ভীষণ রকম উৎকণ্ঠায় কাটছে দিনগুলো। সারাদিন আলসেমিতে কাটছে, নামাজ পড়ছি, কখনো ইউটিউব দেখছি, টুকটাক ব্লগে কাজ করছি, খাওয়া-দাওয়া করছি, ঘুমুচ্ছি, মোটামুটিভাবে এভাবেই কাটছে আমাদের নিউ ইয়র্কের মানুষগুলোর। পত্রিকার পাতায় দেখলাম এ পর্যন্ত ৫৬ জন বাংলাদেশী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রতিদিনই তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।
নিউ ইয়র্ক সিটির কয়েকটা এলাকার মধ্যে কুইন্স, ব্রুকলিন আর ব্রঙ্কস বরোর অবস্থা বেশ খারাপ। তবে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত লোকজনদের মধ্যে আমাদের এলাকার অবস্থা আরো বেশী ভয়াবহ। আমার বাসা থেকে এলমহার্স্ট হাসপাতাল মাত্র দু'টো ব্লক দূরে। ঠিক যে মুহূর্তে এই লিখা লিখছি তখনও এ্যাম্বুলেন্স এর সাইরেন বাজছে, কেউ হয়তো নতুন হাসপাতালে ভর্তি হতে এলো। এই হাসপাতালেই সবচেয়ে বেশী প্রবাসী বাংলাদেশী মৃত্যুবরণ করছেন। ক'দিন আগেই অবস্থা এতটা খারাপ ছিলোনা। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে অবস্থার ক্রমাবনতি দেখছি।
টেলিভিশনে এই হাসপাতালে কর্মরত নার্স, চিকিৎসকদের করুন আর মলিন চেহারা বার বার দেখা যাচ্ছে। পর্যাপ্ত পিপিই নেই, ভেন্টিলেটর নেই, তাদের আকুতিগুলো খুবই অকল্পনীয় একটা ব্যাপার। বিভিন্ন প্রয়োজনে গত ক'বছরে আমি কয়েকবার এই হাসপাতালে গিয়েছি স্বাস্থ্য সুবিধা নেয়ার জন্য কখনো এতটা সঙ্গীন অবস্থা চোখে পড়েনি। হাসপাতালের উল্টোদিকে অবস্থিত ব্যাংকেই মূলত আমি আর্থিক লেনদেন করি। ক'দিন আগেও গত সপ্তাহে যখন বাজার করার জন্য যাচ্ছিলাম তখন হাসপাতালের ভিন্ন চেহারা দেখেছি।
তেমন কোন গাড়ি নেই, অথচ হাসপাতালের সামনে সব সময়ই প্রচুর গাড়ি থাকে। হাসাপাতালে গেইটের উল্টো দিকেই পার্কের দেয়ালে ফোম দিয়ে কেউ "থ্যান্ক ইউ" লিখে ঝুলিয়ে দিয়ে গেছে। এত অপ্রতুলতার পরেও এখানকার ডাক্তার-নার্সরা তাদের জীবন আর পরিবারকে ঝুঁকির মুখে ফেলে কাজ করে যাচ্ছেন, সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। খবর পেয়েছি, অনেক ডাক্তার নার্সরাও অসুস্থ হয়ে এখন এখানেই সেবা নিচ্ছেন। সহকর্মীদের অসুস্থ হয়ে যেতে দেখে অনেকেই বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছেন, তবুও তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন প্রতিদিনই। এই সামান্য ধন্যবাদ তাদের অবশ্যই প্রাপ্য। দেশের এমন দুর্যোগে যারা মানবতার সেবার কাজ করছেন তারাতো বেশ বড় মানসকিতার পরিচয় দিয়েছেন অনেক আগেই তবুও মুখ ফুটে তাদের আবারও ধন্যবাদ দিতে চাই।
খানিকটা দূরে ৭৪ রুজভেল্ট এ্যাভিনিউ তে এমটিএ-র বাস স্ট্যান্ডেও কোন বাস দেখিনি। যদিও মাঝে মধ্যে দু'একটা বাস সাই সাই করে চলে যাচ্ছে। এ এক ভিন্ন নিউ ইয়র্ক সিটি।
ভীষণ রকম অচেনা শহর, অনেকটাই ভূতুড়ে অবস্থা। কোন কোলাহল নেই, রাস্তায় তেমন কোন মানুষ দিনের বেলায়ও দেখা যাচ্ছে না।
আগামী কয়েক সপ্তাহ বেশ ক্রিটিকাল সময় পার করতে হবে আমাদের। বাসায় বসে অপেক্ষা আর ধৈর্য্য ধরা ছাড়া আর খুব বেশী কিছু করারও নেই। সবাই দোয়া করবেন যেন খুব তাড়াতাড়ি এ বন্দিদশা কেটে যায়, যেন সবাই সুস্থ হয়ে তার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারে। একজন মানুষ হিসেবে, অন্যএকজন মানুষের কাছে এতটুকু প্রত্যাশাতো করাই যায়। প্রবাসে এবং দেশে যারা আছেন, তাদের বলছি, সতর্ক হোন, হাইজিন আর কোয়ারেন্টিন মেনে চলুন। করোনায় আমেরিকার যদি এই হাল হয়, তবে রোগ ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশের অবস্থা কি হবে তা অনুমেয়। তাই, সবাই সাবধানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করুন। সবার জন্য শুভকামনা রইল।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৭:৩৬