somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে সোহওয়ার্দী উদ্যান

০২ রা মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে সোহওয়ার্দী উদ্যান

নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী পার্ক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এখানে প্রতিনিয়ত অবাধে চলছে মাদকের জমজমাট ব্যবসা ও ছিনতাই-চুরির মতো অপরাধ কার্যক্রম। শাহবাগ থানার মামলার রেকর্ড অনুযায়ী, এই উদ্যানে ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মাদক সংক্রান্ত ১৮টি এবং ছিনতাই-চুরি সংক্রান্ত ৩টি মামলা হয়েছে।

শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম এবং উদ্যানের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন পাবলিক ওয়ার্কস ডিভিশন (পিডব্লিউডি)-এর প্রধান সহকারী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা উদ্যানটিতে অপরাধ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, উদ্যানের প্রায় সব স্থানেই অবাধে চলে মাদক ব্যবসা ও মাদক গ্রহণ । তবে বিশেষ করে টিএসসি সংলগ্ন গেটের পাশে, চারুকলা ইনস্টিটিউটের বিপরীত পাশে, শিখা অনির্বাণ সংলগ্ন এলাকা এবং রমনা কালী মন্দিরের পাশে এই মাদক সংক্রান্ত অপরাধ কার্যক্রম প্রায় প্রতিদিনই সংঘটিত হচ্ছে। এছাড়া রাতে কালী মন্দিরের পূর্ব পাশে এবং তিন নেতার মাজারের সামনে উন্মুক্তভাবে চলে পতিতাবৃত্তি। উদ্যান কর্তৃপক্ষের সিনিয়র কর্মচারী মো. খোকন অভিযোগ করেন, ‘পুলিশের সহযোগিতায় এসব অপরাধ কার্যক্রম ঘটছে। পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়। এমনকি তারা পতিতাদের সাথে অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত হয়।’ এমন কয়েকজন পুলিশকে হাতেনাতে ধরে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করেছেন বলেও তিনি জানান।

উদ্যানের প্রবেশ পথগুলোর সামনে ও উদ্যানের ভিতরে বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে অনুমোদনহীন প্রায় ৪৬টি ভাসমান দোকান। এখান থেকে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা চাঁদা নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার কিছু কিছু দোকানে গোপনে মাদক ব্যবসাও চলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিডব্লিউডি’র একজন কর্মকতা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রনেতা ও পুলিশের ছত্রছায়ায় এসব দোকান গড়ে উঠেছে। কিছুদিন আগে উচ্ছেদ অভিযানে গেলে হকারদের সাথে পিডব্লিউডি’র কর্মচারীদের বড় ধরনের মারামারি সংঘটিত হয়েছে। হকারদের পক্ষে কয়েকজন ছাত্রও মারামারিতে অংশ নেয় বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে শাহবাগ থানায় একটি মামলাও হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘হকারদের পরিবারের কথা চিন্তা করে আমরা তাদেরকে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে প্রশাসনকে সুপারিশ করেছি মাত্র। আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

উদ্যানে বিভিন্ন স্থানে প্রায় বিশটিরও বেশি লাইট থাকার কথা থাকলেও সরেজমিনে সাতটির মতো লাইটের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনটিই শিখা অনির্বাণকে ঘিরে। ফলে মন্দিরের পাশের এলাকা, চারুকলা সংলগ্ন এলাকা এবং টিএসসি সংলগ্ন এলাকা রাতের বেলা ঘোর অন্ধকার থাকে। এ সময়ে বিভিন্ন অপরাধ অবলীলায় সংঘটিত হলেও বোঝার উপায় নেই। পিডব্লিউডি’র অভিযোগ, এই লাইটগুলো বারবার দেয়া সত্ত্বেও চুরি হয়ে যায়। পুলিশের উপস্থিতিতে এসব চুরি হয় কিভাবে-এমন প্রশ্ন করা হলে শাহবাগ থানার উপ পরিদর্শক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘আসলে গভীর রাতে এমন চুরি হয়। আমরা ইতোমধ্যে অনেক চোরও ধরেছি। এখনতো চুরি অনেক কমে গেছে।’

উদ্যান কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন তিনটি শিফটে পাঁচজন করে মোট পনেরো জন পুলিশের উদ্যানে টহল দেয়ার কথা। কিন্তু প্রতিটি শিফটে মাত্র দু’জন পুলিশ আসে এবং অল্প কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে চলে যায়। পুলিশের এই দায়িত্বহীনতার কারণে অপরাধীরা বিভিন্ন অপরাধ করার সুযোগ পাচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ জানায়। তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে প্রতিবেদকদ্বয় রবিবার সন্ধ্যার সাতটার পরে উদ্যানে শুধুমাত্র একজন পুলিশকে খুঁজে পান। অন্যান্য পুলিশ কোথায় জিজ্ঞেস করলে তারা চা খেতে গিয়েছে বলে জানায়।

অন্যদিকে পিডব্লিউডি’র নথি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উদ্যানটি দেখাশোনার দায়িত্বে ১২ জন কর্মচারী থাকার কথা। অথচ সরেজমিনে দেখা গেছে, কর্মচারীদের সংখ্যা মাত্র সাতজন। তাছাড়া তারা নিয়মিত উপস্থিত থাকে না বা সময়ের আগে চলে যায়। সরিজমিনে রাতের বেলা দায়িত্বরত গার্ডগুলোকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমন পরিস্থিতির কারণ জানতে চাইলে উদ্যানের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. নবীব আলী বলেন, ‘আসলে ৫জনকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে। তাই, দায়িত্ব পালনে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিছুদিন পরে নতুন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হলে সমস্যা হয়তো কিছুটা দূর করা সম্ভব হবে।’ তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পিডব্লিউডি কর্মচারী জানান, উদ্যানের ভিতরে বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদাবাজির কারণে ঐ ৫জন কর্মচারীকে অন্য জায়াগায় সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

উদ্যানে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা চাকুরিজীবী মহিউদ্দীন তালুকদার (৪৩)বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা এখান থেকেই হয়েছে। অথচ বর্তমান এই নোংরা অবস্থা দেখলে খুবই খারাপ লাগে। পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসাটাই মুশকিল হয়ে পড়েছে।’

উদ্যানের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ পিডব্লিউডি’র প্রধান সহকারী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা বলেন, ‘অফিসিয়াল সময়ে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আমাদের লোক থাকে। তারপর থেকে কয়েকজন গার্ড ও পুলিশের উপর নিরপত্তার দায়িত্ব থাকে। কিন্তু পুলিশের অবহেলা ও অসহযোগিতার কারণে পার্কের অপরাধ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। তাই, রাতে পার্কটি অনেকটা অরক্ষিত অবস্থায় থাকে। এ সময়ই বেশি অপরাধ কার্যক্রম ঘটে।’ তবে কর্মচারীদের দায়িত্বহীনতা সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে জানান।

পুলিশের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ও উদ্যানের নিরাপত্তা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে শাহবাগ থানার ওসি রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রতিদিন হাজার হাজার লোক আসছে যাচ্ছে। এদের মধ্যে অপরাধীদের খুঁজে বের করা কষ্টকর। তবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ বছরে অনেকগুলো মামলাও হয়েছে। এতো বড় পার্কের অপরাধ কর্মকাণ্ড পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না।’ তবে তিনি বিভিন্ন অপরাধে পুলিশের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×