শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশী টেরোরিস্টও ধরা পড়লো নিউ-ইয়র্কে। ঠিক কিভাবে যে প্রতিক্রিয়া জানাবো বুঝতে পারছিনা। যাইহোক, আমি ওসব কথায় একটু পরে গিয়ে আগে ভূমিকাটা দিয়ে নিই।
ওয়াল স্ট্রীটের বেশীরভাগ অফিস মূলত সকাল ১০টায় তাদের কার্যক্রম শুরু করে। আমার অফিসটাও সৌভাগ্যবশত ওয়াল স্ট্রীটেই। না.. আমি ওয়াল স্ট্রীটের বড় কোন হর্তা-কর্তা নই। সাধারণ আরো অনেকের মতোই একটা স্টার্ট-আপ কোম্পানীতে কাজ করছি। বাসা থেকে সাব-ওয়েতে প্রায় ৩০-৪০মিনিটের মতো পথ। গত বেশ কয়েকদিন ধরেই মোটামুটি বেশ ঠান্ডা পড়েছে তাই ভারী একটা ওভারকোট চাপিয়ে মনের সুখে গান শুনতে শুনতে ট্রেনে ওঠা। ট্রেনটা যতই ডাউনটাউন ম্যানহাট্যানের দিকে যাচ্ছে, ততই মানুষের চাপ বাড়ছে। এত ভীড়ে সিট না পেয়ে দাঁড়িয়েই থাকতে হলো। সিট না পেয়ে মেজাজ এমনিতেই বিগড়ে আছে, তার উপর প্রায় সাঁড়ে ছ'ফুটের আফ্রিকান আমেরিকান বিশাল এক মহিলা মোটামুটি আমাকে সাইজ করে যাচ্ছে প্রতিবারই যখন ট্রেইনটা ব্রেক কষছে। বার বার "সরি" বলছে কিন্তু তাতেও কোনভাবে নিজেকে মানাতে পারছিনা। ইচ্ছে করছিলো.. যাইহোক। ট্রেন স্টেশন থেকে নেমে আমাকে প্রায় ৫/৬ ব্লক রাস্তা হেটে অফিসে ঢুকতে হলো। ভারী কাপড় ছেড়ে যেই কফিতে চুমুক দিয়েছি, ওমনি শুনি পুলিশ মামাদের গাড়ীর শব্দ। ভাবলাম এ আর নতুন কি?
আমার বস অফিসে আসতে গিয়েও আসেনি। ফোনে আমাকে জানালো বাংলাদেশী কোন টেরোরিস্ট নাকি ফেডারেল রিজার্ভ বিল্ডিং উড়িয়ে দিতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছে। আমি খুব একটা বিশ্বাস করলাম না। ভাবলাম হয়তো পাকিস্তানি বা আফগানী কেউ হবে। আমাকে খোঁচা দিয়ে বাংলাদেশী বলছে। কিন্তু সম্মানে কিছুটা লাগলো বৈকি। গুগলে গিয়ে কিছুক্ষন খোঁজাখুজিঁর পর থলের বিড়াল বেরিয়ে এলো। এতো দেখি আসলেই বাংলাদেশী। লজ্জায় মাথা হেট হয়ে এলো। বলে রাখি, আমার অফিসে আমিই একমাত্র বাঙালী। সবাই এই নিয়ে কথা বলাবলি করছে। আমি খবরের কাগজে ঘাঁটাঘাঁটি না করে কাজে মনোযোগ দিতে চেষ্টা করলাম, কাজ হলোনা।
খবরে যেটা জানলাম, ছেলেটার নাম কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিস, বয়স ২১। সে এ বছরের জানুয়ারীতেই নিউ ইয়র্কে এসেছে। ভাবতেই অবাক লাগলো, ২১ বছরের একটা বাংলাদেশী ছেলে কি করে আমেরিকাতে এসে এ ধরনের কাজ করার সাহস দেখালো?! এখানে এসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তার কু-কর্মের সহযোগী খুঁজতে গিয়ে সে খুঁজে পেয়েছে এফ.বি.আই এর আন্ডার কাভার এজেন্টকে!? বিল্ডিং উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার কথা শুনে সে ঐ এজেন্টের কাছ থেকে ১০০০ পাউন্ডের বিস্ফোরক নিয়েছে। আর আজ সকালে ফেডারেল বিল্ডিংএর কাছে এসে রিমোটলি বিস্ফোরণ ঘটাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েই সে ধরা পড়েছে। তার নাকি অন্য প্ল্যানও ছিলো। সঠিকভাবে বিস্ফোরণ না হলে সে নাকি আত্মঘাতী হতে চেয়েছিলো। এরপর আর পড়তে ইচ্ছে হলোনা। মেজাজটা পুরাই বিলা।
সে বিল্ডিংটা ওড়ানোর চেষ্টা করেছে, সেটা থেকে আমার অফিস বিল্ডিং মাত্র ১টা ব্লক (ছবি দেখুন, পিংঙ্ক "এ" হলো আমার অফিস)। খুব বড় কোন বিস্ফোরণ ঘটলে আমারও খবর ছিলো। এ যাত্রায় অল্পের জন্য বেঁচে গেলাম হয়তো।
ওদিকে আমার অফিস কলিগরা কত রকম কথা বলে যাচ্ছে। যাইহোক, সন্ধ্যায় কারো সাথে তেমন কোন কথা না বলেই বাসার পথে পা বাড়ালাম। হাটতে হাটতে শুধু ভাবছিলাম, ২১ বছরের তরতাজা একটা যুবক বাংলাদেশ থেকে এই ধরনের চিন্তা মাথায় নিয়ে আমেরিকাতে আসে? অবারিত সুযোগ আর সম্ভাবনার এই দেশে, নিজের ভবিষ্যত, পরিবার-পরিজনের কথা না ভেবে এ কোন অন্ধকার পথে পা দিচ্ছে তারা? এই যুবকের মতো একদিন আমিওতো দেশ থেকে দেশান্তরী হয়েছিলাম আমেরিকায় আসবো বলে?! আপনাদের সবার দোয়ায় আমিতো বেশ ভালোই আছি। নামকরা বিজনেস স্কুলে পড়ছি, মোটামুটি একটা জব করছি। সামনে অবারিত সম্ভবনা, সুযোগ। ঐ ছেলেটার জীবনও আমার মতো বা তার চেয়েও ভালো হতে পারতো?!
নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশী টেরোরিস্ট আর আমার দিনলিপি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৬৯টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর
পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন
আলোচিত ব্লগ
চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়
অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?
অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঘুষের ধর্ম নাই
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।
হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।
পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update
মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-
গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??
সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন