somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতে হিন্দু নরপশু কর্তৃক মুসলমান মেয়েকে ১৭ মাস আটকে রেখে সম্ভ্রমহরণ : নীরব ভারতীয় মিডিয়া

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারতের হায়দারাবাদে এক মুসলিম ছাত্রীকে ১৭ মাস আটকে রেখে সম্ভ্রমহরণ করেছে সত্য প্রকাশ সিং নামক এক উগ্রহিন্দুত্ববাদী (সত্য প্রকাশ হিন্দু নাম। শুধু শিখরা নয়, অনেক হিন্দু ধর্মালম্বি নামের পেছনে সিং ব্যবহার করে)। কিন্তু এই লোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ প্রকাশ পাওয়ার পরও তার দিকে নজর নেই ভারতীয় মিডিয়াগুলোর। নির্যাতিতা মুসলিম ছাত্রী সাদিয়া মুবিন (২০) নিজেই তার ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করেন। নিচে তার দেয়া বর্ণনা তুলে দেয়া হলো:
“আমি মিস সাদীয়া মুবীন (২০) টি.আর.আর. কলেজের পলিটেকনিক তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। কলেজ চলাকালীন সময়ে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য প্রায়ই বন্ধুদের সাথে কলেজ ক্যান্টিনে যেতাম। সেখানে ক্যান্টিনের মালিক সত্য প্রকাশ সিংয়ের সাথে অনেকবার দেখা হয়েছে। ৩ এপ্রিল ২০১৩তে আমি সুস্থতা বোধ করছিলাম না, তাই কলেজ ক্যান্টিনে যাই কিছু জুস খাওয়ার জন্য। কথিত সেই মালিকের কাছে যখন আমি কিছু জুস চাইলাম, সে আমাকে একটি জুস দিলো এবং আমার সাস্থ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। জুস খাবার পর মনে হল যেন আমার মাথাটা ঘুরছে এবং একটু পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। জ্ঞান ফেরার পর আমি নিজেকে একটি অন্ধকার রুমের মধ্যে দেখতে পেলাম এবং দেখলাম আমার কাপড়গুলো ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। আমি সাহায্যের জন্য চিৎকার দিতে চেষ্টা করলাম। আকস্মিকভাবে সত্য প্রকাশ সিং এসে আমার হাত বেঁধে ফেলে একটি বেল্ট দিয়ে আমাকে অত্যন্ত কঠিনভাবে প্রহার করতে শুরু করে। এবং আমাকে নির্মমভাবে সম্ভ্রমহণ করে যার ফলে আমার রক্তক্ষরণ হতে শুরু করে। খুব অন্ধকার থাকায় আমাকে একটি রুমে তালাবদ্ধ করে চলে যায়। পরের দিন কিছু খাবারের প্যাকেট নিয়ে আবার আসে এবং আমাকে খেতে বলে। খাবার খেতে অস্বীকার করায় আমাকে আবারো প্রহার করে এবং খাবার খেতে বাধ্য করে। কিছু সময় পর সে প্রায়ই আমাকে সম্ভ্রমহরণ করত। এইভাবে প্রায় এক মাস আমাকে তালাবদ্ধ করে রেখে ধারাবাহিকভাবে সম্ভ্রমহরণ করতে থাকে। বাড়ীর মালিক তার কার্যক্রমে সন্দেহ করায় তাকে বাড়ী ছেড়ে দিতে বলে। এই বাড়ীটি ছিল রাঙা রেড্ডি জেলার মীরপেটের আলমাসগুদায় অবস্থিত একটি ফ্ল্যাট। আমার তীব্র চীৎকারে বাড়ীর মালিক তাকে বাড়ীটি ছেড়ে দিতে বলে। একদিন রাত তিনটার দিকে এসে আমাকে অঙ্গীকার দেয় যে আমাকে আমার বাড়ীর পাশে ছেড়ে দিয়ে আসবে সেজন্য আমি যেন তার সাথে যাই। সে আমাকে আমাকে নীল রঙয়ের একটি