মোঃ মাসুদ আলম॥
বর্ষার আগমনের বার্তা বাহক কদম ফুল যেন হারিয়ে যাচ্ছে যোগে যোগে। ‘বাদল দিনের প্রথম পহর কদম ফুল’-এর হাসি তো ভুবন ভোলানো। বর্ষায় সবার আগে যে ফুলের নামটি উঠে আসে তা হলো কদম। বৃষ্টি ধোয়া বাতাসে কদম ফুলের ঘ্রাণ যেন ভাসিয়ে নিয়ে যায় স্বপ্নের কোনো প্রেমরাজ্যে। হলুদ ও সাদার মিশ্রণে কদম ফুলের পাপড়িতে লেগে থাকা বৃষ্টির ফোঁটা যেন হিরের সুভাস ছড়ায়।
কি গ্রাম, কি নগর-শহর, সর্বত্রই বর্ষার আগমনীবার্তা দেয় কদম। কদম ফুল না ফুটলে যেন বৃষ্টি ঝরে না। কদম ফুলের ¯িœগ্ধ ঘ্রাণ জানান দেয় নবযৌবনা বর্ষার আগমনী বার্তা। বর্ষা মানেই গুচ্ছ গুচ্ছ কদম ফুলের সুবাস। পথ চলতে চলতে কিংবা বাসে ছোট শিশু ছাড়াও কিশোরীর হাতে শোভা পায় তরতাজা একগুচ্ছ কদম ফুল। হাত বাড়িয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে -আফা নিবেন ? মাত্র ১০ টাকা। যে ‘কদম’ নিয়ে এত কিছু, আষাঢ়ের বার্তাবাহক সেই প্রিয় ‘কদম’ যেন হারিয়ে যেতে চলেছে আজ। এখন আর আগের মতো কোথাও চোখে পড়ে না ‘কদম’। ‘কদম’ এখন যেন একটি দুর্লভ ফুলের নাম! গাছে কদম ফুটেছে, রিমিঝিমি বৃষ্টিতে থৈথৈ চারিধার। জ্যৈষ্ঠের তীব্র তাপদাহে তপ্ত দেহ-মনে স্বস্তির ছোঁয়া নিয়ে ফিরে এলো ‘আষাঢ়’।
বাংলা বর্ষপরিক্রমায় এ মাসটির সঙ্গে প্রকৃতির যেন নিবিড় সম্পর্ক। আর ‘কদম’ ছাড়া আষাঢ় কল্পনাই করা যায় না। এক সময়ে বাড়ির আঙিনায়, রাস্থার দু’পাশে কদমগাছ ছিল চোখে পড়ার মতো। আর আষাঢ়ের পুরো সময়টাই ফুলে ফুলে ভরে থাকত গাছ। সাদা-হলুদের মিশ্র রঙের কদম ফুলে ছেয়ে যেতো গাছ। যা দেখে তৃপ্ত হতেন সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ। আর এসময়ে গ্রামের শিশু-কিশোরসহ দুরন্ত কিশোরীরা কদমতলায় ‘কদম’ ফুল নিয়ে খেলা করত। মানুষ তার প্রিয়জনকে উপহার দিত কদম ফুল। কিন্তু আজ তা ধীরে ধীরে একেবারেই হারিয়ে যেতে চলেছে। যেন দাগ পড়েছে কদম ফুলের সৌন্দর্যে।
জানা যায়, লাভের অঙ্কের হিসাব মিলানোর জন্য মানুষ আর তার বাড়ির আঙিনায় কদম ফুলের গাছ লাগাতে চাইছে না। ‘কদম’ গাছের জায়গায় এখন তারা মেহেগেনি, রেইন্ট্রিসহ নানান দামি দামি কাঠের গাছ রোপণে ঝুঁকছে। আষাঢ়-শ্রাবণ দু‘মাস বর্ষাকাল। বাংলা বর্ষপরিক্রমায় বর্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঋতু। বলা হয়ে থাকে, বর্ষা ঋতুতেই জীবনের প্রথম কাব্য রচনা করেন বাংলার কবিরা। এ ঋতু দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় ভাটি বাংলার লোককবি/বাউলরা। আর বর্ষার এ আষাঢ়কে বরণ করতে এমন একদিন হয়তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে- যে দিন ‘কদম’ ছাড়াই আমাদের মাঝে আষাঢ় আসবে! তবে প্রকৃতির মাঝ থেকে কদম গাছ হারিয়ে গেলেও বাংলা সাহিত্যের রিমিঝিমি আষাঢ় কদম ফুলকে তার সঙ্গী করে রাখবে চিরতরে।