক্রান্ত পাগলা কুকুরের অবিরাম কামড়াকামড়ি। কুচিন্তায় ভারাক্রান্ত আমার মন কেন জানি শেষটাতেই বারবার সায় দিয়ে যাচ্ছে। B:-)
গত কয়দিনে এনাদের পাগল হয়ে যাওয়ার কিছু নমুনা আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রথমে শুরু হয়েছিলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে হানাহানি, তারপর দেখলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের রাতভর ব্যাপক কোপাকুপি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ই বা আর বাকি থাকবে কেন? সেখানেও লাগলো সংঘর্ষ এবং ছাত্রশিবিরের রেকর্ডে ভাগ বসিয়ে রগ কাটাও দেখা হল। এরপর আবার দেখলাম বুয়েটে নিজেরা মারামারি করে একজন নতুন আসা ছাত্রকে তিনতলা থেকে নিক্ষেপ (অবশ্য অনেকে বলছে সে নিজেই লাফ দিয়েছে, কিন্তু তাতে ঘটনার ভয়াবহতার মাত্রা কি খুব একটা কমে?), এরপর আবার চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের মারামরি। এ এক অন্তবিহীন পাঁচালি রে ভাই! বরিশাল পলিটেকনিকের ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের একে অপরকে কোপানোর দৃশ্য মিডিয়ায় এসেছিলো, ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের দুপক্ষের রক্তক্ষয়ী মারামারিও মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন তোলে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু আমাদের সোনার ছেলেদের তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। মনুষ্যত্ব না থাকলে অবশ্য এসব চক্ষুলজ্জাটজ্জার ধার না ধারলেও চলে।
কিন্তু এভাবে আর কতদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? নোংরা ছাত্ররাজনীতির শিকার হয়ে জানমাল খোয়ানোটাই কি এখন আমাদের মত সাধারন মানুষের ছেলেদের নিয়তি? বেশি দিন হয়নি আবু বকর মরেছিলো নিজের হলে বসে। তাঁর মত মেধাবীর রেখে যাওয়া শূন্যস্থান ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের পীড়া দেয় কিনা জানি না, তবে আমাদের কিন্তু মর্মপীড়া দেয়। কেননা তাঁর দিনমজুর পিতার পরিবারের মানুষগুলোর কান্না অহর্নিশ আমাদের চোখে ভাসে। আপনি অবশ্য গোস্বা করে বলেছিলেন এমন রক্তারক্তি অব্যাহত থাকলে আপনি ছাত্রলীগের সাথে আপনার সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। কিন্তু আপনার সোনার ছেলেদের এইসব কাজকারবার আপনার ধমকিকে রীতিমত প্রহসনে পরিণত করেছে। এখনও ছাত্ররা মার খাচ্ছে, মাথা ফাটছে, রগ কাটা পড়ছে কেউ কেউ পরলোকে পৌঁছে যাচ্ছে আর ঘোর আঁধারে ঢেকে যাচ্ছে দেশ ও জাতির ভবিষ্যত। তাই আমাদের রাস্ট্রের কর্ণধার হিসেবে আপনার কাছে আবারো আকুল আবেদন জানাই, ছাত্রলীগ নামের এই পাগলা কুকুরদের আটকানোর পন্থা কি দয়া করে ভেবে দেখবেন? নিদেনপক্ষে একটা চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা গেলেও আমরা হয়তো শিক্ষাঙ্গনগুলোতে সুস্থ পরিবেশ ফিরে পেতাম। দেশের একজন অতি সাধারণ নাগরিক হিসেবে এই আর্জিটুকু আপনার বিবেচনার জন্য পেশ করলাম। ধন্যবাদ

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