টাটা সুমো গাড়ীতে(এপি ১১ জি ৯১০৮) তুলে। এক ঘন্টা জার্নি করার পর গায়াত্রি নগরের অন্তর্ভুক্ত বালানগরের মীরপেটের একটি ফ্ল্যাটে জোর করে নিয়ে তুলে। আমার প্রতিবাদ এবং চিৎকার স্বত্ত্বেও এক মহিলার সাহায্যে আমাকে লক করে ফেলে। এই ফ্ল্যাটেও সে আমাকে প্রতিদিন অমানুষিক নির্যাতন করত এবং গালাগালি করে বলত যে- সে সব মুসলিম মেয়েকে এইভাবে সম্ভ্রমহরণ করবে। সে বলত- আমি পঞ্চম মুসলিম মেয়ে যাকে সে সম্ভ্রমহরণ করেছে। আমার আগেও আরো চারটি মুসলিম মেয়েকে এইভাবে সম্ভ্রমহরণ ও নির্যাতন করে হত্যা করে নদীতে ফেলে দিয়েছে। সে বলত- তার অবসরপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বাবা এবং তার ক্রিমিনাল আইনজীবী ভাই তাকে সবসময় পুলিশের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখে। মে ২০১২তে একদিন অতিরিক্ত এলকোহল পান করে আমাকে নির্যাতন করার পর সে ঘুমিয়ে পড়ে। আমার হাত খোলা থাকায় আমি তার ফোন দিয়ে আমার মায়ের কাছে ফোন করি এবং মাকে আমার নির্যাতিত হওয়ার কথা বলি। আমার ভাই আমার হারিয়ে যাওয়ার সম্পর্কে সন্তোষ নগর পুলিশের কাছে মামলা করেছিলেন। তিনি আবার পুলিশের কাছে গিয়ে আমার ফোন করার কথা বলেন। সত্য প্রকাশ সিং প্রায় পাঁচ দিন রুমে আসেনি। আমার তত্ত্বাবধানকারী সেই মহিলা আমাকে জানালা দিয়ে আমাকে খাবার-পানি দিত। আমাকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। ৬ষ্ঠ দিন মাতাল অবস্থায় হঠাৎ করে এসে সত্য প্রকাশ সিং আমাকে প্রহার করা শুরু করে এবং আমার মা ও আমাকে অত্যন্ত খারাপ ভাষায় গালাগালি করতে থাকে। সে বলছিলো- আমি কেন তার ফোন দিয়ে ফোন করলাম যার ফলে পুলিশ তাকে সন্দেহ করা শুরু করেছে। প্রহার করার পর সে আমাকে আবারো সম্ভ্রমহরণ করে এবং বলে যে- কলেজের মালিক তীগালা কৃষ্ণ রেড্ডি(সাবেক মেয়র) এবং টিডিপি নেতা ও তার ছেলের মধ্যস্ততায় পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দিয়েছে। একদিন সে তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে আসে। যার মধ্যে তার বাবা, স্ত্রী এবং ভাইও ছিল। আমাকে তাদের সাথে দেখা করতে বলে। দেখা করার পূর্বে সে জোর করে আমাকে একটি তিলক পরিয়ে দেয়। সে তার পরিবারের লোকদের কাছে আমাকে দেখিয়ে ভাণিতা নামে পরিচয় দিয়ে বলে- সে যেহেতু সন্তানহীন তাই আমাকে বিয়ে করেছে। তার বাবা বিশমুখ প্রকাশ সিং (সাবেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা), ভাই জয় প্রকাশ সিং (এডভোকেট) এবং স্ত্রীর সামনে আমি কাঁদতে শুরু করি এবং তাদেরকে বলি যে, সত্য প্রকাশ সিং আমাকে অপহরণ করে নিয়ে এসে বন্দী করে গত চারমাস ধরে সম্ভ্রমহরণ করে চলেছে। আমার কথা শুনে তারা সবাই হাসতে শুরু করে। বলে যে, সত্য প্রকাশ যেহেতু এসব একটি মুসলিম মেয়ের সাথে করছে তাই তারা সবাই তাকে সমর্থন করে। তার বাবা এবং স্ত্রী আমাকে চিৎকার করে কাঁদতে দেখে তার এডভোকেট ভাইয়ে