বাবা গত হয়েছেন চার বছরেরও কিছু বেশী দিন হলো। প্রতি বছরই নিয়ম করে বাবার আত্মার শান্তির জন্য গরীর, এতিম বাচ্চা-কাচ্চা, দুস্থদের সাহায্য করার চেষ্টা করছি। এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষকে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগীতা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিছুটা মানসিক শান্তি হলেও পুরোপুরি হচ্ছে না, মনে হয় আরো কিছু করার দরকার। বাবার সাথে দেখার করা জন্য খুব সম্ভবত মৃত্যুটাই একমাত্র পথ।
আমি কিছুটা অসামাজিক, আনসোশ্যাল যাকে বলে। ছোট বেলা থেকেই আমার ব্যাপারে এটা শুনে আসছি। তার কারণ আমি পারতঃপক্ষে মানুষের সাথে সামনা-সামনি খুব বেশী ইন্টারেকশন করি না, বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যাও খুবই কম। মানে হৈ, হুল্লোড়, চিৎকার-চেচামেচি, বিয়ে-খতনার অনুষ্ঠান এসব এড়িয়ে চলি। বলতে পারেন, অনেকটাই ইন্ট্রোভার্ট। পছন্দের দু'একজন আর পরিবারের কয়েকজন সদস্য ছাড়া আর কারো সাথেই আমার নিয়মিত যোগাযোগ হয় না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আমার উপস্থিতি অনেকটাই দুর্বল। ফোনে শ'খানেক নাম্বার থাকলেও ফোন করা হয় না তেমন কাউকেই। সত্যি বলতে কি ফোন না থাকলেও আমার সমস্যা হবে না। তবে অফিসিয়াল কাজের জন্য একটা নাম্বার প্রয়োজন তাই একটা ফোন ব্যবহার করা। তবে সেটাও সব সময় সাইলেন্ট মোডে থাকে, কখনোই শব্দ করে না। ফোনে রিং এর শব্দ বিরক্তির লাগে। তার চেয়েও বিরক্তির লাগে যখন কিছু মগজহীন মানুষ ফোন স্পিকারে দিয়ে কথা-বার্তা বলে। মনের ভেতর ঠিক কেমন লাগে তা সভ্য সমাজে বলা সম্ভব নয়।
ফোনে বিভিন্ন এ্যালার্ট আসে, কারো জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী ইত্যাদি ইত্যাদি। দু'দিন আগে নোটিফিকেশন এলো বাবার ৭৭তম জন্ম বার্ষিকীর। সাথে বাবার কন্টাক্ট নাম্বার। আমার ফোনবুকে "বাবা" নামটা এখনো আছে। মোছা হয় নি, হয়তো আমার পক্ষে সেটা মোছা সম্ভব নয়। মনে হয় কল করলেই বাবা ফোন ধরে জিজ্ঞেস করবেন আমি কেমন আছি, শরীর ভালো কিনা, রাতের খাবার কখন খেয়েছি। প্রতিবারের মতোই গুলিয়ে ফেলবেন আর জিজ্ঞেস করবেন আমেরিকায় এখন রাত না দিন। যদিও সেটা আমি তাকে হাজার বার বলেছি। অনেকক্ষণ নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে থেকে দু'বার আঙুল এগিয়ে দিয়েছিলাম কল করার জন্য, শেষ পর্যন্ত আর নাম্বারটা চাপা হয় নি, পাছে এটা নিশ্চিত হয়ে যাই যে ও প্রান্তে বাবা নেই। জানি এটা একটা ভ্রান্ত ধারনা যে আমি ফোন করলেই বাবা ফোন ধরবেন, তবুুও আমি জানতে চাই না।
প্রতি ওয়াক্তেই বাবাকে মনে পড়ছে, হয়তো পড়বে। তবে বিশেষ বিশেষ দিনে বাবাকে একটু বেশীই হয়তো মনে পড়ে। তাকে নিয়ে ভাবনার ব্যাপ্তিকাল কোন কোনদিন সারাদিন জুড়েই থাকবে।
বাবা, জন্ম দিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জেনো। তোমার দীর্ঘায়ু ঠিক কি ভাবে কামনা করবো বা আদৌ করবো কি না বুঝতে পারছি না। তবে আমি চাই তুমি যেখানেই থাকো, যতদূরেই থাকো, অনেক অনেক ভালো থেকো। তোমার সাথে আবার দেখা হওয়ার আগ পর্যন্ত নিজের যত্ন নিও। আরতো মাত্র ক'টা বছর, চোখের পলকেই চলে যাবে। আমিও আসছি, খুব শীঘ্রই তোমার সাথে দেখা হবে। শুভ জন্মদিন।
ছবি কপিরাইট: ডিক্যান হেরাল্ড
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ১২:২২