somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বারাক ওবামার ঔদ্ধত্য!

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জুলিয়ান এসাঞ্জ

আজ আমি আপনাদের সামনে কথা বলছি একজন মুক্ত মানুষ হিসেবে। বিনা অভিযোগে ৬৫৯ দিন আটক থাকা সত্ত্বেও মৌলিক অর্থে আমি নিজেকে মুক্ত ভাবি। নিজের মনকে খুলে ধরার যোগ্য হিসেবে আমি মুক্ত। জাতিসংঘের বিশ্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদের বলে উইকিলিকস এখনো তথ্য পাচ্ছে এবং যেকোনো গণমাধ্যমে তা সরবরাহ করতে সক্ষম। ওই ঘোষণার বলে আমিও রাজনৈতিক নিপীড়ন থেকে রক্ষা পেতে সক্ষম বলে মনে করি।
আটক ব্যক্তিদের নির্যাতন করাকে নিরঙ্কুশভাবে নিষিদ্ধ করে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক আইন চালু আছে। জাতিসংঘের কনভেনশনেও একে নিষিদ্ধ করেছে। তার আলোকেই, যুদ্ধাপরাধ ও নির্যাতন যে-ই করে থাকুক না কেন, আমি ও আমার সংগঠন তাদের বিরুদ্ধে শক্তভাবে দাঁড়িয়েছি। ২০১০ সালে জেনেভায় আমি এক লাখ ইরাকি নাগরিককে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলাম। কথায় ও কাজে প্রতিবাদী হওয়ার সেই সময় থেকে পরিস্থিতি এখন অনেক আলাদা।
আজ আমি ইরাকে যুদ্ধ করতে পাঠানো এক মার্কিন সেনার কথা বলতে চাই। আমেরিকার ওকলাহোমায় তার জন্ম। বাবা ছিলেন ইউএস নেভির সদস্য। মা-বাবার বিয়ে হয় প্রেম করে। সেনাটি বালক অবস্থায় সাফল্যের আশা জাগিয়েছিল। পরপর তিনবার সে বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় সেরা হয়। আমাদের অনেকের মতোই সত্যের প্রতি তার আস্থা ছিল এবং শঠতাকে সে ঘৃণা করত। মুক্তির ধারণায় তার আস্থা ছিল অটুট। সে মনে করত, প্রতিটি মানুষেরই মুক্ত ও সুখী হওয়ার অধিকার আছে। আরও অনেক কিশোর-তরুণের মতো জীবন নিয়ে সেও ছিল অনিশ্চিত। কিন্তু দেশের পক্ষে দাঁড়ানোয় সে ছিল দ্বিধাহীন। তাই বাবার মতো সেও সেনাবাহিনীতে যোগ দেয় এবং বাবার মতোই গোপনীয় তথ্যবিশ্লেষণের প্রশিক্ষণ পায়। ২০০৯ সালে তার বয়স যখন ২১, তখন তাকে ইরাকে পাঠানো হয়। সেখানে সে দেখে, মার্কিন সেনাবাহিনী কোনো আইন মানে না। তারা রাজনৈতিক দুর্নীতি ও হত্যার কারবারে যুক্ত। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১০ সালে সে বাগদাদে আমাকে ইরাকিদের নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা সম্পর্কে তথ্য দেয়। অভিযোগ এই: সে উইকিলিকসকে, আমাকে ও বিশ্বকে ইরাকিদের নির্যাতনের তথ্য সরবরাহ করে; সে সাংবাদিকদের হত্যার রেকর্ড জোগায়। মার্কিন বাহিনীর এক লাখ ২০ হাজারেরও বেশি ইরাকি ও আফগান বেসামরিক ব্যক্তিকে হত্যা করা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ফাঁস করে। উইকিলিকসকে প্রায় আড়াই লাখ মার্কিন কূটনৈতিক বার্তা সরবরাহ করে আরব বসন্তকে উসকে দিতে সাহায্য করেছে বলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ। এই তরুণ সেনার নাম ব্র্যাডলি ম্যানিং। ওই সব অভিযোগে তাকে বাগদাদে, কুয়েতে ও ভার্জিনিয়ায় বন্দী রাখা হয়। ভার্জিনিয়ায় তাকে নয় মাস রাখা হয় নিঃসঙ্গ অবস্থায়। তার ওপর চলে অকথ্য অত্যাচার। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ওয়ান ম্যান্ডেজ তদন্ত করে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন। বিজ্ঞান মেলার তারকা, তরুণ সেনা, সত্যের সৈনিক, দেশপ্রেমিক ব্র্যাডলি ম্যানিংকে তার নিজের সরকারই লাঞ্ছিত ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে নির্যাতিত করেছে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এখন সব উপায়ে তার মনোবল ভেঙে দিয়ে তাকে আমার এবং উইকিলিকসের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা আইনে ১২০ দিনের বেশি বিনা বিচারে আটক রাখা না গেলেও ব্র্যাডলি ম্যানিং আজ অবধি ৮৬৫ দিন আটক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন চায় এক গোপনীয়তার রাজত্ব কায়েম করতে, আলোচনা-সমালোচনার ঊর্ধ্বে রাখতে চায় সরকারের কাজকর্মকে। তাদের এই রাজত্বে কোনো সরকারি কর্মচারী গণমাধ্যমের কাছে স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস করলে প্রাণদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাবে অথবা হবে গুপ্তহত্যার শিকার। সাংবাদিকদেরও তারা ভীতসন্ত্রস্ত করে রাখতে চায়। উইকিলিকসের বিরুদ্ধে যে মাত্রায় তদন্ত করা হচ্ছে, বিশ্বের ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। পেন্টাগন, সেন্টকম, সাউথকম, সিআইএ, এফবিআই, ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, ইউএস আর্মি ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, ফেডারেল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, ফার্স্ট আর্মি, সেকেন্ড আর্মি, সাইবার কমান্ড, ইরাকের মার্কিন বাহিনী এবং মার্কিন বিচার বিভাগসহ আরও অনেক সংস্থা ব্যাপক আকারে তদন্ত চালাচ্ছে। বছরের প্রথম দিকে এফবিআই ৪২ হাজার পৃষ্ঠারও বেশি এক তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলেন বারাক ওবামা, গতকালও জাতিসংঘে বলেছেন। অথচ যত ওয়েবসাইট এবং যত মুক্তচিন্তাকে অপরাধ বলে শাস্তি দিয়েছে তাঁর প্রশাসন, অতীতের সব প্রেসিডেন্ট মিলেও ততটা করেননি। তিনি আমাদের ‘আশাবাদের ঔদ্ধত্য’ কথাটা উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আরব বসন্তের শক্তিগুলোকে এগিয়ে নিয়েছে বলে দাবি করা কোন ধরনের ঔদ্ধত্য? তিউনিসিয়ার ইতিহাস ২০১০ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়নি। বারাক ওবামাকে আরেকবার নির্বাচিত করার জন্য মুহাম্মদ বুয়োজ্জি আগুনে আত্মাহূতি দেননি। তাঁর মৃত্যু হয়েছিল বেন আলীর দুঃশাসনের জাঁতাকলের প্রতিবাদে। উইকিলিকস ফাঁস করেছে বলেই বিশ্ব জানতে পেরেছে, বেন আলী ও তাঁর সরকার বছরের পর বছর যুক্তরাষ্ট্রের মদদ পেয়ে এসেছে। বেন আলীর সব অপকর্ম সম্পর্কে মার্কিন সরকার আগে থেকেই ওয়াকিবহাল। বরং যুক্তরাষ্ট্র তাদের পাশে ছিল শুনে তিউনিসিয়ার জনগণই হতবাক। মিসরের যে কিশোর-তরুণেরা মার্কিন টিয়ার গ্যাসের শিকার, যুক্তরাষ্ট্র তাদের পরিবর্তনের বন্ধু ছিল শুনে তারাও অবাক। হোসনি মোবারকের সরকার স্থিতিশীল বলে দাবি করেছিলেন হিলারি ক্লিনটন। মিসরীয়দের ঘৃণার পাত্র সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান ওমর সুলেমানের পৃষ্ঠপোষক ছিল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র যে তাঁকে চায় তা উইকিলিকসই প্রমাণ করেছে। যারা মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বলতে শুনেছে, ‘হোসনি মোবারক গণতন্ত্রী আর জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ হলো হাইটেক সন্ত্রাসী’ তাদেরও বিস্ময়ের শেষ থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র পরিবর্তনের সমর্থক, এমন দাবি আরব বসন্তের নিহত ও নির্যাতিতদের প্রতি অশ্রদ্ধার প্রকাশ।
আরব জনগণের অসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্রকে নিজের অবদান বলে দাবি করা কি বারাক ওবামার ঔদ্ধত্য নয়! পরিবর্তন যখন অপ্রতিরোধ্য, তখন তার কৃতিত্ব নেওয়া লজ্জাকর। হোয়াইট হাউস দেখছে পরিবর্তনের বাতাস কোন দিকে বইছে। এখন তারা বলছে এই বাতাস তারাই সৃষ্টি করেছে। বিশ্ব যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়া ঠেকাতেই তারা ভোল পাল্টেছে। এখানে পরিষ্কার করে বলতে চাই, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের শত্রু নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সবাই এক রকম নয়। কোনো কোনো ঘটনায় ভালো লোকেরা পরিবর্তনের শক্তিকে সাহায্য করেছে। হয়তো বারাক ওবামা ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের একজন। ইতিহাস সাক্ষী, যুক্তরাষ্ট্র হামেশাই পরিবর্তনের বিরোধিতা করেছে। রাজনৈতিক স্বার্থে অন্যের কৃতিত্বকে সুন্দর সুন্দর কথা বলে আত্মসাৎ করা প্রেসিডেন্টের উচিত নয়।
যখন তিনি বলেন, জনগণই আলোচনার মাধ্যমে ভিন্নতার মীমাংসা করতে পারে, তখন আমরা একমত হই। আমরা মানি, যুদ্ধের জায়গা নিতে পারে কূটনীতি। আমরা মানি, বিশ্বের সবাই আমরা পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। মুক্ত মত প্রকাশ এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আমেরিকা বা পাশ্চাত্যের নয়, বিশ্বজনীন মূল্যবোধ। সত্যি সত্যিই এসব আদর্শে বিশ্বাস আনতে হলে অসৎ হলে চলবে না। কিন্তু সুন্দর কথা কাতরায় যখন সে অনুসারে কাজ করা না হয়।
কখনো সময় কথা বলার, কখনো সময় কাজের। এখন কাজ করে দেখানোর সময়। কথা বলার সময় শেষ। সময় এসেছে উইকিলিকসের বিরুদ্ধে, আমাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে, আমাদের তথ্যদাতাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ বন্ধ করার। বারাক ওবামার সময় এসেছে সঠিক কাজ করে পরিবর্তনের শক্তির পক্ষে আসার। কেবল কথা বলে নয়, সত্যিকার কাজ করার মাধ্যমে।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের একটি প্যানেলে দেওয়া ভিডিও বক্তৃতার সংক্ষেপিত অংশ
আরটিডটকম থেকে ভাষান্তর: ফারুক ওয়াসিফ
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ: উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা।

সুত্রঃ Click This Link
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×