ছাড়া তারা সবাই বাইরে চলে যায়। তার এডভোকেট ভাই আমাকে স্লিপার দিয়ে পেটায় এবং সম্ভ্রমহরণ করতে চেষ্টা করে। তাদের নির্যাতনে আমি জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলি। তার ভাই আমাকে হুমকী দেয়- যদি আমার মা, ভাই সন্তোষ নগর থেকে মামলা তুলে না নেয়, তাহলে তাদেরকে খুন করে ফেলবে। কয়েক মাস পর সে আমাকে তৃতীয় আরেকটি নতুন জায়গায় সরিয়ে নেয়। সেখানে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং খুব বেশি বমি করতে থাকি। সে কয়েকজন মহিলাকে নিয়ে আসে আমাকে পরীক্ষা করার জন্য এবং বিবৃত সেই মহিলা বলে আমি সন্তানসম্ভাবা হয়ে গেছি। আমি কাঁদতে শুরু করি এবং তাদেরকে বলি আমাকে ছেড়ে দিতে। সন্তানসম্ভাবা করার পর ছেড়ে দিবে এই অঙ্গীকার করে সে আমাকে একটি নার্সিং হোমে নিয়ে যায় এবং মহিলা ডাক্তারকে গর্ভপাত করতে বলে। আমি মহিলা ডাক্তার এবং তার স্টাফদের গর্ভপাত করার প্রতিবাদ করি কিন্তু মহিলা ডাক্তার আমার কথা না শুনে গর্ভপাত করে ফেলে। গর্ভপাতের পর খুব বেশি রক্তক্ষরণ হচ্ছিল আমার। সে আমাকে ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। গর্ভপাত করার পরও তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য সে আমাকে উত্যক্ত করত। সে আমাকে অস্বাভাবিকভাবে ব্যবহার করত এবং এলকোহল পান করার জন্য ফোর্স করত। একদিন যখন আমি খুব জোরে চিৎকার করে কাঁদছিলাম তখন কিছু প্রতিবেশী পুলিশকে ফোন করে আমার কথা বলে। কিছু সময় পর তিনজন পুলিশ আসে। আমি তাদেরকে সবকিছু খুলে বলি যে- আমাকে অপহরণ করে নিয়ে এসে বন্দি করে রাখা হয়েছে এবং সম্ভ্রমহরণ ও বিভিন্ন রকম নির্যাতন করছে। পুলিশ সত্য প্রকাশ সিংকে তাদের সাথে নিয়ে যায় এবং কিছু সময় পর ফিরে আসে। আমি দেখলাম সব পুলিশ এবং সত্য প্রকাশ সিং মাতাল। পুলিশরা রুমে প্রবেশ করে বিভিন্ন রকম কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে থাকে। তারা সত্য প্রকাশ সিংকে সম্ভ্রমহরণ করতে উইশ করে চলে যায়। যাবার আগে আমার শরীরের লজ্জাস্থান úর্শ করে আমার বিরুদ্ধে অশ্লীল কথা-বার্তা বলে। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩তে দুপুর ১টার দিকে সে বরাবরের মত মাতাল অবস্থায় কিছু খাবারের প্যাকেট নিয়ে আসে। লাঞ্চ করার পর সে আবারো সম্ভ্রমহরণ করে এবং ঘুমিয়ে পড়ে। দরজা খোলা থাকায় আমি তার হাত থেকে ছুটে দৌড়াতে শুরু করি। দৌড়াতে দৌড়াতে বিকাল সাড়ে চারটার আমি আমার বাড়ীতে পৌছে যাই।”
মুসলমানদের প্রতিবাদের মুখে নরপশু সত্যপ্রকাশ সিংকে গ্রেফতার করা হয়েছে, কিন্তু ভারতের মুসলিমবিদ্বেষী প্রশাসন ও মিডিয়ার নীরবতায় এই নির্মম ঘটনার প্রকৃত বিচার নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। সত্যিই কি বিচার পাবে নির্যাতিতা এই মুসলিম বোন?
( http://twocircles.net// অবলম্বনে)
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×