স্টেডিয়ামের অসমাপ্ত প্যাভিলিয়নে পাঁচজনে বসে আছি অনেকক্ষণ ধরে। রিফাতকে গালাগাল দেওয়ার পর্ব আপাততঃ স্থগিত করা হয়েছে। শালাকে পাঠিয়েছিলাম ব্যাট আনতে, সেই যে গেছে আর আসার নাম নেই। অপেক্ষা করতে করতে বিরক্তি ধরে গেছে। কতক্ষণই বা বসে থাকা যায়! পাশ থেকে রাশেদ উঠে পড়ল, তারপর মাঠে নেমে পড়ে ডাকল আমাকে, 'ওই কবির, কতক্ষণ বইসা থাকবি? নাম। খেলা শুরু করি।'
- 'ব্যাট পাবি কই?'
'আরে আশেপাশে কত কাঠের টুকরা পইড়া রইছে, একটারে ব্যাট বানায়া খেলা শুরু কইরা দিমুনি। নাম।'
সেটা অবশ্য করা যায়। ইদানিং আমাদের মফঃস্বলের এই স্টেডিয়ামটার ওপরে কোন কারণে প্রশাসনের সুনজর পড়েছে। নতুন মাটি ফেলে অসমান, এবড়ো-খেবড়ো মাঠ সমান করা হচ্ছে, পশ্চিমদিকের খালি জায়গাটায় নতুন একটা প্যাভিলিয়ন বসান হচ্ছে। সুতরাং মাঠের ভিতরে এখানে ওখানে ইট-বালুর স্তুপ, আর তাদের চারপাশে উচ্ছিষ্ট কাঠ আর রডের খণ্ড প্রায়ই পড়ে থাকে। আমরা মাঠে নেমে পড়ি। বাকিরা স্ট্যাম্প গাড়তে শুরু করে, আমি আর রাশেদ আশেপাশে সম্ভাব্য ব্যাট খুঁজতে থাকি।
কিছুক্ষণ চোখ বুলানোর পর একটা ছোটখাটো রডের টুকরোর ওপর আমার নজর পড়ে। স্বাভাবিকের চেয়ে প্রস্থে চিকন, এক-দেড় হাত লম্বা হবে। হাতে তুলে নেই। এটাকে ব্যাট বানানো যাবে না, কিন্তু ভালো জিনিস, সংগ্রহে রাখা যেতে পারে। আমি ব্যাটসম্যানের মত স্টান্স নিয়ে একটা ছক্কা মারার ভান করি। আমার দশ বারো হাত দূরেই রাশেদ হাঁটছে, ও আমার ভঙ্গি দেখে আমোদিত হয়। হাতে একটা অদৃশ্য বল ধরে ও বলে, 'দোস্ত, এই ম্যাকগ্রার ইয়র্কার দিলাম। সামলা।' তারপর ছুঁড়ে দেবার ভান করে। আমিও বলি, 'দেখ, তোর মাথার ওপর দিয়া ছয়', তারপর ওর দিকে ভীষণ জোরে রড ঘুরাই।
স্ট্রেট শটে অদৃশ্য বলটা ওর মাথার ওপর দিয়েই উড়ে যাবার কথা ছিল, কিন্তু তা না হয়ে রডটা আমার হাত থেকে ছুটে যায়। রাশেদ অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে রডের দিকে কিংবা আমার দিকে চেয়ে থাকে, আর প্রায় মুহূর্তের মাঝে রডটা কয়েক পাক ঘুরে থ্যাচ করে ওর মাথায় গেঁথে যায়।
হাত থেকে রডটা ছুটে যাবার পর থেকেই আমার শরীর কেমন অবশ হয়ে যাচ্ছিল। মুখে আশ্চর্য হবার ছাপ নিয়ে রাশেদ যখন ধীরে ধীরে মাটিতে পড়ে গেল, তখন সারা শরীর কেমন একটা ঝাঁকি দিয়ে উঠল। ঘটনার তাৎপর্য এতক্ষণে মাথায় ঢুকল। আমি আমার বন্ধুকে খুন করে ফেলেছি! আমি মানুষ খুন করেছি!! নিজের অজান্তেই রাশেদের মৃতদেহের কাছে এগিয়ে গেলাম। কেমন ঘোর ঘোর লাগছে, তীব্র অনুশোচনায় মনে হচ্ছে পেশিতে পেশিতে আগুন ধরে যাবে। অকস্মাৎ এই ঘটনায় বাকিরাও হতভম্ব হয়ে গেছে। ওরা একে একে আমার পাশে এসে দাঁড়ায়, আর একটু পর পর অপরাধী মুখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। কে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।
