somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনার হটস্পটে আমার দিনলিপি

০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৭:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভীষণ রকম উৎকণ্ঠায় কাটছে দিনগুলো। সারাদিন আলসেমিতে কাটছে, নামাজ পড়ছি, কখনো ইউটিউব দেখছি, টুকটাক ব্লগে কাজ করছি, খাওয়া-দাওয়া করছি, ঘুমুচ্ছি, মোটামুটিভাবে এভাবেই কাটছে আমাদের নিউ ইয়র্কের মানুষগুলোর। পত্রিকার পাতায় দেখলাম এ পর্যন্ত ৫৬ জন বাংলাদেশী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রতিদিনই তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।

নিউ ইয়র্ক সিটির কয়েকটা এলাকার মধ্যে কুইন্স, ব্রুকলিন আর ব্রঙ্কস বরোর অবস্থা বেশ খারাপ। তবে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত লোকজনদের মধ্যে আমাদের এলাকার অবস্থা আরো বেশী ভয়াবহ। আমার বাসা থেকে এলমহার্স্ট হাসপাতাল মাত্র দু'টো ব্লক দূরে। ঠিক যে মুহূর্তে এই লিখা লিখছি তখনও এ্যাম্বুলেন্স এর সাইরেন বাজছে, কেউ হয়তো নতুন হাসপাতালে ভর্তি হতে এলো। এই হাসপাতালেই সবচেয়ে বেশী প্রবাসী বাংলাদেশী মৃত্যুবরণ করছেন। ক'দিন আগেই অবস্থা এতটা খারাপ ছিলোনা। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে অবস্থার ক্রমাবনতি দেখছি।

টেলিভিশনে এই হাসপাতালে কর্মরত নার্স, চিকিৎসকদের করুন আর মলিন চেহারা বার বার দেখা যাচ্ছে। পর্যাপ্ত পিপিই নেই, ভেন্টিলেটর নেই, তাদের আকুতিগুলো খুবই অকল্পনীয় একটা ব্যাপার। বিভিন্ন প্রয়োজনে গত ক'বছরে আমি কয়েকবার এই হাসপাতালে গিয়েছি স্বাস্থ্য সুবিধা নেয়ার জন্য কখনো এতটা সঙ্গীন অবস্থা চোখে পড়েনি। হাসপাতালের উল্টোদিকে অবস্থিত ব্যাংকেই মূলত আমি আর্থিক লেনদেন করি। ক'দিন আগেও গত সপ্তাহে যখন বাজার করার জন্য যাচ্ছিলাম তখন হাসপাতালের ভিন্ন চেহারা দেখেছি।

তেমন কোন গাড়ি নেই, অথচ হাসপাতালের সামনে সব সময়ই প্রচুর গাড়ি থাকে। হাসাপাতালে গেইটের উল্টো দিকেই পার্কের দেয়ালে ফোম দিয়ে কেউ "থ্যান্ক ইউ" লিখে ঝুলিয়ে দিয়ে গেছে। এত অপ্রতুলতার পরেও এখানকার ডাক্তার-নার্সরা তাদের জীবন আর পরিবারকে ঝুঁকির মুখে ফেলে কাজ করে যাচ্ছেন, সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। খবর পেয়েছি, অনেক ডাক্তার নার্সরাও অসুস্থ হয়ে এখন এখানেই সেবা নিচ্ছেন। সহকর্মীদের অসুস্থ হয়ে যেতে দেখে অনেকেই বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছেন, তবুও তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন প্রতিদিনই। এই সামান্য ধন্যবাদ তাদের অবশ্যই প্রাপ্য। দেশের এমন দুর্যোগে যারা মানবতার সেবার কাজ করছেন তারাতো বেশ বড় মানসকিতার পরিচয় দিয়েছেন অনেক আগেই তবুও মুখ ফুটে তাদের আবারও ধন্যবাদ দিতে চাই।


খানিকটা দূরে ৭৪ রুজভেল্ট এ্যাভিনিউ তে এমটিএ-র বাস স্ট্যান্ডেও কোন বাস দেখিনি। যদিও মাঝে মধ্যে দু'একটা বাস সাই সাই করে চলে যাচ্ছে। এ এক ভিন্ন নিউ ইয়র্ক সিটি।


ভীষণ রকম অচেনা শহর, অনেকটাই ভূতুড়ে অবস্থা। কোন কোলাহল নেই, রাস্তায় তেমন কোন মানুষ দিনের বেলায়ও দেখা যাচ্ছে না।

আগামী কয়েক সপ্তাহ বেশ ক্রিটিকাল সময় পার করতে হবে আমাদের। বাসায় বসে অপেক্ষা আর ধৈর্য্য ধরা ছাড়া আর খুব বেশী কিছু করারও নেই। সবাই দোয়া করবেন যেন খুব তাড়াতাড়ি এ বন্দিদশা কেটে যায়, যেন সবাই সুস্থ হয়ে তার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারে। একজন মানুষ হিসেবে, অন্যএকজন মানুষের কাছে এতটুকু প্রত্যাশাতো করাই যায়। প্রবাসে এবং দেশে যারা আছেন, তাদের বলছি, সতর্ক হোন, হাইজিন আর কোয়ারেন্টিন মেনে চলুন। করোনায় আমেরিকার যদি এই হাল হয়, তবে রোগ ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশের অবস্থা কি হবে তা অনুমেয়। তাই, সবাই সাবধানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করুন। সবার জন্য শুভকামনা রইল।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৭:৩৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×