অবশেষে আবুল চাকুরী পেয়েছে।আবুল বহুদিন ধরে চাকুরি খুঁজছিলো, পাচ্ছিলো না। আবুল বোকা সোকা সরল মানুষ, রেজাল্টও তেমন ভালো না, তার পক্ষে এই চাকরিটা কল্পনাতীত ছিলো, সে নিজেও জানে এই চাকুরীর যোগ্য সে না। তারপর ও আবুল চাকুরী পেয়েছে,তাও আবার সরকারি চাকুরী। আবুলের ক্লাসের যে ফাস্টবয় ছিলো জলিল,জলিলের সব ফাস্ট ক্লাসছিলো সেও এই চাকরিতে আবেদন করেছিলো, কিন্ত জলিল চাকুরীটা পায়নি। পাবে কি করে জলিলের দাদাতো আর মুক্তিযোদ্ধা না। মুক্তিযোদ্ধার নাতি হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় অবশেষে আবুলের ভাগ্য খুলেছে।
৫০ বছর পর:
আবুল মারা গিয়েছে। তার কর্মফলের হিসেব হচ্ছে। আবুল তার কর্মফল নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয়। আবুল সারা জীবন সহজ সরল জীবন যাপন করেছে, কারো কোন ক্ষতি করেনি। নামাজ রোজা সবই পালন করেছে।আবুলের ধারনা সে খুব সহজেই বেহেস্তের দরজায় কড়া নাড়তে পারবে।
আবুলের হাতে তার আমলনামা দেয়া হয়েছে। সে তার আমলনামায় চোখ বুলাচ্ছে। হঠাৎ আবুলের চোখ পড়লো বাম পাশের কুকর্মের তালিকায়।
সেখানে লেখা আছেঃ
মুক্তিযু্দ্ধে অন্যায় ভাবে বিধবা হিন্দু বৃদ্ধার বাড়ি দখল ও সংখ্যালঘু উচ্ছেদ।
আবুল দৌড়ে গেলো সৃষ্টিকর্তার কাছে। তিনি নিশ্চই কোন ভুল করেছেন।হয়ত অন্যকারো আমলনামা ভুল করে তার হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময়তো আবুলের জন্মই হ্য়নি।
আবুলকে দেখে সৃষ্টিকর্তা এগিয়ে এলেন। আবুল সৃষ্টিকর্তাকে জানালো যে, তার আমলনামায় ভুল আছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় সে কোন অপকর্ম করেনি তাই যে অপকর্ম সে করেনি তার শাস্তি তার হতে পারে না। আর তাছাড়া তখনতো আবুলের জন্মই হয়নি।
সৃষ্টিকর্তা হা হা করে হেসে আবুলকে বল্লেনঃ তুমি পৃথিবীতে কি করতে?
আবুলঃ একটা সরকারী চাকুরী করতাম।
সৃষ্টিকর্তাঃ কি ভাবে চাকুরী পেয়েছিলে? তোমারতো রেজাল্ট তেমন ভালো ছিলো না!!
আবুলঃ আমি মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় চাকুরী পেয়েছিলাম।
সৃষ্টিকর্তাঃ মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় তুমি কি করে চাকুরী পেলে? তুমি তো তখন জন্মাও নি?
আবুলঃ আমার দাদা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাই আমি মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় চাকুরী পেয়েছিলাম।
সৃষ্টিকর্তা হাসতে হাসতে বল্লেনঃ উত্তারাধিকার সূত্রে শুধু সুবিধাই ভোগ করবে , শাস্তি ভোগ করবে না তা কি হয়!!! উত্তরাধিকারের এই সুত্রতো তোমাদের থেকেই আমি শিখেছি।
(গল্পটি কাল্পনিক, কেউ বাস্তবের সাথে মেলাবার চেস্টা করবেন না)
ছবি সৌজন্যঃ ছবিটি আমার তোলা।