এই সময় হাতে ব্যাট নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে রিফাত আমাদের কাছে আসে। 'সরি সরি সরি, দেরি হইয়া গেল দোস্তো! খেলা শুরু কইরা দে। রাশেদ শালা শুইয়া রইছে ক্যা? ওর...' রাশেদের মাথায় আস্ত একটা রড গেঁথে থাকতে দেখে ওর কথা মাঝপথে থেমে যায়। তখনি সস্তা হরর ছবির মৃতের অভিনয়কারী ভূতের মত রাশেদের চোখ ধপ করে খুলে যায়। দুই একবার চেষ্টা করে ও উঠে বসে। মাথার ফাটা অংশ থেকে গড়িয়ে পড়া কালচে রক্ত আর হলুদ মগজ দিয়ে ওর সারা মুখ মাখামাখি, এবং রডটা কোনোভাবে এখনো মাথার ভেতরে গেঁথে আছে। রাশেদ চোখ ঘষে রিফাতের দিকে তাকায়, তারপর তড়াক করে লাফিয়ে উঠে ওর হাত চেপে ধরে। রিফাতের মুখ পাংশু হয়ে যায়, ভয়ে ও চিৎকার দিয়ে ওঠে।
রাশেদ অবাক হয়ে তাকায় ওর দিকে, 'কিরে শালা, চিল্লাস ক্যান? ভূত দেখছস নাকি? আর ব্যাটা ব্যাট আনতে এতক্ষণ লাগে ক্যান?' রিফাত উপযুক্ত শব্দ খুঁজে না পেয়ে আমাদের দিকে তাকায়। এবারে রাশেদ লক্ষ্য করে আমরা সবাই-ই ওর দিকে তাকিয়ে আছি। ও একটু রেগে ওঠে, 'কিরে, কি হইল তোগো? এম্নে চাইয়া রইছস ক্যা? খেলবি না?'
আমি একটু আশার আলো দেখতে পাই। রডটা হয়তো রাশেদের মাথার তেমন ক্ষতি করেনি (যদি মগজকে দুই ভাগ করে ফেলাটা 'তেমন ক্ষতি' না হয়), শুধুমাত্র সাম্প্রতিক স্মৃতিগুলো মুছে গেছে। তাই ও এখনো খেলার মুডেই আছে। আমি রাশেদকে বলি, 'দোস্ত, একটা এক্সিডেন্ট হইছে। তোর মাথায় একটা রড গেঁথে গেছে।' রাশেদের তেমন ভাবান্তর দেখা যায় না। মাথায় হাত দিয়ে ও রডটাকে পরখ করে। রডটাকে নাড়াচাড়া করায় মাথার হা করা অংশ বীভৎস শব্দ করে আরেকটু চওড়া হয়ে যায়। হাতে লেগে থাকা চটচটে রক্ত প্যান্টে মুছে ও উড়িয়ে দেয় কথাটা- 'ধুর, এইটা কিছু না। একটু কাটছে আর কি। আয় খেলা শুরু করি।'
আমি আবারো প্রতিবাদ করার চেষ্টা করি- 'দোস্তো আজকে বাদ দে, তোর এই অবস্থা...' রাশেদ এবারে খেপে চিৎকার করে ওঠে, অশ্রাব্য গালিগালাজ করে জানিয়ে দেয় যে আমাদের বাপের পরিচয় নিয়ে তার সন্দেহ হচ্ছে, এবং যদি আমরা খেলা শুরু না করি তাহলে নিশ্চয়ই শিশুকালে আমরা কুত্তার দুধ খেয়েছি। অন্যদিন হলে আমাদের একটা মারও মাটিতে পড়ত না। কিন্তু আজকে আমরা সমভাবে রড রাশেদের ভয়ে ভীত, এমনকি এক বন্ধু চুপিচুপি এই আশঙ্কা প্রকাশ করে যে, খেলা শুরু না করলে রাশেদ আমাদের একটা একটা করে ধরে খেয়েও ফেলতে পারে (তার এই আশঙ্কা হাস্যকর হলেও উড়িয়ে দিতে পারি না)। তাই রাশেদের চিৎকারের দেড় মিনিটের মাথায় খেলা শুরু হয়ে যায়। ওর হাতে বল, এবং এই পরিস্থিতির জন্য আমাকে দায়ী করে সবাই আমার হাতে ব্যাট ধরিয়ে দেয়।
রাশেদ প্রথম বলটাই করল ইয়র্কার, এবং আমি পা বাঁচাতে গিয়ে সোজা ব্যাট চালিয়ে দিলাম। এইবারে বলটা দ্বিগুণ গতিতে রাশেদের দিকে ধেয়ে গেল, আর চোখে বলের ধাক্কা খেয়ে ও পড়ে গেল। দ্বিতীয়বারের মত।
এবারে কেউ এগিয়ে গেল না। রাশেদ ছ সেকেন্ডের মাথায় এক চোখ ধরে উঠে দাঁড়াল। আঙ্গুলের ফাঁক গলে গলগলিয়ে সাদা একটা কিছুর সাথে রক্ত পড়ছে, চোখের মণি ফেটে গেছে মনে হয়। আমরা কেউ কিছু জিজ্ঞেস করিনি, তবু ও জোরে জোরে বলল, 'কিছু হয় নাই, আমি ঠিক আছি। একচোখে দেখতাসিনা, কিন্তু ব্যাপার না। ঠিক হইয়া যাব।' এক বন্ধু দ্বিধান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, 'তুই কি...বোলিং করবি এখনো? রেস্ট নিলে ভালো হইত না?' রাশেদ হুংকার দিয়ে ওঠে, 'এই সামান্য ইনজুরির জন্য আমি বইসা থাকুম? অসম্ভব!' তারপরে গটগট করে বলটা নিয়ে বোলিং মার্কে ফিরে যায়।
পরবর্তী সময়টা নিশ্চিতভাবে আমার জীবনের দীর্ঘতম দুঃস্বপ্ন। রাশেদ একের পর এক, একের পর এক বল করেই যাচ্ছে। থামার কোন লক্ষণ নেই। আমি কোনোমতে গা বাঁচিয়ে চলছি। অবশেষে প্রায় একঘণ্টা কি পঁয়তাল্লিশ মিনিট পরে (যদিও মনে হল এক মহাকাল) রাশেদ বল করতে গিয়ে থেমে গেল। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, 'মনে হয় বৃষ্টি নামব রে, আজকে আর খেলা যাবো না।' প্রায় সাথেই সাথেই ঝরঝরিয়ে বৃষ্টি নেমে গেল, সাথে মেঘের গর্জন। আমরা সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
স্ট্যাম্প উঠিয়ে ব্যাট-বল গুছিয়ে সবাই মাঠ থেকে বের হয়ে যাচ্ছি, এমন সময় রাশেদের হঠাৎ মনে হল ও মোজা রেখে এসেছে। আমাদের অপেক্ষা করতে বলে সে দৌড়ে পিচের কাছে যেতে থাকে। আকাশের এখানে ওখানে আগে থেকেই বিদ্যুতেরা চমকাচ্ছিল, রডের আকর্ষণে তাদের একজন নেমে আসে রাশেদের মাথায়, ওর চারিদিক ঘন সাদাটে ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। অত্যুৎজ্জল সাদা আলো আমাদের চোখ ঝলসে দেয়, কড়-কড়-কড়াৎ শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে যখন ধোঁয়া সরে যায়, তখন আমরা ভয়ে ভয়ে তাকাই রাশেদের দিকে। মাটিতে শুয়ে আছে ও (ব্যাপারটা ওর স্বভাবে পরিণত হয়ে যাচ্ছে), এবং প্রাণের কোন স্পন্দন নেই। এবারে কি মরেছে?
পরক্ষণেই প্রশ্নের জবাব মেলে। আ-আ করে গোঙাতে গোঙাতে রাশেদ উঠে দাঁড়ায়। মাথার রড উধাও। শুধু রড না, সাথে মাথাটাও উধাও হয়ে গেছে। একটা চোখ আর দাঁতের পাটি রগ-টগে সংযুক্ত হয়ে বুকের কাছে ঝুলে আছে কোনোমতে। দাঁতগুলো ঝকঝকে সাদা। সারা দেহে কোন চামড়া নেই, শুধু কুচকুচে কালো মাংস আর বিশ্রী চর্বিপোড়া গন্ধ। এই জিনিসটা রাশেদ না। কোনোভাবেই না। রাশেদের একটা গলা ছিল, গলার সাথে একটা মাথা লেগে থাকত। এটা ও হতে পারে না। 'জিনিস'টা হঠাৎ নড়ে ওঠে, তারপর দাঁতের পাটিটা কটকটিয়ে নড়তে শুরু করে। একটা কিছু বলছে হয়তো। আমরা কান পেতে শুনি। জিনিসটা বিড়বিড়িয়ে বলছে, 'আমার কিছু হয় নাই, এক্কেবারে ফিট আছি। কিচ্ছু হয় নাই।' কথাটা শুনে একটা ঘৃণার স্রোত বয়ে যায় সবার ভেতরে। জিনিসটাকে উপেক্ষা করেই আমরা মাঠের বাইরে চলে আসি। তারপর যেন কিছুই হয় নি- এমন ভাব করে অতি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে চলে যাই যার যার বাড়িতে।
পরের দিন স্কুলের প্রথম ক্লাসটা আমাদের অস্বস্তিতে কাটে। কি হবে যদি জিনিসটা রাশেদের বদলে আজকে স্কুলে এসে পড়ে? আমার আর রিফাতের মাঝখানে ঠেলেঠুলে জায়গা করে বসে? ওটার গায়ের থিকথিকে বাজে গন্ধঅলা রস আমাদের খাতার ওপর, শরীরের ওপর পড়বে। আমাদের শরীরেও গন্ধ লেগে যাবে। আর তাছাড়া কোন স্কন্ধকাটার পাশে বসে থাকাটা খুব একটা আনন্দের হবে বলে মনে হচ্ছে না।
কিন্তু আমাদের আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হয়। জিনিসটা সেদিন স্কুলে আসে না। তার পরের দিনও না। তার পরের দিনও না। পুরো দুই সপ্তাহ পার হয়ে যায়, কিন্তু জিনিসটার কোন হদিস পাওয়া যায় না। না মাঠে না স্কুলে। বাকিরা স্বস্তি বোধ করলেও আমার একটু একটু খারাপ লাগতে থাকে। হাজার হলেও রাশেদ আমার বন্ধুমানুষ ছিল। বেচারাকে মিস করছি। তাছাড়া রাশেদের বাড়ি আমার বাড়ি থেকে খুব একটা দূরে না। পাঁচ মিনিটের পথ। ইচ্ছা করলেই রাশেদের আম্মা, এবং সেই সাথে জিনিসটার সাথে দেখা করে আসা যায়।
সুতরাং একদিন বিকালে আমি রাশেদদের দরজায় ঠকঠকাই। ওর আম্মা দরজা খোলেন। আমি জিজ্ঞেস করি, 'আন্টি, রাশেদ আছে?'
আন্টি গোমড়ামুখে জবাব দেন, 'হ্যাঁ বাবা। ড্রয়িংরুমে দেখ, সোফার ওপরে বসে বসে টিভি দেখতাছে।'
জিনিসটা কিভাবে বাড়িতে এসে পৌছেছিল ভাবতে ভাবতে আমি ড্রয়িংরুমে ঢুকি। ওইতো, সোফার ওপরে জিনিসটা শুয়ে আছে। কিংবা সঠিক করে বললে পড়ে আছে। চোখটা টিভির দিকে তাক করা। দাঁতের পাটি কটকটিয়ে নড়তে দেখা যাচ্ছে, গোলাপি রঙের একটা কিছু চিবুচ্ছে- চুইংগাম মনে হয়। শেষবারে যেমন দেখেছিলাম তেমনি আছে, শুধু কোমরের নিচের অংশ নেই। কেটে ফেলা হয়েছে সম্ভবতঃ। আমার পায়ের শব্দ পেয়ে জিনিসটা আমার দিকে তাকাল, তারপর আনন্দিত গলায় অভ্যর্থনা জানাল, 'আরে দোস্ত কি খবর?'
উত্তর দেব কি দেব না চিন্তা করতে করতে বলে ফেললাম, 'ভালো।'
- 'গুড গুড। এই কয়দিন বৃষ্টি আছিল তো, খেলতে পারি নাই। মাটি পিছলা হইয়া গেছে। আজকে খেলবি নাকি এক ম্যাচ? বৃষ্টি নাই তো।'
আমি না শোনার ভান করে শক্ত হয়ে ওটার পাশে বসে থাকি। ততক্ষণে আন্টি নুডলসের বাটি নিয়ে এসে পড়েন। বাটি নেবার সময় আমি লক্ষ্য করলাম তিনি খোঁড়াচ্ছেন।
-'আন্টি আপনার পায়ে কি হইছে? ব্যথা পাইছেন?'
তিনি পাশের সোফায় বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, 'আর বইলো না বাবা। রাশেদরে নিয়া রিকশায় উঠছিলাম, অরে ডাক্তারের কাছে নিবার কথা ছিল। রাস্তায় এক ট্রাক আইসা রিকশার পিছে গুঁতা দিছে। আমি তো ফুটপাতের ওপরে পইড়া গেছি, কিন্তু তোমার বন্ধু গড়ায়া গেছে ট্রাকের নিচে। তারপরে আর কি, ফুটপাতে বাড়ি খাইয়া পায়ের গোড়ালি ফুইলা গেল। এখন হাঁটতে কি কষ্ট!'
-'ও, এইভাবে ব্যথা পেয়েছেন? আচ্ছা।' বলতে বলতে আমি কাঁটাচামচে নুডলস পেঁচিয়ে মুখে চালান করি। কিন্তু এক মুহূর্তের অসতর্কতায় হাত থেকে চামচটা পড়ে যায়, এবং খাড়াভাবে রাশেদের চোখের ওপরে ল্যান্ড করে। ও চিৎকার দিয়ে বসে পড়ে সোফায়। আমি চামচটা ছাড়িয়ে নিয়ে রাশেদের কাছে মাফ চাইতে থাকি, ব্যাপারটা যে কেবলি দুর্ঘটনা সেটা ওকে বোঝাতে থাকি বারবার। রাশেদ ধাতস্থ হয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় চোখটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে, তারপর কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে, 'আরে, ব্যাপার না। এখন চোখে দেখতাসি না, কিন্তু চোখে না দেখলে কি খেলন যাব না নাকি? আমি ঠিক আছি। আম্মা ভাত দেও, খায়াদায়া মাঠে যামু।'
আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, 'দেখছ বাবা, জ্বালায়া মারল একেবারে! আমি পায়ের ব্যথায় অস্থির, আর এ যাবো মাঠে। ওফ! মরে না ক্যান পুলাডা!'
আমি তাকে সান্ত্বনা দেই, 'ধৈর্য ধরেন আন্টি। ইনশাল্লাহ সব ঠিক হইয়া যাব। সবাই কি আর মরতে পারে? কারো কারো ক্ষেত্রে সময় একটু বেশি লাগে।'
তারপর কাঁটাচামচে নুডলস প্যাঁচাতে থাকি আবার।